সততার আলো রহিম চাচার গল্প
হ্যা লো বন্ধুরা,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। আমি @rayhan111 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে।
মানুষের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ পায় তার কাজের মধ্যে। অর্থ বা লোভ যখন সামনে আসে, তখনই বোঝা যায় আসল চরিত্র কেমন। আমাদের সমাজে অনেকেই আছে যারা স্বল্প আয়ে দিন কাটালেও সততাকে সবচেয়ে বড় সম্পদ হিসেবে লালন করে। তেমনি এক অনন্য উদাহরণ হলো রহিম চাচার গল্প।আজকে সেই গল্পটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম।
রহিম চাচা একজন সাধারণ মানুষ। গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন সংসারের দায়-দায়িত্ব পালনের জন্য। তার কোনো জমিজমা নেই, কোনো ব্যবসা নেই। প্রতিদিন ভোরে উঠে তিনি রিকশা চার্জ দিয়ে যাত্রী নিয়ে রাস্তায় বের হন। দিনভর খেটে যা আয় হয়, তাই দিয়েই সংসার চলে,কখনো খাবার জোটে পেট ভরে, কখনো আবার অর্ধেক খেয়েই রাত কাটে। জীবনের এই কষ্টকে তিনি কখনো দুর্ভাগ্য মনে করেন না। বরং নিজের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমকেই মনে করেন সবচেয়ে বড় সম্মান।
একদিন দুপুরে তিনি এক যাত্রীকে নিয়ে শহরের ব্যস্ততম এলাকায় যাচ্ছিলেন। যাত্রী রিকশা থেকে নেমে দ্রুত চলে গেলেন। রহিম চাচা রিকশা চালিয়ে একটু দূর যেতেই হঠাৎ চোখে পড়ল সিটের পাশে একটি কালো রঙের ব্যাগ। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন হয়তো কোনো সাধারণ জিনিস। কিন্তু কৌতূহলবশত ব্যাগটি হাতে তুলে খুলতেই হতভম্ব হয়ে গেলেন। ভেতরে মোটা অঙ্কের টাকা! গুনে দেখলেন কয়েক লাখ টাকার মতো।
এক মুহূর্তের জন্য তার চোখে ভেসে উঠল সংসারের চিত্র। ঘরে অসুস্থ স্ত্রী, পড়াশোনা বন্ধ হতে বসেছে সন্তানের, প্রতিদিন চাল-ডাল জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয়। এত টাকা দিয়ে তিনি চাইলে নতুন রিকশা কিনতে পারতেন, ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারতেন, হয়তো একটা ছোট ঘরও বানাতে পারতেন। জীবন অনেকটাই বদলে যেত।কিন্তু কিছুক্ষণ চিন্তার পর তিনি নিজের মনকে বললেন,এই টাকা আমার নয়, এটা অন্যের পরিশ্রমের উপার্জন। অন্যের জিনিস নিয়ে আমি সুখী হতে পারব না। আল্লাহ আমার ভাগ্যে যতটুকু লিখে দিয়েছেন, সেটুকুই আমার।
রহিম চাচা ব্যাগটি বুকে আঁকড়ে ধরে চারদিকে খোঁজ নিতে লাগলেন। অবশেষে কিছুক্ষণ পরেই সেই যাত্রী উদ্বিগ্নভাবে এদিক-সেদিক খুঁজছিলেন। তিনি যাত্রীকে ডেকে নিয়ে বললেন,ভাই, আপনার ব্যাগটা কি হারিয়েছেন?যাত্রী বিস্মিত হয়ে উত্তর দিলেন, হ্যাঁ ভাই, আমার ব্যাগে অনেক টাকা ছিল, আমি তো মরেই যাচ্ছিলাম চিন্তায়!
রহিম চাচা হাসিমুখে ব্যাগটি হাতে তুলে দিলেন। যাত্রী ব্যাগ খুলে দেখলেন সব টাকা ঠিকঠাক আছে। বিস্ময় আর কৃতজ্ঞতায় তার চোখ ভরে উঠল অশ্রুতে। তিনি রহিম চাচার হাতে কিছু টাকা দিতে চাইলেন পুরস্কার হিসেবে, কিন্তু রহিম চাচা তা বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন,ভাই, আমি কোনো পুরস্কার চাই না। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আপনার টাকা আপনি রাখুন, এটাই আমার তৃপ্তি।
এই ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ল এলাকায়। সবাই অবাক হলো রহিম চাচার সততা দেখে। কেউ কেউ বলল, আজকের দিনে এত টাকার লোভ সামলে রাখা সত্যিই বিরল ব্যাপার। আবার কেউ বলল, আমাদের সমাজ যদি রহিম চাচার মতো সৎ মানুষের হাতে ভরে যেত, তাহলে পৃথিবীটা আরও সুন্দর হতো।
রহিম চাচার জীবন হয়তো সেইদিনও একইভাবে কেটেছিল,অল্প আয়ে সংসার চালানো, প্রতিদিন ভোরে উঠে রিকশা চালানো, সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফেরা। কিন্তু তার সততার আলো ছড়িয়ে পড়েছিল বহু মানুষের মনে। তিনি প্রমাণ করলেন, ধনী হওয়ার জন্য অর্থের প্রাচুর্য দরকার নেই, দরকার সত্য ও নৈতিকতার শক্তি।
🙏🤲🙏
https://x.com/rayhan111s/status/1962794039054635212?t=k8fQhwYADzK1huTC3CkkGg&s=19