একজন বানর ওয়ালা আর তার বানরের গল্প। || Story of a monkey owner & his monkey.

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago
একজন বানর ওয়ালা আর তার বানরের গল্প

ছবিটি কেনভা দিয়ে তৈরি

ছোটবেলায় আমি বিভিন্ন ধরনের প্রানীর খেলা দেখেছি, যেমন ধরুন বানরের খেলা, সাপের খেলা, সাপ নেওলের খেলা ইত্যাদি। এগুলো দেখে শুধু আমরা ছোটরাই না বড়রা মোটামুটি ডেবডেব করে তাকিয়ে থাকতো অনেকটাই বিস্ময়ের চোখে। আমার সাপ বেশ ভয় লাগতো তবুও খেলা দেখতে ছুটে যেতাম। সবথেকে বড় বিষয় এসব খেলা দেখানোর পর মানুষ বেশ কিছু টাকা দিতো এবং এই টাকা দিয়ে এই লোকগুলো সংসার চালাতো। তবে এখন কেমন যেন মানুষগুলো বদলে গেছে, এই খেলাগুলো মানুষ দেখতে চায় না। যে মানুষগুলো এই চমৎকার পেশার সাথে সম্পৃক্ত ছিল তাদের এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। লোকগুলো অধিকাংশই এখন বেঁচে থাকার তাগিদে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

ছবি তোলার যন্ত্র:- রিয়েলমি সি-২৫
ছবির অবস্থান :- বরমী, শ্রীপুর, গাজীপুর, বাংলাদেশ।

রহিম মিয়া বরমী ইউনিয়নের একজন বাসিন্দা পেশায় একজন কৃষক। বরমী হলো শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর জেলার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল। এদিকটায় মাঝে মাঝেই বনের ভেতর থেকে দলবেঁধে বানরের দল লোকালয়ে ছুটে আসে খাবারের খোঁজে। বন অধিদপ্তর থেকে এদের সামান্য কিছু খাবার দেয়া হয় যা একেবারেই অপ্রতুল। খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে অধিকাংশ সময় এরা মানুষের দোকানে এবং বাসায় হানা দেয়।

কিছু কিছু সময় মানুষজন কিছু না বললেও যখন অতিরিক্ত লুটতরাজ চালায় তখন মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে এদের দিকে তেড়ে যায়। কিছু কিছু সময় রক্তারক্তি কান্ড ঘটে যায়।
এমন এক দূর্ঘটনায় একটি বানরের বাচ্চা তার মা হারা হয়ে যায়। আর সেই বাচ্চাটি রহিম মিয়া বাড়িতে নিয়ে লালন পালন শুরু করে। বানরটি কিছুটা বড় হলে তাকে ছেড়ে দিতে বহু চেষ্টা করে রহিম মিয়া কিন্তু বানরটি কিছুতেই রহিমকে ছেড়ে যায় না।

একটা সময় রহিম সিদ্ধান্ত নেয় এই বানরটিকে তার কাছে রেখে দেবে এবং বিভিন্ন খেলা দেখিয়ে পয়সা উপার্জন করবে। ধীরে ধীরে তাকে বিভিন্ন আকার ইঙ্গিত আর কসরত শেখাতে থাকে। এরপর রহিম মিয়া তার প্রিয় বানরটি নিয়ে নেমে যায় রাস্তায়, বিভিন্ন হাটে বাজারে আর রেল লাইনের ধারে খেলা দেখাতে থাকে। এভাবে তার প্রিয় বানর মানুষের কাছে সুপরিচিত হতে থাকে। তার কসরতগুলো সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখতো আর খুশি হয়ে রহিম মিয়াকে কিছু পয়সা দিতো যা দিয়ে দিব্যি চলে যেতো তার সংসার।

ছবি তোলার যন্ত্র:- রিয়েলমি সি-২৫
ছবির অবস্থান :- বরমী, শ্রীপুর, গাজীপুর, বাংলাদেশ।

