খাসির মাংস রেসিপি
আপনারা সকলে কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজকে আমি খাসির মাংস রেসিপি নিয়ে হাজির হয়েছি।
খাসির মাংস থেকে কম বেশি সকলেই ভালোবাসে । আমি তো মুরগির মাংস থেকে খাসির মাংস খেতে ভীষণ পছন্দ করি। আমি বললে ভুল হবে। আমার পরিবারে মামারা প্রত্যেকে। এছাড়া মা , বাবা, বোনরা প্রত্যেকের খাসির মাংস প্রিয় ।আমাদের বাড়িতে খাসির মাংস খুব একটা হয় না। হয়তো মাঝে মাঝে এক আধ বার হয়। যখন সবাই এক জায়গায় মিলিত হয় ।তখনই আমরা খাসির মাংস রান্না করি। এছাড়া আমার বর যখন বাড়ি আসে তখন খাসির মাংস নিয়ে আসে। এছাড়া যে কোনো অনুষ্ঠান বাড়িতে খায় । শুধু নিজের জন্য রান্না করতে ইচ্ছে করে না।বর শুধু মাংস নিয়ে আসে তা নয়। বাজার করে নিয়ে এসে রান্না ও নিজের হাতে করে।
প্রিয় মানুষের হাতে প্রিয় খাবার তৈরি খেতে সত্যিই অপূর্ব লাগে। এছাড়া মা, দিদার হাতে রান্না ও খুব সুন্দর লাগে। আমার মা গ্যাসের থেকে কাঠের জ্বালে বেশি ভালো রান্না করতে পারে । তাই মা গ্যাসের জালে রান্না করতে চায় না। সেদিন ছিল জামাইষষ্ঠী খাওয়া দাওয়া। বাড়িতে বেশ অনেক কয়েকজনই মানুষ। বেশ অনেক টাই খাসির মাংস আনা হয়েছিল। বড় মামা নিজের হাতে করে বাজার থেকে খাসির মাংস কিনে এনেছিল। কারণ বড় মামা ভালো মাংস কিনতে পারে। যেহেতু সেদিন অনেকটাই মাংস ছিল তাই আমি আর মা মিলে রান্না করেছিলাম ।এছাড়াও বোনরা সবাই মিলে জোগাড় করে দিয়েছিল।
খাসির মাংসের বলে কথা সবাই কত মজা করে আনন্দ করে ভাত খাবে। আমাদের তো মনে হয় খাসির মাংসের গন্ধে পেট ভরে যায়। যখন মাংস রান্না করা হয়। মাংসের গন্ধ সারা বাড়ি ভরে ওঠে । আমি খুব সহজ পদ্ধতিতে খাসির মাংস তৈরি করেছি। কারণ আমার মনে হয় বিয়ে বাড়ি থেকে বাড়িতে তৈরি করে খাওয়া অনেক ভালো। শরীরের পক্ষেও ভালো। আমি বাইরের কোন লঙ্কার গুঁড়ো বা আলাদা বাইরের কোন মশলা ব্যবহার করিনি। আমরা রোজ বাড়িতে যেসব মসলা দিয়ে রান্না করি সেই গুলি ব্যবহার করেছিলাম। আসলে বিয়ে বাড়ি মাংস রান্না অনেক রিচ হয়। অনেক সময় বিয়ে বাড়ির মাংস খেয়ে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। কিন্তু আমি বাড়িতে রান্না করলে। সবাই আমার হাতের রান্না খুব পছন্দ করে। অনেকে মাংস ম্যারিনেট করে রেখে দেয়। কিন্তু আমি মাংস ম্যারিনেট করি না।
নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | খাসির মাংস | ১ কেজি ৫০০গ্ৰাম |
২ | আলু | ৫০০গ্ৰাম |
৩ | সরষের তেল | ১০০গ্ৰাম |
৪ | গোটা জিরে | ১চামচ |
৫ | শুকনো লঙ্কা | ২ টো |
৬ | তেজপাতা | ২ টি |
৭ | লবঙ্গ | ৪ টি |
৮ | দারচিনি | ১ টুকরো |
৯ | এলাচ | ২টি |
১০ | গোলমরিচ | ৪টি |
১১ | পেঁয়াজ | ২৫০গ্ৰাম |
১২ | রসুন | ১০০গ্ৰাম |
১৩ | কাঁচা ও পাকা লঙ্কা | ৭৫গ্ৰাম |
১৪ | আদা | ১০০গ্ৰাম |
১৫ | টমেটো | ১টা |
১৬ | গোটা রসুন | ২টি |
