বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জাহাজভাঙা শিল্পের দেশ হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূলীয় অঞ্চল জাহাজভাঙা শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। এখানে পুরনো, অচল জাহাজ ভেঙে তার লোহা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্রসহ নানা উপাদান পুনর্ব্যবহার করা হয়। এই শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, কর্মসংস্থান তৈরি করছে এবং ইস্পাত শিল্পের কাঁচামালের বড় একটি অংশ সরবরাহ করছে।
জাহাজভাঙা শিল্প বা Ship Breaking Industry হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে সমুদ্রপথে চলাচল অযোগ্য বা মেয়াদোত্তীর্ণ জাহাজগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এসব জাহাজ থেকে পাওয়া যায় লোহা, ইঞ্জিন, তামা, অ্যালুমিনিয়াম, যন্ত্রাংশ, এমনকি আসবাবপত্রও। বাংলাদেশে ভাঙা জাহাজ থেকে প্রাপ্ত লোহা দেশের ইস্পাত শিল্পের প্রায় ৬০-৭০% চাহিদা পূরণ করে।
এ শিল্পের মাধ্যমে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। গ্রামীণ ও স্বল্পশিক্ষিত মানুষদের জন্য এটি জীবিকার বড় একটি উৎস। পাশাপাশি, পুরোনো জাহাজ থেকে প্রাপ্ত যন্ত্রাংশ ও উপকরণ স্থানীয় বাজারে সুলভ দামে বিক্রি হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করে।
একসময় বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ জাহাজভাঙা শিল্পের দেশ ছিল। বিশেষ করে ২০১৫-২০২০ সময়কালে বাংলাদেশ প্রায় বিশ্বের ২৫-৩০% জাহাজ ভেঙেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রবল প্রতিযোগিতা, সরকারি অনীহা, ডলার সংকট, এবং পরিবেশগত জটিলতার কারণে এ খাতটি বড় ধরনের সংকটে পড়েছে।
সীতাকুণ্ডে একসময় প্রায় ১১৬টি সক্রিয় শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড ছিল, এখন তা নেমে এসেছে ২৫টির মতো। এর মধ্যে কয়েকটি “গ্রিন ইয়ার্ড” হলেও সেগুলোও অর্থনৈতিক চাপে অনেকটা নিষ্ক্রিয়।
সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এই শিল্পে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা ঘোষণা করেছে তাদের জাহাজভাঙা শিল্পকে চাঙা করতে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি। ঐদেশ গুলো যদি পুরনো জাহাজ কিনে ভাঙার ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা টিকে থাকা কঠিন হবে।
বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো উপর মহলের উদাসীনতা ও দুর্নীতি।সরকারি দপ্তরগুলোর জটিল অনুমোদন প্রক্রিয়া, এলসি ও ডলার সংকট, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের হয়রানি, শ্রমিক নিরাপত্তার ঘাটতি, এবং পর্যাপ্ত প্রযুক্তির অভাব। সব মিলিয়ে এ খাতটি ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবেশবান্ধব গ্রিন শিপ রিসাইক্লিং এখন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে, অথচ বাংলাদেশে এখনো সে মানে পুরোপুরি পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এগুলো জরুরী।
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে আবারও জাহাজভাঙা শিল্পে শীর্ষ অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে হলে কিছু পদক্ষেপ জরুরি যথা
সরকারি প্রণোদনা ও কর ছাড় দিতে হবে যাতে ব্যবসায়ীরা পুরনো জাহাজ কিনতে উৎসাহী হয়। গ্রিন শিপ রিসাইক্লিং মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা আস্থা পায়। শ্রমিক নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে, এতে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা কমবে ও দক্ষতা বাড়বে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার বাড়াতে হবে। দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে, যাতে বিনিয়োগকারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্প এখনো সম্ভাবনায় ভরপুর। দেশের ইস্পাত শিল্প, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে এ খাতের অবদান অপরিসীম। কিন্তু সময় এসেছে এই খাতকে আধুনিক ও টেকসইভাবে পুনর্গঠন করার। সঠিক নীতিমালা, প্রণোদনা এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা থাকলে বাংলাদেশ আবারও বিশ্বের শীর্ষ জাহাজভাঙা শিল্পের দেশ হিসেবে জায়গা করে নিতে পারবে। যেমনটা একসময় গর্বের সঙ্গে করেছিল।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server


















