গল্প: মামা ও ভাগ্নে। পর্ব: ০৪ || তাং: ১২/০৯/২০২২ ইং।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজ আমি আপনাদের নিকট আমার লেখা একটি গল্প শেয়ার করছি। আমার গল্পের নাম- 'মামা ও ভাগ্নে', পর্ব-০৪। আমি আশা করি আমার লেখা গল্পের পর্ব-০৪ আপনাদের নিকট অনেক অনেক ভালো লাগবে।


গল্পের তৃতীয় পর্বটি পড়ার লিঙ্ক

carrot-g218ef80f1_1920.jpg

Source

তমা মানসিকভাবে দৃঢ় হওয়ার চেষ্টা করল এবং হৃদয়ের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করল। তারপর তারা সবাই হৃদয়কে স্বাভাবিকভাবে বিদায় জানালো। কিছুক্ষণ পর হৃদয় খুবই আনন্দের সাথে বাড়িতে আসলো। তারপর তার মামা সুজনের সাথে তমা দের বাড়ির বিভিন্ন বিষয়ে গল্প শুরু করলো। সুজন তার ভাগ্নে হৃদয়কে একটু আড়ালে নিয়ে গিয়ে গাজর চুরির বিষয়টা খুলে বলল। গাজর চুরির এত সুন্দর পরিকল্পনা জানতে পেরে হৃদয় আনন্দে নেচে উঠলো। তারপর হৃদয় তমাকে ফোন করার জন্য চেষ্টা করল কিন্তু তমা'র মোবাইল ফোন সে সময় বন্ধ দেখালো।


balloon-g4583e15e5_1920.jpg
Source

এদিকে, তালেব আলী তার পরিবারের সকলের কাছে তাদের গাজর চুরি হওয়ার বিষয়টা প্রকাশ করেছে। এমনকি প্রকৃত গাজর চোরকে ধরার পরিকল্পনার কথাও তার পরিবারের সাথে শেয়ার করেছে। বাবার মুখ থেকে এরকম কথা শুনে তমা মনে মনে আলাদা প্ল্যান শুরু করলো। সে একটু পরে হৃদয়ের কাছে ফোন করল। হৃদয় ফোন ধরেই তমাকে বলতে লাগলো, কি ব্যাপার কিছুক্ষণ আগে তোমার ফোন বন্ধ দেখালো যে। তমা একটু টেকনিক করে বলল, জানু, হঠাৎ করেই মোবাইল ফোনে সমস্যা হচ্ছে। তাই তুমি যদি একটি স্মার্টফোন আমাকে কিনে দিতে তাহলে তোমার সাথে সব সময় আমার কথা বলা আরও সহজ হয়ে যেত। প্রেমিকার এমন কথা শুনে হৃদয় সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্মার্টফোন কিনে দেওয়ার কথা স্বীকার করল। তবে তমা হৃদয় কে বলল, আগামী ১০ দিনের মধ্যেই কিন্তু আমাকে স্মার্ট ফোন দিতে হবে।


daisies-g6572d134c_1920.jpg

Source

হৃদয় ভাবতে শুরু করলো মামার সাথে এবার শীতে খুব ভালো রকমের চুরি করতে হবে কেননা প্রেমিকাকে স্মার্টফোন কিনে দিতে হবে। হৃদয় মনোযোগ দিয়ে ভাবতে শুরু করলো এবার যদি প্রেমিকাকে স্মার্টফোন কিনে দিতে পারি তাহলে নিশ্চয়ই আমার প্রেম সার্থক হয়ে যাবে। প্রেমিকাকে ফোন কিনে দেওয়ার জন্য হৃদয় খুবই ছটফট করতে লাগলো। এদিকে সুজন তার ভাগ্নের নিকট থেকে স্মার্টফোন কেনার বিষয়টি জানতে পেরে হা হা হা করে হেসেই দিল। সুজন বলল, চিন্তা করিস না ভাগ্নে, ওরকম স্মার্টফোন পাঁচটা কিনে দেব। মামার মুখে এরকম কথা শুনে হৃদয় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেল।


