বিশ্বাসঘাতকতা ||অতঃপর যা হল পর্ব-২||
হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
আমরা যখন কাউকে বিশ্বাস করে কোন একটি কাজে নিয়োগ করি অথবা কোন কাজের দায়িত্ব অর্পণ করি তখন সেই ব্যক্তিটিকেও বিশ্বাসের মর্যাদা রাখা উচিত। তা না হলে সমাজ থেকে বিশ্বাস শব্দটির উপর বিশ্বাস উঠে যাবে। আমরা আর কখনো কারো প্রতি বিশ্বাস করতে চাইবো না।
আমার জীবনে তেমনি কয়েকটি ঘটনা আছে। আমি অনেকবার মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকেছি। হয়তো সাময়িক আমার কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে আবার সবকিছু সামনে নিয়েছি। ফলস্বরূপ সেই মানুষটি আমার ও সমাজের কাছে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত হলো।
যাইহোক মূল ঘটনায় ফিরে আসি। ইসমাইল সাহেবকে কিছুটা সহযোগিতা করার মন মানসিকতা নিয়ে কুড়িগ্রাম টু মার্কেটের জন্য এমপিও পদে নিয়োগ দিয়েছিলাম। প্রথমদিকে বেশ কয়েক মাস সে ভালোভাবেই তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল।
ধীরে ধীরে সে আমার অনেক কাছে চলে আসে। একপর্যায়ে আমার প্রতি তার আনুগত্য অনেক বেড়ে যায়। তার বাড়িতে মাঝে মাঝে আমাদের দাওয়াত দিয়ে খাইয়েছিল ইসমাইল। তার পরিবারের লোকজনের সাথেও আমার ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। বিশেষ করে তার ছেলের সাথে।
ইসমাইল সাহেবের ছেলে অনার্সে প্রথম বর্ষের ছাত্র। ছেলে খুব ভালো শহরে আসলেই আমার সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা করে। তাদের পারিবারিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। তাই আমি এক মাদ্রাসায় ইসমাইলের ছেলে ফারুকের কাজে ব্যবস্থা করে দেই।
যাইহোক সেটা অন্য বিষয়, সমস্যা দেখা দিয়েছে ডিসেম্বর মাসে এসে বাৎসরিক ক্লোজিং এর সময়। আমরা যারা মার্কেটিং জবের সাথে জড়িত তা হয়তো এই ক্লোজিং এর গুরুত্ব ভালো বুঝতে পারবেন। ডিসেম্বরে ক্লোজিং না হওয়ার কারণে আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম হেড অফিসের চাপে।
ইসমাইল সাহেবকে নিয়ে মার্কেটের প্রত্যেকটি দোকানে কালেকশনের জন্য ঘুরতে লাগলাম। শহরে ও শহরের বাইরে যে ফার্মেসি গুলো আছে সবটা ভিজিট করতে হলো। কিছু কিছু কেমিস্ট টাকা পরিশোধ করলেও অধিকাংশই এখনো বাকি আছে।
ক্লোজিং এর সময় এসে বুঝতে পারলাম ইসমাইল সাহেব বেশ কিছু টাকা অফিসে জমা না করে নিজের প্রয়োজনে ব্যয় করেছে। হয়তো অভাবের তাড়নায় সে কিছুটা এদিক ওদিক করেছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমি তাকে বিশ্বাস করে শহরের একটি মার্কেটের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য নয়।
ইসমাইল সাহেবের এরকম কাজের জন্য আমার নিজের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল। আমাকে হেড অফিস থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে কোনোভাবে টাকা পরিশোধ করে নিজের চাকরিটা বাঁচাতে পেরেছি।
যাইহোক মার্কেটে ঘুরে আসার পর ইসমাইল সাহেবের বাসায় গিয়ে ভাবির সঙ্গে বসলাম সবকিছু নিয়ে আলোচনা করার জন্য। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম মার্কেটের টাকা সরিয়ে ইসমাইল একটি জমি বন্ধক নিয়েছিল। শুনে প্রথমদিকে অনেক রাগ হয়েছিল আমার।
আসলে এই জমিটি এরা বরগা চাষ করত এখন জমির মালিক সমস্যায় পড়ে জমিটি অন্যত্র বন্ধক রাখতে চেয়েছিল। জমিটি ছাড়া তার চাষাবাদের আর কোন জমি ছিল না কারণ তাদের সমস্ত জমি নদী ভাঙ্গনে নষ্ট হয়ে যায়। সবকিছু জানার পর আমি নিজেকে সংযত রাখলাম। আশার কথা হচ্ছে ইসমাইলের স্ত্রী কিছু টাকার বন্দোবস্ত করে দিতে চাইলো।
ইসমাইল সাহেব আমাকে বেশ কিছু টাকা ঋণ করে ফেরত দিয়েছিল। এখন কোনভাবে দুই কুল রক্ষা করা গেছে। তবে চাকরি হারানোর যতটা না ভয় ছিল তার চেয়ে ভয় ছিল বেশি সম্মান হারানোর। কারণ টাকা আত্মসাতের তকমা আমার গায়ে লাগতো। টাকা পরিশোধ করে দিয়ে নিজেকে চাপুন মুক্ত মনে হচ্ছে।
কিন্তু আবারো নিজের বিবেকের কাছে একটি প্রশ্ন উঠছে। ইসমাইল সাহেবকে আমি কি পুনরায় একটি সুযোগ দেব ? নাকি নিজেকে এই দায়বদ্ধতা থেকে গুটিয়ে নেব ? এরকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আমার মনে। নতুন কাউকে নিলে এর চেয়েও খারাপ হতে পারে এমন সম্ভাবনাও আছে। প্রশ্নটা আমার বিবেকের কাছে রয়ে গেল ??? দেখি আপনাদের কাছে কোন সমাধান পাই কিনা।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটলো। তাও আবার প্যারায় ফেলে দিলেন😃। আসলে একদিকে খেয়াল করলে আবার আপনাকে নিয়েগ দেওয়া উচিত তাকে। আবার বিশ্বাসঘাতকতার দিক দিয়ে বিবেচনা করলে নিয়োগ না দেওয়ায় উত্তম। তবে উপকার করা ভালো, আল্লাহ যদি কপালো ভালো কিছু রাখেন অবশ্যই সেটার প্রাপ্য আপনি।
দোয়া রইলো আপনার জন্য যেন কখনো কোন বিপদে না পড়েন। ভালো থাকবেন