"অনুভূতির দ্বার"(10% বেনিফেসিয়ারী লাজুক খ্যাককে)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

নমস্কার

কেমন আছেন বন্ধুরা? আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন ঈশ্বরের কৃপায়।আজ আমি আবারো হাজির হলাম একটি ভিন্নধর্মী গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে।আমার খুবই ভালো লাগে যেকোনো বিষয় নিয়ে লিখতে।সেই ভালো লাগা থেকেই আমি একটি গল্প লেখার চেষ্টা করলাম।আমি সবসময় প্রকৃতি ও বাস্তবতা নিয়ে লিখতে ভালোবাসি।যাইহোক আজ প্রথম একটি ছোট্ট গল্প দিয়ে শুরু করছি, বাস্তবতাকে সঙ্গে নিয়ে।আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের কাছে।তো চলুন শুরু করা যাক---

অনুভূতির দ্বার:

IMG_20221125_211120.jpg
সোর্স

দূরের দিগন্তে ঝকঝকে সোনালী সূর্য তখন কড়া তাপ ছড়াচ্ছে।সেই তাপকে উপেক্ষা করে হেটে হেটে পাড়ায় সবজি বিক্রি করে সরজ।শতকষ্টে গরিব সরজ তার ছেলে চন্দনকে লেখাপড়া শেখায়।ছোটবেলায় চন্দনের মা মারা যান,সেই থেকে চন্দনের দেখাশোনা খুব ভালোভাবেই সরজ করেন। একটু একটু করে বেড়ে ওঠে চন্দন,সে খুবই মেধাবী ছাত্র ।সেইজন্য চন্দন বিদেশে চলে যায় ইঞ্জিনিয়ার পড়তে,বৃত্তির টাকায় তার পড়াশুনা চলতে থাকে।একসময় তার সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় চন্দন।

কিছুদিন পর এক বিদেশীনি মেয়েকে বিয়ে করে চন্দন গ্রামের বাড়িতে তার বাবা সরজের সঙ্গে দেখা করতে আসেন।দেখা করেই শহরে ফিরে আসে তারা।ধীরে ধীরে চন্দন তার বৃদ্ধ বাবাকে টাকা দেওয়া ও খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দেয়।সরজ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং চন্দনকে একবার দেখার ইচ্ছে পোষন করে।সেই উদ্দেশ্যে অসুস্থ শরীরে সরজ বেরিয়ে পড়ে শহরের রাস্তায়।সরজ তখন অপরিচিত জগতের মাঝখানে যানবাহনের কালো ধোঁয়ায় অস্পষ্ট দেখে সবকিছু।একসময় হঠাৎ একটি গাড়ির সামনে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে সরজ,হাতে থাকা ছেলের ঠিকানা লেখা কাগজটি উড়ে চলে যায় পথের ধুলোয়।সেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে মুখ দেখেই চমকে ওঠে তারই ছেলে চন্দন।দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায় তার বাবাকে,হাসপাতালের বেডে শুয়ে নিজের ছেলের আবছা মুখখানি একটিবারের জন্য দেখে সরজ।এরপর যুদ্ধ করতে করতেই একসময় চিরতরের জন্য শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় সরজের।বাবার মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়ে চন্দন,শেষবারের মতো তার অনুভূতির দ্বার উন্মুক্ত হয়।।

(যখন কাছের কেউ বেঁচে থাকে তখন হয়তো আমরা তার গুরুত্ব বা মর্মটাকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারি না।কিন্তু কাছের মানুষ হারিয়ে গেলেই আমরা তার অভাবটাকে বুঝতে পারি।তখন আমাদের চেতনা জাগ্রত হয়, বোধ উদয় হয়।তাই আগে থেকেই চেতনাকে প্রজ্জ্বলিত রেখে কখনো কাছের মানুষকে অবহেলা করা উচিত নয়।)

আশা করি আমার আজকের লেখা গল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।পরের দিন আবার নতুন কোনো বিষয় নিয়ে হাজির হবো, ততক্ষণ সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।