১৭ | হলুদ | ২চামচ |
১৮ | লবণ | ৪চামচ |
১৯ | কাঁচা পেঁপে | ১টা |
২০ | মিট মশলা | ১চামচ |
২১ | গরম মশলা | ১চামচ |
২২ | ধনে গুঁড়ো | ২চামচ |
২৩ | গোটা জিরে | ৩০গ্ৰাম |
প্রথম ধাপ
প্রথমে আমি মাংসটাকে ভালো করে বেছে ধুয়ে নিয়েছি। কারণ খাসির মাংসের অনেক ছোট ছোট লোম থাকে ।সেগুলো ভালো করে বেছে নিতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ
এরপরে কড়াই গ্যাসে বসিয়ে পরিমাণ মত তেল দিতে হবে। এরপর কেটে রাখা আলু গুলো ভালো করে ভেজে নিতে হবে। আলুগুলো ভাজার সময় সামান্য লবণ, হলুদ দিয়ে ভাজতে হবে। লবণ, হলুদ দিয়ে আলু ভাজলে আলু গুলো একটু নরম হয়।
তৃতীয় ধাপ
আলুগুলো লাল লাল করে ভাজা হয়ে গেলে কড়াই থেকে তুলে নেব।
চতুর্থ ধাপ
এরপর কড়াইয়ে তেলের মধ্যে আমি দুটি তেজপাতা, চারটি লবঙ্গ ,দুটো ছোট এলাচ, এক টুকরো দারুচিনি ,দুটি শুকনো লঙ্কা, ছোট এক চামচ জিরে দিয়েছি।ও গুলো ভালো করে গরম তেলে নাড়াচাড়া করে ভেজে নিতে হবে।
পঞ্চম ধাপ
এরপর কড়াইয়ের তেলের মধ্যে কেটে রাখা পেঁয়াজ গুলো দিয়ে দিতে হবে। পেঁয়াজ গুলো একটু ভাজা হলেই ওর মধ্যে টমেটো দিয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করে নিতে হবে।
ষষ্ঠ ধাপ
পেঁয়াজ আর টমেটো ভাজা হয়ে গেলে এরপর বেছে রাখা মাংসগুলো কড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে।
সপ্তম ধাপ
কড়াইতে মাংসগুলো দিয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করতে হবে। এরপর সামান্য হলুদ আর লবণ দিয়ে নাড়াচাড়া করে ঢাকা দিয়ে দিতে হবে। কারণ মাংস দিয়ে জল বেরোয় ।তাই জল যতক্ষণ না শুকাবে ততক্ষণ নাড়াচাড়া করতে হবে আর ঢাকা দিতে হবে।
অষ্টম ধাপ
জল যখন শুকিয়ে আসবে তখন পেস্ট করে রাখা মসলাগুলো দিয়ে দিতে হবে। মসলাগুলো দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে। আমি দুটো রসুন ভালো করে ধুয়ে রেখেছিলাম কষানোর সময় রসুন দুটি মাংসের ভেতর দিয়ে দিয়েছি। এছাড়া এক চামচ মিট মসলা ও কয়েকটি কাঁচালঙ্কা কেটে দিয়েছি। খাসির মাংসের রসুন দিলে নাকি খেতে আরো ভালো হয়। এছাড়াও মশলার মধ্যে রসুন পেস্ট করে দিয়েছি। সবকিছু দিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে ঢাকা দিয়ে দিয়েছি।
নবম ধাপ
মসলাগুলো কষিয়ে নেয়ার সময় ভেজে রাখা আলু আর কেটে রাখা পেঁপে গুলি মাংসের মধ্যে দিয়ে ভালো করে কষতে হবে। পেঁপে গুলো আমি আগে ভেজে নিয়নি । কারণ পেঁপে তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়ে যায়। খাসির মাংসে পেঁপে দিলে মাংস ভালো সিদ্ধ হয়।
দশম ধাপ
মাংসগুলো কষার সময় আমি পরিমাণ মতো জল গরম করে নিয়েছি।মাংস কষতে হবে আর অল্প অল্প করে গরম জল দিতে হবে। আর মাংস নাড়াচাড়া করতে হবে। নয়তো মাংস কড়াইতে লেগে যেতে পারে।
একাদশ ধাপ
