গ্রামের ভোরবেলা মানেই অন্যরকম শান্তি। চারপাশে কুয়াশায় ঢাকা মাঠ, গাছের পাতায় টলমল শিশিরবিন্দু, আর দূর থেকে ভেসে আসা পাখির ডাক। এমন এক সকালে আমি আর আমার বন্ধু রুবেল ঠিক করলাম, আজ আমরা পুকুরে গিয়ে বড়শি দিয়ে মাছ ধরব। হাতে ছিল আমাদের প্রিয় পুরনো বড়শি, কিছু কেঁচো আর এক প্যাকেট খাবার।

পুকুরের ধারে পৌঁছাতেই মনটা ভরে গেল। সূর্যের আলো পানির উপর পড়ে চিকচিক করছে, বাতাসে ভেসে আসছে কচুরিপানার গন্ধ। আমরা দু’জন একটা পাটির ওপর বসে বড়শি ফেলার জায়গা ঠিক করলাম। রুবেল বেশ মনোযোগ দিয়ে কেঁচো গেঁথে বড়শি ফেলল পানিতে। আমি একটু দূরে বসে ধীরে ধীরে বড়শির দড়ি নামিয়ে রাখলাম। শুরু হলো অপেক্ষা।

কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দেখি, আমার বড়শির দড়ি নড়ছে। উত্তেজনায় হাত কাঁপতে শুরু করল। মনে হচ্ছিল, এবার নিশ্চয়ই বড় একটা মাছ ধরা পড়েছে! আস্তে আস্তে টান দিলাম, কিন্তু দেখি ছোট্ট একটা টেংরা মাছ ঝুলছে বড়শিতে। আমি হাসতে হাসতে বললাম, এই শুরু তো, এখন বড় মাছ আসবে। রুবেল হেসে উত্তর দিল, “তোর ভাগ্য তো ভালো, আমি এখনো একটাও পাইনি!

সময় গড়াতে লাগল। আমরা গল্প করছি, হাসছি, আবার মনোযোগ দিচ্ছি বড়শির দিকে। হঠাৎ রুবেলের বড়শি দুলে উঠল এমনভাবে যে, মনে হলো বিশাল কিছু টেনেছে। সে জোরে টান দিতেই দেখি একটা বড় রুই মাছ লাফিয়ে উঠল পানির ওপর! আমরা দুজন মিলে টানতে টানতে পাড়ে তুললাম। সেই মুহূর্তে রুবেলের মুখে যে আনন্দ, তা ভাষায় বোঝানো কঠিন।পুকুরের জলে ছায়া পড়েছে গাছের, পাশে কিছু বাচ্চা দাঁড়িয়ে আমাদের মাছ ধরা দেখছে। তারা চিৎকার করে উঠল, ওই দেখো, বড় মাছ!তাদের উল্লাসে আমরাও আরও খুশি হয়ে গেলাম।

দু’ঘণ্টা কাটিয়ে যখন আমরা ফিরছিলাম, ব্যাগ ভর্তি ছোট-বড় নানা মাছ। রোদ উঠেছে, চারপাশে প্রকৃতির মিষ্টি গন্ধ। হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল, আজকের দিনটা সত্যিই অসাধারণ। বড়শি দিয়ে মাছ ধরার এই সহজ আনন্দ যেন জীবনের বড় সুখের একটি অংশ।

বাড়িতে ফিরে মা মাছগুলো দেখে হাসলেন। বললেন, তোমরা তো আজ সত্যি বাহাদুর! দুপুরে যখন ভাজা মাছ আর গরম ভাত খেতে বসেছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল, সেই সকালের পরিশ্রম, অপেক্ষা আর হাসিখুশির প্রতিটি মুহূর্ত যেন আরও সুস্বাদু হয়ে উঠেছে।