আজকে আমি আপনাদের সামনে একটি নাটকের রিভিউ নিয়ে হাজির হয়েছি। নাটকের নাম হচ্ছে কালো বউ। এই নাটকটি এই মাসের প্রথম সপ্তাহে রিলিজ হয়েছে। যাইহোক এই নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছে মোশাররফ করিম এবং সামান্তা পারভেজ। এই নাটকটি মূলত একটি শিক্ষণীয় নাটক,তাই দেখতে খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে। মাঝেমধ্যে সময় পেলে আমি বাংলা নাটক দেখি। একসময় হিন্দি মুভি অনেক দেখা হতো, তবে এখন এতোটা সময় নিয়ে মুভি দেখার সময় হয়ে উঠে না। তাই বিনোদনের জন্য অল্প সময়ে বাংলা নাটক দেখা হয়। যাইহোক আপনাদের সাথে এই নাটকের রিভিউ শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করি আপনাদের কাছে খুব ভালো লাগবে।

নাটকের শুরুতে দেখা যায়, মোশাররফ করিম তার মামা এবং ঘটকের সাথে পাত্রী দেখে বের হয়। তো গাড়িতে উঠেই মোশাররফ করিম রাগারাগি করে। কারণ পাত্রী অনেক কালো ছিলো। মোশাররফ করিম প্রায় ২৮/২৯ জন পাত্রী দেখেছে এবং সবগুলো মেয়েই নাকি কালো। আর সেজন্য সে বিয়ে করতে রাজি হয়নি এবং ঘটকের মাধ্যমে একের পর এক মেয়ে দেখতেই থাকে। কারণ মোশাররফ করিমের ইচ্ছে একটি সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করার। তো পরবর্তীতে তারা তিনজন একটি পাত্রী দেখতে যায় এবং সেই পাত্রী হচ্ছে নাটকের নায়িকা। তো মোশাররফ করিম নাটকের নায়িকা অর্থাৎ সামান্তাকে দেখে ভীষণ পছন্দ করে ফেলে এবং সাথে সাথে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে যায়। মোশাররফ করিম মাস্টার্স পাশ করেছে ঠিকই, কিন্তু সে কোনো চাকরি বা ব্যবসা করে না। কারণ তাদের অঢেল সম্পদ রয়েছে।

ইউটিউব থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া হয়েছে

তো সামান্তার বাবা মা রাজি হয়ে যায় মোশাররফ করিমের সাথে তাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে। কিন্তু সামান্তার বাবার একটাই শর্ত, সেটা হচ্ছে কাবিন ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে। সামান্তাকে দেখে মোশাররফ করিম এতটাই পছন্দ করে যে,সেই শর্তে সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়। বিয়ের পর তারা বাসর রাতে অনেক গল্প গুজব করে এবং খুব সুন্দর সময় অতিবাহিত করে। মোশাররফ করিম সামান্তাকে বিয়ে করে খুবই খুশি হয়। কিন্তু পরের দিন সকালেই তার সব খুশি মাটি হয়ে যায়। কারণ সকালে সামান্তা যখন গোসল করে রুমে আসে,তখন তার আসল চেহারা বের হয়ে আসে। আসলে সামান্তা খুব কালো,কিন্তু মেকাপের কারণে তাকে ফর্সা ভেবেছিল মোশাররফ করিম। এটা অবশ্য সামান্তার বাবার কারসাজি। আর সেজন্যই ৫০ লাখ টাকা কাবিন দিয়েছে। যাতে করে মোশাররফ করিম ডিভোর্স দিতে না পারে সামান্তাকে। তো সামান্তার পরিবার এক ধরনের প্রতারণা করেছে মোশাররফ করিমের সাথে।

