"গান শেখা নিয়ে বিড়ম্বনা" shy-fox 10%
হ্যালো
আমার বাংলা ব্লগ বাসী সবাইকে আমার নমস্কার, আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন? ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আপনারা সবাই আমার মেয়ের গান সাপ্তাহিক হ্যাংআউট এ শুনে থাকেন, আর সবাই খুব উৎসাহ নিয়ে ডিসকোর্ডে অনেক ভালো ভালো মন্তব্য করেন যা আমার কাছে খুবই ভালো লাগে একজন মা হিসেবে তখন খুবই আনন্দ পাই। ছোটবেলা থেকে গানের প্রতি আমার অন্য রকমের ভালোলাগা ছিল, কিন্তু সুযোগের অভাবে কখনো গান শেখা হয়ে উঠেনি। রেডিও, ক্যাসেটে গান শোনা ছিল আমার প্রিয় শখের মধ্যে একটা। গান না শুনলে কোন কাজ করতে ইচ্ছে করতো না,তাই গান বাজিয়ে ঘরের টুকটাক কাজ করতাম।
বিয়ের পর এসে দেখি আমার রুমের মধ্যে একটা বড় সাউন্ড সিস্টেম স্পিকার রাখা দেখে তো খুবই ভালো লাগলো মনে মনে ভাবলাম যাক খুব ভালো হলো গান শুনতে পাওয়া যাবে। শ্বশুরবাড়ি এসে দেখি আমার চেয়ে বড় গান পাগলা হলো আমার একমাত্র দেবর। ও গান এতটাই ভালোবাসে যে সারাদিন গান গায় বাড়িতে হারমনিয়াম, ডুগি তবলা খোল করতাল সবকিছু আছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাড়ার কয়েকজন ছেলেপুলে নিয়ে গানের আসর হতো। আমার কাছে তো খুবই ভালো লাগতো আমরা তাড়াতাড়ি রান্না বান্না শেষ করে গান শুনতে বসে যেতাম। কিন্তু তা আর বেশিদিন শোনা হলো না আমি আমার হাসবেন্ড এর সাথে ঢাকায় চলে গেলাম।
আমার প্রথম কন্যা সন্তান হলো সেদিনই মনে মনে ঠিক করে ফেলি যে আমার জীবনের না পাওয়া গুলো সব আমার মেয়ের মাধ্যমে পূরণ করবো। ছোটবেলায় গানের স্কুলে দিলাম কিন্তু বৃথা চেষ্টা কিছুতেই সে গান শিখবে না সে আর্ট শিখবে কি আর করা তাই করলাম কয়েকবছর একটানা বাসায় টিচার দিয়ে আর্ট শেখালাম মোটামুটি ভালোই আর্ট রপ্ত করে নিলো। তারপর যখন বড় হলো তখন গানের জন্য মেয়েকে বললাম যে এখন তো বড় হয়েছো এখন অন্তত গান শিখতে পারো কিন্তু মেয়ে তাতেও নারাজ সে কিছুতেই গান শিখবে না।
ছোট মেয়ে ওর থেকে সাড়ে চার বছরের ছোট ও দিনদিন বড় হতে লাগলো। তারপর যখন ক্লাস থ্রিতে উঠলো তখন ওকে বললাম মা তোমার দিদি তো গান শিখতে চাইছে না তুমি তাহলে গান শিখো আমি বাসায় টিচার ঠিক করি তখন ছোট মেয়েও দিদির মতো গান শিখতে নারাজ যখন ও বললো যে আমিও গান শিখবো না তখন মনে হলো আকাশ আমার মাথায় ভেঙ্গে পড়লো। আমি তো একেবারে ভিতর থেকে ভেঙ্গে পড়লাম যে আমার স্বপ্ন কি তাহলে স্বপ্নই থেকে যাবে, কোনদিন পূরণ হবেনা।
তারপর আমি এক পর্যায়ে সেই কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম স্বপ্ন ভঙ্গের কষ্টে। সারাদিন মেয়েদের সাথে কোন কথা বললাম না কোন খাবার খেলাম না কি যে একটা পরিস্থিতি। আমার হাসবেন্ড যখন সন্ধ্যায় ফোন করলো আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না শুধু কান্না করতেছিলাম তখন সে বার বার জানতে চাইলো কি হয়েছে আমি মুখে কিছুই বলতে পারছিলাম না। ও বুঝতে পারলো যে মেয়েদের সাথে কিছু একটা বিষয় নিয়ে রাগারাগি হয়েছে তাই সে বড় মেয়েকে চাইলো, আমি ফোনটা বড় মেয়ের কাছে দিলাম ওর সাথে কথা বলে সব জানতে পারলো যে কেন আমি কান্নাকাটি করছিলাম। তারপর ও খুব সুন্দর করে দুই মেয়েকে সবকিছু বুঝিয়ে বললো, ওরা সারাদিন আমার কষ্ট দেখেছে, তারপর বাবা বুঝিয়েছে তাই ওরা আমাকে এসে বললো যে দুজনেই গান শিখবে।
