শৈশবের স্মৃতি- শৈমবের মায়ের ভালোবাসা অতুলনীয়

in আমার বাংলা ব্লগ6 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় ও সহযাত্রী সকল ভাই ও বোনেরা। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন।আজ আবারও হাজির হয়ে গেলাম আপনাদের সবার অতি নিকটে। ফেলে আশা অনেক স্মৃতির মাঝ থেকে কিছু স্মৃতি নিয়ে। আমাদের চলার পথে জীবনে সুখ দুঃখ কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে।সেই শৈশব থেকে শুরু করে মৃতুর আগ পর্যন্ত স্মৃতিগুলো যেন চোখে ও মনের মনি কোঠায় ভেসে বেড়ায়। আর তার মধ্যে জীবনে এমন অনেক ঘটনা থাকে যা কখনও ভোলা যায় না। যাইহোক আজ কয়েকদিন ধরে দেশের অনেক জায়গায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আর এই বৃষ্টি দেখে আমার ফেলে আসা দিনগুলোর মধ্যে বৃষ্টিকে নিয়ে অনেক স্মৃতি মনে পরে গেল। আসলে বৃষ্টিকে ঘিরে আমাদের সবার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আর সেই থেকে আমারও কিছু স্মৃতি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলে এলাম। তাহলে চলুন পড়ে আসি আজ আমার শৈশবের বৃষ্টির পানি খাওয়া ও সংরক্ষন করার কিছু অনুভূতি।


image.png

মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় হলো শৈশব। এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্তে লুকিয়ে থাকে নির্দোষ হাসি, ছোট ছোট দুষ্টুমি, খেলাধুলা আর মায়ের স্নেহভরা যত্ন। সময় যতই কেটে যায়, জীবনের ব্যস্ততার ভিড়ে যতই হারিয়ে যাই না কেন, শৈশবের স্মৃতিগুলো সবসময় বুকের ভেতরে গেঁথে থাকে। বিশেষ করে মায়ের আদর আর ভালোবাসা হলো এমন এক সম্পদ যা কখনো ভুলে যাওয়ার মতো নয়। আমি আজও আমার ছোটবেলার সেই দিনগুলোর কথা মনে করি।

ছোটবেলায় প্রতিদিন সকালে মা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতেন। তারপর তিনি নিজের হাতে গোসল করিয়ে দিতেন। কত যত্ন করে তিনি মাথায় তেল মাখিয়ে দিতেন, গায়ে সাবান মেখে পরিষ্কার করতেন। গোসল শেষ হলে আমাকে সুন্দর করে স্কুলের জন্য তৈরি করতেন। পরিষ্কার জামা পরিয়ে দিতেন, চুল আঁচড়ে সুন্দর করে গুছিয়ে দিতেন। সেই সময়ে মায়ের স্নেহমাখা স্পর্শে যেন সবকিছু আলাদা অনুভূতি দিত। মনে হতো পৃথিবীর সব ভালোবাসা শুধু আমার জন্যই তিনি জমিয়ে রেখেছেন।

স্কুলে যাওয়ার আগে মা প্রতিদিন আমার জন্য নানান মজাদার খাবার তৈরি করতেন। গরম ভাতের সঙ্গে ডিমভাজি, ভর্তা কিংবা মাঝে মাঝে সুস্বাদু খিচুড়ি। আবার কখনো স্কুলে টিফিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি বানিয়ে দিতেন পুরভরা রুটি বা লুচি। আমি যখন ব্যাগে করে সেই খাবারগুলো নিয়ে যেতাম, বন্ধুরা অনেকেই তা খেতে চাইত। গর্ব করে বলতাম মা বানিয়েছে। সেই স্বাদের কথা আজও ভুলতে পারি না।

ছেলেবেলায় আমি অসুস্থ হলে মা কতটা কষ্ট পেতেন তা বলে বোঝানো যাবে না। একবার আমার চিকেন পক্স হয়েছিল। তখন মা দিনরাত এক করে আমার সেবা করেছিলেন। আমি যেন সামান্য কষ্টও না পাই সেদিকে তার পুরো মনোযোগ ছিল। কোথা থেকে নিমপাতার ডাল নিয়ে এসে ঘরে টাঙিয়ে দিয়েছিলেন, যেন বাতাস পরিষ্কার থাকে। প্রতিদিন আমার গায়ে ওষুধ মাখিয়ে দিতেন, সারাক্ষণ আমার পাশে বসে থাকতেন। তখন মায়ের চোখে ছিল অস্থিরতা, চিন্তা আর সীমাহীন ভালোবাসা। তার সেই ভাবনাহীন ত্যাগের স্মৃতি আজও মনে গেঁথে আছে।

