পশ্চিমবঙ্গের উৎসব সংক্রান্ত একটি স্বরচিত কবিতা। একটি প্রতিবাদ
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
আমার বাংলা, আমার পশ্চিমবঙ্গে এখন উৎসবের মরসুম। বাঙালির জাগরণের উৎসব৷ সেই উৎসবের রঙ বদলেছে৷ মানুষ চাইছে তাদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ। এ চাওয়া অন্যায় নয়৷ দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে জাতিকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে৷ সকলেই ঘুরে দাঁড়ায়। এই ঘুরে দাঁড়ানোই উৎসব। শিরদাঁড়ার উৎসব৷ ব্রেনের উৎসব।
পশ্চিমবঙ্গের জুনিয়র ডাক্তাররা প্রতিবাদে রাস্তায় জলে ভিজে রোদে পুড়ে শ্লোগান দিচ্ছেন। এ কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। মানুষের আন্দোলন৷ তাঁরা জাতিকে শেখাচ্ছেন শিক্ষিতের আন্দোলন ঠিক কেমন হয়৷ আমার শহর বাসি জেগেছে। ওনাদের জন্য জল খাবার দিয়ে যাচ্ছেন, এমনকি কেউ আসছেন ডিম সেদ্ধ নিয়ে কেউ বা রসোগোল্লা। এক শসা চাষী এক বস্তা শসা এনে বলেছিলেন "আমাদের ভগবান রাস্তায় তাদের ভোগ দিতে হবে"। উফফ বাঙালি। তুমিই পারো জাতির পরিবর্তন ঘটাতে৷
প্রবাসে দীর্ঘদিন থাকার কারণে নানান রাজ্যে বাঙালির সম্পর্কে শুনে এসেছি বাঙালি কেবল সংস্কৃতি টাই নিপুন ভাবে মঞ্চস্থ করতে পারে। হ্যাঁ আমাদের সংস্কৃতি আশ্রয় তাই রাস্তায় প্রতিবাদের শিল্প এঁকেছে শিল্পীরা। কপালে কালো ব্যান্ড বেঁধে পথনাটিকা করে প্রতিবাদ করছেন। এমনকি গান নাচ। কে বলেছে গান নাচ প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না? রাজপথে আজ সেই সবই দেখিয়ে চলেছেন চৌত্রিশ দিন ধরে৷ ক্লান্তি নেই বিরক্তি নেই। তারা শাস্তি চায়, ঘৃণ্য ক্ষমাহীন অপরাধের বিচার চায়৷ আমিও চাই। আমরা প্রত্যেকেই চাই।
তবে এতো বিপ্লবের মাঝেও কিছু মূর্খ থেকেই যায়। যাদের প্রতিবাদের শ্লোগানে অসুবিধে হয়, রাস্তায় জ্যামে ফেঁসে গেলে অসুবিধে, তারা তুলনা করতে ব্যস্ত। তারা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যেতে ব্যস্ত৷ তারা শুধু ফল ভোগ করতে চায়৷ ঠিক স্বাধীনতা সংগ্রামের মতো। মাত্র কুড়ি পার্সেন্ট মানুষের নিস্বার্থ প্রচেষ্টার ফল বাকি সমস্ত ধরনের বাদী বিবাদীরা ভোগ করছেন। আসলে এমন মানুষ যুগে যুগেই জন্মায়। তবে আজকের একমুখী উৎসবের দিনে এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার বলে আমি বিশ্বাস করি। তাই তাদের উদ্দেশ্যে লেখা আমার এই কবিতাটি।
উৎসব
------------------------ নীলম সামন্ত
ছেঁড়া হৃৎপিণ্ডে মাছি বসার পর
উৎসবের ঘোষণা করা হল,
সময় মধ্যরাত
সময় মধ্যদুপুর...
শ্মশানে মৃতাশৌচ পুড়ে যাচ্ছে
কাঠকয়লার আগুনে
রাস্তা অনেকটা লাল—
শ'য়ে শ'য়ে শব,
শ'য়ে শ'য়ে শ্লোগান
আপনি দেখতে পাচ্ছেন?
আপনি শুনতে পাচ্ছেন?
শহরে উৎসবের নাম বদলে মিছিল রাখা হয়েছে
বাবুদের গন্তব্যে দেরী হচ্ছে
পথ-শিল্পে হোঁচট খাচ্ছেন...
হাতে, পায়ে মাছির ভিড়, উফ!
কী অসহ্য উন্মাদনা
বাবুরা, রাস্তা সারাই হচ্ছে
অটঠাস্যের শলাপরামর্শে উলঙ্গ নৃত্য করতে করতেই
অপেক্ষা করুন,
অপেক্ষা করতে শিখুন
বিনামূল্যে প্রসাদ আপনারাও পাবেন।
প্রতিবাদ জারি থাকুক। এই লেখাগুলোর ভালোমন্দ হয় না৷ কারণ এগুলো উচ্চারণ। মানুষের প্রতি। শিরদাঁড়ার প্রতি। আপনারা পড়লে খুশি হবো।
আজ এখানেই শেষ করছি। আবার আগামীকাল আসব অন্য কিছু নিয়ে। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন।
টাটা
পোস্টের ধরণ | স্বরচিত কবিতা |
---|---|
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে খুবই সুন্দর একটি কবিতা শেয়ার করেছেন। আসলে আপু কবিতা পড়তে আমার কাছে খুবই ভালো লাগে । ঠিক আপনার পোষ্টের মাধ্যমেও আজকে আমি আরো নতুন একটি কবিতা পড়তে পেলাম। সত্যি কবিতাটি দারুন ছিল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ লিখে শেয়ার করার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ জানবেন৷ কবিতার পাঠক চিরকালই কম৷ আপনি পড়লেন দেখে খুশি হলাম। ভালো থাকবেন৷