গল্প-গল্পটা আমাদের||

in আমার বাংলা ব্লগ7 months ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে আমার অনেক ভালো লাগে। লেখালেখি করা আমার একটি শখের কাজ। তাই মাঝে মাঝে সময় পেলে গল্প লেখার চেষ্টা করি। আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।


গল্পটা আমাদের:

IMG_20231221_154152.jpg


অধরা আর আকাশের পরিচয় ছিল দীর্ঘদিনের। একটু একটু করে কথা বলা থেকে ধীরে ধীরে তাদের মাঝে ভালো লাগার তৈরি হয়। আর সেই ভালোলাগা থেকে কখন যে ভালোবাসার জন্ম হয় তারা দুজনে বুঝতেই পারে না। হয়তো তখন তাদের কিশোর মনে ভালো লাগার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে তাদের ভালোবাসা যেন আরো পূর্ণতা পেয়েছিল। সময় যত যেতে লাগলো দুজনের প্রতি দুজনার ভালোবাসা আরো বেড়ে যেতে লাগলো। অধরা বাবা মায়ের আদরের মেয়ে। অনেক যত্নে বড় হয়েছে সে আকাশ তাকে ভালোবেসে আগলে রাখত। কিন্তু আকাশ সব সময় ভয় পেতো হয়ত অধরা হারিয়ে যাবে। কারণ জীবনের বাস্তবতায় আকাশ নিজেকে অসহায় মনে করেছিল। এভাবে সময়ের সাথে সাথে কেটে গেল অনেকটা দিন। সময়ের সাথে সাথে তাদের ভালোবাসার মধুর বন্ধন যেন আরো বেশি রঙিন হয়ে উঠলো।


একটা সময় দুজনে উপলব্ধি করল কেউ কাউকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। কোন কিছু না ভেবেই তারা দুজন দুজনকে ভালোবেসেছিল। হয়তো দুটি পরিবারকে মানিয়ে নিতে তাদের অনেক কষ্ট হয়েছিল। অবশেষে তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছিল। তাদের জীবনের মুহূর্তগুলো ভালোই কাটছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রঙিন জীবনের রং গুলো হারিয়ে যেতে লাগলো। সেই সাথে তাদের জীবনের ভালোলাগাগুলো বেরঙিন হতে লাগলো। কখন কেনো জানি দুজন দুজনের থেকে দূরে সরে যেতে লাগলো। অধরা আকাশের এই বদলে যাওয়া দেখে দু চোখের জল ফেলতো। কখনো আড়ালে গিয়ে কাঁদতো কখনো বা নীরবে চোখের জল ফেলতো। তবুও সে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। হয়তো ভালোবাসার মানুষটিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল।


সময়ের সাথে সাথে অধরার কাছে তার ভালোবাসার মানুষটি অচেনা হয়ে যেতে লাগলো। যে মানুষটি তাকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল সেই মানুষটি বিয়ের পর ধীরে ধীরে বদলে যেতে লাগলো। আকাশের এই বদলে যাওয়া অধরাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল। তবুও কাউকে কিছু বলতে পারেনি অধরা। শুধু চিৎকার করে কাঁদতে চেয়েছিল। হয়তো সেই চিৎকার করে কাঁদার অধিকার তার ছিল না। ভেতরে ভেতর নিজেকে শেষ হয়ে যেতে দেখেছিল অধরা। তবুও কিছু বলতে পারেনি। ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে পাওয়া অপমান, অবহেলা তাকে যেন আরও বেশি দিশেহারা করে তুলেছিল। সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের তিক্ততা যেন আরও বেড়ে গেল। কখন জানি ভালোবাসা নামক সেই মধুর শব্দটি তাদের জীবন থেকে বিলীন হয়ে গেল। একদিন হঠাৎ করে অধরা জানতে পারল আকাশ অন্য কাউকে ভালোবাসে। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে অধরাকে বলতে পারেনি। অধরা সেদিন কেন জানি আর কাঁদতে পারেনি। হয়তো দু চোখের কান্না শুকিয়ে গিয়েছিল।


