গল্প-উড়ো চিঠি||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। সময় পেলে গল্প লিখার চেষ্টা করি। আর শুক্রবার মানেই হচ্ছে ব্যস্ততম একটি দিন। প্রতি সপ্তাহের পুরো কাজ যেন শুক্রবারে এসে জমা হয়ে থাকে। তাই শুক্রবারে দম ফেলার সময় পাইনা আমরা। তেমনি আমিও আজকে সারাদিন ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। তবুও একটুখানি সময় করে ছোট্ট একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমাশীল দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই


উড়ো চিঠি:

hearts-6963441_1280.jpg

Source


অধরা কবিতা যেমন ভালোবাসে তেমনি ভালোবাসে গান। গান গাইতে তার বেশ ভালো লাগে। হঠাৎ একদিন অধরা একটি ফেসবুক গ্রুপে কিছু কবিতা পেল। কবিতার লাইনগুলো তার এতটাই ভালো লাগলো যে মনের অজান্তেই গান গাওয়ার চেষ্টা করল। গানের সুর আর লেখকের অনুভূতি থেকে দারুন একটি গান হয়ে গেল। অধরা বাবা-মার একমাত্র মেয়ে। বাবা মার কাছে করা তার আবদার কখনোই অপূর্ণ থাকেনা। তাই তো সে এবার বাবাকে বলেই ফেলল সে এই কবিতা থেকে গান করতে চায়। সেই কথা মত অধরার বাবা সব কিছুর আয়োজন করলেন। অধরা গান গাইলেন। প্রথম গানেই শ্রোতারা মুগ্ধ হল। গানের কথা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে ভালো লাগার তৈরি হলো। অধরা আবারও অপেক্ষায় রইলো নতুন কোন কবিতার।


এভাবে কিছুদিন যেতে না যেতেই অধরা আবারও একটি কবিতা পেল। এবারও অধরা কবিতা থেকে গান গাওয়ার চেষ্টা করল। কবিতার ভাষায় তার হৃদয়ে যেন ভালোলাগার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই মানুষটিকে কল্পনায় ভালোবেসে ছিল অধরা। এভাবেই চলতে লাগলো আরো বেশ কিছুদিন। কিন্তু অধরা কিছুতেই সেই নাম না জানা অচেনা মানুষটিকে খুঁজে পাচ্ছি না। একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি কবিতার গ্রুপে কবিতাগুলো পোস্ট করত সে। আর আইডির নাম ছিল উড়ো চিঠি। অধরা বিভিন্নভাবে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। এভাবে পরপর অধরা তিনটি গান গেয়ে ফেলল। অধরার গাওয়া গান সবার কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করল। কিন্তু অধরার মনে সেই অপূর্ণ ইচ্ছে থেকেই গেল। অধরার কেন জানি সেই মানুষটিকে দেখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেল। হয়তো তার কবিতা পড়ে তার প্রেমে পড়েছিল অধরা।


অধরা অনেকভাবে চেষ্টা করেছিল তার সাথে দেখা করার। কিন্তু সে কিছুতেই সামনে আসতে চাচ্ছিল না। কেন জানি নিজেকে আড়াল করে নিয়েছিল সে। হয়তো সবার সামনে আসার তার কোন ইচ্ছেই ছিল না অধরার। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়েছিল সে। কিন্তু অধরা কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছিল না। অচেনা সেই মানুষটির প্রতি তার ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল। একদিন হঠাৎ করে অধরা তার প্রিয় বান্ধবীকে সবকিছু খুলে বলল। অধরার বান্ধবী সব কিছু শুনে তার আইডি দেখতে চাইলো। হঠাৎ করে মেয়েটি চমকে উঠল। অধরা তার বান্ধবীকে চমকে উঠতে দেখে অনেকটা অবাক হল। এরপর মেয়েটি বলল সে তাকে চেনে। আসলে সে কারো সামনে আসতে চায় না। তাই হয়তো অধরার থেকেও নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে সে।


