গল্প:- কষ্টের অর্জিত ফল।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আমি @tuhin002, আমি আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যগনকে আমার পক্ষ থেকে জানায় সালাম," আসসালামু আলাইকুম" সবাই কেমন আছেন ? আশা করি, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহুর অশেষ রহমতে ভাল আছি। আজকে আমি আলোচনা করবো, গল্প- কষ্টের অর্জিত ফল। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তাই শুরু করছি আমার আজকের ব্লগ...



কষ্টের অর্জিত ফল:-


container-drums-1854251_1280.jpg

source


কথায় আছে,কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। কষ্ট না করলে কোন কিছুই সম্ভব হয়ে ওঠে না। বর্তমানে পৃথিবীতে যারা আজকে ধনীর সারিতে রয়েছে যাদের নাম তারা সবাই কষ্টের মধ্যে দিয়ে এই পর্যন্ত এসেছে। আপনারা হয়তো জন আব্রাহাম লিঙ্ক করে নাম শুনেছেন। তিনি ছিলেন একজন মুচির ছেলে। অথচ তার ইচ্ছাশক্তি এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি এক সময়কার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এটাও কি সম্ভব একজন মুচির ছেলে আমেরিকার মত একটা দেশ, যে দেশ বিশ্ব শাসন করে। যে দেশের সে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান। এমন বহু মনীষী রয়েছে যাদের জীবনী পড়লে বোঝা যায় তারা কত কষ্টের মধ্য দিয়ে তারা এ পর্যন্ত পৌঁছেছেন। তবে এক্ষেত্রে ভাগ্য থাকা লাগে। আপনার কপালে যদি না লেখা থাকে তাহলে আপনি কখনো সেই পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন না। তাই অবশ্যই আপনার তকদিরের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। এবং সফলতার জন্য সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।


আমি আজকে আপনাদের সামনে একজন মিস্ত্রির গল্প শোনাবো। নাম ছিল তার টুটুল মিয়া। লোকটি খুব বেশি উঁচু ছিল না, হয়তো বা ৪ ফিট তিন ইঞ্চি হবে। কিন্তু তার কাজের ধার ছিল অনেক বেশি। খুব ছোটবেলা থেকে সে মিস্ত্রির কাজ করতো। যদিও প্রথমে দিক দিয়ে সে ছেলে একজন জোগালে। অর্থাৎ হেড মিস্ত্রি কাজ করত আর সেই ইট অথবা খোয়া কিংবা বালি ইত্যাদি কাছে নিয়ে যেতে থাকতো। তারা ছিলেন চারটা ভাই। তাদের বাপ একটা হলেও মা ছিল দুইটা। প্রথম মায়ের তিন সন্তানে ছোট সন্তান টুটুল মিয়া। তাদের প্রথমদিকে অবস্থা ছিল খুব একটা ভালো না। দিন আনতো দিন খেতো এভাবে তাদের দিন চলতে থাকতো। যদিও টুটুল মিয়া ছিল কাজের যোগালি কিন্তুু তার কাজ ছিল খুবই নিখুত এবং সুন্দর। তার কাজের প্রতি ছিল আগ্রহ বেশি। তার বাকি যে দুই ভাই ছিল তারা ছিল মিস্ত্রি। তাদের দুইভার থেকে তার কাজের প্রতি মনোযোগ ছিল কঠিন। এভাবে চলতে থাকে তার প্রতিটা দিন। যত দিন যায় তত তার কাজের গভীরতা বেড়ে চলে।


আপনারা হয়তোবা জানেন যারা মিস্ত্রির কাজ করে তারা অনেক দূরে গিয়ে কাজ করে কিংবা বাড়ির আশেপাশেও কাজ করে থাকেন। তবে যেখানে কাজ করুক না কেন মিস্ত্রির জন্য অন্ততপক্ষে দুই বেলা খাবার খেয়ে দিতে হয়। এটা কিন্তু মিস্ত্রিদের জন্য একটা বাড়তে আয়। এবার তে আই টা কেমন এটি হচ্ছে যে তিনবেলা খাবারের যে টাকা সেটা তো বাড়ির থাকলে কিনে খেতে হতো কিন্তুু সেটা লাগছে না অর্থাৎ এটা ইনকামের মধ্যেই পড়ে। এভাবে দিন যেতে লাগলো সে কাজের প্রতি তার আগ্রহ বাড়তে থাকলো একটা সময় সে নিজেই যোগাযোগ থেকে মিস্ত্রি হয়ে গেল। ওই সময় মিস্ত্রির ছিল খুব কম তার জন্য তাদের প্রভাবটা ছিল অনেক বেশি। আর সব থেকে বড় কথা আপনি যদি কাজ ভালো করেন বা কাজের মান যদি ভালো থাকে তাহলে মানুষ অবশ্যই আপনাকে দিয়েই কাজ করাবে এটাই স্বাভাবিক। এরপরে তিনি এভাবেই কাজ করতে থাকেন পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত। একটা সময় তাদের বাড়িতে ছিল অভাব। বুঝতেই তো পারছেন যে বাড়িতে এতগুলো মানুষ থাকে সেখানে খাবারের চাহিদাটা তো একটু বেশিই থাকে। কিন্তুু যোগান দেয়ার মানুষ ছিল কম। তার কঠোর পরিশ্রমের ফলে সে আস্তে আস্তে তার অবস্থার পরিবর্তন করতে থাকেন। এই কাজের পাশাপাশি তিনি কিছু গৃহস্থালি পশু পালন করতেন।


