গল্প-দূর আকাশের তারা||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে আমরা অনেক ভালো লাগে। তাই সময় পেলে গল্প লেখার চেষ্টা করি। যদিও মনটা খুব একটা ভালো নেই। তবু আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। আশা করছি আমার লেখা গল্পটি সবার ভালো লাগবে।


দূর আকাশের তারা:

pexels-pixabay-355465.jpg

Source


নীলাঞ্জনা কবিতা প্রেমী মানুষ। কবিতার ভাষায় সে যেন ভালোবাসা খুঁজে পায়। কিংবা ভালোলাগা অনুভূতি। হঠাৎ একদিন নীলাঞ্জনা একটি ডায়েরি কুড়িয়ে পায়। ডায়েরিটি দেখে হাতে তুলে নেয় নীলাঞ্জনা। অজস্র কবিতায় ভরা ডায়েরির প্রতিটি পাতা। কবিতা লেখা ডায়েরি পেয়ে নীলাঞ্জনা যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েছিল। ডায়েরির প্রতিটি পাতায় যেন ভালোবাসার ছড়াছড়ি। কখনো ভালোবাসার মাখামাখি কখনো বা বিরহের কান্না। নীলাঞ্জনা আশেপাশে খুঁজে ডায়েরির মালিককে পায়নি তাই তো সে বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে যায়।


ডায়েরির প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে যেন নীলাঞ্জনা অদ্ভুত এক মায়া খুঁজে পেয়েছিল। প্রত্যেকটি পৃষ্ঠায় যেন আবেগ মাখা কবিতার লাইনগুলো লেখা ছিল। আর প্রত্যেকটি কবিতার লাইন যেন নীলাঞ্জনাকে পাগল করে দিচ্ছিল। নীলাঞ্জনা কবিতাগুলো পড়তে পড়তে হঠাৎ করে একটি ফোন নম্বর পেয়ে যায়। নীলাঞ্জনা ভীষণ খুশি হয়ে যায়। এবার যখন নীলাঞ্জনা ফোন নাম্বারটিতে কল করে তখন অপরপ্রান্ত থেকে শুনতে পায় নাম্বারটি বন্ধ আছে। নীলাঞ্জনার মনে আধার নেমে আসে। বুঝতে পারছিল না কি করে ডায়েরির মালিকের সাথে যোগাযোগ করবে। নীলাঞ্জনা প্রত্যেকদিন ডায়েরির পাতা খুলে বসে থাকে আর কবিতাগুলো পড়ে। কবিতা পড়তে পড়তে কখন জানি কবির প্রেমে পড়েছিল নীলাঞ্জনা। ডাইরির শেষ পাতায় ছোট্ট করে সজল নামটি লেখা ছিল।


নীলাঞ্জনা কিছুতেই বুঝতে পারছিল না কি করে সজলের দেখা পাবে। একদিকে ফোন নম্বরটি বন্ধ ছিল অন্যদিকে সজলকে সে খুঁজে পাচ্ছিল না। তাই তো সে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন গ্রুপে কবিতা আবৃত্তি করে পোস্ট করতে লাগে। নীলাঞ্জনা দারুন কবিতা আবৃতি করে। আর সজলের লেখা কবিতাগুলো আবৃত্তি করে নীলাঞ্জনার বেশ আনন্দ হচ্ছিল। সবার প্রশংসা শুনতে নীলাঞ্জনার বেশ ভালো লাগছিল। সবাই কবিতাগুলো অনেক পছন্দ করেছিল। হঠাৎ একদিন মধ্যরাতে নীলাঞ্জনার ফোনে একটি এসএমএস এসেছে। অচেনা নাম্বার থেকে কেউ একজন তাকে কবিতা লিখে পাঠিয়েছে। নীলাঞ্জনা কবিতাটি পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিল। এরপর সে সেই কবিতাটি অবৃতি করে পোস্ট করেছিল। এভাবে কেটে গেল বেশ কয়েকদিন। নীলাঞ্জনা কেন জানি কিছুতেই আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিল না। সজলের সাথে একটু কথা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল তার মন। এভাবে মাঝে মাঝেই সজন নীলাঞ্জনাকে কবিতা লিখে পাঠাতো। আর কবিতাগুলো পড়তে নীলাঞ্জনার বেশ ভালো লাগতো।