অধরা তার প্রিয় বান্ধবীর মুখে সেই কথাগুলো শুনে অনেকটা অবাক হয়ে গেল। এরপর তার বান্ধবীকে অনেক অনুরোধ করল তার সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু মেয়েটি কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। হয়তো এর পেছনে অনেক কারণ আছে। এবার অধরার অনুরোধে বাধ্য হয়ে মেয়েটি সেই ছেলেটির বাড়ির ঠিকানা দিল। আর বলল সেই ছেলেটির নাম আবির। আবির নামটি শোনার সাথে সাথে অধরার মনে পুরনো কিছু কথা ভেসে উঠলো। অধরা অনেক উৎসাহ নিয়ে এক গুচ্ছ গোলাপ হাতে আবিরের বাড়িতে গেল। ছেলেটির বাড়িতে গিয়ে চারপাশের দেয়ালে অধরা তার নিজের ছবি দেখতে পেল। অধরা নিজের ছবি দেখে অনেকটা অবাক হলো। সে কিছুই বুঝতে পারছিল না এরপর অধরা দেখল কেউ একজন বসে আছে। আফছা আলোতে তার মুখটা দেখা যাচ্ছে না। অধরা তখন এক পা দু পা করে এগিয়ে গেল। ঠিক যখন সেই মানুষের সামনে গিয়ে অধরা দাঁড়ালো তখন অধরা অনেকটা অবাক হলো। কারণ এই ছেলেটিকে সে অনেক আগে থেকে চেনে। অধরা কে বাঁচাতে গিয়ে গাড়ির নিচে পড়েছিল ছেলেটি। অধরা পরে জানতে পারে এক্সিডেন্টের পর সেই। ছেলেটি তার নিজের দুই পা হারিয়ে ফেলেছে।


অধরা ছেলেটিকে অনেক খুঁজেছিল। কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাইনি। অধরা জানতো ছেলেটি তাকে পছন্দ করে। হয়তো ভালোবাসে। কিন্তু সেদিনের এক্সিডেন্টের পর অধরা কিছুতেই তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। কিন্তু সেই ছেলেটি যে তাকে কবিতা পাঠাতো সেটা অধরা বুঝতেই পারেনি। এবার অধরা এক গুচ্ছ গোলাপ হাতে ছেলেটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ছেলেটি মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল তোমার সাথে একসাথে পথ চলতে চেয়েছিলাম কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমাকে সেই ক্ষমতা দেননি। এবার অধরা বলল সৃষ্টিকর্তা হয়তো আমার জন্যই তোমার চলার শক্তি কেড়ে নিয়েছেন। আজ থেকে দুজনের একসাথে পথ চলার দায়িত্ব না হয় আমি নিলাম। এবার দুজনের অশ্রুসিক্ত নয়নে এই গল্পের সমাপ্তি ঘটে। এভাবে একটি সুন্দর প্রেমের পূর্ণতা পায়।


❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

Sort:  
 2 years ago 

আপু আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগল। সত্যি আপু আবির নামক ছেলেটি অনেক মহা বলা চলে।তার ভালোবাসার জন্য নিজের দুটি পা হারিয়ে। তাই সে অধরার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে। যাইহোক অধরা ও আবিরের ভালোবাসার পূর্ণতা দিয়েছে। অবশেষে দুজনের মিলন হয়েছে জেনে অনেক ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

আমার লেখা গল্পটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুবই ভালো লাগলো আপু। আসলে আবির নিজেকে আড়াল করতে চেয়েছিল কারণ নিজের পা হারিয়েছে সে। যাই হোক আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক ভালো লেগেছে আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আপনার লেখা উড়ো চিঠি গল্পটা পড়ে খুবই ভালো লেগেছে আমার কাছে। অধরা কবিতা খুবই পছন্দ করত। ফেসবুকে যখন সে একটা কবিতা দেখল তখন তার কাছে খুবই ভালো লেগেছিল, তাই সে গান গাওয়া শুরু করেছিল সেই কবিতাটিকে তুলে ধরে। এভাবে সে গান গেয়ে প্রত্যেকটা মানুষের মন জয় করে নিয়েছিল। কিন্তু তার জানার ইচ্ছা ছিল যে এই কবিতাগুলো লিখিত সে কে এবং তার সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছিল। অবশেষে তার দেখা মিলল এবং সে ওই ছেলেটাকে চিনতে পেরেছিল। ছেলেটা অধরার জন্য তার দুটি পা হারিয়ে ফেলেছিল। অবশেষে তাদের ভালোবাসাটা পূর্ণতা পেয়েছে এটা জেনেই ভালো লেগেছে।

