জেনারেল রাইটিং- “🌿 মন শান্ত রাখার সহজ উপায়”

in আমার বাংলা ব্লগ16 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার জেনারেল রাইটিংটি দেখে আসি যে কি বিষয় নিয়ে লেখলাম। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমার জেনারেল রাইটিং এর বিষয় হলো " মন শান্ত রাখার সহজ উপায়।"


image.png

source

আজকের ব্যস্ত জীবনে মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মনের অশান্তি। আমরা সবাই দৌড়ের ওপর আছি—কাজ, পরিবার, দায়িত্ব, প্রতিযোগিতা, সমাজ—সবকিছুর মাঝে নিজেদের হারিয়ে ফেলেছি। প্রতিদিনের জীবনে যতই অর্জন হোক না কেন, ভেতরে একধরনের চাপ কাজ করে। সেই চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমরা নানা উপায় খুঁজি, কিন্তু শান্তি যেন ঠিক হাতছোঁয়া দূরত্বে থেকে যায়। অথচ মন শান্ত রাখার জন্য বড় কিছু করার দরকার নেই। শুধু কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তুললেই আমরা নিজের ভেতরেই খুঁজে পেতে পারি প্রশান্তির আশ্রয়।

প্রথমেই নিজের জন্য কিছু সময় রাখাটা খুব জরুরি। আমরা সারাদিন অন্যের জন্য ব্যস্ত থাকি, অথচ নিজের জন্য সামান্য সময়ও রাখি না। সকালবেলায় ভোরের আলোয় জানালার পাশে বসে এক কাপ চা খাওয়া, বা সন্ধ্যার হালকা বাতাসে ছাদে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিরবতা অনুভব করা—এই ছোট্ট অভ্যাসগুলোই মনকে শান্ত করে। দিনে অন্তত দশ মিনিট নিজের সঙ্গে সময় কাটান। কোনো কাজ নয়, কোনো চিন্তা নয়—শুধু নিজেকে অনুভব করুন। এই সময়টুকুতে আপনি বুঝতে পারবেন, শান্তি বাইরে নয়, নিজের ভেতরেই লুকিয়ে আছে।

প্রকৃতি মানুষের সেরা বন্ধু। গাছের সবুজ পাতা, নদীর কলকল ধ্বনি, বৃষ্টির গন্ধ বা পাখির গান—এসব আমাদের মন থেকে ক্লান্তি দূর করে দেয়। সম্ভব হলে নিয়মিত প্রকৃতির কাছে যান। পার্কে হাঁটুন, গাছের নিচে বসুন, অথবা ঘরে ছোট একটা টবের গাছ রাখুন। প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকলে মন স্বাভাবিকভাবেই প্রশান্ত হয়। আমরা যদি প্রতিদিন একটু হলেও প্রকৃতিকে ছুঁতে পারি, তাহলে মন শান্ত রাখতে আলাদা কোনো কৌশল লাগবে না।

মানুষের মন চায় কথা বলতে। কিন্তু আমরা অনেক সময় মনের কথা কাউকে বলি না। সব কিছু নিজের মধ্যে জমিয়ে রাখি। এতে মন ভারী হয়ে যায়, অকারণে দুঃখ বাড়ে। মন খারাপের সময় কাছের কারও সঙ্গে গল্প করুন, অনুভূতি ভাগ করে নিন। আপনি দেখবেন, কথার মাধ্যমেই অনেকটা চাপ কমে যায়। কেউ যদি আন্তরিকভাবে শুনে, তাহলে নিজের মনের ভার যেন অর্ধেক হালকা হয়ে যায়। আমরা একা বাঁচার জন্য জন্মাইনি; সম্পর্কই আমাদের শান্ত রাখে।

প্রতিদিনের জীবনে কৃতজ্ঞতার অভ্যাস করুন। আমরা যা পাইনি, সেটাতেই বেশি মনোযোগ দিই। কিন্তু জীবনের ছোট ছোট পাওয়া, হাসি, সাহায্য বা ভালো মুহূর্তগুলোই আসলে আনন্দের উৎস। ঘুমানোর আগে একটু ভাবুন—আজকের দিনে কী ভালো ঘটেছে। হয়তো কেউ হাসি উপহার দিয়েছে, হয়তো নিজের কোনো কাজ সুন্দরভাবে শেষ করতে পেরেছেন, হয়তো কোনো প্রিয়জনের কাছ থেকে স্নেহ পেয়েছেন। এই ছোট ছোট ভালো লাগাগুলো মনে রাখলে মন অনেকটা হালকা হয়ে যায়। কৃতজ্ঞতার অনুভূতি মানুষকে শান্ত করে, এবং জীবনের প্রতি নতুন ভালোবাসা জাগায়।

ক্ষমা করার অভ্যাসও মনকে শান্ত রাখে। আমরা অনেক সময় অন্যের ভুলকে মনে রেখে রাগ পুষে রাখি। এতে কষ্ট কেবল আমাদেরই হয়। কাউকে ক্ষমা করা মানে তার ভুলকে সমর্থন করা নয়, বরং নিজের মনকে মুক্ত করা। আপনি যখন কাউকে ক্ষমা করেন, তখন নিজের ভেতরের ভারও কমে যায়। জীবনে রাগ-অভিমান ধরে রাখলে শান্তি কখনোই আসে না। তাই যতটা সম্ভব মন হালকা রাখুন, ক্ষমা করতে শিখুন, এবং নিজের মানসিক শান্তির দিকে মনোযোগ দিন।

