শারদীয়া কনটেস্ট ১৪৩২(দশমীর ফটোগ্রাফি)
নমস্কার বন্ধুরা,
আশা করি সবাই ভালো আছেন।সুস্থ আছেন।আজ আমি আপনাদের সঙ্গে দশমীতে ঘোরাঘুরির কিছু ছবি ভাগ করে নিচ্ছি।আশা করি সকলের ভালো লাগবে।
পুজো মানেই নস্টালজিয়া।পুজো মানেই মনের আকাশ জুড়ে কেবল ভালো লাগা আর ভালো লাগা।আর সেই ভালো লাগা যদি কারো কাছে শেয়ার করার সুযোগ আসে তাহলে সেটা যেন উপরি পাওয়া হয়ে যায়।সেই ধারাবাহিকতায় এই শারদীয়া কনটেস্ট খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রায় দু বছর পর শারদীয়া কনটেস্ট এ অংশগ্রহণ করছি। সব সময় এই কনটেস্টটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। প্রথম বছর যখন এই কনটেস্ট শুরু হয়েছিল তার কিছু পরে আমি জয়েন করেছিলাম স্টিমিটে।তাই অংশগ্রহণ করতে পারিনি, কিন্তু তার পরের বছর আবার এই কনটেস্ট চলে ছিল তাই অংশগ্রহণ করেছিলাম। আবারও এই বছর অংশগ্রহণ করতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। এই কনটেস্টটা আমার ভীষণ প্রিয়।
ঠাকুর দেখতে আমি খুব ভালোবাসি। খুব বললেও মনে হয় কম হয়ে যাবে। কারণ কলকাতার পুজো মহালয়ার থেকেই ঠাকুর দেখা শুরু হয়ে যায়। সেই হিসাব করে চললে প্রায় ১০ দিন ব্যাপি লোক ঠাকুর দেখে,সেই পাবলিকের মধ্যে আমিও পড়ে যাই। আমি মহালয়া থেকে ঠাকুর দেখতে শুরু করি। সব ঠাকুর উদ্বোধন করে দিলেই সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। তাই খুব সহজেই ওই দিন থেকে ঠাকুর দেখা যায়।এই বছর তুলনামূলক একটু কম ঠাকুর দেখেছি।কিন্তু যেটুকু দেখেছি আমার কাছে যথেষ্ট এই বছরের জন্য।তার মধ্যে থেকেই কিছু মণ্ডপ এবং প্রতিমা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি। আশা করি খুবই ভালো লাগবে।আর এত সুন্দর এই কনটেস্টটা দাদা আয়োজন করে প্রতিবছর আমার তো ভীষণ ভালো লাগে।তাই এই বছর আমিও অংশগ্রহণ করে ফেললাম।
দশমীর দিন ঠাকুর দেখে এসে সন্ধ্যেবেলা কয়েকটি পূজা মন্ডপে গিয়েছিলাম যেখানে সিঁদুর খেলা এবং দেবী বরণ করা হচ্ছিল । উমাকে পান পাতা বরণ করে,মিষ্টি দিয়ে কান্না ভেজা হাসিমুখে আবার ভোলানাথের কৈলাসে পাঠানো। আসলে মা যে ঘরের মেয়ে। মণ্ডপে দেবীবরণ এর পাশাপাশি সিঁদুর খেলা হয়েছিল। সিঁদুর খেলে, মিষ্টির মুখে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর কোলাকুলি, শুভেচ্ছা বিনিময়। বাঙালির চিরাচরিত রীতি। হাসিমুখে মাকে বিদায় জানিয়ে আরো একটা বছরের অপেক্ষা। শুধু দুচোখ ভরে মাকে দেখে নেওয়া আর ঢাকের তালে মনে মনে বলা আসছে বছর আবার এসো মা।