 2 years ago 

অধরা আবিরের লেখা কবিতা গুলো খুবই পছন্দ করত। তাই তো সেই কবিতা থেকে গান তৈরি করে গান গাওয়ার চেষ্টা করত। আপনার মন্তব্য পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

গল্পটি বেশ সুন্দর লিখেছেন আপু। পড়ে বেশ ভালো লাগলো। ভালোবাসা এমনই হয় সত্যিকারের ভালোবাসা ভালোবাসার মানুষের জন্য সব কিছু করতে পারে। যেমন করেছে আপনার গল্পের আবির। অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আপু আমি চেষ্টা করেছি সুন্দর একটি গল্প লিখে শেয়ার করার জন্য। ঠিক বলেছেন আপু সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো এমনই হয়। যাই হোক শেষে দুজনের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

সত্যি ভালোবাসাগুলো আসলে এমনই হয়।খুব সুন্দর লিখেছেন।আজ দুজনের ভালোবাসায় পূর্নতা পেলো জেনে খুব ভালো লাগলো। ভালোবাসার মানুষের জন্য মানুষ সব করতে পারে।আর এটাকেই বলে পিওর ভালোবাসা।ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

ভালোবাসা পূর্ণতা পেলে সত্যি অনেক ভালো লাগে আপু। তাইতো ভালোবাসার সুন্দর একটি গল্প আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুবই ভালো লাগলো আপু।

 2 years ago 

আপু আপনার গল্পটি পড়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো। সত্যিকারের ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়। একজন অন্যজনকে সত্যিকারের ভালবাসলে তার জন্য সব কিছুই করতে পারে। অবশেষে তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে

 2 years ago 

আমার লেখা গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে এবং গঠনমূলক মন্তব্য করেছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো। আসলে ভালোবাসা পূর্ণতা পেলে অনেক ভালো লাগে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মতামতের জন্য।

 2 years ago 

অসাধারণ একটি গল্প লিখেছেন আপু। এমন গল্পগুলো পড়তে আমার খুব ভালো লাগে যেখানে ভালোবাসার পূর্ণতা পায়। আপনার গল্পটি সত্যিই আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আবির নামের ছেলেটি ভালোবাসার জন্য নিজের দুটি পা হারিয়ে ফেলেছে জেনে কষ্টও লাগছে আবার ভালোও লাগছে। এত সুন্দর একটি গল্প লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।

 2 years ago 

এই গল্প পড়তে আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। আসলে সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো পূর্ণতা পেলে অনেক ভালো লাগে। গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।

 2 years ago 

আরে আর বলেন না। সারা সপ্তাহ শুধু ৫০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হয়। আর একটি একটি দিনে আসলে সকালে দম বন্ধ হয় আর সন্ধ্যা দম খোলে। কি করে যে বেঁচে থাকি। আজ কিন্তু আমারও অবস্থা খারাপ। তবে গল্পটির শেষে এত সুন্দর করে মিলন ঘটালেন যে তা যেকোন নাটক আর সিনেমা কেও হার মানাবে। তাদের কান্নার সাথে আমিও একটু কাদঁলাম।

 2 years ago 

ছুটির দিনগুলোতে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আর সেই সময়গুলোতে দম ফেলার সময় থাকে না। আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভীষণ ভালো লাগলো আপু। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে নিজের মূল্যবান মতামত তুলে ধরার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.14
TRX 0.35
JST 0.035
BTC 116053.61
ETH 4662.59
SBD 0.86