বসন্ত কাল
"ফুল ফুটুক আর না ফুটুক,
আজ আমার বসন্ত"
এটি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের বসন্ত ঋতু নিয়ে লেখা সেই বিখ্যাত বানি ।
হ্যাঁ পাঠক ও ব্লগার বন্ধুগন, আজকে লিখতে বসলাম ঋতুরাজ "বসন্ত" সম্পর্কে যৎসামান্য উপস্থাপনের চেস্টায় । লেখার শুরুতে সকলের কুশলাদি জানার, আমার অফুরন্ত আগ্রহ।
আশা করছি সবাই কুশলে আছেন। আর ব্লগার বন্ধুগন সুস্থ শরীরে ঠান্ডা মাথায় ব্লগ লেখার কাজে ব্যাস্ত থাকবেন, আর এটাই স্বাভাবিক।
আমের মুকুল
সন্মানিত পাঠক বন্ধুগন
কবির ভাষায় "ফাগুনের আগুন লাগে তোমার হৃদয়ে,
বলি বলি শখা সেজেছেো কেমন, নতুনের আগমনে"।
বসন্ত কালের আগমনে প্রেমিক হৃদয় ,তার মনের মানুষকে প্রেয়সীর সাজে কল্পনা করে থাকে । বৎসরান্তে নতুন রুপে মিলনের আকাংখাকে তীব্র থেকে তীব্রতর করে তোলে।
কবি নজরুলের ভাষায় বসন্ত ঋতু "এলো বনানীতে বসন্ত ,বনে বনে মনে মনে রং ছড়ায় রে, চঞ্চল দুরন্ত"।
ষড় ঋতুর আমার এই মাতৃভুমি বাংলাদেশে ঋতু গননায় বসন্তকাল ষষ্ঠতম । ফাল্গুন ও চৈত্র, এই দুই মাষ মিলে বসন্তকাল। শীত কাল শেষ, বসন্ত কালের আগমন ঘটে । বাংলাদেশর আবহাওয়ায় বসন্তের আগমন অত্যন্ত সুস্পষ্ট
*ভৌগলিক বিশ্লেষণ
ভৌগলিক অবস্থানের বিশ্লেষণ করে জানা
যায়,গ্রীষ্মমন্ডলিয় এলাকা সমুহে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারনে, সুর্য পৃথিবীর দিকে হেলে আসে। তখন পৃথিবীর অনেক প্রান্তে বসন্ত ঋতু বিরাজ করে । এসময় আবহাওয়ার ভারসাম্য বজায় থাকে। না গরম, না ঠান্ডা ভাব বিরাজ করে।
*উন্নত প্রাকৃতিক পরিবেশ
রবিন্দ্র নাথের ভাষায় "ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল, ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্র মুকুল /চঞ্চল মৌমাছি গুঞ্জনি গায়, বেনু বনে মর্মরে দক্ষিণ বায় "
পরিবেশে স্থিতিশীল আবহাওয়ার কারনে ,মানুষসহ অনেক পশুপাখি মিলনে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে ও নতুন নতুন বাচ্চার জন্ম দেয় । এ ঋতুতে বেশির ভাগ বড় বড় বৃক্ষে ফুল ফুটে। পাতা ঝরা গাছ গুলোতে নতুন নতুন হরেক রঙের পাতা গজায়। নতুন নতুন গাছ জন্ম নেয় । এ ঋতুতে কিছু কিছু বৃষ্টি হওয়ার কারনে গাছপালা ফুল ও ফল পরবর্তী বেড়ে উঠায় গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখে।
*সাজগোজ
"ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল,লাগলো যে দোল/স্থলে জলে বন তলে,লাগল যে দোল/দ্বার খোল দ্বার খোল"
পরিবেশের রঙের সাথে রঙ মিলিয়ে ,লাল, হলুদ ও সাদা রঙের পোশাক পরে একাকার হয়ে উঠে মানব মানবী গন । যুবা, বৃদ্ধ ও শিশু ,জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই বসন্ত বরনে ,বাসন্তী রঙের পোশাকে নিজেকে মুড়িয়ে তোলে।
বসন্তের প্রথম সূর্য
*উল্লেখযোগ্য গাছের ফুল সমুহ
"রাঙা হাসি রাশি রাশি, অশোকে পলাশে"
বসন্তকালের উল্লেখযোগ্য ফুল বলতে আমরা বুঝি , কারান্ড, দেবদারু, নাগেশ্বর ,পলাশ, শিমুল ,বকফুল, পাখি ফুল ,পালম ,জু ই ,মনি মলা মহুয়া, ক্যামেলিয়া, স্বর্নশিমুল, শাল, রক্ত পলাশ ,মনি মলা ,মুচকুন্দ, জংলি বাদাম, ঘোড়া নিম, গ্লিবিসিডিয়া ,গাব, গামারি, কুর্দি ,রক্ত কাঞ্চন ,ইউক্লিপ্টাস, হিম ঝরি ,কৃষ্ণচুড়া, রাঁধাচূড়া আকর কাটা, অশোক ইত্যাদি
এছাড়াও আরও নাম জানা, অজানা , অচেনা ,অদেখা কত যে ফুল ফোটে তা একমাত্র শ্রষ্টাই জানেন ।
*আগমনি বার্তা
"কুহু তানে শোনা যায় কোকিলের কুহু তান /বসন্ত এসে গেছে ,বসন্ত এসে গেছে"