এভাবে রাজমিস্ত্রি কাজের মধ্য দিয়ে তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে। বর্তমানে সে অনেক কিছু করে ফেলেছে এর মধ্য দিয়ে। বর্তমানে এখন একটা টিলার, ঘম ভাঙা মেশিন, ট্রাক্টর ইত্যাদি রয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে উনার সাথে দেখা হয়েছিল উনি বলছিল যে আমার প্রায় সাত থেকে আট বিঘা জমি এখন। সেখানে তিনি প্রতি বছরের গম মুসুরি ছোলা উৎপাদন করে থাকেন। আর এ থেকে তিনি বছরের তিন থেকে চার লক্ষ টাকার মতো বিক্রি করে থাকেন। সত্যি খুব ভালো লাগলো একটা বিষয়, তিনি আবাদে জমি ছাড়াও যে যন্ত্রপাতিগুলো রয়েছে সেটা দিয়ে তিনি মসরি ছোলা গম এগুলো মাড়াই করে থাকেন এবং এখান থেকে তিনি প্রচুর পরিমাণে টাকা উপার্জন করে থাকেন। তবে এর মধ্যে তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে সেটাকে তিনি ওই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছেন এবং এটা ছিল উনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট। এত উপার্জন থাকার পরও তিনি দেশের বাইরে চলে যেতে চেয়েছিলেন। এমন একটা সিদ্ধান্ত থেকে তিনি অনেকদিন ভুগছিলেন পরবর্তীতে তিনি সেই সিদ্ধান্ত থেকে কিছু হটেন। তখন তিনি বলল যে আমি যদি বাইরে যেতাম তাহলে আমার অনেকটা ক্ষতি হতো। কারন আমি এখানে বসে মাসে চল্লিশ হাজার এর উপরে আমার ইনকাম হয়ে থাকে। এছাড়া আমার আবাদি জমিগুলো আছে সেখান থেকেও আমার অনেক টাকা বছরে আয় হয় তাহলে আমার বাইরের দেশে যাওয়ার কোন দরকারই নাই। এই কথা শোনার পরে আমিও তাকে আশ্বস্ত করলাম এবং বললাম আপনি খুব ভালো একটি কাজ করছেন সেখানে না গিয়ে। আপনার এই কষ্ট অর্জিত ফলগুলো সব বিনষ্ট হয়ে যেতে পারতো।


জীবনে প্রথম থেকে অনেক কষ্ট করেছেন তিনি আর আসবেন তিনি তার কষ্টে অর্জিত অনেক ভালো একটি ফসল পেয়েছে। তিনি আমাকে বলছিলেন যে তিনি এখন অনেক সুখে আছেন। অনেক কষ্ট করেছেন অনেক পরিশ্রম করে আজ এখানে তিনি এসেছেন। সবচেয়ে ভালো লাগলো একটা বিষয় তার বাড়িতে এখন দুই থেকে তিনজন প্রত্যেক দিন মজুরি খাটে। একটা সময়ে যে অন্যের বাড়িতে মজুরি খাটতেন, এখন তার বাড়িতে অন্য মানুষেরা মজুরি খাটে।এটাই হল পরিশ্রম আর এটাই হল কষ্টের অর্জিত ফল। আপনি যদি কষ্ট করেন তাহলে অবশ্যই সেই কষ্টে পরিশ্রম আপনি এক সময় পাবেন। কষ্টে সাফল্য কখনো বৃথা যায় না। আর কষ্টে অর্জিত ফল সব সময় সুস্বাদু হয়।


ভূল ত্রুটি হলে অবশ্যই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশায় নিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।

আজ এই পর্যন্ত। সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

ডিভাইস poco M2
লোকেশন মেহেরপুর

ভূল ত্রুটি হলে অবশ্যই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশায় নিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।

👨‍🦰আমার নিজের পরিচয়👨‍🦰


1666192548913_1666192548801_1666192548599_1666192548416_1666192548270_1666192548091_1666192547839_1666192547665_1666192022150.jpg

আমি আবুল বাশার খায়রুল আলম তুহিন। আমার বাসা মেহেরপুর জেলা,গাংনী থানা, জুগীর গোফা গ্রাম। আমি বিবাহিত। বর্তমানে আমার একটা পুত্র সন্তান আছে। আমি গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি রাজশাহী নিউ গভমেন্ট ডিগ্রী কলেজ থেকে। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি বাংলা ব্লগে কাজ করতে অনেক ভালোবাসি। এই ব্লগে কাজ করার মাধ্যমে আলাদা প্রশান্তি পায়। আমি ছবি আঁকতে,গান গাইতে,কবিতা লিখতে অনেক পছন্দ করি। এছাড়া আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করি। সংক্ষিপ্ত আকারে আমার নিজের পরিচয় আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য শুভকামনা রইলো।


