"ফ্রেশার্স ডে পালন করার কিছু সুন্দর মুহূর্ত"
নমস্কার
ফ্রেশার্স ডে পালন করার কিছু সুন্দর মুহূর্ত:
আমরা যারা নতুন এম.এ ভর্তি হয়েছি তাদের জন্য ফ্রেশার্স ডে পালন করার দিন ঠিক করা হয় 10 তারিখ জানুয়ারি মাসের।তবে নানা সমস্যার কথা মাথায় রেখে জানুয়ারির 3 তারিখ অর্থাৎ এগিয়ে দিনটি পালন করার কথা বলা হয়।প্রথমত ফ্রেশার্স ডে হওয়ার আগে থেকেই আমাদের জুনিয়রদের কাছ থেকে নিজ নিজ নাম নিয়ে নেওয়া হয়, তারপর নাম বাছাই করে নিমন্ত্রণ পত্রে লেখা হয়।যেমন -ঐক্যতান ছিল আমাদের প্রোগ্রামের নাম।যাইহোক আমাদের কাছ থেকে 150 টাকা করে নেওয়া হয়েছিল প্রোগ্রামের জন্য আর আমাদের উপরের ব্যাচের দাদা-দিদিরা 200 টাকা করে দিয়েছিলো।আগে থেকেই আমাদের বলা হয়েছিল, মেয়েরা শাড়ি পড়ে আসবে আর ছেলেরা পড়বে পাঞ্জাবি।ট্রেনের রাস্তা তাই প্রথমে বেশ আপত্তি করেও পরে ঠিক করলাম শাড়ি পড়ে যাবো।
আমি প্রায় 4 থেকে 5 বছর পর শাড়ি পড়লাম।তবে এই শাড়ি পড়া নিয়েই বিভ্রান্তিতে পরতে হলো।আশেপাশে তেমন ভালো কেউই নেই যার কাছ থেকে আমি হেল্প নিতে পারি।আর আমার মা খুবই সাদামাটা মনের তাই তার সাজগোজও খুবই সাধারণ।দেখতে দেখতে কাঙ্ক্ষিত দিন চলে আসলো,আমি ইউটিউব ঘেটে ঘেঁটে শাড়ি পড়ার চেষ্টা করলাম।প্রথমে দুইবার ব্যর্থ হয়ে তারপর একটুখানি মায়ের সাহায্য নিয়ে কোনরকমে শাড়ি পরা সমাপ্ত করলাম।কারণ ওদিকে ট্রেন ছাড়িয়ে যাবে,যদিও আমরা প্রথম ট্রেনে না গিয়ে পরেরটা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।তাই তাড়াতাড়ি সাজগোজ সম্পন্ন করে কোনরকমে একটুখানি খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে।আমার বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটেই তারপর টোটোর সন্ধান মিললো।
বর্ধমান ট্রেন স্টেশনেই আমরা বান্ধবীরা মিলিত হয়ে চলে গেলাম ইউনিভার্সিটিতে।গিয়েই দেখি অনুষ্ঠান শীঘ্রই শুরু হবে,তাই ফ্রেশ হয়ে মাত্র 2 থেকে 3 টি ছবি তুলেই জায়গায় বসে পড়লাম।আমরা নিজেদের ছবি তোলার একেবারেই সময় পায়নি।যাইহোক আমার যেহেতু খাবারের টোকেন সংগ্রহ করা হয়নি তাই ওটা প্রথমেই সংগ্রহ করে নিলাম।বেলুন দিয়ে প্রোগ্রাম রুমের গেটটি সাজানো হয়েছিলো।প্রায় 11.30 টা কিংবা 12 টা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরু করা হয় ইতিহাস পরিবারের।প্রথমে সম্মিলিত গানের মাধ্যমে ,প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। তারপর স্যার ও ম্যামদেরকে চন্দনের ফোঁটা কপালে দিয়ে গলায় একটি করে শ্রদ্ধাস্বরূপ কাপড় ও হাতে ফুল গাছের টপ উপহার দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
আমাদের প্রোগ্রামটি দুটি স্টেপে করা হয়েছিলো।প্রথম দিকে সমস্ত অনুষ্ঠানটাতেই সিনিয়ররা অংশ নিয়েছিলো আর পরের স্টেপে আমাদের জুনিয়রদেরকে সুযোগ দেওয়া হয়।তো সম্মিলিত গানের পর কবিতা আবৃত্তি,দ্বৈত গান,নৃত্য ইত্যাদি করা হয়।লালমাটির দেশের মিক্সড গানে নৃত্য পরিবেশন করে আমাদের সেম এর মেয়েরা।প্রথম স্টেপটি শেষ করা হয় নাটকের মধ্যে দিয়ে।
সেই নাটকে দাদা-দিদিরা ও আমাদের ক্লাসের কিছুজন অংশ নেয়।তারা মোটামুটি একমাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলো ভালো রকমের।নাটকটি অনেক সুন্দর ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা ফুটিয়ে তুলেছিলো।নাটকের নাম ছিল ভাসান।অর্থাৎ সিরাজের সাজের নৌকা যখন বন্যার জলে ডুবে যায় সেই কাহিনী নিয়েই নাটকটি করা হয়েছিলো। নাটক শেষ হতেই স্যার ও ম্যামেরা চলে যান অফিস রুমে।
