গল্প-শূন্যতা||

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। গল্প লিখতে আমার খুবই ভালো লাগে। মাঝে মাঝে গল্প লিখি। যদিও ভালো গল্প লিখতে পারি না, তবে মাঝে মাঝে চেষ্টা করি। তাই আজকে আমি একটি গল্প লিখে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আসলে মাঝে মাঝে গল্পের ধরন হয়তো একই রকম হয়ে যায়। তাই আগেই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যাই হোক আশা করছি আমার লেখা গল্প সবার ভালো লাগবে।


শূন্যতা:

woman-6212065_1280.jpg

Source


হৃদয় মাঝে যখন শূন্যতা বাসা বাঁধে তখন হাজার লোকের ভরেও একাকীত্ব এসে ভিড় করে। হাজার লোকের মাঝেও চারপাশ নিস্তব্ধ মনে হয়। হৃদয়ের মাঝে চাপা কষ্টগুলো কুড়ে কুড়ে খায়। হয়তো নীলাঞ্জনাওর এমনটা হয়েছিল। প্রথমে বেশ আনন্দেই দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল নীলাঞ্জনার। নীলাঞ্জনার সময়টা এমন ছিল না। নীলাঞ্জনা ভালোবেসে অভ্রকে বিয়ে করেছিল। অভ্র নীলাঞ্জনাকে অনেক ভালোবাসতো। ভালোই কাটছিল তাদের দিনগুলো। অনেক বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে দুজন দুজনকে পেয়েছিল। পরিবারের অমতে গিয়েই তারা বিয়ে করেছিল। যখন নীলাঞ্জনা এবং অভ্র বিয়ে করেছিল তখন দুজনেই পড়াশোনা করতো। নীলাঞ্জনার বাসা থেকে বিয়ের জন্য তোরজোর শুরু হয়েছিল। ছেলে পক্ষও নীলাঞ্জনাকে দেখতে এসেছিল। এরই মাঝে নীলাঞ্জনা অভ্রর হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল।


অভ্র তখন ব্যাচেলর হোস্টেলে থাকতো। কোথায় নীলাঞ্জনাকে রাখবে বুঝে উঠতে পারছিল না। বন্ধুদের কাছে সাহায্য চাইতে লাগলো। বন্ধুরা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। যে যার সাধ্যমত সাহায্য করেছিল। এরপর সবাই মিলে কাজী অফিসে গিয়ে নীলাঞ্জনা আর অভ্রর বিয়ে দিয়ে দেয়। এবার নীলাঞ্জনাকে নিয়ে অভ্র কোথায় থাকবে সেই নিয়ে সবাই চিন্তায় পড়ে যায়। অবশেষে ছোট্ট একটি বাসা ভাড়া নেয় তারা। বন্ধুরা মিলে সেই বাসা ভাড়ার টাকা দিয়েছিল। আর বলেছিল আমরা যতটুকু পারি সাহায্য করবো। এরপর না হয় তুই সবটা দেখে নিস। নীলাঞ্জনা এবং অভ্র দুজনেই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বিপদের সময় তারা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এভাবেই চলছিল ছোট্ট সুখের সংসার।


অভ্র কয়েকটা টিউশনি করাতো। টিউশনির টাকা দিয়ে কোন রকমে চলছিল তাদের সংসার। এরই মাঝে নীলাঞ্জনার পরিবার থেকে নীলাঞ্জনাকে ফিরে যেতে বলেছে। কিন্তু নীলাঞ্জনা অভ্রকে ছেড়ে যায়নি। বিলাসিতায় বেড়ে ওঠা নীলাঞ্জনা ছোট্ট কুঁড়েঘরে নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছিল। ভালোই কাটছিল তাদের দিনগুলো। দেখতে দেখতে কেটে যায় একটি বছর। অভ্র এখন নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে। দুজনের সংসার ভালোই চলছিল। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলো। পড়াশোনা শেষ করার পর অভ্রর ছোট একটি জব হয়ে যায়। তাদের যেন আর খুশির শেষ ছিল না। ছোট্ট সুখের সংসার আনন্দে ভরে উঠেছিল। দেখতে দেখতে কেটে গেল পাঁচটি বছর। কিভাবে যে পাঁচটি বছর কেটে গেল নীলাঞ্জনা বুঝতেই পারেনি। সুখ-দুঃখের মাঝেই তাদের ভালোবাসার ঘর ভরে উঠেছিল। সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই বদলে যেতে শুরু করলো। অভ্র খুব করে চাইছিল তাদের ঘরে নতুন অতিথি আসুক। দুজনেই ডক্টর দেখালো। পরদিন রিপোর্ট আনতে যায় নীলাঞ্জনা।