sunset-g67b11ad89_1920.jpg
Source

এভাবেই চলতে থাকলো। কয়েকদিন পর এলো বৃহস্পতিবার। দিনের বেলায় মামা ভাগ্নে দুজনেই বেশি করে ঘুমিয়ে নিল। তারপর চুরি করতে যাওয়ার সমস্ত পরিকল্পনা সম্পন্ন করে ফেলল বিকেলের মধ্যেই। এদিকে তালেব আলী চোর ধরার জন্য তার নিকটতম কয়েকজন সঙ্গীকে জোগাড় করল। সন্ধ্যার পর পরই তালেব আলী তার সঙ্গীদের নিয়ে তার গাজর ক্ষেত থেকে খানিকটা দূরে অবস্থান করতে লাগলো। হাড় কাঁপানো শীতের রাত্রে এরকম ফাঁকা মাঠে চোর ধরার উদ্দেশ্যে থাকাটা বেশ ঝামেলায় মনে হচ্ছিল তাদের কাছে। কিন্তু চোর ধরার উদ্দেশ্যে তারা মানসিকভাবে খুবই শক্ত ছিল। তালেব আলীরা সংখ্যায় ছিল ছয় জন। তারা দু'জন দু'জন করে গাজর ক্ষেত ছাড়া একটু দূরে অবস্থান করতে লাগলো।


field-g1a943515b_1920.png

Source

রাত সাড়ে নয়টার পর সুজন এবং তার ভাগ্নে হৃদয় বড় বড় দু'টি বস্তা নিয়ে গাজর চুরির উদ্দেশ্যে মাঠের দিকে রওনা হল। তাদের উদ্দেশ্য প্রথম দিন যেখান থেকে গাজর চুরি করেছে ঠিক সেখান থেকেই তারা আজকেও গাজর চুরি করবে। প্রথম দিন তারা গাজর চুরি করেছিল তালেব আলীর জমি থেকে। তালেব আলীর গাজর ক্ষেতে যেতে তাদের অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়। শুধু তাই নয় গাজর ক্ষেতে পৌঁছানোর আগে তাদের বিশাল একটি ভুট্টার ক্ষেত অতিক্রম করে আসতে হয়। ওদিকে তালেব আলী চোর ধরার জন্য তীব্র শীত উপেক্ষা করে চাদর মুড়ো দিয়ে খুবই সতর্ক অবস্থায় অবস্থান করছে।


forest-g4407b7988_1920.jpg
Source

সুজন এবং তার ভাগ্নে হৃদয়কে সাথে নিয়ে যখন ভুট্টা ক্ষেতের ঠিক মাঝখানে এসে পৌঁছালো তখন তারা একটি আওয়াজ শুনতে পেল। প্রথমে ভেবেছিল আওয়াজটি হয়তো অন্য কোন কিছু কিংবা কোন অচিন পাখির হতে পারে। কিন্তু একটু পরেই সে আওয়াজটি আরো জোরে পরপর দুইবার শুনতে পেল। তখন বুঝলো এটা কোন সাধারণ আওয়াজ নয়, ভয়ংকর মানুষের কন্ঠ। ভুট্টা ক্ষেতের মাঝখানে এসে এমন ভয়ংকর মানুষের কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পেরে তারা দুজনই বেশ ভয় পেয়ে গেল। তারপর তারা দুজন খুব জোর পায়ে ভুট্টার ক্ষেত অতিক্রম করতেই মানুষের ভয়ঙ্কর কণ্ঠের কথা শুনতে পেল। তারা শুনতে পেল যে কথাটি সেটা হল, দেখ তো, ভুট্টা ক্ষেতের মধ্যে মানুষের পায়ের শব্দ মনে হচ্ছে। এখানে পুলিশ এলো নাকি, না আমাদের বিরোধীদল এসেছে। অত্যন্ত ভারী এবং মোটা কন্ঠে এরকম কথাগুলো শুনে সুজনের আর বুঝতে বাকি রইল না যে, তারা আজ বড় ডাকাত দলে কবলে পড়েছে। সাথে সাথে সুজন এবং হৃদয় ভয়ে জড়ো হয়ে, নিরব হয়ে বসে পড়ল। ভয়ে তাদের নিশ্বাস পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় তাদের গায়ের উপর হালকা আলোর ছটা এসে পড়ল।

[গল্পটি চলমান থাকবে]



১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ ।

Sort:  

ভাল গল্প লিখেছেন। এরকম আরও লিখতে থাকুন।

 2 years ago 

ভালো গল্প লেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি, দাদা।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 65814.16
ETH 3444.84
USDT 1.00
SBD 2.64