এখন সময় বদলে গেছে কেউ আর এই চমৎকার বানরের কসরত তেমন দেখতে চায় না। রহিম মিয়া হাঁক ছেড়ে মানুষ জড়ো করে খেলা দেখানোর চেষ্টা করে কিন্তু এখন আর আগের মতো লোক হয় না। আর কিছু লোক দাঁড়িয়ে দেখলেও আগের মতো পয়সা দেয় না। রহিম মিয়া এই খেলা দেখিয়ে নিজের সংসার ঠিকমতো চালাতে পারে না। আর তার প্রিয় বানরটিকে ঠিকমতো খাবার দিতে পারে না।
সে কয়েকবার ছেড়ে দিলেও বানরটি কিছুতেই তাকে ছেড়ে যেতে রাজি নয়। তবুও রহিম মিয়া শেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে দূরে কোথাও ছেড়ে দিয়ে আসার।
সত্যিই কি প্রানীটি তাকে ছেড়ে চলে যাবে?



Black and White Modern Company Presentation (1).gif

banner-abbVD.png

ছোট্ট পরিসরে পরিচিতি

আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।

আমাদের উইটনেসকে সাপোর্ট করুন

"Please support Bangla Witness"

7258xSVeJbKkzXhyseBP4PYz11eBDT8sW2oR1a4vfVFS6JTrGU8e1FPUaNdHG5vjXyg2xthV78bDEmEVvKCQpyzX1kq8gAVzGsPp9GqJVRWxb6T9y35PZmQehnLjELdKKmnhdxQjDuny4.png

https://steemitwallet.com/~witnesses



VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

RGgukq5E6HBM2jscGd4Sszpv94XxHH2uqxMY9z21vaqHt1ejFJCaMLR3zrx1iztXmdz4AFKcaXPfpHbadyDS7yzWTRRjc8kkRjGZNGVw27n8Q3Mi19jpMVHLYFyQ4NZ.gif

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 11 months ago 

বানরের খেলা,সাপ খেলা এগুলো দেখার জন্য অপেক্ষা করতাম ছোট বেলায়।গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতো খেলা দেখানোর জন্য, বাচ্চা,বয়স্ক সবাই খুব উপভোগ করতো এই খেলা গুলোকে।খাবারের খোজে লোকালয়ে বানরের আসা,এবং পিটুনি ও সেই পিটুনিতে এক বানর বাচ্চার মা হারানো এবং রহিম মিয়া-র কাছে বানর ছানার বড়ো হয়ে ওঠা ও রহিম মিয়া সেই বানর দিয়ে টাকা ইনকাম করার গল্পটি বেশ ভালো লেগেছে আমার।

 11 months ago 

ধন্যবাদ আপু আমার লিখনীটি পড়ার জন্য।

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Heres a free vote on behalf of @se-witness.

 11 months ago 

ছোটবেলায় বিভিন্ন মেলায় আমরাও বানর খেলা ও সাপ খেলা দেখেছি।কিন্তু বর্তমানে মানুষ চিড়িয়াখানায় গিয়ে জীবজন্তুকে উপভোগ করে।ফলে এই ধরনের খেলাগুলো এখন চোখে পড়ে না।বানরের বাচ্চা তার মা হারা হয়ে যায় জেনে খারাপ লাগলো।তবে প্রাণীরা সব বোঝে আমার মনে হয় না যে,বানরটি রহিম মিয়াকে ছেড়ে চলে যাবে।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 11 months ago 

ছোটবেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রানীর খেলা দেখেছি। তবে এখন আর তেমন এগুলো দেখা যায়না।
রহিম মিয়া হয়তো সামনে আর এই খেলা দেখাবে না।

 11 months ago 

এই প্রাণী গুলোর ভালোবাসা খুব কঠিন ভালোবাসা। আমার মনে হয় না যে বানরটিকে দূরে কোথাও ছেড়ে দিয়ে আসলেই বানরটি রহিম মিয়াকে ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু রহিম মিয়ার জন্যও খারাপ লাগছে৷ কতটা অভাবে পরেই রহিম মিয়া যে বানরটিকে ছোট্ট থেকে বড় করেছে, তাকে ছেড়ে দিয়ে আসতে চায়.... 😥