এভাবে কেটে যায় দুটি মাস। নীলাঞ্জনা প্রতীক্ষায় থাকতো হয়তো কোন একদিন সজল তার সামনে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু তার প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছিল না। এভাবে কেটে গেল আরো বেশ কিছুদিন। কয়েকদিন থেকে সজলের কোন কবিতা নীলাঞ্জনা পায়নি। এখন কেন জানি নীলাঞ্জনা সজলের লেখা কবিতার মাঝে নিজেকে খুঁজে পেত। কেন জানি সজলের প্রতি তার ভালোলাগা দিনে দিনে বেড়েই চলেছিল। এভাবে কেটে গেল আরো কিছু মাস। কিন্তু সজল নীলাঞ্জনার সামনে এসে দাঁড়ালো না। একদিন হঠাৎ করে নীলাঞ্জনা একটি এসএমএস পেল আর সেখানে লেখা ছিল হয়তো আর কোনদিন তোমায় নিয়ে কবিতা লিখবো না। হয়তো আর কোনদিন তোমার মনে ভালোবাসার ছবি আঁকবো না। কারণ পৃথিবীতে আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে। নীলাঞ্জনা লেখাটি পড়ে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল।


নীলাঞ্জনা পাগলের মত সারারাত ধরে সেই নাম্বারটিতে কল করেছে। এরপর কেটে গেছে দুই দিন। হঠাৎ করে অপর প্রান্ত থেকে একটি ছেলে ফোন করেছে। কান্না ভেজা কন্ঠে নীলাঞ্জনা কে বলেছে হয়তো আপনি সজনের জীবনে অনেক দেরিতে এসেছিলেন। হয়তো সময়টা ফুরিয়ে গিয়েছিল। তাইতো দুজনের না বলা কথা কিংবা মনে জমা ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি। সজল আপনাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিল। জীবনের শেষ মুহূর্তে অনেক আনন্দে বাঁচতে চেয়েছিল। এরপর নীলাঞ্জনা ছেলেটির কাছ থেকে জানতে পারে গতকাল রাতে সজল পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। মরণব্যাধি ক্যান্সার তার শরীরে বাসা বেঁধেছিল যখন থেকে সজল জানতে পেরেছিল তার ক্যান্সার হয়েছে তখন থেকে সে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছিল। কিন্তু নীলাঞ্জনাকে পেয়ে সজল নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল। হয়তো আড়াল থেকেই নীলাঞ্জনাকে ভালোবেসেছিল। হয়তো তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায়নি। কিন্তু নীলাঞ্জনা আজও ওই দূর আকাশের তারার মাঝে সজলকে খুঁজে পায়। নীলাঞ্জনা আজও ওই দূর আকাশের তারার পানে চেয়ে থাকে। হয়তো তার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে খুঁজে। কিংবা নিজের হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার অস্তিত্ব অনুভব করে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  
 2 years ago 

বেশ সুন্দর লিখেছেন আপু। পড়ে বেশ ভাল লাগলো কিন্তু নীলাঞ্জনা জন্য বেশ কস্ট হলো। বিরহের গল্পগুলো পড়লে বেশ কস্ট লাগে।কিন্তু এ ধরনের গল্প পড়তে বেশ ভালই লাগে। জীবনে পূর্নতা অপূর্ণতা দুটোই থাকবে। এ দু'নিয়েই জীবন।আর সব ভালবাসা পূর্নতা পায় না। বেশ ভালো লাগলো পড়ে ।ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। ঠিক বলেছেন আপু আমাদের জীবনে পূর্ণতা ও অপূর্ণতা দুটোই আছে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।

 2 years ago 

গল্পটি পড়ে চোখের কোনায় পানি চলে এসেছে।অসাধারণ লিখেছেন আপু। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প শুরু করছি কিন্তু এটি যে বিরহে ভরা কষ্টে ভরা সেটা পুরোটা পড়েই জানতে পারলাম। ধন্যবাদ সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

বিরহ নিয়ে লিখতে আমার বেশি ভালো লাগে। তাই তো বিরহ নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে সত্যিই ভালো লাগলো আপু। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

সোর্স এইটা ইউজ করতে হয় : https://www.pexels.com/photo/black-mountains-under-the-stars-at-nighttime-355465/

 2 years ago 

আমি দুঃখিত ভাইয়া। আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.34
JST 0.035
BTC 110242.10
ETH 4384.69
USDT 1.00
SBD 0.83