আফসোস ; জীবন কথা; ১০% লাজুক শেয়ালের জন্য।
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। কেমন আছেন সবাই। আশা করি ভালো আছেন।
আজ আপনাদের মাঝে আমি আমার জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চলেছি।
আমি আমার জানা মতে কখনো কারো সাথে স্বার্থপর হয়ে প্রকাশিত হয়নি। নিজের স্বার্থ সবাই দেখে এটা স্বাভাবিক। আমিও দেখি। কিন্তু সেই অর্থে যে আশেপাশের মানুষের প্রতি খেয়াল না করে শুধু নিজের কথাই চিন্তা করি এমনও আমি না। কিন্তু প্রায়ই আমার জীবনের একটি ঘটনা আমার মনে পড়ে এবং নিজে নিজে কষ্ট পাই কিছুটা। আজ তাই আমার মন হালকা করার জন্য সেই ঘটনা আপনাদের মাঝে শেয়ার করছি।
সাল ২০১৬, আমি কলেজে নতুন ভর্তি হয়েছি। ক্যান্টনমেন্ট কলেজের হোস্টেলেই উঠলাম। প্রথমে অনেক সুন্দর রুম পেয়েছিলাম। কিন্তু ম্যাম একটু কৌশল করে তার প্রিয় ছাত্রীদের আমার রুমটা দিয়ে দেয় এবং আমাকে নিচতলায় একটা রুমে তিনজন শেয়ারে থাকতে বলে। কিছু করার নেই অগত্যা সেই রুমেই থাকতে হলো। পড়াশোনা চলছিলো তোড়জোড় করে।
আমাদের রুমের পাশেই রান্নাঘর ছিলো। হোস্টেল এর রান্না বুঝতেই পারছেন ইলাহি কান্ড। রুমের দরজা কখনো খোলা যেত না ঝাঁঝাল গন্ধের জন্য। আমরা তিনজন রুমমেট এর মাঝে একজন ছিলো পাবনার।ওর সাথে আমার বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়। আরেকজন ছিলো জয়পুরহাটের। ওর কন্ঠ ছিলো অনেক চড়া সাথে জয়পুরহাট এর লোকাল ভাষায় বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতো। দিনের বেলা রুমে আলো প্রবেশ করতো না। দিনরাত ২৪ ঘন্টা লাইন অন করে রাখা লাগতো। আর যেদিন বিদ্যুৎ চলে যেত সেদিন তো কথাই নেই। অন্ধকারে বসে থাকো। এভাবেই কাটছিলো দিন। দুইমাস পরে আমাদের কলেজে প্রথম এক্সাম শুরু হয়। ফোনের আলো দিয়ে কষ্ট করে পড়াশোনা করে আলহামদুলিল্লাহ সেই পরীক্ষায় আমি প্রথম হয়েছিলাম। ম্যাডাম এবার আমাকে ভালো নজরে দেখতে শুরু করলো। দুই তলায় একটা সিট ফাঁকা হতেই আমাকে সেখানে চলে যাওয়ার পারমিশন দিলো। এখানেই ঘটলো বিবাদ। আমার চলে যাওয়ার সময় পাবনার বান্ধবী আমার অনেক কান্নাকাটি করলো। আমাকে যেতে দেবে না। কিন্তু সেই অন্ধকার ঘর থেকে আমি বের হতে চাচ্ছিলাম। ওর কান্না উপেক্ষা করে বাঁচার জন্য হোক আর পড়াশোনার জন্য হোক আমাকে দোতলা চলে যেতে হয়েছে ওদের অন্ধকারে ফেলে। কিন্তু করাও কিছু ছিলো না। দুই সিট ফাঁকা রুম ছিলো না যে ওকে সহ চলে যাব।
চলে যাওয়ার পর সেদিন আমার কেন জানি কিছুই মনে হয়নি।মনে হয়েছে অন্ধকার থেকে বাঁচলাম।
কিন্তু এখন প্রায়ই মনে হয় ওর সেই কান্না ভরা চোখ। আর সেই কথা,
" না তুই যাবি না, তুই যাস না।"
অনেক বছর হয়ে গেছে এই ঘটনার পর। ওর সাথে পরেও বন্ধুত্ব ছিলো কিন্তু ওতোটা গভীর না। ও হয়তো বিষয়টি ভুলেও গেছে। কিন্তু আমি জানিনা কেন ভুলতে পারছি না। আজও কান্না পায় সেই ঘটনা মনে হলে। আর বার বার মনে হয় সেদিন না গেলেও পারতাম।
আমার ছোট্ট জীবনে এই একটি সবচেয়ে কষ্টের ঘটনা। যেটি আমি নিজে ঘটিয়েছি।
এরপর আর কোনো কাছের মানুষকে আমি কষ্ট দিইনি। বিশ্বাস করে ধোকাও খেয়েছি অনেক বার কেঁদেছি কিন্তু আমি আর কাউকে কাঁদাইনি। আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি আমার জীবনে দ্বিতীয়বার যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে। যার জন্য আমাকে সারাজীবন আফসোস করতে হয়।
ফটোগ্রাফিতে:@mstnusrat
ডিভাইস :Huawei
মডেল :y7pro
লোকেশন : w3w
ধন্যবাদ সকলকে।
আসলে আপু আপনার ঘটনাটি সম্পূর্ণ পড়লাম এক্ষেত্রে আমার মনে হচ্ছে আপনার কোন দোষ নেই তার কারণ হচ্ছে আপনি ওই সময় অতটা সিরিয়াসলী নেন নাই বিষয়টি। আর বোঝার মতো সেই বয়স ও আপনার হয়নি। যাইহোক যেটা চলে গেছে সেটা অতীত। অতীত ঘেটে নিজে কষ্ট পেয়ে কোন লাভ নেই, সামনের দিকে এগিয়ে যান। আপনার জন্য শুভকামনা।
ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।