গল্প :- প্রিয়জন // পর্ব - ০৫

in আমার বাংলা ব্লগlast year



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ শনিবার। ১৭ই জুন, ২০২৩ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আজকে আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে আপনাদের নিকট হাজির হয়েছি।

siblings-gc11837ab2_1280.jpg

Source



ঝর্না মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গেল। ঝর্না চারিদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলো, অতি কষ্টে বুক ফেটে কান্না চলে আসতে লাগলো, ঝর্নার পুরো শরীর কেমন যেন অবশ হয়ে গেল। যেন দুঃখের স্রোতে ঝর্নার সাজানো স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। সাগরের মুখে এরকম কথা শুনে ঝর্না কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে বসে থাকার পরে মৃদুস্বরে সাগরকে বললো, আমি একটু বাড়ি যাচ্ছি। তারপর ঝর্ণা মাথার নিচু করে বিবর্ণ হয়ে সাগরের ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে নিজের বাড়িতে চলে গেল। নিজ কক্ষের দরজা বন্ধ করে ঝর্না অনবরত অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো। এ যেন দুঃখের সাগরে ঝর্না ভেসে যেতে লাগলো। ঝর্না চেয়েছিল একরকম কিন্তু হলো ঠিক তার বিপরীত। ঝর্না ভেবেই পাচ্ছিল না যে, সে এখন কি করবে। তারপর ঝর্না নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলো এবং নিজের মনকে শক্ত করার চেষ্টা করলো।

ঝর্নার নিস্তব্ধতা ও বিবর্ণ চেহারায় এভাবে চলে যাওয়া দেখে সাগর কেমন যেন হতবাক হয়ে গেল। সাগর নিজেও বুঝে উঠতে পারলো না যে, কোথায় কি হলো? তাই সাগর নিজের কিছু কাজ গুছিয়ে ঝর্ণার বাড়ির দিকে রওনা হলো। কিছুক্ষণ পর সাগর যখন ঝর্ণার বাড়িতে গেল তখন ঝর্না সাগরের কাছে এসে বললো, বাড়িতে একটু কাজ ছিল তাই দ্রুত চলে এসেছি। এখন বলো, তোমার জন্য আমি কি করতে পারি? তারপর সাগর সীমাকে পাওয়ার জন্য বিশেষ একটি পরিকল্পনা ঝর্নাকে বলে দিল। ঝর্না অত্যন্ত কষ্টের সাথে সাগরের সমস্ত পরিকল্পনা গুলো শুনলো এবং সাগরের কথায় রাজি হল। ঝর্না সাগরকে বলে দিলো, আগামীকাল সে কোচিংয়ে যাবে না। তাই আগামী পরশুদিন সব বিষয়ে সে সাগরকে সাহায্য করবে।

ঝর্নার কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার আশ্বাস পেয়ে সাগর আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। সাগর ঝর্নাকে বলতে লাগলো, আসলে তোমার মতো ভালো বন্ধু পাওয়া আমার জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। সাগর আরো বললো, তোমার সহযোগিতায় আমি যদি আমার মনের মানুষ সীমাকে পেয়ে যায়, তাহলে তুমি যা চাইবে আমি তাই তোমাকে উপহার হিসেবে দিয়ে দিবো। এ কথাটি শুনে ঝর্নার মন হু হু করে কেঁদে উঠলো। কারণ ঝর্না তো প্রকৃতপক্ষে সাগরকে ভালবেসে সাগরকেই পেতে চেয়েছিল। কিন্তু সাগর মন প্রাণ উজাড় করে ভালবেসে ফেলেছে ঝর্ণার বান্ধবী সীমাকে। এদিকে সাগর ঝর্ণাদের বাড়ি থেকে চলে গেল। আস্তে আস্তে রাত গভীর হতে লাগলো। কিন্তু ঝর্নার দু'টি চোখে কোনভাবেই ঘুম আসলো না। অত্যন্ত দুঃখের সাথে কাঁদতে কাঁদতে ঝর্ণা তার রুমের ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো। ঝর্না নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো এবং নিজে হাতে নিজের চোখের জল মুছে ফেললো। তারপর ঝর্ণা নিজের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তটি নেওয়ার জন্য মনকে শক্ত করলো।

