জেনারেল রাইটিং- “🌿দিন যতই যাচ্ছে মানুষের স্বার্থপরতা বেড়েই চলছে”
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার জেনারেল রাইটিংটি দেখে আসি যে কি বিষয় নিয়ে লেখলাম। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমার জেনারেল রাইটিং এর বিষয় হলো " দিন যতই যাচ্ছে মানুষের স্বার্থপরতা বেড়েই চলছে।"

দিন যতই যাচ্ছে মানুষের মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। আগে মানুষ একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। কারো কষ্ট দেখলে পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা ছিল সবার মধ্যে। এখন সেই জায়গায় এসেছে স্বার্থপরতা আর ব্যক্তিস্বার্থের চিন্তা। মানুষ এখন এমন এক দুনিয়ায় বাস করছে যেখানে নিজের সুখের জন্য অন্যের দুঃখকে অবহেলা করা যেন এক ধরনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সমাজের প্রতিটি স্তরে এই পরিবর্তন চোখে পড়ে। কেউ কাউকে তেমনভাবে সাহায্য করতে চায় না যদি না তার বিনিময়ে কিছু লাভ হয়।
এক সময় গ্রামের মানুষ একে অপরের খোঁজ নিত। কারো বাড়িতে অসুখ হলে সবাই ছুটে যেত দেখতে। এখন মানুষ পাশের বাড়িতে কে আছে, কেমন আছে সেটাও জানে না। সম্পর্কের জায়গায় এসেছে দূরত্ব। আত্মীয়স্বজনরাও এখন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে স্বার্থের হিসাব মেলিয়ে। কারো উপকার করলেই তার বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা থাকে। এই মানসিকতার কারণে সমাজে আন্তরিকতা ও মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন এমন এক সময়ের মধ্যে বেঁচে আছে যেখানে সবকিছুই হিসাবের খাতায় মাপা হয়।
আজকাল কর্মক্ষেত্রেও মানুষ একে অপরকে সাহায্য করতে চায় না। বরং প্রতিযোগিতার নামে সবাই একে অপরকে পেছনে ফেলে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কেউ সফল হলে তার জন্য খুশি হওয়ার বদলে হিংসা জন্মায় মনে। মানুষ ভুলে যাচ্ছে একে অপরের সাফল্য উদযাপন করার মানসিকতা। সবাই শুধু নিজের জায়গা নিরাপদ রাখতে ব্যস্ত। সহযোগিতার জায়গায় এসেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এক সময় সহকর্মী মানে ছিল বন্ধুত্বের এক সুন্দর সম্পর্ক। এখন সেই বন্ধুত্বের জায়গায় এসেছে সন্দেহ ও প্রতিযোগিতা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের এই স্বার্থপরতা আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। সবাই এখন নিজের জীবন দেখাতে ব্যস্ত। অন্যের জীবনের কষ্ট, দুর্ভোগে কেউ খুব একটা আগ্রহী নয়। মানুষ অন্যের সাফল্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয়, কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়াতে কুণ্ঠিত হয়। সবাই শুধু নিজের সুখের প্রদর্শন করতে চায়। যেন পৃথিবীটা এখন এক বড় মঞ্চ, যেখানে প্রত্যেকে অভিনয় করছে নিজের মতো করে। কিন্তু এই অভিনয়ের পেছনে লুকিয়ে থাকে এক বিশাল একাকিত্ব।
পরিবারেও এখন আগের মতো ভালোবাসা আর মমতা দেখা যায় না। বাবা-মা তাদের সন্তানদের সময় দিতে পারেন না। সন্তানরাও বড় হয়ে বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে চায় না। সবাই নিজের জীবনের আরাম আর সুবিধা নিয়েই ব্যস্ত। পরিবার মানে এখন যেন কেবল একটা দায়িত্ব, যার কোনো আবেগ নেই। আগে একসাথে খাওয়া, গল্প করা, হাসি ভাগ করে নেওয়া ছিল পরিবারের মূল সৌন্দর্য। এখন সবাই নিজের ঘরে, নিজের ফোনে, নিজের জগতে আটকে আছে। ভালোবাসা এখন অনেকটা কৃত্রিম হয়ে পড়েছে।