এরপর পরিমাণ মতো জল দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। খাসির মাংস সিদ্ধ হতে দেরি হয় ।তাই মাংস অনেকক্ষণ ফোটাতে হবে। শেষে ঢাকনা খুলে গরম মসলা দিয়ে একটু ভালো করে নাড়াচাড়া করে নিতে হবে। এরপরই তৈরি হয়ে গেল খাসির মাংস।
আমি খাসির মাংসের পরিমাণ মতো সবকিছু ব্যবহার করেছি। এছাড়া সানরাইজ গরম মসলা আর মিট মসলা ব্যবহার করেছি। আমি অনেকটা মাংস রান্না করেছিলাম। তাই আমার মসলা অনেক বেশি লেগেছিল। আসলে বাড়িতে রান্না করলেও অনেকটাই করতে হয়। কারণ রান্না করে আশেপাশে বাড়িতে এছাড়া মামার বাড়িতেও দিতে হয়। সেদিন মাংস রান্না খুব সুন্দর হয়েছে। আপনারা এইভাবে রান্না করলে আশা করি খুব সহজেই তৈরি হয়ে যাবে খাসির মাংস। যেহেতু মাংসের পরিমাণটা বেশি ছিল তাই আমি দুটো করাই ব্যবহার করেছিলাম। খাসির মাংস ভাত দিয়ে খেতে ভীষণ ভালো লাগে। এ ছাড়া রুটির সাথে কিংবা লুচির সাথে খেতেও ভালো লাগে। আপনারা এই পদ্ধতিতে খাসির মাংস রান্না করলে খেতে খুবই সুস্বাদু হবে ।আজ এই পর্যন্তই থাক আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। পরে আবার নতুন কোন পোস্ট নিয়ে হাজির হবো।
দিদি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দারুন একটি রেসিপি আমাদের সাথে ভাগ করার জন্য। খাসির মাংস আমরা প্রত্যেকেই কম বেশি খেতে পছন্দ করি। আমারও খাসির মাংস অনেক পছন্দ। আমার মা অনেক সুন্দর করে খাসির মাংস রান্না করতে পারে। ঠিক যেমনটা আপনি দেখিয়েছেন।
যাইহোক দিদি আপনার পুরো রেসিপি পড়ে ভালো লাগলো। আপনি সবগুলো বিষয় বিস্তারিতভাবে আমাদের বলেছেন। এমন কম রেসিপি আমি পেয়েছি যেখানে এমন বিস্তারিত ভাবে বলা থাকে। এই দিক থেকে আপনার রেসিপি আমার মনে ধরেছে। অবশ্যই বাড়িতে আমার স্ত্রীকে আপনার রেসিপি দেখাবো এবং বাসায় চেষ্টা করবো করার।
ভালো থাকবেন দিদি। শুভ কামনা রইলো।
Congratulations, your comment has been successfully curated by our team via @steemdoctor1 at 5%
Thank you very much for supporting me...
সত্যি কথা বলতে কি আমার নিজেরও খাসির মাংস অনেক পছন্দের একটি খাবার। তবে দেখা যায় আপনাদের মত আমাদের বাসায়ও খাসির মাংস খুব একটা রান্না করা হয় না।
সত্যিই আপনি যেভাবে খাসির মাংস রেসিপি শেয়ার করেছেন সেটা অনেক সুন্দর হয়েছে। তবে আমি কখনো খাসির মাংসের সাথে কাঁচা পেপে খাইনি। আপনার পোস্টের রেসিপি অনুযায়ী একদিন বাসায় রান্না করার চেষ্টা করব।
সুন্দর রেসিপি নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
Your post has been successfully curated by our team via @steemdoctor1 at 30%.
Thank you for your committed efforts, we urge you to do more and keep posting high-quality content for a chance to earn valuable upvotes from our team of curators and why not be selected for an additional upvote later this week in our top selection.
