'তোমাকে ছোঁয়ার সাধ্য আমার নেই' গল্পের অষ্টম পর্ব।
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে 'তোমাকে ছোঁয়ার সাধ্য আমার নেই' গল্পের অষ্টম পর্ব উপস্থাপন করছি। আশা করি, গল্পের অষ্টম পর্বটি আপনাদের সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।
সোর্স
সেদিনের পর থেকে রাজু একটু অন্যরকম হয়ে যায়। হঠাৎ করে সে তার পরিবারকে জানায় সে বিদেশে পড়াশোনা করতে যাবে। রাজুর মুখে এই কথাটি শোনার পর তার পরিবার একটু অবাক হয়ে যায়। রাজুকে তার মা বিদেশে যেতে বারন করে কারণ মায়ের অনেক আদরের ছেলে ছিল রাজু। রাজুকে ছেড়ে তার মা একটা মুহূর্ত থাকতে পারে না। কিন্তু রাজু ছিল নাছোড় বাঁধা তার জন্য তার পরিবার তাকে জোর করতে পারেনি। কিছুদিন পর রাজু বিদেশ চলে যায়। বিদেশে রাজুর দিনগুলো ভালই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু রাজু হয়তো জানে না তার জন্য একটি মানুষ তার দেশে দিনের পর দিন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সৃষ্টি সেদিনের ওই ঘটনার পর থেকে নিজেকে ঘর বন্দী করে ফেলে। তার বন্ধু মেঘা তাকে অনেকবার চেষ্টা করেছে বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু সৃষ্টি রাজি হয়নি। সৃষ্টি খাওয়া-দাওয়া ঘুম সবকিছু ছেড়ে দেয়। দিনের পর দিন এমন ভাবে চলতে চলতে সে অসুস্থ হয়ে।
অসুস্থতার কথা শুনে মেঘা ছুটে চলে আসে সৃষ্টিদের বাড়িতে। বাড়িতে এসে সৃষ্টিকে দেখে মেঘার চোখে জল চলে আসে। মেঘা সৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। আর বলতে থাকে কেন এমনটি করছিস ?কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস দিনের পর দিন? আমি জানিনা কেন এমনটি করছিস আমাকে খুলে বল। সেদিনের পর থেকে তুইও নিজেকে আড়াল করে রেখেছিস। দাদা ও বিদেশ চলে গেল। সৃষ্টি মেঘাকে বলে, আমি রাজুকে খুব ভালোবাসি। কেন আমার সাথে এমনটি করছে? কেন বারবার আমাকে তার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করছে? আমি মানছি আমি প্রথমে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি। কিন্তু বিশ্বাস কর মেঘা আমি তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি তার ভালোর জন্য। আমি যদি তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করতাম তাহলে আজ সে সঠিক পথে ফিরে আসতে পারতো না। মেঘা সৃষ্টিকে বলে, আমি জানি তুই দাদাকে খুব ভালোবাসিস। তুই চিন্তা করিস না আমি দাদাকে সবটি বুঝিয়ে বলব। সৃষ্টি বলে,মেঘা আমার একটা কথা রাখবি। মেঘা বলে, আমি তোর সব কথা রাখব। সৃষ্টি বলে, তোর সঙ্গে তো রাজুর কথা হয় আমার কথা তাকে জানাবি না।যদি সে আমার কথা কখনো জিজ্ঞাসা করে তাহলে বলবি সে খুব ভালো আছে আর বলবি তার বিবাহ ঠিক হয়েছে বড়লোক ছেলের সঙ্গে।
মেঘা সৃষ্টিকে বলে, কেন এসব কথা বলছিস দাদা ও তোকে খুব ভালোবাসে। হয়তো তোদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে আমি দাদাকে বুঝিয়ে বলব সব ঠিক হয়ে যাবে। সৃষ্টি মেঘাকে বলে, তুই আমার বন্ধু হলে আমার সম্পর্কে তোর দাদাকে কিছুই জানাবি না। মেঘা সৃষ্টিকে বলে, আচ্ছা ঠিক আছে আমি দাদাকে তোর সম্পর্কে কিছুই জানাবো না কিন্তু আমাকে কথা দে নিজেকে এমন ভাবে কষ্ট দিবি না। সৃষ্টি বলে, আমি তোকে কথা দিচ্ছি সুস্থ হয়ে আমি আবার নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলবো। আমিও তোর দাদাকে দেখিয়ে দেব। আমাকে ছাড়া যেমন সে ভালো আছে, আমিও তাকে ছাড়া ভালো আছি। সেদিনের পর থেকে সৃষ্টি সবকিছু ভুলে গিয়ে নতুনভাবে পথ চলা শুরু করে। কিন্তু নতুনভাবে সবকিছু শুরু করলে ও সৃষ্টির মনের ভেতরে রাজুর জন্য ভালোবাসা থেকেই গিয়েছিল। সৃষ্টি সব সময় মেঘার থেকে রাজুর খবরা-খবর নিত। সৃষ্টি মনে মনে বিশ্বাস করত রাজু বিদেশ থেকে ফিরে এসে ঠিক থাকে কাছে টেনে নেবে।
বেশ কয়েক বছর কেটে যায় সৃষ্টির পড়াশোনা শেষ হয়ে যায়। পড়াশোনা শেষ হতেই সৃষ্টি একটি চাকরি ও পেয়ে যায়। হঠাৎ একদিন মেঘা সৃষ্টিকে ফোন দিয়ে জানায় দাদা বিদেশ থেকে বাড়িতে আসছে। সৃষ্টি রাজুর বিদেশ থেকে আসার কথা শুনে সে সঙ্গে সঙ্গে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে এয়ারপোর্টে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কারণ অনেক বছর পর তার ভালোবাসার মানুষটি দেশে ফিরছে তাকে একবার দেখার জন্য তার মনটা ছটফট করতে থাকে। মেঘা এয়ারপোর্টে পৌঁছে সৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর মেঘা দেখল সৃষ্টি এখনও এসে পারেনি। তাই মেঘা সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টিকে ফোন দেয় কিন্তু সৃষ্টির ফোন বন্ধ ছিল। মেঘা সৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে করতে সামনে দেখতে পায় দাদাকে। রাজু মেঘা কে দেখে দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। রাজু এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে বলে আর কেউ আসেনি তোর সঙ্গে। মেঘা বলে, আর কে আসবে তোকে নিতে। রাজু হেসে দিয়ে বলে, তাইতো তুই ঠিকই বলেছিস তুই ছাড়া কে বা আসবে। মেঘা বলে, তুই কি সৃষ্টির আসার কথা ভেবেছিলি। রাজু বলে, আমি কেন তার কথা ভাবতে যাব। চল বাড়িতে যাই আমি অনেক ক্লান্ত। মেঘা বলে, দাদা একটু ওয়েট কর একজনের আসার কথা রয়েছে। রাজু বলে, অনেকক্ষণ ওয়েট করেছি, তুই যার কথা ভাবছিস সে আসবে না। তাই দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা না করে বাড়িতে চল।
এই গল্পটা পড়তে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। সৃষ্টি এবং রাজু একে অপরকে ভীষণ ভালোবাসে। রাজু যেহেতু দেশে ফিরেছে, আশা করি এবার তাদের মিলন হবে। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।