কলকাতা শহরের প্রথম অধিবাসীরা। একটি ঐতিহাসিক প্রতিবেদন।
কলকাতা শহরের প্রথম অধিবাসীরা
💐 স্বাগতম 💐
কলকাতা। এক আশ্চর্য শহর। তিলোত্তমা মহানগরী। কিন্তু কে হাতে করে তৈরি করলো আমাদের এই শহর? বেনিয়া ইংরেজের জাত নাকি তাদের আগে শহরে আসা আর্মেনীয় অধিবাসীরা? কলকাতা শহরের মধ্যে শুয়ে আছে আরও একটা পুরনো কলকাতা। যার সময়ের হিসাব করা দায়৷ একসময় দাপিয়ে বেড়ানো ইংরেজরা প্রাণ খুলে সাজিয়েছিল শহর কলকাতা কে । কি নেই সেখানে? শহরের প্রথম গির্জা আর্মেনীয়দের তৈরি হলেও পরবর্তীতে ১৭৭০ সালে ইংরেজদের হাত ধরে সুইডিশ মিশনারী জোহান জাকারিয়া কিয়ার্নান্ডার উদ্যোগেই তৈরি হয় ওল্ড মিশন চার্চ।
ডালহৌসির কাছেই আর এন মুখার্জি রোডে আজও পুরনো স্মৃতি নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এই চার্চ। কিন্তু চতুর্পাশে আগাছার মত গজিয়ে ওঠা দোকান। যদিও পুরনো দিনে ওল্ড মিশন চার্চ নাম ছিল না। তখন নাম ছিল মিশন চার্চ ও লাল গীর্জা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পুরাতনী রং লেগেছে চার্চের পাথরেও, আর নাম পাল্টে জুড়ে গেছে ওল্ড তকমা। পলাশীর যুদ্ধের পর কলকাতাকে নিজেদের মতো করে গুছিয়ে একেবারে জাঁকিয়ে বসতে শুরু করে ইংরেজ। পুরনো দিনের কিছু অস্থায়ী ধর্ম উপাসনার স্থান থাকলেও তার বেশির ভাগটাই ধ্বংস হয়ে যায় সিরাজের কলকাতা আক্রমণের সময়। মুর্শিদাবাদ থেকে বিশাল সৈন্যবাহিনী সমেত ইংরেজদের উচিত শিক্ষা দিতে সরাসরি কলকাতা আক্রমণ করে বসেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। সেই সময়ই ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ সমেত সমস্ত ইংরেজ উপাসনাগৃহ ধ্বংস করে দিয়ে ফিরে যান নবাব। কলকাতা পরিণত হয় একটি জীবন্ত ধ্বংসস্তূপে। কিন্তু পলাশী জয়ের পর ছবিটা একেবারে ঘুরে যায়। এই সুসময়ে তাদের আটকায় সাধ্য কার।
কিন্তু মহানগরী কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা সেই মতো দেখতে গেলে ইংরেজরা হলেও আসলে এই নগরীতে ইংরেজদের বহু আগে পা পড়েছিল আর্মেনীয়দের। আর তার সাক্ষী দেয় কলকাতার সবচেয়ে পুরনো আর্মেনীয় চার্চটি যা আজও বড়বাজারের ভিড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাথা তুলে। চার্জটি আকর্ষণীয় হলেও এর মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি লুকিয়ে আছে একটি সমাধির মধ্যে। সমাধিটির উপরে আজও স্পষ্ট অক্ষরে লেখা রেজাবিবির নাম। কিন্তু কে এই রেজা বিবি? সমাধির উপরের এপিটাফ থেকেই জানা যায় তিনি দানবীর সুকিয়াজের ছবি। কিন্তু আসল আশ্চর্যটি লুকিয়ে আছে এই সমাধির সময়কাল নিয়ে। রেজাবিবি মারা যান ইংরেজরা এ শহরে আসার প্রায় ৬০ বছর আগে। পরে ১৭২৪ সালে এই পুরনো কবরস্থানের জায়গায় তৈরি হয় চার্চ। আর আজও সেখানেই ইংরেজদের যাবতীয় ঔদ্ধত্যকে মিথ্যে প্রমাণ করে সেখানেই শুয়ে আছেন রেজাবিবি। এই কবরের আয়ুষ্কাল ধরলে আর্মেনীয়দেরই প্রথম কলকাতায় ইউরোপিয়ান অধিবাসী হিসেবে ধরা হয়।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/KausikChak1234/status/1854216103888838931?t=IL62VLYkMidsjIJiO3mjzg&s=19
ভাইয়া কলকাতা শহরকে নিয়ে খুব সুন্দর একটি ব্লগ লিখেছেন। রেজাবিবি প্রমাণ করে দিল ইংরেজরা আসার আগে আর্মেনিয়াগন কলকাতায় প্রথম পা রেখেছিল। ইতিহাসটি জেনে খুবই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।
আপনি মন দিয়ে আমার প্রতিবেদনটি পড়লেন বলে ভালো লাগলো ভাই। রেজাবিবিরাই কলকাতার আদি অধিবাসী। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।