অসুস্থ অবস্থায় আমাকে সুস্থ করে তুলতে তিনি কত রকমের খাবার বানাতেন। নানা রকম ফল, ভাত, হালকা ঝোল, ডিম আর দুধ। আমি যেন শক্তি ফিরে পাই, আবার আগের মতো খেলতে দৌড়াতে পারি—সেই চেষ্টা ছিল তার প্রতিটি কাজে। বিশেষ করে রসগোল্লার কথা আজও ভুলতে পারি না। আমাদের ঘরে তখন যেন মিষ্টির ভাণ্ডার খোলা থাকত। মা জানতেন আমি মিষ্টি খেতে ভালোবাসি, তাই তিনি সবসময় চেষ্টা করতেন আমার মন ভরিয়ে দিতে।

শৈশবের সেই দিনগুলোতে মায়ের ভালোবাসা ছিল সবচেয়ে বড় আশ্রয়। খেলাধুলার মাঠে পড়ে গেলে বা কোথাও আঘাত পেলে মা দৌড়ে এসে কোলে তুলে নিতেন। তার সান্ত্বনার শব্দ যেন এক যাদু ছিল, মুহূর্তেই সব কষ্ট দূর হয়ে যেত। তার কোলে মাথা রাখলেই মনে হতো পৃথিবীতে আর কোনো দুঃখ নেই।

আজ বড় হয়েছি, জীবন অনেক ব্যস্ততায় ঘেরা। অফিস, কাজকর্ম, দায়িত্ব আর নানা চিন্তার ভিড়ে প্রতিদিন সময় কেটে যায়। তবুও মাঝে মাঝে সেই শৈশবের স্মৃতি মনে পড়লে বুক ভরে ওঠে এক অদ্ভুত ভালো লাগায়। মনে হয় যদি আবার সেই ছোট্ট দিনগুলোতে ফিরে যেতে পারতাম। আবার যদি মায়ের কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়তে পারতাম, আবার যদি তার হাতে খাওয়া খাবারের স্বাদ নিতে পারতাম।

শৈশব হলো জীবনের এমন এক সময় যা মানুষকে আজীবন স্মৃতির ভেতরে বেঁধে রাখে। তখনকার দিনগুলোতে ছিল না কোনো দায়িত্বের বোঝা, ছিল না কোনো চিন্তা বা জটিলতা। শুধু ছিল খেলা, হাসি আর মায়ের স্নেহে ভরা নিশ্চিন্ত জীবন। সময়ের সাথে সাথে মানুষ বড় হয়, দায়িত্ব বাড়ে, কিন্তু মায়ের সেই ভালোবাসা আর শৈশবের মধুর স্মৃতিগুলো চিরকাল অমলিন থেকে যায়।

আজ আমি যখন নিজের জীবনের দিকে তাকাই, তখন সবচেয়ে বড় যে সম্পদ খুঁজে পাই তা হলো আমার শৈশব আর মায়ের ভালোবাসার স্মৃতি। এই স্মৃতিগুলো আমাকে সবসময় শক্তি দেয়, আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমি কতটা ভাগ্যবান ছিলাম। জীবনে যতই কষ্ট আসুক, মায়ের সেই স্নেহের কথা মনে করলে হৃদয় ভরে ওঠে শান্তিতে।

মাঝে মাঝে সত্যিই মনে হয় যদি সেই দিনগুলো ফিরে আসত। আবার যদি সকালবেলা মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙত, আবার যদি তিনি নিজের হাতে আমার পড়ার খাতা গুছিয়ে দিতেন, আবার যদি অসুস্থ হলে আমার পাশে সারারাত জেগে থাকতেন। কিন্তু সময় তো আর ফিরে আসে না। তাই আজ শুধু স্মৃতির ভেতরে সেই ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখি।

মায়ের আদর আর শৈশবের দিনগুলো মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। যত বছরই কেটে যাক, যত দূরেই যাই না কেন, সেই স্মৃতিগুলো চিরকাল হৃদয়ে থেকে যাবে। শৈশবকে মনে করলেই মায়ের ভালোবাসার উষ্ণতা আজও যেন অনুভব করি। সত্যিই শৈশব আর মা—এই দুই শব্দের ভেতরেই লুকিয়ে আছে মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ আর শান্তি।

আর এই ছিল আমার আজকের পোস্ট। আজ তাহলে শেষ করলাম পরবর্তীতে আবারও নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হারির হবো।সবাই ভালো থাকবেন।

পরিচিতি

আমি মাহফুজা আক্তার নীলা । আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুননি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।

❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️

Sort:  
 4 days ago 

আপনার ইপুশ ব্যালেন্স অনেক কমে গেছে, দ্রুত পুশ রিচার্জ করে নিন। না হলে কিউরেশন বন্ধ থাকবে। ধন্যবাদ

Coin Marketplace

STEEM 0.09
TRX 0.30
JST 0.033
BTC 111385.35
ETH 3933.36
USDT 1.00
SBD 0.57