রাতুল ।। আমার গল্প কথা : শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

নমষ্কার,,

আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি সকলে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। গত সপ্তাহ থেকে একটা গল্প লেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যার দুটো পর্ব এর আগে পোস্ট করেছি। আজ পোস্ট করছি গল্পটার শেষ পর্ব। কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে এবং নতুনত্ব নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি আমার গল্পটা। সমাজের কিছু বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি গল্পের আড়ালে। সব গুলো পর্ব যদি কেউ পড়ে থাকেন, আশা করি খারাপ লাগবে না তার।

আমার গল্পের নাম দিয়েছি "রাতুল"

city-1759377_1920 (1).jpg

Source

রাতুল

দ্বিতীয় পর্বের পর থেকে..

রাতুল পেন্সিল দিয়ে ছবিটির উপরে একের পর এক আঘাত করতে লাগলো। রাতুলের পেন্সিলের আঘাতে হয়তো গ্রীন বার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল মোটেই ব্যথা পেলেন না, তবে রাতুলের আর্টের খাতার মাঝখানের কিছু অংশ ছিঁড়ে গেল। রাতুল খাতার ছেড়া অংশ জোড়া লাগানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরে প্রিন্সিপালের মুখমন্ডলের নিচে এসে আরেকটি মুখমন্ডল আকলো। মাথার উপরে চুলগুলো বড় বড় এবং চোখগুলো ছোট ছোট। দুই চোখের নিচে লম্বা লম্বি করে দুটি ফোটা দিল সে, অর্থাৎ ছবির মানুষটি কাঁদছে। রাতুল বলল, রেনু মাসি, ও রেনু মাসি, তুমি খুব ভালো রেনু মাসি। তুমি মরে গেলে কেন? বুকে ব্যথা হলে কি মানুষ মরে যায়? সেদিন বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে আমিও তো বুকে ব্যথা পেয়েছিলাম। কই আমি তো মরলাম না। তুমি মরে যাওয়ার পর থেকে আমাকে এখন একা থাকতে হয়। আমার বুঝি খারাপ লাগেনা! মা বলেছে সাত দিনের মধ্যে তোমার মত আরেকটি মাসি জোগাড় করে দেবে। তোমার মত মাসি আর কি হবে কেউ, রেনু মাসি?

হঠাৎ করেই আর্ট এর খাতা বন্ধ করে দিল রাতুল। তারপর দ্রুত ছুটল টয়লেটের দিকে। টয়লেট সারা হয়ে গেলে চিৎকার করে সে বলল, আমাকে এখন কে জল ঢেলে দেবে? আমাকে এখন কে জল ঢেলে দেবে, মা! আমি কি তোমাদের মত বড়? আমাকে একা রেখে যাও কেন, হ্যাঁ! রাতুল কয়েকদিন আগে বেশ ভালোভাবেই জল ঢালার কায়দা রপ্ত করেছে। তবু মিছে মিছে চিৎকার করে সে মায়ের উপরে রাগ ঝারলো।

কিছুক্ষণ পরে সে স্নান করতে শুরু করল বাথরুমে গিয়ে। শাওয়ারের জলে ভিজতে ভিজতে সে গাইতে লাগলো ড্যাং দ্যাডাং দ্যাডাং, ড্যাং দ্যাডাং দ্যাডাং। বিচিত্র সুর ও বিচিত্র শব্দের সমন্বয়ে গঠিত গানটি গাওয়ার সময় সে তালে তালে নাচতেও লাগলো। কখনো সে হাসের মতো করে কোমর দুলালো কখনো আবার বর্ষাকালের ব্যাঙের মতো লাফাতে লাগলো। স্নান শেষে তোয়ালা দিয়ে সারা শরীর ভালো করে মুছে শোবার ঘরে এসে প্যান্ট পাল্টালো। তবে ঘরে ফ্যান চলতে থাকায় ঠান্ডায় শরীর কাঁপতে লাগলো তার। সুইচ বোর্ডের কাছে চেয়ার নিয়ে গিয়ে চেয়ারে উঠে ফ্যানের সুইচ বন্ধ করল রাতুল। রান্নাঘরে গিয়ে সেলফে থাকা হটপট খুলে দেখল, হটপটে মা তার জন্য নরম ভাত আর চিংড়ির ঝোল রেখে গেছে। রাতুল বলল, ভাত খাব না, নুডুলস খাব।