আমার দশমীর দিন তোলা ফটোগ্রাফি :
বেলগাছিয়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি
থিম -প্রকৃতির মাঝে মা
★★ দশমীর দিন মনের মধ্যে কিন্তু একটু হলেও বিষাদের সুর বাজে। পুজোর চারটে যে কিভাবে কেটে যায়!কোনো বাঙালি কিন্তু সেটা বুঝে উঠতে পারে না। এত হইহুল্লোড়, খাওয়া দাওয়া।দশমী এলেই কেমন যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করে। অনেক জায়গায় এই দিন বিসর্জন হলেও আবার অনেক জায়গায় কিন্তু বিসর্জন হয় না। বিশেষ করে বড় বড় পূজা মণ্ডপ গুলো ঠাকুর বিসর্জন দেয় না।
তাই ওই দিনকে রাস্তাঘাট ফাঁকা ফাঁকা থাকে। দশমীর দিন আমরা দুপুরবেলা বাঙালি ভুরিভোজ করে ফেরার পথে চার-পাঁচটা ঠাকুর দেখেছিলাম। প্রথমে যেখানে গিয়েছিলাম সে জায়গাটি হল বেলগাছিয়াতে।
বেলগাছিয়া দুর্গোৎসব কমিটি এই বছর ৯৮ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। এই পুজো প্যান্ডেলটি একটা সরু গলির মধ্যে করে। কিন্তু এত সুন্দর ভাবে মণ্ডপ তৈরী করে যা বড় বড় পূজা মন্ডপকেও হার মানিয়ে দেবে★★।
তারিখ:২রাঅক্টোবর ২০২৫,বৃহস্পতিবার
সময়:বিকেল ৬:১৫ মিনিট
লোকেশন:বেলগাছিয়া(উত্তর কলকাতা)
* দশমীর ফটোগ্রাফি *

বেলগাছিয়া সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এই বছরের থিম "প্রকৃতির মাঝে মা"।
মণ্ডপে প্রবেশ করলেই দেখা যাচ্ছে খড় এবং ধানের শীষ মিলেমিশে একাকার। যেখানেই তাকানো যায় সেখানেই মনে হচ্ছে ময়ূর ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই গোটা পূজা মন্ডপ ধান, যব, খড়, শস্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক জিনিসপত্র দিয়ে তৈরী। পুজোর মণ্ডপে কোনায় কোনায় যা যা জিনিস আছে ধান,পাট,শস্য এগুলো প্রকৃতি থেকেই এসেছে আর মা-ই এগুলো দিয়েছে আর সেই জিনিস দিয়েই প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে। এক কথায় প্রকৃতির জিনিস দিয়েই মাকে সাজানো হয়েছে।যেখানে চারিদিকে নানা রকম কেমিক্যাল মেটালস রয়েছে সেখানে জৈব উপাদান দিয়ে নন টক্সিক বা ইকো ফ্রেন্ডলি সেই ভাবেই তৈরি করা হয়েছে। মা চান পৃথিবীতে রক্ষা করতে। তাই সেই সকল জিনিস দিয়েই পুরো মণ্ডপটা তৈরি করা হয়েছে।এখানে সবথেকে বড় আকর্ষণ নবদুর্গা। একদম সাবেকিআনায় প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে।
দমদম পার্ক তরুণ সংঘ
থিম -ব্যোমকেশ বক্সী
★★বেলগাছিয়া ঠাকুর দেখে চলে গিয়েছিলাম দমদম পার্কে। দমদম পার্ক তরুণ সংঘের এবছরের পুজোর থিম সত্যান্বেষী।
এই বছরের এই পূজা মণ্ডপ ৪০তম বছরে পদার্পণ করেছে। কীর্তিমান সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে সমগ্র পুজো মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। এই কাজের জন্য ব্যোমকেশ এর মোট ১৩টি গল্পকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পূজা মন্ডপ এমনভাবে সাজানো হয়েছে যা দেখলে মনে হবে দর্শনার্থীরা আর বাস্তব জগতে নেই, পৌঁছে গিয়েছেন কমিক্স এর দুনিয়ায়। এই কমিক্স প্ল্যাটারের নায়ক বাঙালি হৃদয়ের অবিসংবাদিত হিরো - ব্যোমকেশ বক্সী।
যখনই প্যান্ডেলটায় ঢুকেছিলাম মনে হচ্ছিল সত্যি সত্যি কমিকসের এর দুনিয়ায় হারিয়ে গিয়েছি। মনে হচ্ছিল না যেটা কোনো পূজা মণ্ডপ সবটাই হাতে আঁকা।এই পুজো মণ্ডপ না দেখলে অনেক কিছু মনে হয় মিস করা হয়ে যেত। এই পূজা মণ্ডপের প্রায় ৮০ শতাংশই লোহা ও কাঠ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে★★।
তারিখ: ২রাঅক্টোবর ২০২৫,বৃহস্পতিবার
সময়: ৭:০০মিনিট
লোকেশন:দমদম পার্ক(উত্তর কলকাতা)
* দশমীর ফটোগ্রাফি *
দুর্গা সুন্দরীর কন্ঠহার চুরি হওয়ার এক কাল্পনিক গল্পকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে পুরো মন্ডপ আর এই রহস্যের জট ছাড়াতে দর্শনার্থীরা যেন ব্যোমকেশের সঙ্গী হচ্ছেন। এমনটাই ভাবনা শিল্পীর। পুরো মণ্ডপসজ্জায় পপ আর্ট এবং কমিকসের এর আদলে ব্যোমকেশের বিভিন্ন অভিযান তুলে ধরা হয়েছে। ব্যোমকেশের বিখ্যাত গল্প যেমন অর্থমনর্থম, মাকড়সার রস, আদিম রিপু ইত্যাদি বিষয়গুলোকে কমিক্স এর মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে। দর্শনার্থীরা মন্ডপে ঘুরে ঘুরে যেন ব্যোমকেশের এই রহস্যের গল্প পড়তে পারে। আর এই থিম শুধুমাত্র শিল্প প্রেমীদেরই নয়, সাহিত্য প্রেমী বাঙ্গালীদের ও মন জয় করবে। দমদম পার্কের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ঐতিহ্য আর আধুনিকতার এক নতুন মেলবন্ধন ঘটিয়েছে।