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

সত্যিই এদের ভালোবাসা খুব কঠিন।
রহিম মিয়াকে ছেড়ে হয়তো বানরটি আর যাবে না।

 11 months ago 

বানরটি আসলেই রহিম মিয়ার জন্য শুভ বলা যায়। কারণ এখন না হলেও, এক সময় তো রহিম মিয়া এই বানরের খেলা দেখিয়ে বেশ কিছু টাকা উপার্জন করে, তার সংসার চালাতে পেরেছে। বানরটি আসলে নিজের মাকে হারানোর পর ছোট থেকে রহিম মিয়ার কাছে লালিত পালিত হয়ে তাকেই আপন বলে জেনেছে। সেই জন্যই যতই তাকে ছেড়ে দেওয়া হোক না কেন, কিছুতেই সে রহিম মিয়াকে ছেড়ে যেতে চায়না। আমি এখনো পর্যন্ত কোনদিন বানরের খেলা, সাপের খেলা এগুলো দেখিনি। আমার সামনেও কখনো পড়েনি এরকম খেলা। তবে আপনার গল্পটি বেশ দুঃখজনক ছিল। একদিকে রহিম মিয়া সংসার চালাতে না পেরে ,সঠিক খাবারের যোগান দিতে না পেরে বানরটিকে ছেড়ে দিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।অপরদিকে বানরটি রহিম মিয়াকেই আপন বলে ভেবেছে বলে, সে ছেড়ে যেতে পারছে না।

 11 months ago 

আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত বানরটি তাকে ছেড়ে যাবে না। এই প্রানীদের ভালোবাসা সত্যিই কঠিন ভালোবাসা।

 11 months ago 

এর আগে একটা নিউজ দেখেছিলাম। এলাকাবাসী একটা বানর ছানাকে পিটিয়ে আহত করেছিল। পরে ঐ বানরের গোএ থানায় গিয়ে ভীড় করেছিল এবং রীতিমতো অফিসার ইন চার্জ এর কাছে নালিশ করে এসেছিল হা হা।

রহিম মিয়ার ব‍্যাপার টা বেশ দুঃখজনক। সত্যিই এটা একসময় অনেকের পেশা ছিল। কিন্তু এখন মানুষ আর এগুলো দেখতে পছন্দ করে না। সুতরাং ফলাফল ক্রমেই বিলুপ্ত হচ্ছে এই পেশাগুলো।।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

আসলে বানরদের বেশ বুদ্ধি। এরা অনেক কিছুই করতে পারে। রহিম মিয়ার এই বানরটি অনেক বুদ্ধিমান, কিন্তু অভাবের তাড়নায় তার দুরাবস্থা।

 11 months ago 

প্রাণী একবার পোষ মেনে গেলে আমার মনে হয় না তার মালিককে সে ছেড়ে চলে আসবে। মানুষের মতো তারা এতো অকৃতজ্ঞ না। তবে রহিম মিয়ার মতো অনেকেই এখন এ পেশা ছেড়ে দিয়েছে। মানুষজন এখন মোবাইলেই আনন্দ খুঁজে পায়।

 11 months ago 

এটা একদমই ঠিক বলেছেন।
এখনকার মানুষ মোবাইলের মাঝে আনন্দ খুঁজে পায়।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

ছোটবেলা আমরা বিভিন্ন ধরনের খেলা দেখতাম। বিশেষ করে বানর খেলা সাপ খেলা আরও অনেক ধরনের খেলা। সময়ের কারণে এই খেলা গুলো এখন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যদিও রহিম মিয়া বানর নিয়ে বাজার এবং এলাকায় গিয়ে খেলা দেখাতেন। সময়ের কারণে বানর খেলা দেখিয়ে এখন তার সংসারও চলে না। এই কারণে রহিম মিয়া চিন্তা করলেন বানরটি ছেড়ে দেবে। আসলে বানাটি ছেড়ে দিল আবার চলে আসবে। কারণ রহিম মিয়াকে বানরটি তার সঙ্গী হিসেবে নিয়েছে। এরকম রহিম মিয়ার মত অনেক লোকে এসব খেলাধুলা বন্ধ করে দিয়ে অন্য কাজ করে জীবন যাপন করতেছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59934.86
ETH 2666.82
USDT 1.00
SBD 2.45