শিক্ষা ব্যবস্থার দুরবস্থা: কেন ৪২% শিক্ষার্থী ফেল করলো?
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
গতকাল ১৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে দেশে উচ্চমাধ্যমিক তথা এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবার গড় পাশের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ হয়েছে অর্থাৎ প্রায় ৪১.১৭ % শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এ বছরের ফল একটি দুঃসংবাদ বয়ে এনেছে। শিক্ষাগত মান, পড়াশোনার ধরন ও জ্ঞানের চাহিদা–সবকিছুই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
ফলফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- ঢাকা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২,৯১৯৬০ জন পাশ করেছে-১৮৮,৭৮৩ জন পাশের হার- ৬৪.৬২% জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৬,০৬৩ জন। রাজশাহী বোর্ডে পরিক্ষার্থী সংখ্যা ১,৩০,৯০২ জন পাশ করেছে ৭৭,৭৪৭ জন, পাশের হার ৫৯.৪০% জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০,১৩৭ জন। মাদরাসা বোর্ডে পরিক্ষার্থী সংখ্যা ৮২,৮০৯ জন, পাশ করেছে ৬২,৬০৯ জন, পাশের হার ৭৫.৬১% জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪,২৬৮ জন। কুমিল্লা বোর্ডে পরিক্ষার্থী ৯৯,৬৪২ জন, পাশ করেছে ৪৮,৬৫৭ জন, পাশের হার ৪৮.৮৬% জিপিএ-৫ পেয়েছে ২,৭০৭ জন। যশোর বোর্ডে পরিক্ষার্থী ১,১২,৫৭৮ জন, পাশ করেছে ৫৬,৫১১ জন, ৫০.২০% জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫,৯৯৫ জন।
চট্টগ্রাম বোর্ডে পরিক্ষার্থী ১,০১৮৮৮৮ জন, পাশ করেছে ৫৩,৫৬০ জন, পাশের হার ৫২.৫৭% জিপিএ-৫ পেয়েছে, এবং ৬,০৯৭ জন। বরিশাল বোর্ডে পরিক্ষার্থী ৫৯,২৩৯ পাশ করেছে ৩৭,০৬৭ পাশের হার ৬২.০৮% জিপিএ-৫ পেয়েছে ১,৬৭৪ জন। সিলেট বোর্ডে পরিক্ষার্থী ৬৯,১৭২ জন, পাশ করেছে ৩৫,৮৭১ পাশের হার ৫১.৯৩% জিপিএ-৫ পেয়েছে ১,৬০২ জন। দিনাজপুর ১,০৬,৯২১ জন, পাশ করেছে ৬০,৮৮২ জন, পাশের হার ৫৭.৫৪% জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬,২৬০ জন। ময়মনসিংহ বোর্ডে ৭৬,৮৫৪ জন, পাশ করেছে ৩৯,৪৯৯ জন পাশের হার ৫১.৫৪% জিপিএ-৫ ২,৭০৬ জন। কারিগরি বোর্ডে ১,১০,১৭২ জন, পাশ করেছে ৬৬,১৮৫ জন, পাশের হার ৬০.১৬% জিপিএ-৫ পেয়েছে ১,৬১০ জন।
এ ছাড়া, সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঢাকা বোর্ড উল্লেখযোগ্য- ঢাকা বোর্ড থেকেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ২৬,০৬৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তবে, আরো বোর্ড রয়েছে যেগুলোর পাশের হার তুলনামূলকভাবে খুব কম যেমন কুমিল্লা ৪৮.৮৬ % যা শিক্ষা বৈষম্য ও মানহ্রাসের দিক নির্দেশ করে।
কেন এত বেশি শিক্ষার্থী ফেল করলো-
ফলাফল স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে যে শুধু পরীক্ষা দেন, পরীক্ষায় ভালো হয়েছে, এ ধরনের ধারণা নষ্ট করছে। নিচে কিছু মূল কারণ ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হলো:
অধ্যায় পারা ও পাঠ কার্যকরভাবে না শেখা,অনেক শিক্ষার্থী পাঠ্যবই শেষ করে না, শুধু রিভিউ বা সিলেবাস ভিত্তিক প্রশ্ন মুখস্থ করে। গহীন অর্থবোঝা, বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নে কম পারদর্শিতা এসবই ফলাফলকে প্রভাবিত করেছে।