দমদম পার্কের এত সুন্দর পূজা মন্ডপ দেখে আমরা চলে গিয়েছিলাম বাগুইআটিতে। সেখানে খুব সুন্দর সুন্দর দুটো পুজো হয়।
বাগুইআটি রেলপুকুর ইউনাইটেড ক্লাব
থিম -শব্দ
★★প্রথমে আমরা রেলপুকুর গিয়েছিলাম। এখানে পূজা মন্ডপটি শব্দ এর উপর নির্ভর করে পুরো মন্ডপটা তৈরি হয়েছে। "পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইলো, মদনমোহন তর্কালঙ্কার এর সেই চিরচেনা পংতি আমাদের ভোরের আদি সংগীতের কথা মনে করিয়ে দেয়। এক সময় পাখিদের কলতানেই ভাঙতো রাতের নিস্তব্ধতা।তারা আমাদের আগে জেগে উঠে জানিয়ে দিত নতুন সূর্যের আগমন। আজও পাখি ডাকে তবে সেই ডাক আর আগের মত সমবেত নয়।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির সেই অনন্ত শব্দধারা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে।কিছু কিছু সুর নিঃশেষে মুছে গেছে আর কিছু সুর হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গভীরে।এর হ্রাসমান শব্দ, এই নিস্তব্ধতার মধ্যেই আমাদের স্মৃতিতে বেজে ওঠে অদৃশ্য ব্যথা★★।
তারিখ:২রাঅক্টোবর ২০২৫,বৃহস্পতিবার
সময়: ৮:১৭মিনিট
লোকেশন:বাগুইআটি (উত্তর কলকাতা)
* দশমীর ফটোগ্রাফি *