🌸🌸🌸ধন্যবাদ সকলকে🌸🌸🌸

অভিবাদন্তে: @green015

Sort:  
 2 years ago 

মা মরা ছেলেটাকে এত কষ্ট করে মানুষ করল কিন্তু শেষে সেই ছেলেটাই বাবাকে অবহেলা করল, আজকাল এরকমই হয়ে আসছে আমাদের আশেপাশে। এরকমটা হওয়া একদমই উচিত নয়। কেউ দূরে সরে যাওয়ার আগেই তার মর্মটা আমাদের বোঝা উচিত যেন পরে আর আফসোস করতে না হয়। ভালো লিখেছেন দিদি আপনার গল্পে বাস্তব দৃশ্য ফুটে উঠেছে।

 2 years ago 

কেউ দূরে সরে যাওয়ার আগেই তার মর্মটা আমাদের বোঝা উচিত যেন পরে আর আফসোস করতে না হয়।

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া,👍আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

অনুভূতির দ্ধার গল্পটি পড়ে অনেক বেশি খারাপ অনুভব হলো।এমন ঘটনা বর্তমান সমাজে অহরহ পাওয়া যাচ্ছে।অনেক কষ্ট করে যেসব ছেলে মেয়েদেরকে বেশি মানুষ করা হয় তারাই বেশি এমন করুণ পরিণতির শিকার হয়।যেসব পিতা-মাতারা নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানদেরকে মানুষ করে তাদের অবস্থা যদি এমন হয় তাহলে কি করে ছেলেমেয়েদেরকে মানুষ করা যায় বলেন তো। নৈতিকতার শিক্ষার অভাব যদি হয় তাহলে এমন হয়। প্রথমেই দরকার নৈতিকতার শিক্ষা এর পরে হচ্ছে সফলতা।

 2 years ago 

সত্যিই ,নৈতিকতার অভাব।আপনার অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

আপনি যে গল্পটি লিখেছেন তা অবশ্যই বাস্তবতার সাথে মিল রয়েছে। সরজ কেনো এমনি হাজার সরজ রয়েছে পৃথিবীতে। আসলে মা বাবাকে ছেলে মেয়ে যতই কষ্ট দিক না বাবা মা কখনো তাদেরকে ভুলতে পারে না। আর সত্যি আমরা কখনো দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝি না।ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

বাস্তব জীবনটা বড্ড নিষ্ঠুর এখন।ধন্যবাদ আপু আপনার মতামত তুলে ধরার জন্য।

 2 years ago 

আপনার লেখা গল্পটি বাস্তবতার সাথে একদম ১০০% মিল রয়েছে। বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে আমরা এমন গল্প অহরহ দেখতে পাই।। আসলে মানুষ হয়ে গেছে এখন বিবেক বুদ্ধিহীন।। যখনই মানুষের মধ্যে বিবেক হয়ে যায় মৃত তখনই সে হয়ে যায় উন্মাদ।। মা-বাবার কষ্টটা অনেক ছেলেই আছে যারা বোঝেনা বা বোঝার চেষ্টা করেনা।। কিন্তু যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে আমরা ছোট থেকে এত বড় হয়েছি প্রতিষ্ঠিত হয়েছি তাদেরকে যদি অবহেলা করি তাহলে সৃষ্টি করতাম আমাদেরকে ছাড় দেবেন না।।

ধন্যবাদ আপু বাস্তবমুখী একটি গল্প আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া, এইসব মানুষের বিবেক মৃত।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

