যেখানেই যাও গোপাল,সঙ্গে যাবে কপাল

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

pexels-andrea-piacquadio-3764535.jpg

সোর্স

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী।আশা করি সবাই ভাল আছেন।আমিও ভাল আছি।আজ আপনাদের সাথে একটি বিড়ম্বনার গল্প শেয়ার করব। আশা করি মজা পাবেন।

আমি মোটামুটি আনলাকি একজন মানুষ।এতটাই আনলাকি যে সকালে উঠে নিজের মুখ আয়নায় দেখতেও মাঝে মাঝে ভয় পাই যে, পুরোদিনটাই না আবার খারাপ যায়।কেউ ভালকাজে বের হলেও পারতপক্ষে সামনে যাইনা।নিজেকে আনলাকি বলতেছি তার কারন আমার কোন কাজ একবারে কখনোই সম্পন্ন হয়নি।সব ঠিক থাকার পরেও তরী এসে যে কতবার তরী ডুবেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।

আমার ছোট বোন যে এসএসসি পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছে তা হয়ত আগেই আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি।তো গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাহিদ ফোন করে বলল, "ভাই বৃত্তির জন্য কলেজে কাগজ জমা দিতে হবে।তুই কি কি কাগজ জমা দিলি বিন্দুর জন্য?"আজকেই জমা দিতে হবে।১২তারিখ রবিবার দুপুর ২টা জমা দেওয়ার শেষ সময়।

এই শুনে তো আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল।কারন বিন্দুর কাগজ পত্র জমা দেওয়ার হলে আমাকেই সব করতে হবে।বাড়ি থেকে বগুড়ায় কাগজ আমারই নিয়ে যেতে হবে।অথচ বিন্দু আমাকে জানায় নি।আর কিছু কাগজ স্কুলে ছিল।সেগুলো তো রবিবারের আগে তোলা যাবে না।এখন কাগজ তুলব কখন,জমা দেব কখন। তারউপর আবার ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে,সেটার আবার অ্যাকাউন্ট নাম্বার জানা নেই।যাই হোক শনিবার পর্যন্ত এগুলো ভাবতে ভাবতে চুল ছেড়ার মত অবস্থা হল।

ভাবলাম শনিবার সকাল সকাল ঘুমিয়ে যাব।কারন রবিবার সারাদিন অনেক ঝক্কি পোহাতে হবে।কিন্তু ঐযে বললাম বিধি বাম।রাত তিনটে বাজে তারপরেও চোখে ঘুম নেই।অনেক চেষ্টার পরেও ৪টার আগে ঘুমাতে পারলাম না।এদিকে সকাল হতে না হতেই মা ডাকাডাকি শুরু করল।তার ভাবখানা এমন যেন সকাল ছয়টার সময় আমার জন্য স্কুল আর ব্যাংক খুলে রেখেছে।

দশটা নাগাদ স্কুলে গেলাম।বৃত্তির প্রত্যয়ন পত্র,আর বৃত্তির গ্যাজেট নিতে হবে। গিয়ে দেখি অফিস সহায়ক মশায় স্কুলে আসেন নি। আমার টেনশনে মাথা ঘুরছে। স্যারদের সাথে নাম্বার নিয়ে ফোন দিলাম,তা উনি বললেন বাসা থেকে বেরিয়েছেন ২০মিনিট লাগবে।মেজাজ তো আরো খিচড়ে গেল।কিন্তু কি আর করার অপেক্ষা করতে লাগলাম।এদিকে সময় যেন কাটেই না।অবশেষে ৪০মিনিট পর হেলেদুলে উনি আসলেন।

এসে গদাই লস্করি চালে কম্পিউটার অন করলেন।কিন্তু ঐ যে বলেছি কখনো একবারে কোন কাজ হয়না। কম্পিউটার আর অন হয়না।সব ঠিকঠাক কিন্তু কম্পিউটার অন হবার কোন নাম নেই। উনি বললেন তুমি ঘুরে আসো।

আমি সময় নষ্ট না করে চলে গেলাম ব্যাংকে।ব্যাংকে গিয়ে টোকেন নাম্বার নিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখি যে কর্মকর্তার থেকে স্টেটমেন্ট নিব উনি নেই। উনি গেছেন চা খেতে।মনে মনে নিজের কপাল কে গালি দিচ্ছিলাম।এরপর ৩০মিনিট পর পান চিবোতে চিবোতে আসলেন।উনাকে বিস্তারিত বললাম।উনি কার্ডের নাম্বার থেকে স্টেটমেন্ট বের করবেন। কিন্তু উনি তা আমাকে দেবে না।কারন আমি গার্জিয়ান না। অবশেষে আবার বাড়ি থেকে মা কে নিয়ে যেতে হল।আবার দেরি হল ২০মিনিট।

ইতোমধ্যে ১২টা বেজে গেছে।অত:পর স্টেটমেন্ট নিয়ে আবার স্কুলে রওনা দিলাম।স্কুলে গিয়ে দেখি এবার কম্পিউটার ঠিক হয়েছে কিন্তু বিদ্যুৎ এর লাইনের সমস্যা হয়েছে।এদিকে আমার বাড়ি থেকে বগুড়া যেতে ঘন্টাদুয়েক লাগবে। সাথে সাথে বিকল্প একটি ব্যবস্থার কথা জেনে নিলাম।বাইরে থেকে প্রত্যয়ন পত্র আর গ্যাজেট তুলে এনে প্রধান শিক্ষকের থেকে সত্যায়িত করে নিলাম আর মূল নম্বরপত্র বাইরের ছিল।