ইউটিউব থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া হয়েছে

যদিও সামান্তা এবং তার মা নিষেধ করেছিল আসল কথা লুকাতে। কিন্তু সামান্তার বাবা রাজি হয়নি। বরং সামান্তার বাবার ইচ্ছাতেই বিয়েটা হয়। যাইহোক মোশাররফ করিম যখন দেখলো সামাম্তা অনেক কালো,তখন তো তার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। তারপর সে বলে যে কিছুতেই তার সাথে সংসার করবে না। ৫০ লাখ টাকা দিয়ে তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। কিন্তু সামান্তা রাজি হয় না। কারণ সে মোশাররফ করিমকে অনেক ভালোবেসে ফেলে। যাইহোক মোশাররফ করিম সামান্তার বাবাকে ফোন দিয়ে অনেক কথা শোনায়। তারপর মোশাররফ করিম তার মামা এবং ঘটকের সাথেও খারাপ ব্যবহার করে। ঘটক কিন্তু জানতো সামান্তা কালো। কিন্তু সে ইচ্ছে করেই এটা লুকিয়েছে। যাইহোক মোশাররফ করিম বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং সামান্তা তার পিছনে পিছনে যেতে থাকে। মোশাররফ করিম প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করে সামান্তার সাথে। তো এক পর্যায়ে মোশাররফ করিম সামান্তার চোখ ফাঁকি দিয়ে তার বন্ধুর বাসায় চলে যায়।

ইউটিউব থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া হয়েছে

তারপর তার বন্ধুর সাথে সবকিছু শেয়ার করে। তো তার বন্ধু মোশাররফ করিমকে বুঝায় সামান্তাকে ভালোভাবে বুঝার জন্য। যদি সে ভালো হয়,তাহলে কালো হলেও কোনো সমস্যা নেই। হঠাৎ করে বাহির থেকে মোশাররফ করিমের বন্ধুর ওয়াইফ চলে আসে। তারপর তার বন্ধু মোশাররফ করিমের জন্য এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসতে বলে। কিন্তু তার বন্ধুর সুন্দরী বউ তাকে ডেকে নিয়ে ঝগড়া করে,শুধুমাত্র চা বানাতে বলেছে বলে। মোশাররফ করিম সোফায় বসে সব কথা শুনতে পায়। তখন মোশাররফ করিম কিছুটা উপলব্ধি করে, সুন্দরী হলেই হয় না,বরং মনটাও সুন্দর হতে হয়। পরবর্তীতে মোশাররফ করিম রাস্তায় এক্সিডেন্ট করার পর,তার কালো বউ তাকে ভ্যানে করে হসপিটালে নিয়ে যায়। কারণ রাস্তায় তখন কোনো মানুষ ছিলো না। যাইহোক এরপর কি হলো সেটা জানতে হলে আপনাদেরকে অবশ্যই নাটকটি দেখতে হবে।

ইউটিউব থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া হয়েছে

আসলে মানুষের আসল সৌন্দর্য হচ্ছে মনে। যার মন সুন্দর, সে হচ্ছে প্রকৃত সুন্দর। কিন্তু আমরা আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাহ্যিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। এটা একেবারেই উচিত নয়। তাছাড়া প্রতিটি মানুষকে মহান সৃষ্টিকর্তা সুন্দরভাবে তৈরি করেছেন। তাই কাউকে অসুন্দর বললে,সৃষ্টিকর্তা আমাদের উপর নারাজ হয়ে যান। তাই মানুষকে কখনোই অসুন্দর বলা উচিত নয়। যাইহোক এই নাটকে মোশাররফ করিম তার বউকে অনেক অপমান করে শুধুমাত্র কালো বলে। এটা তার একেবারেই উচিত হয়নি। তাছাড়া নায়িকার বাবা মোশাররফ করিমের সাথে প্রতারণা করেছে। নায়িকা যে কালো,সেটা লুকানো মোটেই উচিত হয়নি। কারণ বিয়ের মতো এমন পবিত্র সম্পর্ক মিথ্যা দিয়ে শুরু করাটা ঠিক নয়। এতে করে পরবর্তীতে সংসারে বিভিন্ন ধরনের অশান্তির সৃষ্টি হয়। অনেক সময় সংসার ভেঙে যায়। মোশাররফ করিম এবং সামান্তা এই নাটকে এককথায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছে। সবমিলিয়ে এই শিক্ষণীয় নাটকটি বেশ উপভোগ করেছি।

আমার রেটিং