নির্বাসিত নক্ষত্র ( শেষ পর্ব )!!
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
ছবিটি Pixabay নিয়ে নেওয়া এবং Canva দিয়ে এডিট করা
রাত আড়াই'টা।'টা। কিছুটা চোখ লেগে গিয়েছিল ম্রিয়মানের। উঠে গেছে তৃপার কোন সাড়াশব্দ নেই। আস্তে করে কয়েকবার তৃপা কে ডাক দেয় ম্রিয়মান। কিন্তু কোন উওর আসেনি। চোখ খোলেনি তৃপা।
ডাক্তারদের ডাক দেয় ম্রিয়মান। ডাক্তার নার্স সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে। আপনি বাইরে যান আমরা দেখছি বলে ডাক্তার। ম্রিয়মান বাইরে চলে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ পর ডাক্তার নার্স দুজনেই বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে। জনাব মিস তৃপা আর নেই!! কথাটা বিশ্বাস করতে যেন কষ্ট হয় ম্রিয়মানের। ম্রিয়মানের মাথার উপরে যেন বিশাল আকাশ ভেঙে পড়ে। তৃপার মৃত্যু ও কিছুতেই মনে পড়ছে না।
আমরা উনার ডেথ সার্টিফিকেট সহ সবকিছু তৈরি করে দিচ্ছি। আপনি কিছুক্ষণ পর উনার দেহ নিয়ে যেতে পারেন। ম্রিয়মান তখন বুঝতে পারে না। ও ঠিক কী করবে। ওর কী করা উচিত। ঘন্টা খানেক কেটে যায়। বাইরেই বসে আছি ম্রিয়মান। তৃপার মৃতদেহ থেকে যেন দূরে থাকতে চাইছে ম্রিয়মান।
ততক্ষণে ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের ফর্মালিটি শেষ। এখন শুধু ম্রিয়মানের স্বাক্ষর প্রয়োজন। হসপিটালের একজন এসে ম্রিয়মান কে নিচে ডেকে নিয়ে যায়।
পেশেন্টের সাথে আপনার সম্পর্ক কী জিজ্ঞেস করে হাসপাতাল কতৃপক্ষের একজন।
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ম্রিয়মান বলে কেউ না আমি ওর কেউ না। কী বলবে ম্রিয়মান। তৃপার সাথে ওর সম্পর্ক কী আসলেই ম্রিয়মান জানে না। বন্ধুত্ব মাএ একসপ্তাহের পরিচয়ে এমন বন্ধুত্ব। নাকী ভালোবাসা। এমন ভালোবাসা কী হয়। যেখানে ওরা কেউ কাউকে কখনও কিছু বলেনি। ভালোবাসার তথাকথিত ডেফিনিশনে এটা আসে না। তাহলে এটা কী?
না এই সম্পর্কের কোন নাম নেই। সব সম্পর্কের তো নাম হয় না।
সকালে তৃপার দেহ নিয়ে ম্রিয়মান সরাসরি চলে যায় পাশেই একটা কবরস্থানে। কবরস্থান কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে সব ঠিক করে ম্রিয়মান। ওরাই সব ব্যবস্থা করে দেয়। এই পৃথিবীতে তৃপার নিজের বলতে শুধু ম্রিয়মান। আর কেউ নেই ওর। সবকিছু তো ওকেই দেখতে হবে। সবকিছু শেষ ততক্ষণে। একে একে সবাই চলে গিয়েছে। তৃপার কবরের সামনে ম্রিয়মান।
ওখান থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা নেয় ম্রিয়মান। রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবেন মামা?
জানি না তোমার যেখানে ইচ্ছা নিয়ে যাও। শহরের মধ্যে দিয়ে রিক্সা চলতে থাকে। চারপাশে হাজার মানুষের ভীড়। অথচ এক গাঢ় বিষাদে ডুবে ম্রিয়মান। ওর বিশ্বাস উঠে গিয়েছে সবকিছু থেকে। ওর বেঁচে থাকার ইচ্ছা চলে গিয়েছে।
একাকিত্বের আনন্দের ভার, সৃষ্টিকর্তা যাহারে দেন, তাহার বক্ষে বেদনা অপার। ম্রিয়মানকে যেন সৃষ্টিকর্তা সেটাই দিয়েছেন। নিজের জীবনে কাউকেই ধরে রাখতে পারেনি ম্রিয়মান। সবাই চলে গিয়েছে। চলে গিয়েছে তৃপাও। আজ সব হারিয়ে ও একা। সৃষ্টিকর্তা হয়তো ম্রিয়মানকে অনেক ভালোবাসে। এইজন্যই ওর পাশে কাউকে দেখতে পারে না। যে আসে তাকেই কোন ভাবে নিয়ে যায়।
বাসার ছাদের উপর বসে রয়েছে ম্রিয়মান। তারপর কয়েক বছর কেটে গিয়েছে। এখনও ম্রিয়মান একা। না তৃপার পরে আর কেউ আসেনি। আজকে পূর্ণিমা। চাঁদের জোৎস্নায় আলোকিত পুরো পৃথিবী। আকাশে নক্ষত্র রা মিটিমিটি করে জ্বলছে। সবগুলো নক্ষত্র বেশ কাছাকাছি। তবে একটা নক্ষত্র কিছুটা দূরে একেবারে একা। ওটা যেন সবার থেকে নির্বাসিত। ঐ নক্ষত্র টা হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।
Daily task
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বাহ্ আপনি দেখছি নির্বাসিত নক্ষত্র শেষ পর্ব, আজকে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।গল্পটি গভীর একাকিত্ব ও না বলা অনুভূতির এক অনবদ্য চিত্র। ম্রিয়মানের শূন্যতা, তৃপার অজানা সম্পর্ক, আর নির্বাসিত নক্ষত্রের রূপক সব মিলিয়ে এক অস্পষ্ট অথচ তীব্র বিষাদের আবরণে মোড়া এক অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
গল্পের শেষটা ভীষণ কষ্টের।আপনি খুব সুন্দর গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করেছেন।অনেক ভালো লাগলো আপনার লেখা গল্পটি।অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি শেয়ার করার জন্য।