আজ আপনাদের সামনে একটি ব্যতিক্রমী পোস্ট নিয়ে এলাম। আপনারা জানেন দুর্গাপূজা কালী পূজার পরে আরেকটি পুজো আসে। সেটি হল জগদ্ধাত্রী পুজো। আর আজ আমি আপনাদের সামনে সেই জগদ্ধাত্রী পূজার একটি মণ্ডপ নিয়ে এলাম। মন্ডপটির বৈশিষ্ট্য এবং তার বাছাই করা কয়েকটি ছবি আজ এই পোস্টে আপনাদেরকে দেখাবো। জগদ্ধাত্রী পুজো পশ্চিমবঙ্গে বাঙ্গালীদের মধ্যে প্রচলিত একটি বৃহৎ উৎসব হিসেবে পরিচিত। এটি আসলে দূর্গা পূজারই আরেকটি ভিন্নধর্মী রূপ। সাধারণত নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর এবং হুগলি জেলার চন্দননগরে এই পূজা বিশালাকায় উৎসবের চেহারায় হয়ে থাকে। কিন্তু তাছাড়াও অন্যান্য জায়গাগুলিতেও জগদ্ধাত্রী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। চন্দননগরে এই পুজো পাঁচ দিন ব্যাপী হলেও সাধারণত অন্যত্র এই পূজা দু'দিনে অনুষ্ঠিত হয়। আজ যে মন্ডপটি আপনাদের সামনে তুলে আনলাম সেটি সোদপুরে অবস্থিত একটি মণ্ডপ। সোদপুরে পানিহাটীস্থিত গঙ্গার ধারে এই জগদ্ধাত্রী পূজাটি প্রতিবছর ধুমধামের সাথে অনুষ্ঠিত হয়। এই বছর আমি কর্মস্থল থেকে ফেরবার সময় একটু সময় বার করে ঢুকেছিলাম এই মন্ডপের ভেতর। কারণ এদের মন্ডপ সজ্জা আমাকে আকৃষ্ট করেছিল রীতিমতো।

তবে এবার প্রথমেই আসুন আমরা সকলে মিলে এই মন্ডপটি কেমন করেছিল তা একটু দেখে নিই।

💐💐মণ্ডপসজ্জা💐💐

স্থান - সোদপুর, কলকাতা

মন্ডপ শয্যায় ছিল অভিনবত্বের ছোঁয়া। সাধারণত গ্রাম বাংলার পুরনো জিনিসপত্র দিয়ে এরা মন্ডপ শয্যায় এনেছিল। তার মধ্যে হাতপাখা, কুলো অথবা ধান তারা ব্যবহার করেছিল মন্ডপসজ্জার অঙ্গ হিসেবে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে গ্রামের বধু তুলসী তলায় পুজো করছেন। মন্ডপের অভিনবসজ্জায় তারা তুলে এনেছে পুরনো উনূনে ভাত সিদ্ধ হওয়ার মডেল। সেখানে লাল আগুনের আঁচ হিসাবে তারা ব্যবহার করেছে লাল আলো। এমন ভাবেই বৈচিত্র্যময় জিনিসপত্রের ব্যবহারে এই মন্ডপ বিভিন্ন মণ্ডপের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছে। তাই সেই মন্ডপের ছবি আপনাদের সামনে তুলে আনতে ইচ্ছে হলো।

প্রথমেই দেখতে পাচ্ছেন মুখ্য দরজা। সেখানে বিভিন্ন ধরনের গ্রাম্য জিনিসের ব্যবহার করে তারা তাদের দরজাটি সাজিয়েছে।

মন্ডপসজ্জায় অভিনবত্ব আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে আগাগোড়া। মুখ্য দরজা দিয়ে ঢুকেই তারা এমন আরেকটি দরজার ব্যবস্থা রেখেছে যেখানে উপর দিকে গরুর গাড়ি এবং বর্তমান টেকনোলজি কিভাবে মিলেমিশে এক হয়ে গেছে তা প্রদর্শন করা হয়েছে।

মন্ডপের দেওয়ালে বিভিন্ন জিনিসপত্রের ব্যবহার করে তারা একটি অভিনবত্ব আনতে চেষ্টা করেছে। এখানে তারা বহুল ব্যবহৃত কুলোর ব্যবহার করেছে।

এই ছবিটিতে আপনারা উনুনে চাল সেদ্ধ হওয়ার ছবি দেখতে পাচ্ছেন। এখানে একটি মডেল বানানো হয়েছে যেখানে জ্বলন্ত উনুন এবং ভাতের হাঁড়ি শোভা পাচ্ছে। এখানে আগুন ব্যবহৃত হয়নি। আগুনের পরিবর্তে এরা আলোর ব্যবহার করেছেন খুব কায়দা করে।

গ্রামবাংলায় যেকোনো হিন্দু বাড়িতে একটি প্রধান জিনিস হল তুলসী মঞ্চ। এই মন্ডপেও কর্মকর্তারা সুন্দর একটি তুলসী মঞ্চ নির্মাণ করেছেন।

গ্রামের নারীরা আজও লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়ে তুলসী মঞ্চে পূজো দেন। এই মূর্তিটি ঠিক সেই ঘটনার প্রতিকৃতি তৈরি করেছে।

এই ছবিতে দেখুন মন্ডপের মধ্যে কেমন সুন্দর করে ধানের গোলা নির্মাণ করা হয়েছে।

সমস্ত ছবিগুলি দেখে আপনারা বুঝতে পেরেছেন শহরের মধ্যেও এই পূজা কর্তৃপক্ষ কেমন একটি ছোট গ্রাম নির্মাণ করেছেন। সম্পূর্ণ পূজা মন্ডপটি দেখলে আপনি গ্রাম বাংলার একটি ধারণা পেয়ে যাবেন খুব সহজেই।

💐💐প্রতিমা💐💐

স্থান - সোদপুর, কলকাতা

এবার আপনাদের সামনে প্রতিমার ছবি নিয়ে এলাম। এই মন্ডপে সাবেকি প্রতিমা পূজিত হয়েছেন। এখন আপনারা ডাকের সাজে সুসজ্জিতা সেই দেবী প্রতিমার ছবি দেখতে পাচ্ছেন।

সম্পূর্ণ পূজা মন্ডপটি আপনাদের কেমন লেগেছে? আমি চেষ্টা করলাম সমস্তটাই আপনাদের সামনে তুলে আনতে। এখন আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাকে জানাবেন।

---

চিত্রগ্রহণ	ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন	৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস	আনএডিটেড
চিত্রগ্রাহক	কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন	সোদপুর, পশ্চিমবঙ্গ
কভার ছবি এডিটিং সৌজন্য	অণুলিপি

---

🙏 ধন্যবাদ 🙏

---

(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)

---

---

---

---

--লেখক পরিচিতি--

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

---

---

কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

---