শহরের জীবনে এই স্বার্থপরতা আরও গভীরভাবে দেখা যায়। রাস্তার পাশে দুর্ঘটনায় কেউ আহত হলে, সাহায্য করার বদলে অনেকে দাঁড়িয়ে শুধু ভিডিও করে। সাহায্যের জায়গায় এসেছে কৌতূহল। মানুষ এখন মানবতার চেয়ে নিজের নিরাপত্তা আর সুবিধাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। যেন অন্যের কষ্টে এগিয়ে যাওয়া মানে নিজের জন্য ঝামেলা ডেকে আনা। এই ভাবনা সমাজকে ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা করে দিচ্ছে। মানুষ এখন একে অপরের প্রতি নির্লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এই পরিবর্তন দেখা যায়। আগে ছাত্ররা একে অপরের পাশে দাঁড়াত, এখন প্রতিযোগিতার মানসিকতা এতটাই বেড়ে গেছে যে কেউ কাউকে সাহায্য করতে চায় না। বন্ধুদের মধ্যে এখন সত্যিকারের বন্ধুত্বের চেয়ে স্বার্থের সম্পর্কই বেশি। কেউ ভালো রেজাল্ট করলে অন্যরা তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হওয়ার বদলে হিংসা পোষণ করে। এই হিংসা ও স্বার্থপরতা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মানবিকতার জায়গা ধীরে ধীরে দখল করছে।
মানুষ এখন এমন এক বাস্তবতায় বেঁচে আছে যেখানে অর্থ, নাম, পদমর্যাদা সবকিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে নিজের স্বার্থ। এই মানসিকতা মানুষকে একা করে দিচ্ছে। মানুষ যত বড় হচ্ছে, তত ছোট হয়ে যাচ্ছে তার মানবিকতা। সমাজ যত উন্নত হচ্ছে, ততই হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের অনুভব করার ক্ষমতা। কেউ এখন অন্যের দুঃখে কাঁদে না, অন্যের সুখে সত্যি করে হাসে না।
তবে এই চিত্রের মধ্যেও কিছু মানুষ আছে যারা এখনো মানবিকতার আলো জ্বালিয়ে রাখে। তারা অন্যের পাশে দাঁড়ায়, সাহায্যের হাত বাড়ায় বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা না করে। এই মানুষগুলোই প্রমাণ করে যে পৃথিবীতে এখনো ভালোবাসা আর সহানুভূতি পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই কম। তাই সমাজে যতদিন এই সংখ্যাটা বাড়ানো না যাবে, ততদিন মানুষের স্বার্থপরতা আমাদের মানবিক সমাজ গঠনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে থাকবে।
আমরা যদি সত্যিই চাই একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে, তাহলে আমাদের নিজেদের মধ্যেই পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের শেখতে হবে নিজের পাশাপাশি অন্যের কথাও ভাবতে। মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব অন্যের পাশে দাঁড়ানো, তার কষ্টে সান্ত্বনা দেওয়া। পৃথিবীটা কেবল তখনই সুন্দর হবে যখন মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে নিঃস্বার্থভাবে। কিন্তু এখনকার বাস্তবতায় সেই ভালোবাসা যেন হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। তাই সময় এসেছে নিজেকে ফিরে দেখার, ভাবার যে আমরা কেমন মানুষ হয়ে উঠছি।
দিন যতই যাচ্ছে, প্রযুক্তি আমাদের সুবিধা দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে কেড়ে নিচ্ছে আমাদের মানবিক অনুভব। আমরা যত ব্যস্ত হচ্ছি, তত দূরে সরে যাচ্ছি একে অপরের থেকে। তাই এখন প্রয়োজন মানবিকতার নতুন পাঠ শেখা। হয়তো আমরা সবকিছু পরিবর্তন করতে পারব না, কিন্তু নিজের ভেতরটা যদি একটু বদলাতে পারি, তাহলে সমাজও বদলাবে। মানুষ তখন আর শুধু নিজের স্বার্থ নিয়ে নয়, অন্যের সুখ নিয়েও ভাববে। আর তখনই পৃথিবীটা আবার মানবিক হয়ে উঠবে।
আমার পরিচিতি
আমার পরিচিতি
আমি মাহফুজা আক্তার নীলা। আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুননি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।

সময়ের সাথে সাথে স্বার্থপর মানুষের সংখ্যা সত্যিই বেড়ে যাচ্ছে। এখন মানুষ চেনা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের চারপাশেই স্বার্থপর মানুষজন ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আপনার ইপুশ ব্যালেন্স অনেক কমে গেছে, দ্রুত রিচার্জ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
স্বার্থপর মানুষদের সংখ্যা দিনে দিনে খুবই বেড়ে যাচ্ছে। এই মানুষগুলোর মাঝে ভালো মানুষ খুঁজে পাওয়াও মুশকিল।