অধরা নিজেকে আড়াল করে নিতে চেয়েছিল। তাইতো সে রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে পড়ে অজানা উদ্দেশ্যে। বেরিয়ে পড়ে তার ভালোবাসাকে পেছনে ফেলে দূরে পাড়ি জমানোর জন্য। সেদিন কেন জানি অধরা বড্ড বেশি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। কারণ তার সাথে ছিল তার প্রতি আপনজন। অধরা মা হতে চলেছে এই কথাটি আকাশকে বলা হয়ে ওঠেনি। হয়তো এই কথা শোনার মত সময় আকাশে ছিল না। অধরা নিজের সেই আপনজনকে নিয়ে অজানা উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছিল। হয়তো কোন একদিন আকাশ তাকে খুঁজবে। কিন্তু সেদিন অধরা নিজেকে আরও বেশি আড়াল করে নেবে। দেখতে দেখতে রাতের আলো ফুরিয়ে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। কিন্তু অধরার জীবনে ভোরের আলো আর ফুটেনি। অধরা হয়তো তার আপন মানুষটিকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। তার অনাগত সন্তানের জন্য বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু কিছু নর-পশুর অত্যাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়েছিল অধরা। আর তার ক্ষতবিক্ষত দেহটা পড়েছিল কোন এক রেল লাইনের ধারে।


অন্যদিকে আকাশ অধরার রেখে যাওয়া চিঠি পেয়েছে। অধরা শুধু একটি কথাই লিখেছে "ভালোবাসা গুলো যখন হারিয়ে যায় তখন জোর করে কাউকে আঁকড়ে ধরে বাঁচা যায় না। তবুও চাই ভালো থেকো প্রিয়"। হয়তো অধরার রেখে যাওয়া চিঠির কথাগুলো আকাশকে কোন একদিন কাঁদাবে। কিন্তু সেদিন অধরা আর ফিরে আসবেনা। ভালোবাসার মানুষটিকে যখন অবহেলায় হারিয়ে ফেলি আমরা তখন হয়তো তার মূল্য বুঝতে পারি না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে হয়তো তার শূন্যতা অনুভব করি। হয়তো এভাবে হাজারো অধরা আকাশের জীবন থেকে হারিয়ে যায়। হয়তো কোন এক সময় আকাশ নিজের ভুল বুঝতে পেরে দু চোখের জল ফেলবে। কিন্তু তখন সময়টা অনেক বদলে যাবে। কারণ সময় যে বড্ড অভিমানী। হয়তো এই গল্পগুলো হাজারো আকাশ আর অধরার গল্প। কিংবা গল্পগুলো আমাদের চারপাশের কারো। গল্প গুলো হয়তো শুধুই আমাদের।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  
 7 months ago 

বাহ! চমৎকার লিখলেন আপু! তবে অধরার ব্যাপারটা খারাপ লাগলো। আসলে কবিগুরু এজন্যই বলিছিল, ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করিস না রে পাগলা! বিয়ের পর সব ধূসর হয়ে যায় 🙂। আকাশ একটা সময় ঠিকই বুঝতে পারবে

 7 months ago 

সত্যি ভাইয়া ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করতে নেই। তাহলে বিয়ের পর ভালোবাসা একেবারে ধোঁয়াশায় ভরে ওঠে। ধন্যবাদ আপনাকে মূল্যবান মতামতের জন্য।

 7 months ago 

আপু আপনার লেখা গল্পটি খুব সুন্দর হয়েছে।গল্পটি পড়ে আমার বেশ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 7 months ago 

আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো আপু। মন্তব্য প্রকাশের মাধ্যমে উৎসাহ দিয়েছেন এজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 7 months ago 