সত্যি আমাদের প্রিয় মানুষগুলো যখন কাছে থাকে তখন তার গুরুত্ব এবং মর্ম আমরা বুঝি না। যখন সেই প্রিয় মানুষটি চলে যায় তখন তার অভাব আমরা সবাই বুঝে থাকি। আমাদের উচিত কাছে থাকতেই তার মর্ম বোঝা। এখন তো সব জায়গায় এরকম ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। সন্তানরা বৃদ্ধ বাবা মাকে কষ্ট দেয়। তারা থাকাকালীন তাদের কষ্ট বোঝে না এবং মর্ম বুঝে না। পরে তাদেরকে সেজন্য আফসোস করতে হয়। তারা থাকাকালীন এমন ভাবেই তাদের যত্ন নিতে হবে যেন পরে আফসোস না করতে হয়। বাবা মা তাদের সন্তানদের অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করিয়ে তাদের অনেক উঁচু স্থানে নিয়ে যায়। সবকিছু তাদের মধ্যে থাকলেও নৈতিকতার কোন দিকে তাদের মধ্যে থাকে না। তাদের নৈতিকতার ঠিক নেই।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনার সুগঠনিক মতামত তুলে ধরার জন্য।

 2 years ago 

আপনার লেখাটি পড়ে আমার কাছে খুব খারাপ লাগলো। যে ছেলের ছোটকালে মা মারা গেলো তার বাবা এত কষ্ট করে তাকে মানুষ করলেন। বিদেশ গিয়ে সেই ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ওখানের একটি মেয়েকে বিয়ে করলেন। তারপরে শেষ হলে গিয়ে আস্তে আস্তে তার বাবার খোঁজ খবর নিতে ভুলে গেলেন। এসব ঘটনাগুলো এখন সমাজে বেশি দেখা যাচ্ছে।চন্দন এর বাবা শেষ পর্যন্ত তার মুখটাই দেখলেন। মানুষ জীবিত থাকলে তার মর্মটা বোঝেনা মারা গেলে বোঝে। আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

বর্তমানে এইরকমই ঘটছে আপু,ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য।

 2 years ago 

বর্তমান যুগে এই গল্পটা অনেকটাই বাস্তবে রুপ নিয়েছে। অসংখ্য সন্তান রয়েছে বিয়ে করে বাবা মাকে ভুলে যায়। এখানেও তাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে চন্দনের গাড়ির আঘাতে তার পিতার মৃত্যু হলে হয়তো চন্দন কিছুটা আঘাত পেলেও এখানে তার যথেষ্ট অন্যায় রয়েছে। আসলে এধরনের মানুষ বাস্তবেও রয়েছে। আর এদের শাস্তি ভোগ করতেই হবে।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া, এদের আত্মউপলব্ধি সময় থাকতে ঘটে না।ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

কত নির্মম গল্প লিখলেন আপু। সবজি বিক্রয় করে ছেলেকে পড়া শোনা করানোর অপরাধে আজ সেই ছেলের গাড়ির ধাক্কায় বাবার প্রাণ গেল। এর থেকে নিমর্ম আর কি হতে পারে। ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

ঠিকই বলেছেন আপনি,পড়াশুনা করানোটা যেন অপরাধ ছিল।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

মা-বাবা যে কি জিনিস তা একমাত্র হয়তো হারানোর পরেই অনেকে বুঝতে পারে । কত বড় যে ছাদ মাথার উপরে কত বড় যে একটা আশ্রয়, তা হয়তো যার নেই সে বেশি অনুভব করতে পারে। লেখাটা বুকের ভিতর দোলাচল দিয়ে গেল। দারুন হয়েছে। এখনো মাঝে মাঝে যখন মনে হয় যে মানুষ তো মরণশীল।প্রত্যেকেরই মা বাবা হয়তো একদিন না একদিন তাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমার বুকের ভেতরটা এত হুঁ হুঁ করে ওঠে বলে বোঝাতে পারব না।কত রাত যে কেঁদেছি তা হয়তো নিজেও জানিনা। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই মায়ের পিঠে হাত বোলানো। বাবার সাথে বসে চা খাওয়া। আর ফ্রেশ হওয়ার পরে মুখ ধুয়ে মুখটা সব সময় মায়ের আঁচলে মোছা। এই জিনিসগুলো আমি চাই আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন যেন পাই।

 2 years ago 

একদম👍 মূল্যবান মতামত প্রকাশ করেছেন দিদি।মা-বাবা ছাড়া থাকার ভাবনাই আসে না মাথায়।ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 63683.34
ETH 2754.57
USDT 1.00
SBD 2.64