পুরো পুজো মণ্ডপে একটা দারুন চিন্তাভাবনা নিয়ে করা হয়েছে এককালে বাজারে বা মাঠে সহজেই ধরা যেত কিছু পাখি এখন তারা কেবল ইতিহাসের শুকনো নথি কিংবা প্রাচীন চামড়ার সংগ্রহের টিকে আছে।যেমন গোলাপী শির হাঁস, সারস পাখি, মণিপুর বুশ কোয়েল, লালমাথা শকুন, দাড়িওয়ালা লামারগাইর , তিস্তার সাদা-মাথা বাবলার সবাই মিলেই বাংলার হারানো আকাশের প্রতীক। তাদের ডাক আজ শোনা যায় না কিন্তু স্মৃতির আকাশে তারা এখনো ভেসে থাকে যেন বিবর্তনের দীর্ঘ যাত্রার এক নীরব সাক্ষী।
.jpeg)
শাস্ত্রীবাগান স্পোর্টিং ক্লাব
থিম -অনুভূতি
★★ শাস্ত্রী বাগান স্পোর্টিং ক্লাব এই বছর ৪২ তম বর্ষ পদার্পণ করেছে। অনুভূতি মানে মনের ভাষা যা শব্দের সীমা ছাড়িয়ে অনেক গভীর, অনেক শক্তিশালী। কখনো কখনো অনুভূতি হয়ে ওঠে জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক।
প্রকৃতির রং, প্রকৃতির উপাদান নিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের প্যান্ডেল।যেন মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির বন্ধন নতুন করে অনুভব করা যায়। এখানে মিশে আছে প্রেম,আনন্দ,দুঃখ, ভক্তি আর তার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা আর প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতি গভীর টান এই সৃজনশীলতার কারিগর।এই সৃষ্টি যেন অনন্য স্বপ্নলোক ★★।
তারিখ:২রাঅক্টোবর ২০২৫,বৃহস্পতিবার
সময়: ৮:৪৫মিনিট
লোকেশন: জোড়ামন্দির(উত্তর কলকাতা)
* দশমীর ফটোগ্রাফি *
.jpeg)
এমনকি এখানে প্রতিমা তাকিয়ে থাকার মত। এত সুন্দর যে অনেকক্ষণ দেখলেও যেন মনে হবে দেখা ফুরাবে না।

শারদীয়া কনটেস্ট ১৪৩২ এ অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুর্গাপূজার দশমীর শেষ সিরিজটি এখানেই শেষ করলাম । সপ্তমী থেকে দশমী এই চারটে দিন পূজোর যে কনটেস্টের আয়োজন দাদা করেছিল সেখানে অংশগ্রহণ করতে পেরে আজ আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।মা চলে যাচ্ছেন, আমাদেরকে এই কয়েকটা দিন ভীষণ আনন্দে রেখেছিলেন।তাই আজ সবারই মনটা বিষাদময়।কিন্তু আগামী বছর মা আবার আসছেন ,এই মাহেন্দ্রক্ষণ এর জন্য অপেক্ষা শুরু হতে চলেছে কিছুক্ষণ পর।সবাই মায়ের আশীর্বাদ এ সুস্থ থাকুন, এই কামনা করি।
VOTE @bangla.witness as witness

OR
| 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |


| ডিভাইস | Motorola edge50 fusion |
|---|---|
| লোকেশন | কোলকাতা |
| ক্রেডিট | @swagata21 |


.jpeg)



.jpeg)
.jpeg)

.jpeg)

.jpeg)
.jpeg)

.jpeg)
.jpeg)
.jpeg)

.jpeg)
.jpeg)
.jpeg)

.jpeg)
.jpeg)





.jpeg)
.jpeg)
.jpeg)

.jpeg)
.jpeg)

.jpeg)
.jpeg)

.jpeg)

.jpeg)

.jpeg)
.jpeg)

ভাই @swagata21, নমস্কার!
What a vibrant and festive photo tour of Kolkata's दशमी celebrations! আপনার আন্তরিকতা এবং প্রাণবন্ত বর্ণনা আমাকে মুগ্ধ করেছে। The images truly capture the essence of the festival, especially the সিঁদুর খেলা and দেবী বরণ. I am amazed by the unique themes of the pandals, especially the "শব্দ" (sound) theme. It's wonderful how the artists are conveying important messages through their art.
Thank you for sharing your experience and the beautiful photography with us. It's a delightful way to experience দশমী from afar. Keep up the great work, and আমি আপনার পরবর্তী পোস্টের জন্য অপেক্ষা করব! আপনের এই পোস্টে একটি ভোট দিলাম।
Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 8.574157683171485 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.