শোবার ঘরে এসেছে দেখতে পেল রান্না করা নুডুলস মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। আবার ফিরে গেল রান্নাঘরে। চিংড়ির ঝোল দিয়ে পেট পুরে নরম ভাত খেলো সে। খাওয়া-দাওয়া সেরে সে ফিরে এলো শোবার ঘরে। চিৎকার করে রাতুল বলল, এখন আমি কি করব মা? ঘরের মধ্যে কি সারাদিন বসে থাকা যায়? আমি আর ঘরে থাকবো না, আমি বাইরে যাব। ফ্ল্যাটের প্রধান দরজার কাছে এসে বাইরে থেকে বন্ধ করা দরজাটা কিছুক্ষণ ঝাঁকিয়ে সে বলল, আর কত দেরি করবে মা? কাঁদতে শুরু করল রাতুল। চোখের জলে দু ঠোঁট ভিজিয়ে গোংরানির মত করে বলতে লাগলো, আমি বাইরে যাব , আমি বাইরে যাব।

অনেকক্ষণ ধরে কান্নাকাটি করে রাতুল ফিরে এলো শোবার ঘরে। শরীরে আবার ঠান্ডা লাগছে। বিছানায় উঠে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো সে। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই হারিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে।

আবার যখন সে চোখ মেলল, সে দেখল তার মুখের খুব কাছে তার প্রিয় মায়ের মুখ। অশ্রুসিক্ত চোখে তার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে তার প্রিয় মা। বড্ড অভিমান জড়ানো কন্ঠে রাতুল বলল, মা, তুমি ফিরে এসেছ! আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো? ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে বাম হাতে চিমটি কাটার চেষ্টা করল রাতুল।

পাঁচ বছর ছয় মাস বয়সী একটা ছোট শিশুকে স্নেহ বঞ্চিত করে বাড়িতে একা রেখে যাওয়ায় অনেক আগে থেকেই বুকের কষ্ট ভর করেছিল মায়ের চোখে। উপরন্ত ছেলের অবিশ্বাস মিশ্রিত কাতর প্রশ্ন তার চোখে সৃষ্টি করল অশ্রু প্লাবন। টপ টপ করে জল পড়তে লাগলো রাতুলের কপালের ওপরে। কপালে জলের স্পর্শ পেয়ে খুশিতে চঞ্চল হয়ে উঠল রাতুলের দু চোখ। কিন্তু পরমুহূর্তেই মুখ ফিরিয়ে নিল সে। অভিমান করে গাল ফুলিয়ে সে বলল, কথা বলবো না। যাও, একদম কথা বলবো না তোমার সাথে................................................

Sort:  
 2 years ago 

আপনার গল্পের সব পর্ব না পড়লে হয়তো কিছুটা পড়েছি।আসলে রাতুলের মত এমন অনেক রাতুল আছে যার স্নেহ বঞ্চিত রয়েছে মা-বাবার আদর থেকে। সত্যিই তো রাতুল তার মার কাছ থেকে অভিমানে মুখ লুকানো স্বাভাবিক। তবে এটা সত্যি একজন কর্মজীবী মায়ের জন্য এর বেশি সময় দেওয়া সম্ভব নয়। মায়েরা চাইলে ও পারে না। যাইহোক রেনু মাসি মারা যাওয়াতে রাতুলের বেশি কষ্ট হয়েছে।

 2 years ago 

গল্পের মূল ভাবটা বুঝতে পারার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু। এভাবেই পাশে থাকবেন সবসময়।

