মাঝ রাতের শো: পর্ব ৪
নমস্কার বন্ধুরা,
মাঝ রাতের শো: পর্ব ৩ এর পর....
অভীক আবার বললো, এটাই তো তুমি চেয়েছিলে তাই না সুতীর্থা?
অভীক দার কথা শেষ হওয়ার পরেই সুতীর্থার পা স্বপ্নের জগৎ থেকে মাটিতে নেমে আসলো। কয়েক সেকেন্ডের জন্য সে তো বিশ্বাসই করতে পারছিলো না, তার রেডিও সঞ্চালক হওয়ার স্বপ্নটা অবশেষে পূরণ হতে চলেছে। ওদিকে দুদিনের মধ্যে দুর্গাপুরের রেডিও স্টেশনে অফার হয়তো সে পেয়ে যাবে। এদিকে নিজের স্টেশন থেকেও নতুন অফার নিয়ে তার দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে। নিজের দুকানকে কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারছিলো না সুতীর্থা। আজ তার চার বছরের তপস্যা সফল হতে চলেছে। এতদিন ধরে লেগে থাকার ফল হয়তো তাকে ঈশ্বর দিচ্ছেন। এগুলোই বারবার মনে আসছিল।
শুধুমাত্র কলকাতা ছেড়ে আবার শিলিগুড়িতে নতুনভাবে সবকিছু তৈরি করতে হবে সেটা ভেবেই যেনো সুতীর্থা একটু দ্বিধায় ছিলো। দুর্গাপুর হলে সে বাড়ি থেকেই যাতায়াত করতে পারবে, শিলিগুড়ি সেই দুদিনের রাস্তা। সেসব পরে ভাববে শিলিগুড়ির কাজের কথাটা শুনে নেওয়া দরকার। সুদীপ্তা তাই অভীক-কে শিলিগুড়ির কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো।
- অভীক দা, শিলিগুড়িতে আমার এফএম অফিসে আমার জব রোলটা কি? আমাকে কি কাজ করতে হবে?
অভীক সুতীর্থাকে খুলে বলা শুরু করলো। আমার এফএম বোর্ড আদপে শিলিগুড়ি স্টেশন নিয়ে কি ভাবনা করছে সবই সুতীর্থা কে জানালো,
- বোর্ড চাইছে শিলিগুড়ি অফিস থেকে ভবিষ্যতে কমপক্ষে তিনটে শো পরিচালনা করতে। কারণ আমার এফএম-এ দক্ষিণবঙ্গের সঠিক রিপ্রেজেন্টেশন থাকলেও উত্তরবঙ্গের রিপ্রেজেন্টেশন মোটেই নেই। সেই জন্য উত্তরবঙ্গের যে প্রচুর পরিমাণের দর্শক আমাদের নাগালের বাইরে। সেই জন্য বোর্ড চাইছে শিলিগুড়িতে একটা অফিস খুলতে। যা থেকে পুরো উত্তরবঙ্গের ভালো পরিমানে দর্শক ধরা যেতে পারে। বোর্ড শিলিগুড়ির যে ব্রাঞ্চ অফিস খুলবে সেখানে একজন অভিজ্ঞ মানুষের দরকার। সেখানে তোমার নামটাই পছন্দের তালিকায় প্রথম উঠে এসেছে। তোমার ওখানে একটা আস্ত শোয়ের সাথে ম্যানেজারের পদ দেওয়া হবে। শিলিগুড়িতে যা কিছু হবে সব তুমিই সামলাবে।
রেডিও সঞ্চালক হওয়ার অফার শুনে সুতীর্থার মনে যেমন আনন্দ ঘিরে আছে তেমনি অল্প চিন্তা রাও ভীড় জমিয়েছে। শিলিগুড়িতে যেতে হবে শুনে মনটা একটু দমে যাচ্ছে। আসলে সুতীর্থা কোনোদিন কলকাতার বাইরে যায়নি। কলকাতাতেই জন্ম, এখানেই বড় হয়ে ওঠা, বন্ধু বান্ধব সবকিছুই এখানে। কলকাতার বাইরের অভিজ্ঞতা বলতে গেলে তিন বছর শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা।
সুতীর্থাকে ভাবতে দেখে অভীক নিজে থেকেই বললো, তোমাকে আজকেই কিছু জানাতে হবে না। জানি এতো বড়ো ডিসিশন হুট করে নিতে পারবে না। তুমি কদিন সময় নাও।
তবে ডিসিশন তাড়াতাড়ি জানিও সুদীপ্তা। কারণ তুমি রাজি থাকলে আমরা একভাবে এগোবো। আর তুমি যদি যেতে না চাও সেক্ষেত্রে আমাদের অন্য কাউকে অ্যাপ্রচ করতে হবে। আমরা চাইছি মে মাস থেকেই আমাদের নতুন স্টেশনে চালু করে দিতে। তোমার হ্যাঁ কিংবা না, উত্তরটা জলদি জানিও।
আসলে নিজের বাড়ি বা এলাকা ছেড়ে দূরে থাকাটা খুব কষ্টের। কারণ পরিবার,আত্নীয় স্বজন এবং বন্ধু বান্ধবদের ছেড়ে যেতে হয়। আর সেজন্যই সুতীর্থা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছে। তবে সুতীর্থা এতো বোকা না যে এমন অফার হাতছাড়া করবে। এটা যে তার স্বপ্ন। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।