আমার ছেলেবেলা।steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আজ- ২০ই ভাদ্র , | ১৪২৯ , বঙ্গাব্দ | শরৎকাল ||


আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।




skateboard-g342cc40e5_1920.jpg
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।

শৈশব হচ্ছে মানুষের জীবনের অত্যন্ত প্রিয় একটি স্মৃতি। যে স্মৃতি কখনো ভোলা যায়না। মনের মাঝে গেঁথে থাকে আজীবন। পৃথিবীর সুন্দর সুমধুর দিকটি দেখেছি শৈশবের চোখ দিয়ে। সময় পার হতে থাকে আমারা বড় হয় কিন্তু সেই শৈশবের স্মৃতি আমরা কখনো ভুলতে পারি না।

বাচ্চারা যখন বিভিন্ন দুষ্টামি করে তখন আমি কখনোই তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি না। কেননা তাদের এই মুহূর্তগুলো একসময় তারা বড় হলে তা স্মৃতি হয়ে যাবে। আসলে তাদের এই মুহূর্তগুলো দেখে আমি আমার ছোটবেলায় হারিয়ে যায়। কিন্তু কখনই সেই শৈশবে থাকা অবস্থায় উপলব্ধি করতে পারেনি যে এই সময়টা জীবনের সর্বশেষ্ঠ সময় হয়ে থাকবে। আর হয়তো অনেক কিছু না বোঝার কারণেই শৈশবটা এতটা সুন্দর হয়। শৈশবে আমরা নিজের জন্য একটা আলাদা জগৎ করে নিই নিজের মতো করে।

প্রত্যেকের মত আমার শৈশব ও আমার জীবনের সেরা একটি সময়। আজ আমি চলে এসেছি আমার জীবনে সেই স্বর্ণালী সময়গুলোর গল্প আপনাদের শেয়ার করতে।

এখন আমাকে দেখতে খুবই শান্তশিষ্ট মনে হলেও আমি মোটেও এমন প্রকৃতির ছিলাম না। আমার শৈশবটা কেটেছে বিভিন্ন দুষ্টামি এবং দুরন্তপনার মধ্যে দিয়ে। গ্রামে দুষ্টু ছেলে মেয়েদের তালিকা আমার নাম ছিল সবার শীর্ষে। মারামারি, ঝগড়াঝাঁটি থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি দুষ্টামির খাতায় আমার নাম ছিল। প্রতিদিন কোন না কোন নালিশ আসতো আমার নামে। যা নিয়ে প্রচুর মাইর এবং কথা শুনতে হতো আমাকে। তবে আমি সেসব কোন কিছুকে কোন পরোয়া করতাম না। দুই একদিন আম্মুর কড়া শাসনের সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার শুরু হতো।

আব্বু চাকরি সূত্রে থাকেন শহরে। তবে ছুটিতে যখন বাড়ি আসতেন তখন ওই মুহূর্তটি ছিল আমার জন্য বন্দি জীবনের মত। কারণ ছোটবেলাই আব্বুকে খুবই ভয় পেতাম। যার কারণে আব্বু বাড়িতে আসলে দুষ্টামি করার সাহসও পেতাম না। তবুও কোনো না কোনোভাবে বিভিন্ন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তাম। আর যার কারণে আমার নামে নালিশ আসতো আব্বুর কাছে। যদিও বিষয়গুলো নিয়ে আব্বু আমার কাছে রাগ দেখালেও বাহিরে সকলের কাছে আমারই সাপোর্ট করতেন ।


father-g5a81acf2d_1920.jpg
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।

হাজার দুষ্টামি করা সত্বেও পড়াশোনা একটু ভালো হওয়াই এবং ক্লাসের ফার্স্ট বয় হওয়ায় আব্বু আমাকে খুব আদর করতেন। প্রতিবার শহর থেকে আসার সময় আমার সব পছন্দের জিনিসগুলো নিয়ে আসতেন। আর হ্যাঁ আমি কিন্তু একটি ক্লাস না করেই পরবর্তী ক্লাসে উঠে যায়। অর্থাৎ আমার যখন ৫ বছর বয়স তখন সর্বপ্রথম আমি নার্সারিতে ভর্তি হয় কিন্তু ওখানে দুই এক মাস ক্লাস করার পর আমাকে স্যাররা প্রমোশনের মাধ্যমে ক্লাস ওয়ানে উঠিয়ে দেয়। যার কারনে আমি বয়সের তুলনায় পড়াশোনায় এক বছর এগিয়ে।

যাইহোক যে কথা বলছিলাম, পড়াশোনা ভালো হওয়ার সেই সুবাদে আব্বু আমার আবদার গুলো সব সময় রাখতেন। একদিন বায়না ধরেছিলাম ছুটিতে বাড়িতে আসার সময় আমার জন্য একটি রিমোট গাড়ি নিয়ে আসার । আর ওই সময়টাতে রিমোট গাড়ি মানে এখনকার মতো এতটা সহজ দ্রব্য ছিল না। অনেক বড় একটা ব্যাপার ছিল। আর গ্রাম যেহেতু সেহেতু বুঝতেই পারছেন বিষয়টি কতটি চমকপ্রদ। যাইহোক সেইবার ছুটিতে বাড়িতে আসার সময় আব্বু আমার জন্য অনেক দাম দিয়ে একটা রিমোট গাড়ি এনেছিল।