 2 years ago 

গল্পটা পড়ে অনেক খারাপ লাগলো আসলে বর্তমান সময়ে সবাই এত বেশি ব্যস্ত হয়ে গেছেন আসলে বাচ্চাদেরকে ঠিকমত সময় দেয় না। এত ইনকাম করার কি দরকার বাবা-মা দুইজনকে একটা ছোট বাচ্চা রেখে যাওয়ার ভয় করেনা। তবে এদের ভবিষ্যৎ পরিণতি এত বেশি ভালো হবে না। তাদেরকে বৃদ্ধ বয়সে এভাবে একা থাকতে হবে। আপনি বলেন তো ভাইয়া বৃদ্ধাশ্রম কেন তৈরি হয়েছে? আমি প্রথম পর্বেই বুঝতে পেরেছি বাচ্চাটি একাকীত্ব বোধ করতেছে তাই নিজে ছবি এঁকে ছবির সাথে কথা বলতেছে। অনেক সুন্দর সমসাময়িক একটি গল্প শেয়ার করলেন অনেক ভালো লেগেছে পড়ে।

 2 years ago 

আসলে ছোট শিশুরা যদি একা একা এভাবে বেড়ে ওঠে তাহলে তাদের মাঝেও মা বাবার প্রতি সেই ভালোবাসা বা টান টা হয়তো কাজ করে না। হয়তো সে জন্যই এভাবে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে যায় মা বাবাকে। ভালো লাগলো এত সুন্দর একটা গঠনমূলক মন্তব্য পেয়ে আপু।

এটাকে আসলে আমি গল্প বলবো না, এরকম বাস্তব চিত্র এখন বর্তমান সমাজে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। আগের পর্ব পড়ে বলেছিলাম যে আমার ভাইয়ের সাথে অনেকটা এরকম হয়েছিল। তবে আপনার আজকের গল্পের কাজের মাসির সাথে আমার ভাইকে দেখার জন্য যে কাজের মাসি রাখা হয়েছিল তার ভিতর বিস্তার খারাপ ছিল। শুনেছিলাম নাকি মাঝে মধ্যে ভাইয়ের খাবারও খেয়ে ফেলত। মোটামুটি এক বছরের ভিতর আমার ভাই মা বাপের শোকে পুরো শুকিয়ে গেছিল। আপনার লেখা গল্পটা বর্তমান সমাজের চাকুরিজীবী বাপ-মায়ের পড়া অত্যান্ত জরুরি ছিল।

বেশ ভালোভাবেই জল ঢালার কায়দা রক্ত করেছে।

রপ্ত হবে মনে হয়।

 2 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ ছোট এই ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। আর এটা সত্যি যে এই গল্প টা বর্তমান সমাজের একদম বাস্তব প্রতিচ্ছবি একটা। চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব নিজের মত করে ফুটিয়ে তোলার। 🙏🙏

 2 years ago 

আপনি এখানে একটি বাচ্চা ছেলের তার বাবা মা ছাড়া,সারাদিন বাসায় থাকার সময়টা বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন।এখানে কিছু মজার মজার কথা বলেছেন,যাতে করে গল্প পড়তে আরও ভালো লাগে সবার।তবে এখানে রাতুলের মা নিরুপায়।কেননা চাকুরী তো জরুরি।অন্যদিকে ছেলেও জরুরি।রেনু মাসি মারা যাওয়ায় রাতুলের অনেকটা কষ্ট হচ্ছে।ভালো লেগেছে লেখাটি।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

হ্যাঁ আপু মজার ছলে কিছুটা সত্যিকারের ছোঁয়া আনার চেষ্টা করেছি পুরো লেখাতে। অনেক ধন্যবাদ পুরো গল্পটা জুড়ে পাশে থাকার জন্য আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.09
TRX 0.32
JST 0.033
BTC 108371.85
ETH 3824.35
USDT 1.00
SBD 0.60