ক্লাসরুম ও শিক্ষক-গুণমানের অভাব অনেকে রিপোর্ট করেছে, শ্রেণি কার্যকরভাবে হয় না, দায়িত্বহীন শিক্ষক, সময়মতো পড়ার উদ্যোগ নেই, পর্যাপ্ত নির্দেশনা নেই। এমন পরিবেশে শিক্ষার্থী ভালো শিখতে পারে না।
গার্জিয়ান বা অভিভাবকের অবহেলা শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার পরিবেশ, মনোবল বা উৎসাহ না দেওয়া, মোবাইল-নিয়ন্ত্রণের অভাব, এসব কারণে পড়ার প্রতি গুরুত্ব কমে যায়।
অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় অনেক ছাত্র পড়ার সময় কমিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া, গেম বা বিনোদনে অতিরিক্ত সময় দেয়। মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়, পড়াশোনা পেছনে পড়ে।
মানসম্মত শিক্ষাসুবিধার অভাব গ্রাম, প্রান্তিক অঞ্চল বা দরিদ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির অবকাঠামো ও শিক্ষক সংখ্যা সীমিত ভালো শিক্ষা উপকরণ, লাইব্রেরি, প্রযুক্তি ব্যবহার অনেকে পান না।
পরীক্ষার ধরন ও প্রশ্ন প্রস্তুতি প্রশ্নের ধরন গতানুগতিক থেকে বিশ্লেষণমূলক হয়েছে, যা শিক্ষার্থীর চিন্তা ও বিশ্লেষণ দক্ষতা যাচাই করে। অনেকেই এ ধরণের প্রশ্নের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেনি।
এই বিপজ্জনক ফলাফল শুধুই শিক্ষার্থীর সমস্যা নয় এটি একটি সামাজিক ও জাতির সংকেত। নিচে কিছু সমাধান ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হলো:
গবেষণাভিত্তিক পাঠদানে সরে আস। শুধু পাঠ্যবই পড়ে নয়, শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচনা, প্রশ্ন–উত্তর, প্রকল্প-ভিত্তিক কাজ করতে হবে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও প্রেরণা বৃদ্ধি। নিয়মিত প্রশিক্ষণ, আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি, মূল্যায়ন দক্ষতা উন্নয়ন—এসব থাকা জরুরি।
গার্জিয়ান ও অভিভাবক সচেতনতা। শিক্ষার্থীর পড়ার পরিবেশ, সময়নিয়ন্ত্রন ও মনোবল বৃদ্ধির জন্য গার্জিয়ানদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা উচিত।
ডিজিটাল মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার। সময়নিয়ন্ত্রন, পঠন কেন্দ্রিক অ্যাপ ও অনলাইন ক্লাসের সুষ্ঠু ব্যবহার বিনোদন ও শিখন মিলিয়ে।
মান উন্নয়ন ও শিক্ষাসুবিধা সম্প্রসারণ। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সুবিধা, পাঠ সহায়ক উপকরণ থাকা উচিত।
পরীক্ষার মান ও প্রস্তুতির ভিত্তি পর্যালোচনা প্রশ্নপত্র ও মূল্যায়ন পদ্ধতি আরও বিশ্লেষণাত্মক ও যৌক্তিক করে গড়া উচিত।
৪২ % ফেল এটি কেবল একটি সংখ্যা নয়, এটি একটি সঙ্কেত যে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোথাও বড় ফাটল রয়েছে। আমরা যদি এই সংকেতকে নজর না দিই, তাহলে আগামী প্রজন্ম হবে প্রস্তুতিহীন, অযোগ্য ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গার্জিয়ান প্রত্যেকেই এই পরিবর্তনের অংশ হতে হবে। শিক্ষকরা শুধু পাঠদান করবেন না, বোঝার উদ্বুদ্ধ করবেন। গার্জিয়ানরা পড়াশোনার গুরুত্ব বোঝাবেন, পরিবেশ গড়বেন।শিক্ষার্থী হবে সচেতন, সময়োচিত ও বাধ্যবদ্ধ।
শুধু ভালো রেজাল্ট ভরসার বিষয় নয় আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত জ্ঞানভিত্তিক সক্ষমতা। সেই লক্ষ্য যদি আমরা সকলেই মিলে অগ্রসর হই, তাহলে ৫৮.৮৩ % পাশের হার একটি ধাক্কা হতেই পারে কিন্তু ভবিষ্যতে তা থাকবে নয়, পরিবর্তে হবে ৮০–৯০ % পাশের হার।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server