নীলাঞ্জনা জানতে পারলো অভ্র কখনো বাবা হতে পারবে না। নীলাঞ্জনা একদম চুপ ছিল। এই কথা কখনো অভ্রকে জানতে দেয়নি। এভাবেই চলছিল দিনগুলো। নীলাঞ্জনাকে যখনই অভ্র বেবির কথা বলতো তখনই নীলাঞ্জনা এড়িয়ে যেত। নীলাঞ্জনা চায়নি অভ্র কষ্ট পাক। অন্যদিকে অভ্র ভেবেছিল হয়তো নীলাঞ্জনা মা হতে অক্ষম। তাই নীলাঞ্জনার প্রতি তার ভালোবাসা ধীরে ধীরে কমে যেতে লাগলো। সময় যত যেতে লাগলো নীলাঞ্জনার প্রতি অভ্রর অবহেলা যেন বেড়েই চলছিল। হঠাৎ একদিন কথা কাটাকাটির জের ধরে অভ্র নীলাঞ্জনার গায়ে হাত তুলে ফেলল। সেই দিনও নীলাঞ্জনা চুপ ছিল। অনেক অভিনাম করেছিল নীলাঞ্জনা। কিন্তু কিছু বলতে পারেনি। অন্যদিকে অভ্র ধীরে ধীরে অন্য মেয়ের প্রতি আসক্ত হয়েছে। মেয়েটি তার অফিসেই চাকরি করে। অফিস কলিগের সাথে তার ভালোই ওঠাবসা চলছে। এই কথাগুলো জানতে পেরে নীলাঞ্জনা যেন ভেতর ভেতর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছিল। অদ্ভুত এক শূন্যতা তার মনে বাসা বেঁধেছিল।


হঠাৎ একদিন নীলাঞ্জনা জানতে পারে অভ্র বিয়ে করেছে। নীলাঞ্জনাকে না জানিয়ে সেই মেয়েটিকে নিয়ে নতুন ঘর বেঁধেছে। এবার তো অভ্রর জীবনে নীলাঞ্জনার কোন প্রয়োজন নেই। নীলাঞ্জনা সব অভিমান শেষ করে নিজের অজানা গন্তব্যে বেরিয়ে পড়ে। কোথায় যাবে সেটাও জানে না। এই পৃথিবীর বুকে সে একা হয়ে পড়েছে। বাবা-মায়ের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমানোর জন্য স্টেশনের কোন এক প্লাটফর্মে বসে আছে নীলাঞ্জনা। চারিদিকে কোলাহল আর হাজার লোকের ভিড়ের মাঝেও নীলাঞ্জনা বড্ড শূন্যতা অনুভব করছে। হয়তো এই শূন্যতা জীবনের গল্প শেষ হয়ে যাওয়া শূন্যতা। এই শূন্যতা ভালোবাসা হারানোর শূন্যতা। এই শূন্যতা নিজেকে পৃথিবী থেকে মুক্ত করার শূন্যতা। কোন কিছু না ভেবেই চলন্ত ট্রেনের সামনে লাফিয়ে পড়ে নীলাঞ্জনা। শেষ হয়ে যায় হৃদয়ের সব শূন্যতা। বিলীন হয়ে যায় নীলাঞ্জনার হৃদয়ের হাহাকার।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  
 last year 