অন্যের জন্য কিছু করা মনের ভেতর এক অদ্ভুত সুখের অনুভূতি তৈরি করে। তা হতে পারে খুব ছোট কোনো কাজ—কাউকে সাহায্য করা, অসহায়কে একবেলা খাবার দেওয়া, বা কারও মুখে হাসি ফোটানো। এই ভালো কাজগুলো আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আমরা যখন অন্যের সুখে অংশ নিই, তখন নিজের মনেও শান্তির আলো জ্বলে ওঠে।

বর্তমান সময়ের আরেকটি বড় সমস্যা হলো প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার। মোবাইল, টিভি, সোশ্যাল মিডিয়া—সবকিছুই আমাদের মনকে অস্থির করে তোলে। সারাক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে আমরা ধীরে ধীরে মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তাই প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকুন। ফোন বন্ধ করে বই পড়ুন, পরিবারের সঙ্গে গল্প করুন, বা কিছুক্ষণ নীরব সময় কাটান। এই সময়টুকু আপনার মনের জন্য বিশুদ্ধ বাতাসের মতো কাজ করবে।

নিজের প্রতি দয়া করাও খুব প্রয়োজন। আমরা প্রায়ই নিজেদের ভুলের জন্য নিজেকেই দোষারোপ করি। মনে করি আমরা যথেষ্ট ভালো না। কিন্তু ভুল করা মানুষেরই স্বভাব। নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে মনের অশান্তি কমে যায়। আপনি যেমন, তেমন করেই মূল্যবান—এ কথাটা সবসময় মনে রাখুন।

জীবনকে যতটা সহজ রাখা যায়, শান্তি তত বেশি পাওয়া যায়। অতিরিক্ত চাওয়া-পাওয়া, প্রতিযোগিতা বা বিলাসিতা মনকে জটিল করে তোলে। তাই চাহিদা সীমিত রাখুন। যা আছে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন। ছোট ছোট সুখের মুহূর্তগুলোই আসলে জীবনের আসল সৌন্দর্য। কমে তৃপ্ত থাকতে শেখা মানেই শান্ত মন নিয়ে বাঁচা।

প্রতিদিনের জীবনে প্রার্থনা বা ধ্যানের অভ্যাস করুন। ধর্মীয় বিশ্বাস যাই হোক না কেন, নিরবভাবে নিজের সঙ্গে কিছু সময় কাটান। প্রার্থনা বা ধ্যানের সময় মন শান্ত হয়, চিন্তা পরিষ্কার হয়, ভয় ও উদ্বেগ কমে। ভোরবেলায় বা রাতে কয়েক মিনিট নীরবে বসে চোখ বন্ধ করে নিজের মনের কথা শুনুন। এই নিরব মুহূর্তগুলোই আপনার ভেতরের অস্থিরতাকে ধীরে ধীরে মুছে দেবে।

জীবনের আরেকটি সহজ ও সুন্দর উপায় হলো হাসি। হাসলে শুধু মুখ নয়, মনও আলোকিত হয়। হাসলে শরীরের মধ্যে ইতিবাচক শক্তি তৈরি হয়, রক্তচাপ কমে, মানসিক ভারসাম্য ফিরে আসে। তাই প্রতিদিন হাসুন এবং অন্যকেও হাসানোর চেষ্টা করুন। একটি ছোট্ট হাসি অনেক সময় দিনের সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে।

মন শান্ত রাখা কোনো একদিনের কাজ নয়; এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, একটি জীবনযাপন পদ্ধতি। ধীরে ধীরে নিজের অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়। প্রতিদিন সামান্য সময় নিজের জন্য রাখা, প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো, অন্যের প্রতি সদয় থাকা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, ক্ষমা করা এবং সহজভাবে বাঁচার চেষ্টা—এই ছোট বিষয়গুলোই আমাদের মানসিক প্রশান্তির ভিত্তি তৈরি করে।

আমাদের জীবন যতই জটিল হোক না কেন, আমরা যদি মনের ভেতর সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারি, তাহলে প্রতিটি ঝড়েও স্থির থাকা সম্ভব। শান্ত মন মানেই সুখী জীবন। আর একজন শান্ত মানুষ শুধু নিজের নয়, আশেপাশের মানুষের জীবনেও আলো ছড়ায়। তাই প্রতিদিন একটু থামুন, একটু শ্বাস নিন, একটু প্রকৃতিকে অনুভব করুন, একটু হাসুন—এভাবেই গড়ে উঠবে শান্ত ও পরিপূর্ণ জীবন। 🌸

আমার পরিচিতি

আমি মাহফুজা আক্তার নীলা। আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুননি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

image.png

Sort:  
 16 days ago 

মাঝে মাঝে অশান্ত মনকে শান্ত করা মুশকিল হয়ে যায়। আর অশান্ত মনকে শান্ত করার বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো জানতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.09
TRX 0.31
JST 0.034
BTC 111312.22
ETH 3966.16
USDT 1.00
SBD 0.58