বর্তমান সমাজে শিক্ষার চেয়ে ক্ষমতার দাপট বেশি

in আমার বাংলা ব্লগ19 days ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার জেনারেল রাইটিংটি দেখে আসি যে কি বিষয় নিয়ে লেখলাম। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমার জেনারেল রাইটিং এর বিষয় হলো " বর্তমান সমাজে শিক্ষার চেয়ে ক্ষমতার দাপট বেশি।"


image.png

source

একটি সভ্য সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি হলো শিক্ষা। আর একটি সমাজের শক্তি প্রকাশ পায় ক্ষমতার মাধ্যমে। কিন্তু যখন ক্ষমতা শিক্ষার জায়গা দখল করে নেয়, তখন সে সমাজে ন্যায়বিচার, যোগ্যতা আর মানবিকতা হারিয়ে যায়। বর্তমান সময় আমাদের সামনে এমনই এক কঠিন প্রশ্ন তুলে ধরছে—আজ কি শিক্ষা নয়, বরং ক্ষমতার দাপটেই চলছে সব কিছু? উত্তরটা কষ্টদায়ক হলেও সত্যি—হ্যাঁ, বর্তমানে শিক্ষার চেয়ে ক্ষমতার দাম বেশি। শিক্ষা মানুষকে সচেতন করে, যুক্তি শেখায়, নৈতিকতা গড়ে তোলে, এবং আত্মবিশ্বাস দেয়। একজন শিক্ষিত মানুষ যে শুধু বই পড়ে বিদ্বান হয় তা নয় সে মানবিক হয়, ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য বোঝে, নিজের জীবন ও সমাজকে আলোকিত করতে শেখে। একসময় মানুষ বলত, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু এখন যেন শুনতে পাই, ক্ষমতাই উন্নতির সিঁড়ি।এই মানসিকতা শুধু একটি প্রজন্ম নয়, পুরো সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। ক্ষমতা সবসময় খারাপ নয়, যদি তা হয় ন্যায়ভিত্তিক, গণমুখী এবং জবাবদিহি মূলক। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ক্ষমতা মানে হয়ে দাঁড়িয়েছে—পদ, পরিচয়, টাকা, প্রভাব, ভয়, এবং দমন।

যে যত বড় পদে আছে, তার কথাই শেষ কথা। সে যদি ভুলও করে, কেউ মুখ খুলে না। আর একজন শিক্ষিত, মেধাবী মানুষ চুপ করে পড়ে থাকে—কারণ তার পেছনে নেই কোনো ক্ষমতাবান অভিভাবক, নেই কোনো রাজনৈতিক ছায়া। আজ আপনি যদি চাকরি খুঁজেন, ভালো রেজাল্ট, স্কিল, অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও দেখা যায় আপনি বাদ পড়ে যাচ্ছেন—কারণ আপনার নেই কোনো ‘চেনাজানা’। অন্যদিকে, এক ক্ষমতাধর লোকের সুপারিশে অযোগ্য কেউই নিয়োগ পেয়ে যায়।

রাফি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স করেছে। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও সে বাদ পড়ে যায়, কারণ তার পক্ষে সুপারিশ করতে কেউ নেই। আর তার সহপাঠী তানভীর, যার মেধা সীমিত, পেছনে রাজনৈতিক লিংক থাকায় সে সহজেই চাকরি পেয়ে যায়। এ ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়—বরং প্রতিদিনকার। এতে করে একদিকে মেধাবী যুবকরা হতাশ হচ্ছে, অন্যদিকে সমাজে অযোগ্যদের প্রভাব বাড়ছে। অনেক সরকারি বা বেসরকারি অফিসে দেখা যায়, বড়পদের কর্মকর্তা অশিক্ষিত বা কম যোগ্য হলেও, তার কথাই ফাইনাল। তিনি নিচের কর্মচারীদের গলা চেপে ধরতে পারেন, হুমকি দিতে পারেন, অন্যায় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন—তবুও কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। কারণ ক্ষমতার বিরুদ্ধে কথা বললে হয়রানি, বদলি, মামলা কিংবা সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়। এই ভয় একটি শিক্ষিত সমাজকে করে তোলে নির্বাক, নিঃসহায়।

বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ক্ষমতার প্রভাব প্রকট। শিক্ষক নিয়োগ, প্রমোশন, ভর্তি, ফলাফল—সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক কিংবা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দেখা যায়। অনেক সময় মেধাবী শিক্ষকরা উপেক্ষিত থাকেন, কারণ তারা "তোষামোদ" করতে পারেন না। আর যিনি ঠিক জায়গায় মাথা নত করতে পারেন, তিনি পেয়ে যান দায়িত্ব। এভাবে শিক্ষার পবিত্র জায়গাটিও ক্ষমতার অশুভ ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে।

মিডিয়া আজ হয়ে উঠেছে ক্ষমতাবানদের হাতের খেলনা। সেখানে একজন সৎ, শিক্ষিত, নীতিবান মানুষের কথা জায়গা পায় না—পায় সেইসব বিতর্কিত চরিত্র, যারা বিত্তবৈভব ও ক্ষমতার জোরে সামনে আসে। একজন শিক্ষক, গবেষক, সমাজকর্মীর ভালো কাজ হয়তো কেউ জানেও না। কিন্তু এক অভিনেতা বা রাজনীতিকের “ব্র্যান্ডেড জুতা” নিয়েও রিপোর্ট হয়। এটাই কি শিক্ষার হেরে যাওয়া নয়? যেখানে শিক্ষিত মানুষের কথা মূল্যহীন, সেখানে অন্যায়, মিথ্যা, দম্ভ আর চাটুকারিতা জায়গা করে নেয়। আজকাল আমরা শুনি—“এই যুগে ভালো মানুষে চলে না।” এমন কথা কেন বলি? কারণ আমরা দেখি, শিক্ষিত লোক চুপ করে থাকে, কিন্তু ক্ষমতাবান লোক চিৎকার করে নিজের ভুলকে সঠিক প্রমাণ করতে চায়—আর সবাই তা মেনে নেয়।

যে প্রজন্ম দেখে— ভালোভাবে পড়াশোনা করেও চাকরি পাওয়া যায় না,মেধা দিয়ে কিছু হয় না, বরং পরিচয় দিয়ে সব হয়,অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে বিপদে পড়তে হয়,তারা ধীরে ধীরে শিখে ফেলে—“পড়ালেখা দিয়ে কিছু হবে না, ক্ষমতা অর্জন করো যেভাবেই হোক।”ফলে জন্ম নিচ্ছে এক ভয়ংকর মানসিকতা—যেখানে লক্ষ্য নয়, কৌশল বড় কথা। নীতি নয়, প্রয়োজনই শেষ কথা। না, শিক্ষা হারায়নি—তবে পিছিয়ে গেছে। এখনো কিছু মানুষ আছেন যারা সত্যিকারের শিক্ষাকে ধারণ করেন।তারা আপস করেন না, মাথা নত করেন না, অন্যায়ের সঙ্গে হাত মেলান না। কিন্তু তারা একা, এবং সংখ্যায় কম। তারা টিকে থাকেন লড়াই করে, অবহেলা সয়ে, সম্মানহীন হয়ে।

ক্ষমতা দরকার—নির্বাহী সিদ্ধান্ত, নেতৃত্ব ও সমাজ গঠনের জন্য। কিন্তু সেই ক্ষমতা যদি অশিক্ষিত, অভব্য, নীতিহীন লোকের হাতে পড়ে, তবে সমাজ ধ্বংস হয়। অন্যদিকে শিক্ষা যদি ক্ষমতার স্বীকৃতি না পায়, তবে তাতে উৎসাহ হারিয়ে যায়। আজ আমাদের দরকার এমন সমাজ—যেখানে ক্ষমতাও শিক্ষিতের হাতে থাকবে, এবং শিক্ষা হবে ক্ষমতার যোগ্য নিয়ন্ত্রক। না হলে, আমরা চলতে থাকব অযোগ্যদের দাপটে, আর মেধাবীদের নীরবতা নিয়ে।

আমার পরিচিতি

আমি মাহফুজা আক্তার নীলা। আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুননি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

image.png

Coin Marketplace

STEEM 0.12
TRX 0.34
JST 0.033
BTC 112989.37
ETH 4195.10
USDT 1.00
SBD 0.88