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনি বার্তা আগেই জানান দেয়, কোকিল তার সুমধুর কন্ঠে কুহু কুহু ডাক দিয়া । গাছে গাছে শুনা যায় চিরচেনা পাখি গুলোর মধুর কলরব । হয়ে উঠে আরও কর্মচঞ্চল , সে যেন এক অন্য অনুভুতি ।
*আগমনের প্রাক্কালে
"রাঙা হাসি রাশি রাশি, অশোকে পলাশে"
আম গাছের কুঁড়ি কুঁড়ি মুকুল, কাঁঠাল গাছের সবুজ মুচি, সজিনা গাছের সাদায় সবুজে মেশানো ফুল, শিমুল গাছের গোল গোল অর্ধ ফোটানো সবুজ কুড়ি, পলাশ ফুলের ঠোঁট বাকানো কুঁড়ি, কৃষ্ণচুলার ডালে ডালে, থোকায় থোকায় সবুজ কুড়ি ,সাথে অর্ধ ফুটিত লাল ফুলাংশ সবই যেন ঋতুরাজ বসন্তের আগমনি ঢাক ঢোল পিটাতে থাকে।
"বসন্ত বাতাশে সই গো বসন্ত বাতাশে ,
তোমার বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে"
বসন্ত আসছে ,তাই অধির আগ্রহে সময় গুনতে থাকে সকল বয়সের প্রেমিক প্রেমিকা গন।
*পার্বন প্রথা
- রবি ঠাকুরের ভাষায় " আজি বসন্ত দ্বারে, তব অবগুন্ঠিত কুন্ঠিত জীবনে, করোনা বিলম্বিত তারে"
বারো মাষে তের পার্বনের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে "বসন্ত বরন" নামে অনুষ্ঠান এদেশের পার্বনে সংযোজন হয়ে ,উৎসবের গতিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছে।
বাংলাদেশের রাজধানীতে বসন্ত বরনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান পালন করা হয় । গ্রাম গঞ্জে এ অনুষ্ঠান পালন করতে তেমন দেখা যায়না ।
*দক্ষিনা বাতাশের উৎপত্তি
"বেনু বনে মর্মরে দখিন বাতাসে /প্রজাপতি দোলে ঘাসে ঘাসে"
বসন্তদিনে কিছু কিছু গাছ তার শুকনা পাতা ঝরার আশায় দক্ষিনা বাতাশের অপেক্ষায় প্রহর গননা করে। ঝরে পড়া পাতা গুলো বাতাশের ঝাপটায় মর্মর মর্মর শব্দে স্থান পরিবর্তন করে। চলার পথে পাতাগুড়ো , খড়কুটো, কাগজাদী ও হালকা বর্জ্য সমুহ, ছোট-বড় কুন্ডলী পাকাইয়া ,মোচাকৃতি আকারে আকাশের দিকে উড়ে উঠে । এ যেন বসন্তের এক অতিরুপ দৃশ্য । তবে বসন্তের এই অতিরুপ দৃশ্যটি ইট পাথরের শহরে বসবাসকারি লোকদের কাছে শুনা গল্প মাত্র।
*উপসংহার
বসন্ত বরন উৎসব সহরের লোকজন গান গেয়ে, কবিতা পাঠ কর ,দামি পোশাক পরে ও দামি খাবারের আয়োজন করে, পালন করে থাকে।
গ্রামের লোকজন প্রকৃত বসন্তের সাথে মিলে মিশে, তার রুপ দর্শন করে থাকে ।
সব ভালোর, মন্দও থাকবে এটাই নিয়ম ।
বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব ,বসন্ত কালেই দেখা যায়। তাই হয়ত এমন নাম হয়েছে।
তার পরেও কবির ভাষায় বসন্তের জারি "আহা আজি এ বসন্তে ,এত ফুল ফোটে / এত বাঁশি বাজে ,এত পাখি গায়"
Congratulations @mrnazrul! You have completed the following achievement on the Steem blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your Steem Board and compare to others on the Steem Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Do not miss the last post from @steemitboard:
Vote for @Steemitboard as a witness to get one more award and increased upvotes!
Thanks
You're welcome @mrnazrul
Feel free to vote our witness to support us. You will get one more badge and more powerful votes from us on your posts.
Assure your sympathy, many receipts for me. Thank you
Thank you @mrnazrul.
You can vote for our witness.
You will get one more badge and more powerful upvotes from us on your posts with our next notifications.