এগুলো নিয়ে তারাতারি বাসায় আসলাম স্নান করে খেয়ে বগুড়া যাব।কিন্তু বাসায় এসে শুনি ভাত তুলে দেওয়া হয়েছে মাত্র।মা ব্যাংকে যাওয়ায় রান্না করতে দেরি।একে রাতে ঘুম হয়নি,তারউপর সকাল থেকে খাওয়া হয়নি।মাথা যেন ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে।কোন মতে সব গুছিয়ে নিয়ে রওনা দিলাম।কিন্তু ঐ যে কপাল। রাস্তায় বগুড়ার কোন গাড়িই নেই। অথচ আমাদের এখানে প্রতিমিনিটে ৩-৪টা বগুড়ার গাড়ি যায়।অথচ আজ ২০মিনিটেও গাড়ি নেই।কিন্তু হাল ছাড়লাম না।একটু পরেই রাজশাহীর গাড়ি পেলাম।

গাড়িতে উঠে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।কেননা রাজশাহীর গাড়ি গুলো বেশ টেনে যায়।ঘন্টাখানেকের মাঝেই বগুড়ার কাছাকাছি আসলাম।ঘড়িতে তখন ২টা।কিন্তু আজ হয়ত সকালে ভুলে নিজের মুখ দেখেছিলাম।তাই একটু পরই আমার সব আনন্দ মাটি করে দিয়ে গাড়ি হল নষ্ট।বগুড়া তখনো প্রায় ৫কিমি।মনে মনে ভাবছিলাম একদিনে এত ব্যাডলাক মানুষের হয় কিভাবে।

কিন্তু এটাই মনে হয় শেষ ছিল। একটি সিএনজি পেয়ে গেলাম।বিন্দুকে সরাসরি কলেজে যেতে বললাম।আর বলে দিলাম যে, কলেজের অফিস সহকারি যিনি জমা নেবেন তাকে যেন একটু অপেক্ষা করতে বলে।তবে সিএনজি বেশ ভাল টেনে আসায় পৌছাতে বেশি দেরি হলনা।যদিও কলেজের অফিস সহকারি মহাশয় কিছুটা কথা শোনালেন দেরি করার জন্য।কিন্ত আমার কাজ তো কমপ্লিট হল।এটাই বড় কথা।

এখন বুঝলেন তো কেন টাইটেল দিলাম,"যেখানেই যাও গোপাল সঙ্গে যাবে কপাল।"অর্থাৎ আপনি যত যাই করেন না কেন কপাল মন্দ থাকলে কোনভাবেই এগোতে পারবেন না।

আজকের পর্ব এপর্যন্তই। কেমন লাগল অবশ্যই জানাবেন।সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ
Sort:  
 2 years ago 

আসলে সমস্যা আসলে সবদিক থেকে একসাথে সমস্যা আসে। যার কারণেই আপনার দিনটাই খারাপ গিয়েছে দেখছি। একের পর এক সমস্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। অবশেষে কাজটি সম্পূর্ণ করতে পেরেছেন এটা জেনেই আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি। এরকম খারাপ দিন যেন আপনাকে আর দেখতে না হয় সেই কামনা করি।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাই। আপনার প্রার্থনা যেন ইশ্বর শোনেন।

 2 years ago 

বাহ ভাই, খুব সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করেছেন । আসলে ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি। ভাগ্য যদি খারাপ হয় তাহলে ভালো জায়গা গেলেও আপনার ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না এটাই বাস্তবতা। আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলো। যাইহোক অবশেষে আপনার কাজ সম্পূর্ণ হলো। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন।আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

দাদা ঠিক যেদিন খারাপ যায় না সবকিছু তে ৷ আপনার সারাদিনের জার্নি টা সত্যি অনেক ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে ৷ দিনটি যে ব্যাডলাক এটা সত্য৷ যা হোক অবশেষে সম্পূর্ন কাজ তো হলো ৷

আসলে মাঝে মধ্যে এমন হয় ৷ আমারও কাছে

 2 years ago 

তাইলে তো আপনিও আমার মতই।ধন্যবাদ দাদা আপনার মন্তব্যের জন্য।

পোস্ট পড়ছিলাম আর মনে হচ্ছিল নিজের সাথে ব্যাপারগুলো ঘটছে। মানুষের হয়তো একটা দুটো জায়গায় বাধা হতে পারে আপনার তো দেখছি পদে পদে বাধা ছিল। আর এরকম কপাল শুধু আপনারই না, সকলের সাথে এরকম হয়। আমার নিজের সাথেও এরকম হয়, মাঝে মাঝে মনে হয় যে আমিই পৃথিবীর সবথেকে খারাপ ভাগ্যের মানুষ। তবে শেষ পর্যন্ত কাজ হয়ে গেছে এটাই অনেক। সবথেকে যে ব্যাপারটা ভালো লাগলো সেটা হল আপনি হাল ছাড়েননি কোন সিচুয়েশন এ।

 2 years ago 

হাল ছাড়া যাবে না। এটাই ব্যাড লাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।এটা কিন্তু আমার সাথে প্রতিনিয়ত হয় দাদা। তাই অভ্যাস হয়ে গেছে।

 2 years ago 

কথায় আছে না বিপদ যখন আসে তখন সব দিক থেকেই আসে। আপনার পোস্টটি পড়ছিলাম, অনেক খারাপ লাগলো পোস্টটি পড়ে। কপাল খারাপ হলে যা হয় ঠিক তাই ঘটেছে আপনার সঙ্গে। আপনার সঙ্গে যেন আর কোন খারাপ না হয় এই কামনাই করি।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.26
JST 0.037
BTC 104071.46
ETH 2492.68
USDT 1.00
SBD 0.92