শুনে তো আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম। পরেরদিন সকালেই গানের টিচার খুঁজতে শুরু করে দিলাম। অবশেষে পরিচিত একজন দাদার মাধ্যমে রংপুর বেতারের নিয়মিত এক শিল্পীর সন্ধান পেলাম,
তার সাথে যোগাযোগ করে বাসায় আসার প্রস্তাব দিলাম ভগ্যক্রমে উনি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলেন।
তারপর শুরু হলো দুজনের গান শেখা।
তিন চার মাস বেশ ভালোই শিখলো কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের গানের প্রতি আগ্রহ কমে যেতে লাগলো, টিচার সপ্তাহে দু'দিন শেখাতে আসেন শুধুমাত্র সেই দু'দিন তারা হারমনিয়াম নিয়ে বসতো বাকি দিনগুলোতে মোটেও হারমনিয়াম একদম ধরতো না। টিচার আসে আর যায় গান শেখা আর হয় না, কারন গান শিখতে গেলে প্রচুর পরিমাণে রেওয়াজ করার প্রয়োজন তা আমার মেয়েরা করে না তাই গান তুলতে কিছুতেই পারছিল না। তখন আমি আবার হতাশায় পড়ে গেলাম কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
অনেক গুলো টাকা দিয়ে হারমনিয়াম বানানো হয়েছিল, তাই বাদ দিতেও পারছিলাম না। তখন মনে মনে ঠিক করলাম যে আর যাই হোক জোর করে গান শেখানো সম্ভব নয়। কয়েকদিন গান বন্ধ রাখলাম টিচারও বিরক্ত ওদের অনিহা দেখে তাই আমি ওনাকে বুঝিয়ে বলেছিলাম সেও বিষয় টা বুঝতে পেরেছিল। কিছুদিন পর আবারও পদক্ষেপ নিলাম এলাকার একটি গানের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলাম শুক্রবারে ক্লাস হয়, প্রথম দিন গানের স্কুলে নিয়ে গেলাম গিয় দেখি ৫০-৬০ জন বাচ্চা একসাথে গান শিখছে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেলো যে একা শিখতে পারছিল না সে এখানে কিভাবে শিখবে।
কিন্তু আমার ধারনা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হলো বড় মেয়ে প্রথম দিন ক্লাস করেই মজা পেয়েছিল, ক্লাস শেষে সে খুব খুশি যে সে এখানেই গান শিখবে,
আমি তো অবাক। ধীরে ধীরে শিখতে শুরু করলো এবং সেটা খুব আনন্দের সহিত। এভাবেই দুই মেয়ের গান শেখা শুরু এবং তা এখনো এক বছর ধরে চলছে
এখন তারা মোটামুটি সব ধরনের গান বাসায় একা একা তুলতে পারছে এবং এতে তাদের গানের টিচার তাদের প্রতি খুশি। আর আমি তো কত খুশি তা আপনারা বুঝতেই পারছেন।
যাক আপনার বিষয়টা পড়ে যা বুঝতে পারলাম অবশেষে তো আপনি সফল হয়েছেন।কোন কিছু হাল ছেড়ে দেওয়া ভাল না,সফল হতে হলে চেষ্টা করতে হয়।প্রথমে আপনি যেটা ভুল করছেন সেটা হচ্ছে যে একাকিভাবে বাচ্চারা কিছু শিখতে চায় না।যৌথভাবে যেভাবে আনন্দের সাথে শিখে।অবশেষে আপনি সফল! তারা আনন্দের সাথে গান করতেছে শুনে অনেক ভালো লাগলো।আপনার দুই মেয়ের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