সত্যি কথা বলতে আমি খাসির মাংস তোমার একটা পছন্দ করি না। তবে আমার পরিবারের সবাই পছন্দ করে তাদের জন্য আমি আপনার মত করেই রান্না করি। তারাও খেতে অনেক বেশি ভালোবাসে। আমার কাছেও মনে হয় গ্যাসের চুলায় রান্না করার চাইতে, মাটির চুলায় রান্না করাটা উত্তম। কেননা মাটির চুলায় রান্না করা খাবার গুলো অন্যরকম একটা মজা পাওয়া যায়। ধন্যবাদ খাসির মাংস রান্না করার পদ্ধতি আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।
আপনার মত আমার মা গ্যাসের থেকে কাঠের জ্বালে রান্না করতে বেশি পছন্দ করে। কাঠের রান্নার স্বাদ সত্যিই একদম আলাদা। আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
বরাবরের মতো আমি যেটা পছন্দ করি, আমি সেটাই আপনার সাথে শেয়ার করেছি। তবে দেখা যায় আপনার মায়ের সাথে আমার কিছুটা মিল রয়েছে। এটা ঠিক গ্যাসের চুলায় রান্না করলে যে স্বাদ পাওয়া যায়। তার চাইতে অনেক দ্বিগুণ পরিমাণে স্বাদ পাওয়া যায়। যখন আমরা কাঠের চুলায় রান্না করি। বিশেষ করে মাটির চুলায় মাটির চুলায় রান্না করা খাবার গুলো অন্যরকম একটা স্বাদ এবং অনুভূতি আমাদের মনে নিয়ে আসে। আপনাকেও ধন্যবাদ।
আজ আপনি আমাদের মধ্যে অনেকের পছন্দের একটা খাবারের রেসিপি নিয়ে হাজির হয়েছেন। অনেকের কাছে খাসির মাংস অনেক বেশি প্রিয় তবে আমি পছন্দ করি না। বাড়িতে আমার বাবা খাসির মাংস পছন্দ করে তবে আমি আমার পছন্দ করি না। বাড়িতে আমরা খাইনা বলে বাবাও নিজের জন্য কিনে আনে না তবে আমাকে খাওয়ার জন্য জোর করে। জীবনে ১/২ খেয়েছি হয়ত খাসির মাংস তবুও সেটা বাবা জোর করেছে বলে। ভালো থাকবেন।
আপনার খাসির মাংসের রেসিপিটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে দেখে তো জিবে জল চলে এসেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আমার পোস্টটিতে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমি খাসির মাংস খাই না, তবে যেহেতু আমার হাজব্যান্ডের এটি ভীষন প্রিয় তাই রান্না করতেই হয়। আমি অবশ্য কড়াইতে খুব ভালো করে কষিয়ে প্রেসার কুকারে দিয়ে সেদ্ধ করি। তবে হ্যাঁ সময় বেশি লাগলেও কাঠের জ্বালে রান্না করলে মাংসের স্বাদ একটু বেশিই হয়।
আমি রান্না করতে করতে কড়াইতে মাংস ভালো সিদ্ধ হয়ে যায়। প্রেসার কুকারের খাবার আমার খুব একটা ভালো লাগে না। বানানটি হয়তো লেখার সময় ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু আমি অনেকবার চেক করেছিলাম আমার চোখে পড়েনি। অনেক সময় লেখা টাইপ করতে গিয়ে উল্টোপাল্টা উঠে পড়ে ।তাই হয়তো ভুল হয়ে গেছে। পরেরবার বানান ভালো করে দেখে লেখার চেষ্টা করব।
খাসির মাংস আমি নিজে ও আমার ছেলেরা তেমন একটা পছন্দ করে না। আমার সব বর এবং আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন ভীষণই পছন্দ করে।
আমার কাছে মনে হয় যে কোন রান্নাই কাঠের জালে রান্না করলে বোধ হয় সেটা ভালো হয় বেশি।
এত চমৎকার একটি রেসিপি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন সব সময়।
আপনি ঠিকই বলেছেন কাঠের জ্বালে রান্না সব থেকে বেশি ভালো। আমার পোস্টে কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ।
খাশির মাংস আমার ততটা ভালো লাগে না, তবে আপনার আজকের রেসিপি দেখে মনে হলো রান্না টা খুব মজার হয়েছিল, আপনি সুন্দর ভাবে উপকরণ গুলোর নাম প্রথমে দিয়েছেন, এর পর প্রতিটি ধাপে ধাপে রান্নাটা দেখিয়েছেন, মন এহচ্ছে আমি নিজেও এই রান্না এখন করতে পারব। ধন্যবাদ আপনাকে।