বিখ্যাত সাহিত্যক বিমল করের জন্মদিনে কিছু কথা। জেনারেল রাইটিং
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
একসময় ভীষণভাবে মাথায় চেপেছিল ছোট গল্প লিখব। যারা ছোট গল্প লেখেন তাদের সাথে এই ইচ্ছের কথা ভাগ করতেই আমায় বললেন বিমল কর পড়তে। আজ থেকে প্রায় বছর তিন চার আগেকার কথা। বই পড়ায় আমার যেহেতু কখনোই কোন অবসাদ নেই বা অনিচ্ছা নেই তাই সাথে সাথেই অ্যামাজন থেকে হারিয়েছিলাম বিমল করের পঞ্চাশটি ছোটগল্পের একটি সমগ্র। এটি শেষ করেই শুরু করেছিলাম কিকিরা সমগ্র৷ আমি গোয়েন্দা গল্পগুলো পড়তে বেশি ভালোবাসি। তাই যখন বিমল কর-এরও এক অদ্ভুত সুন্দর গোয়েন্দা চরিত্র রয়েছে, সেটাই পড়তে শুরু করলাম।
কিকিরা, কিঙ্কর কিশোর রায় বিমল করের এক অদ্ভুত সৃষ্টি। ফেলুদা বা ব্যোমকেশের মতো একপেশে সত্যান্বেষী বা গোয়েন্দা নন। তিনি ছিলেন চমৎকার জাদুকর এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন গোয়েন্দা। ঠিক যেন হ্যারি হুডনি আর শার্লক হোমসের মেলবন্ধন। তার চমৎকার জাদু বলে নানান অপরাধীর পর্দা খুব সহজেই ফাঁস করে দিতেন। যেমন তন্ত্র মন্ত্রের গোলযোগ কিংবা অবিশ্বাস্য অলৌকিক কাণ্ডকলাপের ভেতরে ঢুকে টেনে বের করে আনতেন সত্য ঘটনা। তিনি ম্যাজিশিয়ান ছিলেন বলেই নানান ধরনের ভেলকিবাজি ও বুজরুকির সত্য উদঘাটন সহজেই করতে পারতেন।
এই অপূর্ব এবং চমৎকার চরিত্রটির স্রষ্টা বিমল কর জন্মেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের টাকীতে ১৯২১ সালের ১৯সে সেপ্টেম্বর , ছেলেবেলাটা তার অধিকাংশই বিহার রাউরকেল্লা এই জায়গাগুলোতে কাটার কারণে তার অধিকাংশ ছোটগল্পে এই সমস্ত জায়গার উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে কি জানেন বিমল কর পড়াশোনায় অত্যন্ত ভালো ছিলেন। কলকাতায় এসেছিলেন মেডিকেল পড়তে। তাঁর সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ ডাক্তারি পাস করতে দেয়নি। মাঝপথে ডাক্তারি পড়া ছেড়ে বিএ পড়লেন বিদ্যাসাগর কলেজে। তার কাকা তাকে বেনারসি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন রেলের চাকরি নিয়ে। তবে একজন সাহিত্যিক যেহেতু একটি শিল্পী তাই তাকে কোন চাকরি বা ধরা-বাঁধা নিয়মের মধ্যে বেঁধে রাখতে পারেনি। সে কারণেই হয়তো সব ছেড়েছুড়ে আবার কলকাতায় চলে এসেছিলেন এবং নানান পত্রপত্রিকায় কাজ নিয়েছিলেন। অত্যন্ত বুদ্ধিমান মানুষ সাহিত্যে এলে তার সাহিত্য কখনো বিফলে যায় না। তারই প্রমাণ সাহিত্যিক বিমল কর।