সব সময়ের মত আপনি আজকেও অনেক সুন্দর একটা গল্প লিখেছেন আপু। আসলে ভালোবাসার মানুষ যদি এরকম অবহেলা করে, এবং কি পরবর্তীতে সেই মানুষটা যদি অন্য কারো ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে যায় , তাহলে অন্য মানুষটা একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। আর তেমনি অধরার জীবনেও হয়েছে। যে ছেলেটা অধরার জন্য এত বেশি পাগল ছিল এবং কি অধরাকে হারানোর ভয় পেত, সেই ছেলেটা এত বেশি কিভাবে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। অধরা মা হওয়ার কথাটাও বলতে পারেনি। কিছু মানুষরূপী পশুর অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য শেষ পর্যন্ত অধরা ট্রেন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আর তার ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়েছিল সেখানে। আকাশ কখনো তার ভুল বুঝলেও আর অধরাকে পাবেনা।

 7 months ago 

সত্যি আপু অধরা হয়তো বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার জীবনটা দিয়ে দিতে হলো। হয়তো আকাশ কোনদিন ফিরে আসবে। কিন্তু সেদিন আর অধরা কে পাবে না।

 7 months ago 

খুব সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন আপনি। পড়ে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আসলে ভালবাসার মানুষ যদি অবহেলা করে বা অন্য কাউকে ভালবাসে সেটা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টের। অধরার জীবনেও তাই হয়েছে। যেখানে অধরা মা হবার কথা পর্যন্ত বলতে পারেনি। আকাশ একসময় সব বুঝতে পারবে কিন্তু তখন আর কিছুই করার থাকবে না।

 7 months ago 

সত্যিই আপু ভালোবাসা যদি অবহেলায় ভরে ওঠে তখন সেই ভালোবাসাটা অনেক বেশি কষ্টের হয়। অধরার জীবনেও তাই হয়েছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

 7 months ago 

আপু অধরার ভালোবাসার পূর্ণতা পেয়েছে জেনে অনেক ভালো লাগলো। আসলে আপু অবশেষে আকাশ অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসা জেনে সত্যি অনেক খারাপ লাগলো। সবচেয়ে বেশি কষ্টের ছিল অধরা তার মনের কথা মানে মা হতে চলছে তাও অবশেষে বলতে পারেনি।ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 7 months ago 

আসলে মাঝে মাঝে ভালোবাসা পূর্ণতা পেলেও অনেক সময় অপূর্ণই থেকে যায়। হয়তো জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভালোবাসাটা ঠিক থাকে না। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।

 7 months ago 

এরকম গল্প গুলো পড়তে আমার কাছে খুব ভালো লাগে। গল্পটা শুরু থেকে পড়তে ভালোই লাগছিল, তবে শেষের দেখতে পড়ে অনেক খারাপ লেগেছে। তাদের দুজনের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলেও, শেষ পর্যন্ত সুখী হতে পারেনি অধরা। আকাশের এরকমটা করা একেবারেই উচিত হয়নি। প্রথম দিকে তারা দুজন দুজনকে অনেক বেশি ভালোবাসতো। তবে তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাওয়ার পর আকাশ একেবারে পাল্টে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মেয়েটার মৃত্যু হয়েছে সেটা ভাবতেই কষ্ট লাগতেছে।

 7 months ago 

আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। আসলে মাঝে মাঝে শেষ পর্যন্ত হয়তো সুখী হতে পারে না অনেকেই। যাই হোক অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

 7 months ago 

গল্পটা পড়ে ভীষণ খারাপ লাগলো আপু। মানে, মন খারাপ হয়ে গেলো আর কী। আসলেই কত স্বপ্ন আর আশা নিয়ে মানুষ তার মনের মানুষের সাথে ঘর বাঁধে। অথচ কিছু সময় পরেই যেন আর ভালোবাসাই থাকে না। এমন অনেক মানুষই পাওয়া যাবে আমাদের আশেপাশেই। আসলেই যেন তাই -গল্পটা আমাদেরই!

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57849.42
ETH 3122.29
USDT 1.00
SBD 2.43