একটি ভালোবাসার মৃত্যু এবং একজন মহান প্রেমিকের গল্প।
হ্যালো বন্ধুরা,
মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সকল সদস্যগণ,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?পরম করুণাময় ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি সুস্থ আছি।
আমি @bristychaki,আমি একজন বাংলাদেশী। আমার বাংলা ব্লগ এর আমি একজন ভেরিফাইড ও নিয়মিত ইউজার।আমি বাংলাদেশর গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। প্রতিদিনের মতো আমি আজও নতুন একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি পোস্টের ভিন্নতা আনার।আজ তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে একটি ভালোবাসার মৃত্যু ও একজন মহান প্রেমিকের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
ভালোবাসা, মানুষের জীবনে এক আশ্চর্য অনুভূতির নাম। ভালোবাসা হয়ও বিভিন্ন ধরনের। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা, প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা।জীবনের অনেকটা সময় আমরা ভালোবাসা নিয়েই ভাবি।ভালোবাসা যেমন মানবজীবনে সহজাত, তেমনি বৈচিত্র্যপূর্ণ।তেমনি একটি ভালোবাসার অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
একজন মহান প্রেমিকের গল্প।
বিপ্লব মিত্র( বাপী)
জন্ম খুলনা জেলার রূপসায়।খুব সম্ভ্রান্ত একটি পরিবারে তার জন্ম।অত্র এলাকার মানুষ তাদেরকে এক নামে চেনেন।তার জন্ম সাল বা তারিখ কোনোটাই আমার জানা নেই।তবে সর্বসাকুল্যে তার বয়স আনুমানিক ৪৫ হবে হয়তো।বাপী কাকা আমার ঠাঁকুমার বৌদির বোনের ছেলে।অনেক দূরের সম্পর্ক হলেও বাপী কাকার সাথে অন্যরকম একটা আন্তরিকতার সম্পর্ক রয়েছে আমাদের সকলের।ছোটবেলা থেকে বেশ কয়েকবার খুলনায় যাওয়া হয়েছিল ঠাকুমার সাথে তখন থেকেই বাপী কাকাকে খুব ভালো করেই চিনতাম।কাকা আমাদেরকে খুবই ভালোবাসেন।কাকার আচার ব্যবহার দেখলে তাকে খুবই আপন মনে হয় এবং নিজের কাকার চেয়েও অনেক বেশিকিছু মনে হয়।
সম্ভবত ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ এ বাপী কাকা পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
বিবাহিত জীবন তাদের ভালোই কাটছিল আর দশজন মানুষের মতোই।দেখতে দেখতে কয়েকটি মাস পার হয়ে গেলো আর এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন অনু কাকিমা অসুস্থ হয়ে পড়েন।প্রথমে মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হয়। তারপর তাকে ডাক্তার দেখানো চিকিৎসা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্রেন টিউমার সনাক্ত হয। তারপর বাপী কাকা অনু কাকিমা কে মরন ব্যাধি থেকে সুস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করেন।প্রথমে ঢাকায় চিকিৎসা করান।তারপর চিকিৎসকের পরামর্শে ভারতের দিল্লি হরিয়ানা রাজ্যের ক্যান্সার হাসপাতালে ৪-৫ মাস চিকিৎসা করান।কেমোথেরাপি রেডিয়েশন থেরাপি এবং সকল উন্নত চিকিৎসা শেষ করে বাংলাদেশে নিজ বাড়িতে বিশ্রামে রাখেন।তখনকার সময় মোট ৪০ লক্ষ্য টাকা খরচ করেন।অনু কাকিমা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকেন।তখন বাপী কাকা অনেকটাই আশার আলো দেখতে পান।
কয়েক মাস পর পর ভারতে গিয়ে ডাক্তার দেখানো পরীক্ষানিরীক্ষা করানো বেশ ভালোই চলছিলো সবকিছু।এতে করেও আরও ১০ লক্ষ্য টাকা খরচ হয়ে যায়।কিন্তু তাতে বাপী কাকার কোনো আফসোস নেই।তার ভালোবাসার মানুষ ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন এটাই তার কাছে অনেক প্রশান্তির সুখ।খুব স্বাভাবিক না হলেও মোটামুটি ভালোই চলছিলো তাদের জীবন।ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস হঠাৎ করেই আবার অনু কাকিমা অসুস্থ হয়ে পড়েন।অনু কাকিমার অসুস্থতা যেনো বাপী কাকার জীবনে অন্ধকারের কালো ছায়া হয়ে নেমে আসলো।আবারও কাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা শুরু হয়ে গেলো।তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য খুলনা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন।চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখ সকলের মায়ামমতা ত্যাগ করে পরপারে চলে যান।😭
দেখতে দেখতে অনু কাকিমার মৃত্যুর ছয় বছর পার হয়ে গেলো।আজও বাপী কাকা তার মৃত্যুর দিনগুলোতে একইরকম ভাবে পালন করে আসছেন।অনু কাকিমার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসার অনুভূতি একটুও কমেনি আগে যেমন ছিলো ঠিক এখনো তেমনিই আছে।পরিবার আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব সবাই তাকে অনেক বুঝিয়েছেন দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য কিন্তু বাপী কাকার একই জবাব সে আর কোনোদিন বিয়ে করবে না।পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে থাকবে অনু কাকিমার স্মৃতি গুলো আঁকড়ে ধরে বাঁচবে।এরকম একজন মহান প্রেমিক কে মন থেকে স্যালুট জানাই।ভালো তো সবাই বাসতে পারে কিন্তু ক'জনই বা ভালোবাসার মানুষ কে মনে রাখতে পারে বলেন!
