জেনারেল রাইটিং- অন্যায়কারীর সাথে আপোষ করে যারা, তারা মানুষ নয়
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার জেনারেল রাইটিংটি দেখে আসি যে কি বিষয় নিয়ে লেখলাম। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমার জেনারেল রাইটিং এর বিষয় হলো "অন্যায়কারীর সাথে আপোষ করে যারা, তারা মানুষ নয়।"

মানুষকে আমরা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব বলি। কারণ তার আছে বিবেক, ন্যায়বোধ, সহানুভূতি আর আত্মসচেতনতা। কিন্তু সমাজ যখন কোনো ব্যক্তির অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ না করে বরং তাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেয়, তখন প্রশ্ন জাগে — এই শ্রেষ্ঠত্ব কোথায়? একটি নির্মম সত্য হলো: নিজের স্বার্থের জন্য যারা অন্যায়কারীকে তোষামোদ করে, তারা প্রকৃত মানুষ নয়। তারা কেবল রক্ত-মাংসে গঠিত জীব, কিন্তু মনুষ্যত্বশূন্য।
তোষামোদ হলো এমন এক আচরণ যেখানে ব্যক্তি সত্য জানার পরও মিথ্যা প্রশংসা করে, অন্যায়কে সমর্থন দেয়, আর অযোগ্য ব্যক্তিকে বড় করে তুলে। তোষামোদ এক ধরনের আত্মঘাতী প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যক্তিগত লাভের জন্য নৈতিকতা বিসর্জন দেওয়া হয়। ষামোদকারীরা সাধারণত দুটি কারণে এই আচরণ করে নিজের সুবিধা আদায়ের জন্য। ভয় বা নিরাপত্তাহীনতা থেকে। এই দুই ক্ষেত্রেই মানুষ নিজের নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে অন্যায়কারীর পাশে দাঁড়ায়। অথচ একজন প্রকৃত মানুষ কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না, বরং সত্যের পাশে দাঁড়ায় একা হলেও।
তোষামোদকারীর একটি বড় অপরাধ হলো সে অন্যায়কে "বৈধতা" দেয়। সে অপরাধীর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে, কারণ সে জানে তার পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ আছে। যখন কেউ অপরাধ করে এবং দেখে তার চারপাশে লোকজন তাকে বাহবা দিচ্ছে, তখন সে আরও বড় অন্যায়ের সাহস পায়। এইভাবে সমাজে জন্ম নেয় অবিচার, দুর্নীতি, নিপীড়ন। উদাহরণ: একজন কর্মকর্তা অফিসের তহবিল আত্মসাৎ করছেন। সহকর্মীরা জানে কিন্তু কেউ মুখ খোলে না। বরং কেউ কেউ তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে প্রমোশনের আশায়। এতে করে সেই কর্মকর্তা হয়ে ওঠে আরও বেপরোয়া, আর পুরো দপ্তরটি হয়ে যায় দুর্নীতির আখড়া।
মানুষ হওয়া মানে কেবল চলাফেরা করা, খাওয়া-পরা নয়। মানুষ হওয়া মানে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো, ন্যায়ের জন্য লড়াই করা, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলে প্রতিবাদ করা। যে ব্যক্তি শুধু নিজের ছোট্ট সুবিধার জন্য অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়, সে আসলে মানুষের জাতির কলঙ্ক। তার বিবেক মৃত, তার আত্মা বিক্রি হয়ে গেছে। রাজনীতি হলো এমন এক ক্ষেত্র, যেখানে তোষামোদ প্রায় শিল্পের স্তরে পৌঁছেছে। নেতার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে, হ্যাঁ-না না বুঝেই সমর্থন করে। কুশাসনের সময় প্রতিবাদ না করে, বরং "আপনিই সেরা" বলে তালি দেয়।
এর ফলে দেশ পিছিয়ে পড়ে, জনসাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর রাজনৈতিক অপরাধীরা আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে। একজন জনপ্রতিনিধি একের পর এক দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। এলাকার কিছু সুবিধাভোগী লোক তাকে জনদরদী বলে গলায় ফুলের মালা দেয়। অথচ পিছনে লুকিয়ে আছে টাকা পয়সা, ক্ষমতার ভাগ, এবং ভবিষ্যতের সুবিধার হিসাব। বিশ্বাস করুন শুধু অন্যায় না করা যথেষ্ট নয়। যদি আপনি অন্যায় দেখেও চুপ থাকেন, কিংবা প্রশংসা করেন, তাহলে আপনি নিজেও সেই অন্যায়ের অংশীদার। তোষামোদকারীরা সমাজকে দুর্বল করে দেয় ভেতর থেকে। তারা সত্য বলার সাহস হারিয়ে ফেলে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যায় এক ধ্বংসপ্রায় সমাজ। শুধু রাজনীতি নয়, তোষামোদের প্রভাব দেখা যায় পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। একজন ছাত্র যদি পরীক্ষায় নকল করে ভালো ফলাফল করে, আর শিক্ষক যদি তাকে বাহবা দেন, তাহলে সেটা তোষামোদ। একজন সন্তানের অন্যায়কে যদি মা বাবা ঢেকে দেন সে তো ছোটো বলে, সেটাও এক ধরনের তোষামোদ। এই ছোট ছোট দৃষ্টান্তগুলোই ধীরে ধীরে তৈরি করে এক বিশাল ব্যর্থ প্রজন্ম, যারা সৎ হতে শেখে না। প্রকৃত মানুষ সেই, যে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে সত্যকে রক্ষা করে। যে অন্যায় দেখলে চুপ করে না থাকে। যে সাহস করে বলে, তুমি ভুল করছো। যে চাটুকারিতা নয়, সততা দিয়ে সম্পর্ক গড়ে।
তোষামোদের মুখোশ খুলে ফেলতে হবে। নিজের এবং সমাজের ভালোর জন্য। স্বার্থের জন্য অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দিয়ে যারা মাথা নিচু করে থাকে, তারা মানুষ নয়। তারা কেবল চলমান এক আত্মহীন ছায়া। আমাদের দরকার এমন মানুষ, যারা সত্যের জন্য একা হাঁটতে জানে। যারা না বলতে জানে, প্রতিবাদ করতে জানে। যারা একদিন এক নতুন সমাজ গড়বে। যেখানে সম্মান কেনা যাবে না তোষামোদের তেলে।
আমার পরিচিতি
আমার পরিচিতি
আমি মাহফুজা আক্তার নীলা। আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুননি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, অন্যায়ের সাথে আপোষ করলে তা আরও বড় অন্যায়কে আমন্ত্রণ জানায়। মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে নেলসন ম্যান্ডেলা পর্যন্ত সকল নেতাই অন্যায়ের মুখোমুখি হয়েছেন, কিন্তু আপোষ করেননি। তাদের এই দৃঢ়তাই আজ বিশ্বকে ন্যায়ের পথ দেখায়। এই পোস্টটি সেই চেতনাকেই স্মরণ করিয়ে দিল।