ভিড়ের মাঝে ও একলা!(Alone in the crowd!)
![]() |
---|
ভিড়ের মাঝে একলা দাড়িয়ে আমি!;
পকেটের ওজন আজ মূল্যায়িত করে
কে কতখানি দামী, নাকি কম দামী!
মনে রাখে না, অতীত, সময়,
মানসিকভাবে পাশে থাকা;
মনে রাখে না ঘাম ঝরা পরিশ্রম
মনে থাকে না নিঃস্বার্থ ভালবাসা;
মন খারাপের সময় দেওয়া
ভরসা হোক বা আশা!
কতখানি হয়েছে খরচ?
সেটা মনে রাখে;
সময়, শ্রম যা কিছু বাকি
সবটাই ভুলে থাকে!
সাথে থাকার অঙ্গীকার আজ
পকেটের ওজনে সীমাবদ্ধ;
প্রয়োজন আজ সব সম্পর্ক
প্রিয়জনে কেউ নেই আবদ্ধ!
দর-দাম করে সম্পর্ক চলে;
পোশালে দরে, তবে বাকি কথা বলে!
মিশে যেতে পারিনি এদের ভিড়ে;
তাই হয়তো লক্ষ মানুষের মাঝেও
শূন্যতা রয়েছে আজও আমায় ঘিরে।
![]() |
---|
রং বদলানোর সাথে গিরগিটির তুলনা করা হয়!
তবে যদি আমাকে প্রশ্নটি করা হয়, আমি মানুষের রঙ গিরগিটির চাইতেও তাড়াতাড়ি বদলাতে দেখেছি।
লেখাটা যখন লিখছি তখন বেশ কয়েক পরিচিত মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠছে!
এরমধ্যে যেমন রয়েছে ব্যাক্তিগত পরিসরের মানুষজন তেমনি রয়েছে কর্মক্ষেত্রের মানুষজন।
তাহলে, বিষয়টি কি দাঁড়ালো?
সমাজের অধিকাংশ মানুষ এখন পকেটের ওজনের ভক্ত!
কিন্তু দুঃসময় কে বা কারা তাদের পাশে ছিল নিজেদের জীবনের সবচাইতে মূল্যবান সময় ব্যয় করে, সেটা মনে রাখার প্রয়োজন আজকাল কেউ বিশেষ করে না।
একটা বাস্তব ঘটনার উল্লেখ করলে বোধহয়, আমার কথাগুলোর যথার্থতা আপনারা খানিক অনুধাবন করতে পারবেন।
![]() |
---|
![]() |
---|
বেশ কয়েক বছর আগের কথা, এক্ নামিদামি ব্যবসায়ীর বিশাল দোকান আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেলে, ব্যবসায়ীর মাথায় বজ্রপাত হল।
খুবই স্বাভাবিক, শারীরিক ভাবে এই দুর্ঘটনা যেমন তার উপর প্রভাব ফেললো, তেমনি ঘাড়ে চেপে বসলো মানসিক অবসাদ।
এত বছরের শ্রমের ফসল, যদিও ইন্স্যুরেন্স করা ছিল, কিন্তু সবটা পুনরুজ্জীবিত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা তো আর মুখের কথা নয়!
এই সময় ব্যবসায়ীর মনে পড়ল তার আত্মীয়র কথা, কারণ শারীরিক ভাবে তথা মানসিক ভাবে পাশে থাকার জন্য আত্মীয় সর্বদা শ্রেষ্ঠ।
খবর পেতেই ছুটে আসল দুই নিকট আত্মীয়। সেই ব্যবসায়ীর বাড়িতে থেকে নিজেদের সময় এবং শ্রম সবটাই দিয়ে পুনরায় পুড়ে যাওয়া দোকান দার করালো।
এর মাঝে একজনের চাকরিতে ডাক আসলে সে প্রত্যাখ্যান করে দেয়, কারণ নিজের লোকের বিপদে আগে পাশে থাকার শিক্ষায় সে নিজেকে শিক্ষিত করে তুলেছিল।
এরকম বিপদে পাশে থাকা অত্যাবশ্যকীয়! মানে চাকরির চাইতেও।
যাইহোক, এরপর সময় অতিবাহিত হতে লাগলো, পুনরায় অন্য একটি বিষয়ে ব্যবসায়ীর আত্মকেন্দ্রিকতা দেখে সেই উপকারী আত্মীয় প্রতিবাদ করলে, তাকে শুধু মৌখিক অপমান নয়, পাশাপশি সেই দোকান আগুনে পুড়ে যাবার সময় ব্যবসায়ীর বাড়িতে থেকে খাওয়া দাওয়ার পিছনে যে খরচ হয়েছিল সেই খোঁটা দিতেও বাঁধলো না ব্যবসায়ীর!
এরপর সেই সময় কিছু অর্থ ব্যবসায়ী আত্মীয়কে দিয়েছিল, সেটা মনে করাতে ভুললো না।
এখন আমার প্রশ্ন, কত অর্থের বিনিময়ে মানুষের জীবনের সময়কে কেউ কিনতে পারে?
কত অর্থের বিনিময়ে সেই উপকারীর ব্যয় করা সময় ফিরিয়ে দিতে পারে?
এরপর আমার প্রশ্ন, শারীরিক ভাবে এবং মানসিক ভাবে যারা দুঃসময় পাশে ছিল, নিজের ভবিষ্যত চাকরি পরিত্যাগ করে, সেই ত্যাগের মূল্য কত?
মানে বাজার দর? অনেক অর্থের ধনী মানুষ কিছু অর্থ ব্যয় করে নিজেদের সৃষ্টিকর্তা ভাবতে শুরু করেন, আর যারা তাদের আসে পাশে থাকেন তারা চাকর আখ্যা পায়!
![]() |
---|
![]() |
---|
কি অদ্ভুত এই বুদ্ধিজীবী আখ্যা পাওয়া মানুষগুলো তাই না?
অনেকেই হয়তো লেখাটা পড়ে নিজেকে ভিন্ন ভাবার প্রয়াস করবেন, তবে সেটা ভাবার আগে একবার পিছন ফিরে দেখার চেষ্টা করবেন, আপনি কখনও কারোর পাশে কখনও নিঃস্বার্থ ভাবে ছিলেন কি?
যদি সদুত্তর পান, তাহলে আপনি ভিন্ন, নইলে কিন্তু আপনিও ওই ভিড়েই সামিল।
কেউ যদি আপনার প্রয়োজনে ক্ষণিকের জন্য পাশে থেকে থাকে, তাহলে দয়া করে তার সেই পাশে থাকাকে অর্থ দিয়ে মূল্যায়িত করবেন না!
এটা কোনো সভ্যতার নিদর্শন নয়। নিজের স্বার্থে কারোর পাশে থাকাকে আর যাই হোক উপকার আখ্যা আমি দিতে পারলাম না।
কারণ, অর্থ পরিশোধ যোগ্য, কিন্তু সময়, শারীরিক শ্রম এবং মানসিক ভাবে এক্ মুহূর্তের জন্য যদি কেউ আপনার পাশে থেকে থাকে, তাহলে তাকে অর্থের মানদণ্ড দিয়ে ওজন করবেন না, কারণ একটাই, উপরে বসে একজন সব দেখছেন।