আর ওই রিমোট গাড়ি দিয়ে আমি আমার বন্ধুদের প্রচুর লোভ লাগাতাম। শুধু প্রিয় কিছু বন্ধুদের দিতাম খেলার জন্য আর যাদের সাথে ঝগড়া হয়েছে তাদেরকে দেখিয়ে দেখিয়ে গাড়ি চালাতাম আর জ্বালাতাম । মানে বুঝতে পারছেন ওই বয়সে স্বভাবটা যেমন থাকে আর কি। আমার ওই রিমোট গাড়িটিতে চারটি ব্যাটারি লাগতো। দুইটি ব্যাটারি রিমোটের জন্য আর দুইটি ব্যাটারি গাড়ির জন্য। প্রথম কয়েকদিন শখ করে রিমোট দিয়ে গাড়ি চালালেও পরবর্তীতে ব্যাটারী শেষ হয়ে যাবে সেই ভয়ে হাত দিয়েই গাড়ি চালাতাম।

গাড়িটি আমার খুবই প্রিয় ছিল। কয়েকদিন গাড়িটা যত্ন করে রাখেলে ও পরবর্তীতে হঠাৎ করে মাথায় আসলো গাড়ির ভিতরে কি আছে সেটা খুলে দেখার। গাড়ি ভেঙ্গে শুধু একটি মোটর এবং চুম্বক খুজে পেয়েছি। আসলে ছোটবেলা থেকে এটা আমার অভ্যাস কোন জিনিস দেখলে ভিতরে কি আছে সেটা দেখার জন্য অধীর হয়ে উঠি ।

যাইহোক আমার শৈশব জীবনে এরকম অনেক ছোট ছোট কিছু স্মৃতি রয়েছে। বলতে বলতে তা শেষ হবে না। আমাদের ছোটবেলাকার গল্পগুলো আমরা না যতটুকু জানি তার থেকে বেশি জানেন আমাদের মা বাবা পরিবার। আমার শৈশবের পুরো সময় কেটেছে গ্রামেই। তাই আমি নিজেকে খুবই ধন্য মনে করি। কেননা গ্রামীণ পরিবেশ এবং শহরের পরিবেশ অনেকটাই ভিন্ন। গ্রামে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থাকা যায়। কিন্তু শহরে সেটির সুযোগ হয় না।

সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  

Hi, @moh.arif,

Thank you for your contribution to the Steem ecosystem.


Please consider voting for our witness, setting us as a proxy,
or delegate to @ecosynthesizer to earn 100% of the curation rewards!
3000SP | 4000SP | 5000SP | 10000SP | 100000SP

 2 years ago 

আপনি দেখছি আমার ভাইয়ের মতই। ছেলে এমনি শান্ত কিন্তু গাড়ি পেলে তার অপারেশন করবেই।তবে আমি ছিলাম ভীষণ ডানপিটে।আমার মা বাবার সামনে যদি কেউ বলতো, "আপনার মেয়ে কে দেখে তো বেশ শান্ত মনে হয়!" বাবা উত্তরে তাদের বলত, "হ্যাঁ খুব শান্ত! ডেমো দেখতে হলে একটা সাজানো গোছানো ঘরে ১ ঘন্টার জন্য ঢুকিয়ে দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিন।দরজা খুললেই নমুনা দেখতে পাবেন।"

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



Hi @moh.arif,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

 2 years ago 

ছোটবেলার এসব কাহিনী হয়তো প্রায় সবারই একই।
বাবা বাসায় আসতে আসতে রাত ১২/১ টা বাজাইতো প্রতিদিনই।আর আমি বাপভক্ত হওয়ায় বাবা না আসা পর্যন্ত ঘুমাতাম না।আসার সময় বাবা হাতে করে কিছু না কিছু আনতো।একদিন এনেছিল একটা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি।আপনার মতো আমিও সেই গাড়িটা কয়দিন চালানোর পর খুলে বিজ্ঞানী হয়েছিলাম।

আপনার লেখা ফিরে সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেছে ভাই।শুভ কামনা রইলো।

 2 years ago 

কয়েকদিন গাড়িটা যত্ন করে রাখেলে ও পরবর্তীতে হঠাৎ করে মাথায় আসলো গাড়ির ভিতরে কি আছে সেটা খুলে দেখার।

