আজও মনে পড়ে শৈশবে শোনা ভূতের গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তবে মনমানসিকতা ভালো নেই। আর মনমানসিকতা যদি ভালো না থাকে তাহলে শরীর মন অচল হয়ে পড়ে। তারপরেও আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি শৈশবের কিছু কথা নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার শৈশবের কিছু স্মৃতির অনুভূতি জেনে আসি।

image.png

আমাদের ছেলেবেলা সত্যিই অন্যরকম ছিল। এখনকার মতো ব্যস্ততা, মোবাইল ফোন, টিভি আর ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ডুবে থাকা জীবন ছিল না। আমরা যারা সরকারী কোয়ার্টারে বড় হয়েছি, আমাদের জন্য সেই সময় ছিল অনেকটা উৎসবের মতো। কোয়ার্টার মানেই অনেকগুলো পরিবার একসাথে, সবার সাথে সবার ভালো সম্পর্ক, মিলেমিশে থাকা। আমাদের খেলাধুলা, আড্ডা, আনন্দ সবই হতো একসাথে। আর সবচেয়ে মজার সময়টা হতো যখন বিদ্যুৎ চলে যেত।

সেই সময় প্রায় প্রতিদিন রাতেই বিদ্যুৎ যেত। হঠাৎ করেই পুরো কোয়ার্টার অন্ধকারে ডুবে যেত। প্রথমে মনে হতো বিরক্তিকর, কারণ গরমে অস্বস্তি লাগতো। কিন্তু একটু পরেই সব বদলে যেত। বিদ্যুৎ চলে যাওয়া মানে যেন নতুন এক আনন্দের সূচনা। ঘরের ভেতরে বসে থাকার বদলে সবাই নেমে আসতো নিচে। ছোট থেকে বড় সবাই মিলেমিশে আড্ডা জমাতো। অন্ধকারে বসে থাকার মাঝে যে আনন্দ আর ভিন্ন স্বাদ ছিল তা এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

আমাদের ছোটদের জন্য এই সময়টাই ছিল সোনালি মুহূর্ত। আমরা দল বেঁধে এক জায়গায় বসতাম। কারও হাতে থাকতো মোমবাতি বা লণ্ঠন। চারপাশে হালকা আলো আর অনেকটা অন্ধকার মিশে থাকতো। তখন বড়রা গল্প করতো নিজেদের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে। কেউ বলতো অফিসের কথা, কেউবা বলতো রাজনীতি বা দেশের নানা ঘটনা। আর আমরা ছোটরা কেবল অপেক্ষা করতাম ভূতের গল্প শোনার জন্য।

ভূতের গল্পের সেই সময়টা সত্যিই ছিল ভীষণ উত্তেজনাপূর্ণ। একজন শুরু করতো ভৌতিক কাহিনি আর আমরা সবাই নিঃশ্বাস বন্ধ করে শুনতাম। কখনো হঠাৎ করে কেউ ভয়ংকর শব্দ করলে আমরা সবাই একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠতাম। আবার হাসিতেও ভেঙে পড়তাম। আমাদের চোখে তখন অন্ধকারে গাছের ছায়াও ভূত মনে হতো। চারপাশের ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ, কিংবা বাতাসে পাতার খসখসানি—সবকিছুই যেন ভয় বাড়িয়ে দিত।

আজকে যখন ভাবি তখন মনে হয় বিদ্যুৎ না থাকাটাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ ছিল। কারণ সেই সময়ের অন্ধকারই আমাদের একসাথে করেছিল, গল্প শুনতে শিখিয়েছে, ভয়কে হাসিতে পরিণত করেছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে আমরা ছোটরা দৌড়ঝাঁপ করতাম, লুকোচুরি খেলতাম। কখনো কখনো লুকিয়ে অন্যদের ভয় দেখাতাম। এতে আবার নতুন করে হাসাহাসি হতো।

বড়রা আমাদের দেখতো মমতা নিয়ে। তারা জানতো যে বিদ্যুৎ না থাকলে এই সময়টা আমাদের জন্য আনন্দের। একসাথে বসে থাকার মাধ্যমে পরিবারগুলো আরও কাছাকাছি হয়ে যেত। কারও কোনো সমস্যা হলে সবাই মিলে তা সমাধান করার চেষ্টা করতো। এভাবেই কোয়ার্টারের সম্পর্কগুলো ছিল অনেক আন্তরিক আর মজবুত।