আপু আপনি একদম ঠিক বলেছেন কোন কিছু হাল ছেড়ে দেওয়া উচিৎ নয়,আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি দেখি কতটা সফল হতে পারি।এককভাবে কিছুই শিখছিলনা কিন্তু এখন যৌথভাবে বেশ ভালোই শিখতেছে, আর আমি এতটুকুতেই খুশি। ধন্যবাদ আপু। দোয়া করবেন।
যাক আপনর ইচ্ছেটা তাহলে মেয়েই পূরণ করলো! আপনার বড় ভালোই রপ্ত করেছে গান গাওয়া। আমার কাছে খুবই গান খুব ভালো লাগে। আশা করি আপনার মেয়ে একদিন আপনার সুনাম রক্ষা করবে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। দোয়া করবেন যাতে অনেক ভালো কিছু করতে পারে।
আসলে এমনই হয়, নিজের স্বপ্নটাকে লালন করে সামনের দিকে যাওয়ার পথে পারিপার্শ্বিকতার কারণে অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। অনেক সময় সেটি সফল হয় আবার অনেক সময় সফল হয়না। তবে আপনি আপনার স্বপ্নগুলো গুলো আপনার মেয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি কারণ আপনার মেয়ের কণ্ঠ অনেক সুরেলা। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু, আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
জ্বি একেকটা স্বপ্নের পিছনের গল্প গুলো অনেক কষ্ট জড়িয়ে থাকে, আমি আমার মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি দেখি কতটা সফল হতে পারি। আমি ছোটবেলায় তেমন কোন সুযোগ সুবিধা পাইনি তার কারন হলো আমাদের বাড়ি একদম প্রত্যন্ত এক গ্রামে যেখানে এখন পর্যন্ত গানবাজনা করার সুযোগ তৈরি হয়নি,আর বড় হওয়ার পর বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে কিন্তু তখন আর শেখার মতো আগ্রহ ছিল না না। মেয়েদের কে সব ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই জানিনা কতটা হতে পারবে, দোয়া করবেন। ধন্যবাদ ভাইয়া।
যাক অবশেষে যে আপনার সব পূরণ হচ্ছে তাতে বেশ খুশি লাগছে আপু। প্রথমে আপনার মেয়েরা গান শিখতে রাজি হল না কিন্তু আপনার মন খারাপ দেখে কান্নাকাটি দেখে অবশেষে আপনার মেয়ে রাজি না হয়ে থাকতে পারলো না। আপনার মেয়েদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। আশা করি একদিন তার অনেক বড় শিল্পী হবে।
কিছুটা হলেও আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আপু, তার জন্য আমিও অনেক খুশি। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
সত্যি আপু বাচ্চাদের মনের ওপর চাপ দিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। দেখুন আপনি অনেক চেষ্টা করে ও, বাচ্চাদের বাসায় টিচার দিয়ে ও গান শিখাতে পারছিলেনা।আসলে বাচ্চারা এমনি ওরা সকলের মাঝেই ভালো শিখে। যাইহোক অবশেষে আপনার ইচ্ছে পূর্ণ হতে যাচ্ছে জেনে অনেক ভালো লাগল।
হ্যাঁ আপু আমি সেটা পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে জোর করে কোনকিছু করানো সম্ভব নয়,তাই এখন আর কোনকিছুতেই জোর করি না। কিছুটা হলেও আমার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে আমি এতেই খুশি অনেক বড় কিছু হতে হবে তার কোন মানে নেই আমি শুধু সবসময়ই চেয়েছি আমার মেয়েরা যেনো বলতে পারে আমরা সব পারি এতটুকুই একটা মেয়ের জন্য অনেক কিছু। ধন্যবাদ আপু।