তিনি ছিলেন মৃত্যুচেতনায় উদ্ভাসিত কথাকার। কত ছোট গল্প এবং উপন্যাসে মৃত্যু বারবার এসেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন বিষন্নতার গল্প নয়, প্রতিটা গল্পে জীবনের মধ্যে তিনি খুজে পেয়েছেন গভীর আশা, নিরবিচ্ছিন্ন আলো। বিমল করের একটি উপন্যাস আছে যার নাম আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, উপন্যাসটিতে একটি যুবক বাংলার বাইরে পশ্চিম দিকে একটি রেলওয়ে স্টেশনের পাশে একটি ছোট্ট কোয়াটারে দুদিনের জন্য ঠাঁই পান এক নারীর অতিথি হিসেবে। যুবকটি ওই গ্রামে এই কোয়াটার থেকে কিছু দূরে এক কুষ্ঠাশ্রমে তাঁর আত্মীয়ের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। ওই নারীটি ওই কুষ্ঠাশ্রমেরই এক কর্মরতাসেবিকা। যুবকটির থাকার জায়গা ছিল না বলে তার কোয়াটারে থাকতে দিয়েছিল। এই গল্পটিতে কোন যৌনতা নেই, প্রেম নেই, লালসা নেই অথচ অদ্ভুত এক মানসিক টানের সম্পর্ক যেখানে মানবিকতার চোরা স্রোত বয়ে গেছে। ছোট গল্প সাধারণত প্রেম পরিণতি বা বিচ্ছিন্নতার ঘেরাটোপে তৈরি হয়। যা বড্ড একঘেয়ে লাগে। কারণ প্রেমের বাইরেও জগতে বৃহত্তর দুনিয়া আছে সেই সম্পর্কে বলার মতো কথার শেষ নেই। বিমল করের লেখায় আমি এমন স্বাদ বহুবার পেয়েছি।
বিমল করের 'অসময়' উপন্যাসটি ১৯৭৫ সালে একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিল। এই উপন্যাসের প্রধান ছয়টি চরিত্র উত্তম পুরুষে প্রত্যেকেই নিজের নিজের কথা বলে গেছেন। যার মধ্যে সম্পর্ক দায়িত্ববোধ স্বাধীনতা বা মৃত্যু সংক্রান্ত নানান প্রশ্ন উঠে এসেছে। জীবন যে আশ্চর্য মায়াময় একটি যাত্রা পথ তা এই বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে প্রস্ফুটিত হয়।
বিমল করে লেখা আর ভাষা অত্যন্ত সহজ সরল। ছোট গল্প ঠিক যেমন ভাবে লিখলে মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে যায় ঠিক সেরকমই লিখেছেন। সাহিত্যিক বিমল কর বর্তমান গল্পকারদের জন্য অগ্রজ। যারা লেখেন তাদের তো শেখার শেষ নেই। অগ্রজদের পড়েই শিখতে হয়। এবং যাদের লেখা থেকে ছোট গল্পের নানার মোড় নানান দিক শেখা যায় তাদের মধ্যে অন্যতম নাম হলেন বিমল কর।
আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। সাহিত্য জগতে বোধ করি দ্বিতীয় বিমল কর আর কোনদিনই আমরা পাব না। তিনি চলে গেছেন কিন্তু তাঁর সৃষ্টির মধ্যেই অমর হয়ে থেকে যাবেন পাঠক সমাজের মাঝে।
বন্ধুরা বিমল করে জন্মদিনে আমার লেখা ব্লগটি এখানেই শেষ করলাম। আবার আসবো আগামীকাল অন্য কিছু নিয়ে, আজ এ পর্যন্তই...
টাটা
পোস্টের ধরণ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি |
৫% বেনেফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
সত্যই বিমল কর মৃত্যুচেতনায় উদ্ভাসিত এক কথা সাহিত্যিক। তার অমর সৃষ্টিগুলি বাংলা সাহিত্যের সম্পদ হিসেবে ধরা হয়। তিনি বরাবর সাবলীল গদ্যে টানটান গল্প লিখতে পছন্দ করতেন। পাঠক চেতনায় উজ্জ্বল তাঁর গল্প বহুলভাবে সমাদৃত। এই ভিন্ন চেতনার পোস্ট আমাকে মুগ্ধ করে দিল। বিষয়ের এত বিভিন্নতাই তোর পোস্টের প্রধান সম্পদ।