বড়শি দিয়ে বোয়াল মাছ ধরার গল্প
আসসালামুআলাইকুম/আদাব
গ্রামের সকালের শান্ত হাওয়া, কুয়াশা তখনও পুরোপুরি কেটে যায়নি। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আমি তাকিয়ে আছি ঝিকিমিকি জলে। হাতে বড়শি, পাশে এক পাত্র ভর্তি টোপ মোটা শিং মাছের টুকরো, যেটা নাকি বোয়াল মাছের সবচেয়ে প্রিয় খাবার। আজ আমি একাই এসেছি মাছ ধরতে, মনে ভরপুর উত্তেজনা আর কৌতূহল।
নদীটা আমাদের গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে। বর্ষার পানি এখনো পুরোপুরি নামেনি, তাই জলের গভীরতা যথেষ্ট। দূরে জলজ ঘাসের ঝোপের মধ্যে মাঝে মাঝে কিছু নড়াচড়া দেখা যায় হয়তো কোনো বড় মাছ খাবার খুঁজছে। আমি ধীরে ধীরে বড়শিটা প্রস্তুত করলাম। তারে মজবুত করে গাঁথা হুক, আর সেই হুকে লাগালাম টোপ। বড়শিটা ছুড়ে দিলাম নদীর মাঝামাঝি, তারপর ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা শুরু।নদীর জলে বড়শি ফেলার পর একটা অদ্ভুত প্রশান্তি নেমে এলো মনে। চারপাশে শুধু প্রাকৃতিক শব্দ, পাখির ডাক, জলের মৃদু ঢেউ, আর মাঝে মাঝে বাতাসে দুলে ওঠা ঘাসের মর্মর শব্দ। আমি বসে ভাবছি, কতদিন পর এমন নিরিবিলি সময় কাটাচ্ছি!
হঠাৎ বড়শির তারে টান পড়লো। প্রথমে মনে হলো, হয়তো ছোট কোনো মাছ টোপে হাত দিয়েছে। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরেই বুঝলাম ব্যাপারটা অন্যরকম, টানটা ভারী, একেবারে শক্ত। আমি ঝটপট বড়শির হাতল শক্ত করে ধরলাম। জলে ভেতর থেকে যেন কেউ পুরো শক্তি দিয়ে টান দিচ্ছে! তখনই বুঝলাম এটা কোনো সাধারণ মাছ নয়, হয়তো বড় একটা বোয়াল!আমি ধীরে ধীরে টান বাড়াতে লাগলাম, কিন্তু মাছটাও হাল ছাড়ছে না। কখনো বামে, কখনো ডানে ছুটে যাচ্ছে। জলের ওপর ফেনা ওঠে গেছে, চারপাশে ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে। ঘামে ভিজে গেল হাত, কিন্তু মন ভরে গেল এক অদ্ভুত রোমাঞ্চে। প্রায় পাঁচ মিনিট লড়াই চলল, তারপর দেখি বিশাল এক কালো ছায়া জলের ওপর ভেসে উঠছে। বোয়াল মাছ! তার মুখে এখনো বড়শি আটকে আছে, আর চোখ দুটো যেন আগুনের মতো জ্বলছে।
আমি ধীরে ধীরে টেনে তুললাম তাকে তীরে। মাছটা এত বড় যে এক হাতে ধরা মুশকিল। ওজন অন্তত আট-দশ কেজি হবে। তীরে বসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম সেই বিশাল মাছটার দিকে মনে হচ্ছিল, যেন একটা যুদ্ধ জিতে ফেলেছি।বিকেলের দিকে যখন বাড়ি ফিরলাম, গ্রামের সবাই ভিড় করে দেখতে এল। কেউ বলল, এই বোয়াল তো বছরের সবচেয়ে বড় ধরা!কেউ আবার অবাক হয়ে ছবি তুলতে লাগল। আমি শুধু হাসছিলাম কারণ জানতাম, এই মাছ শুধু আমার সৌভাগ্য নয়, ধৈর্য আর ভালোবাসার ফল।
রাতের খাবারে মা সেই বোয়াল মাছের ঝোল রান্না করলেন। গরম ভাতের সাথে সেই তাজা বোয়ালের স্বাদ আজও মনে আছে। নদীর পাশে কাটানো সেই সকালটা, বড়শির টানে লড়াই করা সেই মুহূর্তগুলো,সবকিছু এখনো চোখে ভাসে।মাছ ধরার আনন্দ শুধু মাছ পাওয়া নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে সেই অপেক্ষার সময়টুকু অনুভব করা। বড়শি দিয়ে বোয়াল ধরার সেই অভিজ্ঞতা আজও মনে পড়লে মনে হয়, জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই আসলে সবচেয়ে বড় আনন্দ এনে দেয়।
ধন্যবাদ সকলকে✨💖
ফোনের বিবরণ
| ক্যামেরা | স্যামসাং গ্যালাক্সি |
|---|---|
| ধরণ | গল্প ✨ |
| মডেল | এম-৩১ |
| ক্যাপচার | @alif111 |
| অবস্থান | সিরাজগঞ্জ -রাজশাহী- বাংলাদেশ। |





i really love the vivid description of your story. i felt like i was right there, struggling with the boal fish... i wish i could captivate my audience with descriptive stories like this. is beautiful