সত্যিই আপনার মেয়েরা দারুণ গান করে।আমি তো অধীর আগ্রহে মুগ্ধ হয়ে শুনি।আপনার স্বপ্ন এভাবে ভেঙে যেতে যেতে পূরণ হলো এটা শুনে খুবই ভালো লাগলো।সব বাবা-মায়ের মনে হয় এটাই ইচ্ছে থাকে যে নিজের অসম্পূর্ণ ইচ্ছেগুলো বাচ্চাদের মাধ্যমে পূরণ করার।ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো আন্টি।
আমার মেয়ের গান সবার ভালো লাগে সবাই খুব সাপোর্ট দেয় এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। আর সব বাবা মায়ের এতটুকুই চাওয়া। তোমাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ "মা" সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
💝
আপনার পোস্ট করতে করতে ভাবছিলাম হয়তোবা আপনার সেটাও মনে হয় আর পূরণ হবে না। নিজেও পূরণ করতে পারলেন না আর এখন নিজের মেয়েদের মাধ্যমে ও পূরণ করতে পারছেন না। বাসায় টিচার রেখে ও কিছুই হলো না। এমনকি আপনিও এর জন্য কান্নাকাটিও করলেন। শেষ পর্যন্ত 50-60 জনের সাথেই স্কুলে গান শেখার আগ্রহ হলো। শেষ পর্যন্ত আপনার ইচ্ছেটা পূরণ হয়েছে দেখে ভীষণ ভালো লাগলো। আর সত্যিই আপনার মেয়ে খুব সুন্দর গান করে। আমার কাছে হ্যাংআউট এ শুনতে বেশ ভালই লাগে।
আমিও তাই ভেবেছিলাম আপু যে কোনদিন আমার স্বপ্ন পূরণ হবেনা কিন্তু ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় এখন অনেকটাই পূরণ হয়েছে। আপু আমার মেয়ের গান আপনার শুনতে অনেক ভালো লাগে জেনে খুবই খুশি হলাম। আপু আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও গান পাগল।যদিও সুর নেই তাও সারাদিন বিরবির করি।দুই চার ভাষার গান পারলেও একটাতেও সুর হয়না।
মনে মনে খুব চাই গান শিখতে কিন্তু এখন তো আর তা সম্ভব না।
পড়ে খুব ভালো লাগলো।শেষমেশ আপনার চাওয়া পূরন তো হয়েছে।শুভ কামনা জানাই🌼
প্লিজ কিছু মনে করবেন না?আমি একটা জিনিস বুঝি না বাবা মারা নিজের ব্যর্থতাকে সন্তানের ঘাড়ে চাপায় কেনো?সন্তানদের কি নিজে স্বাধীনতা স্বকীয়তা থাকতে পারে না।আর এই জায়গায় কিন্তু আমাদের জেনারেশন পিছিয়ে পড়ে। বাপ মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে নিজের ভিতরে সুপ্ত প্রতিভাকে ওখানেই কবর দিয়ে দেয়।ওদের প্রতিভা গুলো প্রকাশের সুযোগ দিন,দেখবেন ওরাই একদিন আপনাকে সম্মান এনে দিবে।মনে রাখবেন প্রত্যেকটা ব্যাক্তি তার নিজ সত্তা নিয়ে পৃথিবীতে আসে পৃথিবীকে আলোকিত করবে বলে।
দিদি ওরা যদি গান না শিখতে চায়, অন্য কিছু শিখতে চায় সেটাই শিখুক। এখন ওরা একটু বড় হয়েছে কী চায় সেটা একবার জিজ্ঞাসা করতে পারো। দেখো দুজন কি বলে? আর গান যদি তুমি ভালোবাসো তবে তুমি গানের তালিম নাও। শেখার তো কোন বয়স হয় না। বরং সবাই তোমআয় উৎসাহ দেবে। আর আমআর মনে হয় তুমি পারবে। আমরা না হয় তোমার একটা গান শুনব।