এরপর আমাদের নতুনদেরকে লাইন দেওয়ার কথা বলা হয়।একে একে সবাইকে বরণ করে নেওয়ার জন্য আমাদের সামনে যেতে হচ্ছিলো, তখন দিদিরা আমাদের কপালে প্রথমে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে একটি করে গোলাপ ফুল,একটি করে পেন ও একটি করে কাগজের ফাইল উপহার দিয়ে বরণ করে নিয়েছিলো।যে ফাইলের উপর লেখা ছিল ঐক্যতান।তারপর আমরা নিজেদের নাম বলে চলে এসেছিলাম নিজ জায়গায়।এর মাঝেই আমাদেরকে একটি করে ফ্রুটি খেতে দেওয়া হয়েছিলো।আমাদের সঙ্গেই একত্রে আয়োজন করা হয়েছিলো যারা বিদায় নেবে এম.এ থেকে সেই সমস্ত দাদা-দিদিদেরকে।আসলে আমাদের নবীনবরণ ও তাদের বিদায় অনুষ্ঠান আমরা একত্রে পালন করেছিলাম।দাদা-দিদিদেরকেও চন্দনের ফোটা দিয়ে বরণ করে ফাইল,গোলাপ ফুল ইত্যাদি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।তবে তাদের ফাইলটি কাগজের ছিল না,যাইহোক এরপর আমাদের সবাইকে টিফিন নিয়ে আসার কথা বলা হয়।
আমি অবশ্য ভেজ নিয়েছিলাম ,এছাড়া নন-ভেজের ব্যাবস্থাও ছিল।ভেজের মধ্যে ছিল ফ্রাইড রাইস আর মটর-পনির রেসিপি, অন্যদিকে নন ভেজে দেওয়া হয়েছিলো ফ্রাইড রাইসের সঙ্গে চিকেন কষা।আমাদের জুনিয়রদের খাবারের প্যাকেটটি ছোট থাকলেও দাদা-দিদিদের খাবারের প্যাকেটটি কিন্তু বড়-ই ছিল।যাইহোক টিফিন শেষ করে দ্বিতীয় স্টেপের অনুষ্ঠান শুরু করতেই 4 টা বেজে যায়।তারপর জুনিয়রদের নাচ,গান আর কবিতা আবৃত্তি ছিল, এর মাঝে দাদা-দিদিরা নাচ করেছিলো।সবশেষে খিচুড়ি ডান্স হয়েছিলো যেটাই সবাই মজা করে নেচেছিলো।আমি একটু লাজুক স্বভাবের তাই দর্শক হিসেবেই শুধু উপভোগ করেছিলাম।সন্ধ্যার দিকে আমরা ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে পড়লাম ট্রেন ধরার উদ্দেশ্যে ইউনিভার্সিটি থেকে।যদিও আমরা নিজেদের ছবি ঠিকভাবে তুলতে পারেনি তবে বেশ উপভোগ্য ছিল অনুষ্ঠানটি।তাছাড়া সিনিয়র দাদারাও অনেক গল্প করেছিলো আমাদের সঙ্গে ,অনুষ্ঠান শেষে মিষ্টি খাওয়ার জন্য স্যারেরা টাকা দিয়েছিলেন।তবে সবাই বাড়ি চলে যাওয়াতে পরে একদিন দাদারা আমাদের ক্লাসে এসে মিষ্টি খাওয়ানোর আয়োজন করেছিলো।সবমিলিয়ে দারুণ কেটেছিল দিনটি।।
পোষ্ট বিবরণ:
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
টাস্ক প্রুফ:
আসলে এই দিনটা আমাদের এখানে পালন করা হয় না তাই এই বিষয়ে তেমন হবে বুঝলাম না। আপনি আপনার বান্ধবীদের সাথে বেশ দিনটা উদযাপনের জন্য গন্তব্যে পৌঁছেছেন এবং সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন। এরই মধ্য দিয়ে অজানা অনেক কিছু জানার সুযোগ হলো আমার।
ভাইয়া, নবীনবরণ অনুষ্ঠান তো সবজায়গায় হয় বলে জানা আছে।ধন্যবাদ ভাইয়া।
একইসাথে সিনিয়রদের বিদায় এবং নবীনদের বরণ এর খুব সুন্দর একটি অনুষ্ঠান হয়েছে দেখলাম আপনার পোষ্ট এ। বিশ্ব বিদ্যালয় লেভেলে এমন অনুষ্ঠানগুলো ভীষণ স্মৃতির জন্ম দেয়! এই যে কষ্ট করে শাড়ি পড়ে অনুষ্ঠানটি ইঞ্জয় করলেন, সেটিও দারুণ স্মৃতি হয়ে থাকবে। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
সত্যিই তাই,আনন্দের কাছে কষ্টটা যেন মনেই হয়না,অনেক সুন্দর মতামত ব্যক্ত করেছেন।ধন্যবাদ আপনাকে।