ভালোবাসা সবসময়ই সুন্দর।❤️
আপু আমার মনে হয় এই লেখাগুলো থেকে গিয়েছে ভুলবশত। আশা করছি এগুলো আপনি ভালোভাবে দেখে ঠিক করে নেবেন। আপনি আজকে বাস্তবিক একটা গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন, যেটা পড়ে আমার অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। ভালোবাসার মানুষটা যদি এভাবে সবাইকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যায়, তখন সত্যি অনেক বেশি কষ্ট লাগে। আপনার বাপী কাকা উনার স্ত্রীকে অনেক বেশি ভালোবাসতেন বুঝতেই পারছি। এই জন্যই তো উনার স্ত্রীর মৃত্যুর পর আর বিয়ে করেনি। তার স্মৃতিগুলোকে নিয়ে বেঁচে আছেন। এরকম ভালোবাসার প্রতি সেলুট জানাতে হয়।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আমার ভুল টি শুধরে দেওয়ার জন্য।জ্বি ভাইয়া বাপী কাকা ওনার স্ত্রী কে খুবই ভালোবাসতেন বলেই এখনো তার স্মৃতি গুলো আঁকড়ে ধরে অবিবাহিত জীবনযাপন করছে।আবারও ধন্যবাদ জানাই ভাইয়া।
বাস্তবিক গল্প গুলো পড়তে অনেক বেশি ভালো লাগে। তবে কারো সাথে যদি খারাপ কিছু হয়, তাহলে তা খুব খারাপ লাগে। আপনার কাকার স্ত্রী এভাবেই মারা যাবে এটা ভাবতেই খারাপ লাগতেছে। আপনার কাকা ওনাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো, তাইতো উনার জন্য এত কিছু করেছে। শেষ পর্যন্ত একটু ভালো হওয়ার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল, তবে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল এবং মারা গিয়েছে জেনে খারাপ লেগেছে দিদি। একটা মানুষ একজনকে অনেক বেশি ভালোবাসলে তার ভাগ অন্য কাউকে দিতে পারে না। তার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়, আর আপনার কাকাও ঠিক এমন করেছে।
একদম ঠিক বলেছেন আপু বাস্তব জীবনের গল্পগুলো পড়তে খুবই ভালো লাগে। কিন্তু যখনই কোনো দুঃখের স্মৃতি চলে আসে তখন আর ভালো লাগেনা।যদি কেউ কাউকে সত্যিকারের ভালবেসে থাকে, তাহলে সেই জায়গাটা আর অন্য কাউকে দিতে পারে না এটা ঠিক বলেছেন আপু।ধন্যবাদ আপু।
বাপীকাকা খুব ভালো ও মহৎ একজন মানুষ। এর আগে আমিও যে ফলের পোস্ট টি করেছিলাম সেই ফল গুলো বাপি কাকাই পাঠিয়েছিলেন।বাপি কাকার জন্য কষ্ট হয় কারণ ওনি খুব ভালোবাসতেন কাকিমাকে।এতো বছর পরেও ঠিক আগের মতোই মনে রেখেছেন।জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী,ও মৃত্যু বার্ষিকী সব পালন করে ওনি।সব সময় কাকিমার মৃত্যু বার্ষিকীতে লেখেন" ওপারে ভালো" থেকো এই কথাটি দেখলেই খুব কষ্ট হয় ওনার জন্য। ধন্যবাদ পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ বাপী কাকা মহৎ একজন মানুষ যার কোন তুলনা হয় না।সেদিন ফেসবুক দেখতে কাকিমার মৃত্যুবার্ষিকী এটা চোখে পড়লো দেখে চোখের জল চলে আসলো।আর সেই কষ্ট থেকেই গল্পটা লিখলাম।বাপী কাকার ধৈর্য শক্তি বাড়িয়ে দিক ভগবানের কাছে এটাই প্রার্থনা করি।তোমাদের কে ফল পাঠিয়েছিলো শুনেছিলাম।ধন্যবাদ।