রাত প্রায় বারোটা বেজে গেছে। চারিদিকে নীরব অবস্থা। নিঝুম রাতে মাঝে মধ্যে কয়েকটা ঝি ঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে এবং মাঝেমধ্যে কেমন অচিন পাখি ডেকে উঠছে। চারপাশের মানুষগুলো সকলেই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। এর মধ্যে কে যেন সাগরের মা--- রিমার ঘরের দরজায় ঠক ঠক করে আওয়াজ দিতে লাগলো। রিমা খাতুন নির্ভয়ে তার ঘরে দরজা খুলে দিল। তারপর রিমা খাতুন দেখল যে, তার প্রানের স্বামী প্রবাস থেকে তার নিজ গৃহে চলে এসেছে। রিমা তার স্বামীকে দেখে তার চোখকেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। ঠিক যে পোশাকে রিমার স্বামী প্রবাসে গিয়েছিল, ওই পোশাক পরিধান করেই রিমার স্বামী নিজ বাড়িতে প্রবেশ করেছে। তারপর রিমার স্বামী রিমার ঘরের প্রবেশ করলো। রিমার স্বামী আস্তে আস্তে রিমার প্রিয় জিনিসগুলো যেমন বিদেশি চুরি, বিদেশি সোনার নেকলেস, ছুনো-পাউডার ও বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী বের করতে লাগলো। একই সাথে রিমার বিভিন্ন ধরনের পছন্দের খাবার গুলো বের করতে লাগলো। অনেকদিন পরে স্বামীকে পেয়ে এবং স্বামীর নিকট থেকে প্রিয় জিনিসপত্র ও খাবারগুলো পেয়ে রিমা আনন্দে, উচ্ছ্বাসে আত্মহারা হয়ে যেতে লাগলো। তারপর পরস্পরের সাথে ভালোবাসা বিনিময় করার জন্য তারা দু'জন দু'জনার কাছে আসলো। স্বামীর ভালোবাসা পেয়ে রিমার পুরো শরীর ও মন সুখে পরিপূর্ণ হয়ে যেতে লাগলো। আর ঠিক এমন মুহূর্তেই রিমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।

রিমা এতক্ষণ ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নের মাঝে যেগুলো দেখেছে, সেগুলো স্মরণ করে সে যেন লজ্জার মধ্যে পড়ে গেল। আবার রিমার মনের মধ্যে কেমন যেন ভয় অনুভূত হতে লাগলো। ঘরের দরজা খুলে রিমা দেখলো যে, এখনো অনেক রাত বাকি আছে সকাল হতে। কিন্তু এত গভীর রাতে রিমা এ ধরনের স্বপ্ন দেখে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। তার দু'চোখে আর কোনোভাবেই ঘুম আসলো না।


গল্পটি চলমান থাকবে। গল্পটির ষষ্ঠ পর্ব আগামী সপ্তাহে শেয়ার করা হবে।


গল্পের চতুর্থ পর্বটি পড়ার লিংক



১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।



Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 last year 

আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগল। সত্যি ঝর্ণার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে জেনে ভালো লাগল।আসলে এই অবস্থায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টের। তবে ঝর্ণা সাগরের জন্য চেষ্টা করবে এটাই ঝর্ণার সত্যিকারের ভালোবাসা।আর রিমা খাতুন স্বপ্নে তার স্বামীকে পেয়ে খুশি হবে এটাই স্বাভাবিক। এমন স্বপ্ন দেখলে ঘুম না আসায় স্বাভাবিক। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 67698.91
ETH 3266.83
USDT 1.00
SBD 2.64