Logo.png

(১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য )


4gZTTLyoV1msFb1u1BdB14ZHSP5sNg8hbP9cbJyTmUqfzLdXDsNijBKWNGJn5ogmozSiA7cyReMsKwomyC79dv8nHgZj3RKbXhPtULzHviAUBY9Vc8ousmvcnNywqK...hMHPzmtXdqcE25kuBukgtAciNVXSHonSRqmAmfHf9YgyuYwwZo1Nd9dUCogeVvSsKh3MRCxw1Khi2NyeZh4Rt4J9n7wTsZvJ1tiUMafwrMjZ5AQz2ERchsjjJv.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

3YjRMKgsieLsXiWgm2BURfogkWe5CerTXVyUc6H4gicdRPxFqYAEtmnwbJrshP4Tdaov4BmxkXJqLhx2USjht6Vy2soth7e34k1TKBQ2RZ2vXNJBF8X9uKH9aLNKFV...xU6W1ggWaLoBhkXz82k34bfNqfnFypapZe2oHzEHELJzLj6msr2RorLQSivfSXJaPiBZmUdQYzewFKsaGxDCyC6yRhEDYu8mNwzeEnkjmmjmpLrQEyQZKZnCTp.png

Sort:  
 2 years ago 

আসলে কষ্ট এবং পরিশ্রমের ফল একদিন না একদিন অবশ্যই পাওয়া যায়। আর তেমনি টুটুল মিয়াও তার কষ্টের ফল পেয়েছে। এখন তিনি বসে বসে অনেক টাকা রোজগার করছে যা অন্য দেশে গিয়ে করা যেত না। তিনি কিন্তু খুব ভালো একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্য কোন দেশে না গিয়ে। আপনি অনেক সুন্দর করে কষ্টের অর্জিত ফল গল্পটা লিখেছেন দেখে খুব ভালো লেগেছে। সব মিলিয়ে খুব সুন্দর ছিল আপনার করা এই গল্পটা।

 2 years ago 

বর্তমানে অনেক সময় মানুষ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও ভুল পথে পতিত হয়। ঠিক তেমন ভুলটা এই টুটুল মিয়া করতে গিয়েছিল কিন্তুু ভাগ্য তাকে সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

কষ্টের অর্জিত ফল যদি এরকম সুন্দর হয় সবশেষে তখন আর কি লাগে। আসলে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের উচিত কষ্ট এবং পরিশ্রম করা। তবেই তো আমরা জীবনে উন্নত হতে পারব এবং জীবনে আমরা ভালো কিছু করতে পারবো। আর তেমনই টুটুল মিয়ার জীবনেও হয়েছে। লোকটা নিজের কষ্টের ফলটা অনেক সুন্দর পেয়েছে এটা জেনে ভালো লাগলো। এখন তিনি বছরে অনেক টাকা লাভ করতে পারছে।

 2 years ago 

পরিশ্রম দ্বারে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব। মানুষ যে কোন জায়গা থেকে যদি সে পরিশ্রম করে তাহলে অবশ্যই সেই জায়গা থেকে সে উন্নতি করবে।

 2 years ago 

আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগল। সত্যি ভাইয়া কষ্ট করলে তার ফল একদিন অবশ্যই পাওয়া যাবে।পরিশ্রম হলো সৌভাগ্যের প্রসূতি। আসলে ভাইয়া আমাদের পরিশ্রম করতে হবে আবার ভাগ্যে থাকতে হবে।যাইহোক টুটুল মিয়ার মতো এমন অনেকেই আছেন যে শুধু পরিশ্রম করে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আপনি ঠিক বলেছেন আপু টুটুলের মত অনেক লোক আছে পৃথিবীতে যারা নিজের কষ্ট করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে।

 2 years ago 

ভাইয়া আমার দাদা বলতো কাজ হলো নিজের আর পেট হলে পরের। কাজ করতে পারলে টাকা খাবার অভাব হয় না। টুটুল মিয়া প্রথম থেকেই মনযোগ দিয়ে জীবনের যুদ্ধটা শুরু করেছেন। যার ফলে ভাগ্য তার সহায় হয়। আজ তিনি লাখ লাখ টাকার মালিক। উনি বিদেশে না গিয়ে ভাল করেছেন। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

কিছু কিছু সময় ভাগ্য বলে দেয় যে আপনাকে কি করতে হবে। আর সে ভাগ্যের কথা শুনে সে দেশে থেকে এত কিছু করতে পেরেছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.09
TRX 0.32
JST 0.033
BTC 108415.08
ETH 3847.10
USDT 1.00
SBD 0.61