আসলে আপু অভ্রের এমন ব্যবহার করা মোটেও উচিত হয় নি।সত্যি ছেলেরা মনে হয় সব সময় এমনি হয়। আর নীলাঞ্জনা তার ভালোবাসার শৃন্যতা পেরিয়ে চিরতরে চলে গেল।সত্যিকারের ভালোবাসা এমনি হয়
নীলাঞ্জনা মতো।ধন্যবাদ সুন্দর লিখেছেন।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু মাঝে মাঝে সত্যিকারের ভালোবাসা বদলে যায়। আর নীলাঞ্জনার মত মেয়েরা কষ্ট পায়। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।

 last year 

অনেক দুঃখজনক একটি পোস্ট ছিল আপু। নীলাঞ্জনার জন্য অনেকটাই খারাপ লাগছে। বর্তমান পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে এরকম সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন দেখে ভালো লাগলো। বাস্তব জীবনে আমাদের আশেপাশে হয়তো এরকম অনেক নীলাঞ্জনাই রয়েছে। আসলে ভালোবাসার মানুষ এভাবে পরিবর্তন হয়ে গেলে, আর তাদের দ্বারা ঠকে গেলে নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হয় তখন। এই অনুভূতি প্রকাশ করার নয়। ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যায় মানুষ ।

 last year 

মাঝে মাঝে গল্পগুলো জীবনের সাথে মিলে যায় আর অনেক নীলাঞ্জনা এভাবে অসহায় হয়ে পড়ে। আর নিজের জীবন দিয়ে দেয়। আপু ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

আপনার লেখাটি পড়ে মনটা ভারী হয়ে গেল। নীলাঞ্জনার গল্পটি সত্যিই খুবই করুণ এবং হৃদয় বিদারক। একজন নারীর জীবনে কেমন করে কষ্ট, অবহেলা এবং একাকীত্ব তার জীবনের গল্পকে এক শূন্যতায় পরিণত করে, তা অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

অভ্রর অবহেলা এবং নীলাঞ্জনার একাকীত্বের যন্ত্রণা আমাদের সকলকে এক গভীর বেদনা অনুভব করায়। আপনার লেখায় আমাদের সমাজের কিছু কঠিন বাস্তবতা উঠে এসেছে, যা আমাদের সকলের জন্য চিন্তার খোরাক।

আশা করি, আপনার এই লেখাটি অনেককে সচেতন করবে এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও মানবিক ও সহানুভূতিশীল হতে উদ্বুদ্ধ করবে। আপনাকে ধন্যবাদ এমন একটি গভীর এবং অর্থবহ গল্প শেয়ার করার জন্য। আমরা আপনার পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

[@redwanhossain]

 last year 

আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। সত্যি ভাইয়া অবহেলা আর একাকীত্ব মানুষকে শেষ করে দেয়।

 last year 

গল্পটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো আপু।আপনি বেশীর ভাগ সময় কষ্টের গল্প ই লিখেন।😥 তবে গল্পটা বাস্তবতায় পূর্ণ।এদেশে এমন অনেক নীলাঞ্জনা আছেন যারা মনের ভেতর শুন্যতা অনুভব করেন।আর একসময় এই গল্পের মতো করেই নিজের জীবনের সমাপ্তি ঘটান।

 last year 

মাঝে মাঝে গল্পগুলো জীবনের কথা বলতে। হয়তো কারো জীবন থেকেই গল্পের সৃষ্টি হয়। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আপু আপনার গল্পটি বেশ ভালই লাগছিল ।কিন্তু শেষের ফিনিশিং টা সত্যি বলতে একটুও ভালো লাগলো না। নীলাঞ্জনা অভ্রর জন্য এত বড় ত্যাগ স্বীকার করল কিন্তু অভ্র জানতেই পারলো না সে কখনো বাবা হতে পারবেনা। আর নীলাঞ্জনার মৃত্যু তে আরো বেশ খারাপ লাগলো ।ধন্যবাদ।

 last year 

মাঝে মাঝে সব সময় শেষটা সুন্দর হয় না আপু। হয়তো বুকে চাপা কষ্ট নিয়েই নীলাঞ্জনা হারিয়ে গিয়েছিল। সেই সাথে নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছিল।

 last year 

আপু গল্পটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। অনেক দুঃখজনক একটি পোস্ট ছিল।নীলাঞ্জনার জন্য খুবই খারাপ লাগছে। আপু আপনি বেশিরভাগ সময় কষ্টের গল্প লেখেন তবে গল্পটা বাস্তবতায় পরিপূর্ণ। নীলাঞ্জনা তার ভালোবাসার শূন্যতা পেরিয়েও চিরতরে চলে গেল। সত্যিকারের ভালোবাসা গুলি বুঝি এমনই হয়।

Coin Marketplace

STEEM 0.12
TRX 0.34
JST 0.032
BTC 112396.76
ETH 4152.74
USDT 1.00
SBD 0.83