আমাদের সেই কোয়ার্টার আসলে ছিল এক বিশাল পরিবার। আমরা শিশুদের কাছে অন্ধকার মানেই রোমাঞ্চ। আর বড়দের কাছে অন্ধকার মানেই আড্ডা, আলাপ আর হাসি। আজকের দিনে যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন সবাই মোবাইলের স্ক্রিনে ডুবে যায়। কিন্তু আমাদের সময়ে বিদ্যুৎ না থাকাটা ছিল আনন্দের অজুহাত।

আমি আজও মনে করতে পারি একেকটা ভূতের গল্প কতটা গভীরভাবে আমাদের মনে দাগ কাটতো। কারও কারও গল্পে শিউরে উঠতাম, আবার কোনো গল্প শুনে বাড়ি ফিরে ঘুমোতে ভয় লাগতো। তবুও পরের দিন আবার নতুন করে সেই গল্প শোনার জন্য আমরা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম।

সেই সময়ের অন্ধকারে ছিল একধরনের শান্তি। আকাশ ভর্তি তারা, চারপাশে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, আর আমরা সবাই বসে আছি একসাথে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়া মানেই ছিল নতুন স্মৃতি তৈরি হওয়ার সুযোগ। আজকের দিনে যখন বিদ্যুতের সমস্যা হয় তখন মানুষ বিরক্ত হয়, অভিযোগ করে। কিন্তু আমাদের সময়ে এই একই ঘটনা ছিল আনন্দের উৎস।

ছেলেবেলার এই মুহূর্তগুলোই আমাকে আজও সুখ দেয়। কারণ সেখানে ছিল নিষ্পাপ বন্ধুত্ব, নির্ভেজাল আনন্দ আর আন্তরিক সম্পর্ক। আজ যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন আমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সেই কোয়ার্টারের অন্ধকার রাতগুলোর কথা ভাবি। মনে হয় যদি আবার ফিরে যেতে পারতাম সেই দিনে, সেই পরিবেশে, যেখানে অন্ধকারও ছিল আলোর মতো সুন্দর।

আমার বিশ্বাস আমাদের প্রজন্মের অনেকেই এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়া আর ভূতের গল্প শোনা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। এখনকার বাচ্চারা হয়তো বুঝবেই না সেই আনন্দ কেমন ছিল। তারা সবসময় মোবাইল, টিভি বা ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু আমরা ভাগ্যবান ছিলাম যে বিদ্যুতের অভাব আমাদের একে অপরের কাছে টেনে নিয়েছিল।

আমার শৈশবের সেই কোয়ার্টার আর বিদ্যুৎহীন রাতগুলো শুধু গল্প নয়, বরং জীবনের শিক্ষা ছিল। সেখানে আমরা শিখেছি একসাথে সময় কাটানো, ভয়কে জয় করা, ছোট ছোট মুহূর্তে আনন্দ খুঁজে নেওয়া। এই অভিজ্ঞতাগুলোই আজও আমাকে শক্তি দেয়, সুখ দেয়।

ছেলেবেলা একবারই আসে আর তা ফিরে পাওয়া যায় না। তবে সেই স্মৃতিগুলো চিরকাল আমাদের সাথে থেকে যায়। যখনই আমি জীবনের ক্লান্তি বা দুশ্চিন্তায় ভুগি তখনই মনে করি সেই অন্ধকার রাতগুলোর কথা। মনে করি আমরা সবাই একসাথে বসে আছি, ভূতের গল্প শুনছি, হাসছি আর আনন্দ করছি। তখন বুঝতে পারি সত্যিকারের সুখ আসলে কতটা সহজ ছিল।

কেমন লেগেছে আপনাদের সবার কাছে আজ আমার শৈশবে ফেলে আসা সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে পোস্টটি। আশা করছি আপনাদের সবার কাছে আমার পোস্টটি পড়েও অনেক ভালো লেগেছে সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন সে পর্যন্ত আগামীতে আবার নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসবো ইনশাল্লাহ আল্লাহাফেজ।

আমার পরিচিতি

আমি মাহফুজা আক্তার নীলা। আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুননি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

image.png

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.33
JST 0.034
BTC 112440.68
ETH 4342.16
SBD 0.84