ছোটবেলার স্মৃতিগুলো সত্যি অনেক মধুর। কারণ সেই সময় আমরা কতই না দুষ্টুমি করেছি। মায়ের কাছে অনেক মার খেয়েছি এই দুষ্টুমির জন্য। তবে আমার চেয়ে আমার ভাইয়া বেশি দুষ্টুমি করত। আমরা যেহেতু যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি তাই খুব একটা খেলনা কিনার সাহস হয়নি। বাবা চুপি চুপি যদি কোন খেলনা কিনা আনতেন বড় ভাইয়া সেটাকে খুলে একেবারে তছনছ করে ফেলত। আর আমি সেটা দেখে কান্না করতাম। তবে গ্রামে বড় হওয়ার মজা সত্যিই আলাদা। গ্রামীন পরিবেশ, নদীতে গোসল করা, সাঁতার কাটা, সবার গাছের ফল চুরি করা, সবাই মিলে খোলা মাঠে খেলাধুলা করা, সবকিছুই আজ অতীত হয়ে গেছে। ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার অতীতের স্মৃতিগুলো জানতে পেরে। আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো ভাইয়া। ♥️♥️

 2 years ago 

এই অকাজটা আমিও করতাম ছোটবেলায়।যদিও অতো বেশিনা।আমার মূল লোভ ছিলো চুম্বকটা নেওয়ার জন্যে আর শুধু শুধুই খুলতাম।

 2 years ago 

স্বভাবগতভাবেই মেয়ের একটু দুষ্টামি কম করে ছেলেদের তুলনায়।

 2 years ago 

কয়েকদিন গাড়িটা যত্ন করে রাখেলে ও পরবর্তীতে হঠাৎ করে মাথায় আসলো গাড়ির ভিতরে কি আছে সেটা খুলে দেখার। গাড়ি ভেঙ্গে শুধু একটি মোটর এবং চুম্বক খুজে পেয়েছি।

চুম্বকের প্রতি সবারই মনে হয় একটা আকর্ষণ ছিল ছোটবেলায়। আমি তো ছোটবেলায় চুম্বক দেখে ভাবতাম এর ভিতর নিশ্চয়ই কোন যাদু রয়েছে 😆। তবে আমি আমার খেলনা একদমই নষ্ট করতাম না। আমার কিছু কিছু খেলনা এখনো রয়েছে। তবে আমার সমবয়সী একটা কাজিন আছে। আমার প্রায় সবগুলো খেলনা সেই নষ্ট করত। আর এরপরে শুরু হতো যুদ্ধ। শৈশবে সবার জীবনে অনেক স্মৃতি থাকে। আপনার শৈশবের স্মৃতিগুলো জেনে ভালো লাগলো।

 2 years ago 

যে কোন খেলনা নষ্ট করাটা আমার একটা অভ্যাস ছিল। অনেক পছন্দের খেলনা শখ মিটে যাওয়ার পর নষ্ট করে ফেলতাম। পরে অবশ্য আফসোস করতাম খেলাগুলোর জন্য।

 2 years ago 

ছোটবেলায় সবাই কমবেশি দুষ্টু ছিল। ছোটবেলায় আমারও একটি পুতুল ছিল। যেটা রিমোট দিয়ে চলত। আমিও মাঝে মাঝে ব্যাটারি খুলে রাখতাম কারণ সেই সময় মনে হতো যেন ব্যাটারির দাম অনেক বেশি। ভাইয়া আপনার ছোটবেলার গল্প জেনে ভালো লাগলো।

 2 years ago 

আসলেই তখন ব্যাটারির অনেক দাম ছিল। তাই চাইলেই ব্যাটারি চালিত জিনিসপত্রগুলো খুব কমই কেনা হতো।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনি যে ছোটবেলায় এত বেশি দুষ্ট প্রশ্ন দিচ্ছিলেন তা সত্যি আমি আপনার পোস্টটি না পড়লে বুঝতেই পারতাম না। আমার মনে হতো আপনি সকল মডারেটর ভাইয়াদের থেকে একটু ঠাণ্ডা প্রকৃতির। কিন্তু আজকে আবার সে ভুল ভেঙ্গে গিয়েছে 🤣🤣।
শেষ পর্যন্ত আপনি আপনার গাড়িটা কেও ছাড়লেন না। যাইহোক এত দুষ্টামি করার শেষেও আপনার পড়ালেখায় ভালো ছিলেন সে জিনিসটা কিন্তু আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। যে বাচ্চারা অনেক দুষ্টামি করে কিন্তু পড়াশোনা পারেনা তাদের আমার খুব বিরক্ত লাগে। আপনার ছোটবেলার অনেক কথা জানতে পেরে খুব ভালো লাগলো।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার ছেলেবেলার কথাগুলো জানতে পেরে আমার খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে আপনার আব্বু যখন ছুটিতে শহর থেকে বাড়িতে আসতে নিশ্চয়ই ওই সময় আপনার মনের মাঝে ঈদের আনন্দ বিরাজ করতো বা তার চাইতে বেশি। আর ক্লাসে ফার্স্ট বয় হলে সকল বাবা-মা তার সন্তানদের একটু বেশি আদর করে থাকে যাতে পরবর্তীতে এরকম সাফল্য বজায় রাখতে পারে। ভাইয়া আপনার ছোটবেলার কথাগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 67978.59
ETH 3270.89
USDT 1.00
SBD 2.65