"শশুর মশাইয়ের কোলোনোস্কপির দ্বিতীয় দিনের অভিজ্ঞতা"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
আজকের পোস্ট গতকালের পর থেকে শুরু করছি। শুভ সব ওষুধপত্র কিনে এনে শ্বশুর মশাইয়ের কাছে ঢুকতেই, আমাকে সাথে সাথে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে হলো। কারণ আগের পোস্টে আপনাদের জানিয়েছিলাম ঐ ওয়ার্ডে নিয়মের বেশ কড়াকড়ি রয়েছে।
আমি নিচে এসে বসে অপেক্ষা করলাম। সেদিন বাইরে এতো রোদ্দুর ছিলো যে, বিকেলের দিকে বেরিয়ে মামা শশুর বাড়িতে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তাই আমরা অপেক্ষা করছিলাম। রোদ্দুরের এতো তীব্রতা ছিল যে দুপুরবেলায় সেদিন আমরা দুজন বাইরে খেতেও যাইনি।
ব্যাগের মধ্যে পাউরুটি ও কলা ছিলো সেটা খেয়ে দুপুরবেলা কাটিয়েছিলাম। এর মাঝখানে আমি ফাঁক মতো কমিউনিটির কাজগুলো করেছিলাম। কিছুক্ষণ বাদে ওয়ার্ড থেকে আবার ফোন করে ডাকা হলো, আরও কিছু ওষুধের লিস্ট দিলো। একটা পেপারে শুভর সই করানোর বিষয় ছিলো, তাই শুভ ভিতরে গেলো আর আমি ওষুধের দোকানে লাইন দিলাম।
সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে আমরা সন্ধ্যার পরপরই হসপিটাল থেকে রওনা দিলাম মামাশশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। একদিনের জন্য যাওয়া হয়েছিলো বলে শুভ আর বাইক নেয়নি। তাই অগত্যা অটোই ভরসা। তাই আমরা অটোতেই রওনা করলাম।
মোটামুটি দুটো অটো পাল্টে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট সময় লাগে মামাশ্বশুরবাড়িতে যেতে। সেখানে গিয়ে সকলের সাথে দেখা করে, আগে আমি বুমিং এর কাজ করলাম। ততক্ষণে শুভ স্নান করে নিয়েছিলো। কাজ সম্পন্ন করে আমিও স্নান করে নিলাম।
ঐদিন খুবই গরম পড়েছিলো, তাই খাওয়া-দাওয়া করতে খুব বেশি দেরি না করে তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করে শুতে গিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু কথায় কথায় অনেকটাই রাগ হয়ে গিয়েছিলো। তার উপরে ছিল গরমের তীব্রতা। উল্টোদিকে সকালে তাড়াতাড়ি হসপিটালে আসতে হবে, সেই টেনশনও মাথায় ছিলো।
সবকিছু মিলিয়ে ঘুম ভালো হয়নি। পরদিন বেশ সকালেই উঠে পড়েছিলাম। মোটামুটি সাড়ে আটটার মধ্যে তৈরি হয়ে হসপিটালে উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। রাস্তায় আমাদেরকে আরো দুবার ফোন করা হয়েছিল হসপিটাল থেকে। যাইহোক তড়িঘড়ি পৌঁছেছিলাম ওয়ার্ডের সামনে। সেখানে গিয়ে আরও একটা পেপারে সই করালো শুভকে দিয়ে, তারপর আমাদের অপেক্ষা করতে বললো। বেলা ১০ টার পর কোলোনোস্কোপি রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।
বাইরে ঠিক যতখানি রোদ ও গরম ছিলো, ভেতরে ততখানি ঠান্ডা ছিলো। একবার গরমের মধ্যে থেকে ঠান্ডার ঢোকা আবার ঠান্ডা থেকে গরমের মধ্যে আসা, এর ফলে ঠান্ডা লাগবে এ বিষয়ে আমি একেবারে নিশ্চিত ছিলাম। যাইহোক সেখানে ওয়েটিং রুমেই আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ওয়েটিং রুমে লোকজন একেবারেই ছিল না। সম্পূর্ণ প্রসেসিং হতে মোটামুটি ২০-২৫ মিনিট সময় লেগেছিল।
এরপর শ্বশুর মশাইকে আবার ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর দুপুরবেলায় ওনাকে দুই কাপ ভেজিটেবিল স্যুপ দেওয়া হয়েছিলো। কিছুক্ষণ বাদে উঠে তিনি সেটাই খেয়েছিলেন। আমি ততক্ষণ ভেতরে ওনার কাছেই ছিলাম, কারণ শুভ গিয়েছিল বিলিং করতে।
এরপর ওনাকে লাঞ্চ দিয়ে দিয়েছিলো। আর আমিও ওয়ার্ডের বাইরে এসে শুভর সাথে দেখা করে, দুজনে মিলে বাইরে থেকে লাঞ্চ করে এসেছিলাম। বাইরে প্রচন্ড গরম ছিলো কিন্তু অনেক সকালে আসার কারণে ক্ষিদে পেয়েছিলো। খাওয়া সম্পন্ন করে যখন আমরা ফিরলাম ততক্ষণে শশুর মশাইয়ের রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছিলো। তাই রিপোর্ট নিয়ে দুজনে মিলে গিয়ে ডক্টরের সাথে কথা বললাম।
তিনি রিপোর্ট দেখে খুব বেশি খারাপ কিছু বলেননি। আমরা একটু স্বস্তি পেলাম। এরপরে ওনাকে ডিসচার্জ করার প্রসেসিং গুলো করতে আমাদের বেশ কিছুটা সময় লেগেছিলো। সেগুলো কমপ্লিট করে তারপর গাড়ি ঠিক করা হলো এবং শ্বশুরমশাইকে নিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ আমরা হসপিটাল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলাম।
তখনও সন্ধ্যার অন্ধকার নামেনি, তবুও সম্পূর্ণ এইমস এর সকল লাইট ততক্ষণে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। তাই গাড়িতে বসে চেষ্টা করলাম কয়েকটি ছবি তোলার। এরপর গাড়ি ছুটলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। ফেরার সময় তুলনামূলক সময় একটু বেশি লাগে। যাইহোক তারপর বাড়িতে ফিরে এসে ফ্রেশ হওয়ার আগে বুমিং এর কাজ শেষ করে, তারপর ফ্রেশ হয়ে ডিনার করলাম।
এইভাবে কোলোনোস্কপি করার দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শেষ হয়েছিলো। তবে হ্যাঁ এই টেস্টটি যথেষ্ট কষ্টের। এন্ডোস্কোপি করার সময় মনে হয়েছিল শ্বশুরমশাই অনেক কষ্ট পাবেন, কিন্তু তিনি নিজেকে অনেক বেশি শক্ত প্রমাণ করেছিলেন। তবে এই দিন যখন টেস্ট করে রুম থেকে বেরিয়ে ছিলেন, তখন কোনো কথাই বলতে পারেন নি।
সত্যি বলতে এইরকম অবস্থা দেখলে একটাই প্রার্থনা করতে ইচ্ছা করে, এই ধরনের টেস্টগুলো যাতে কাউকে করতে না হয়। যাইহোক তবুও রিপোর্টটা ভালো এসেছে এটুকুই শান্তি। পরবর্তী ট্রিটমেন্ট কি হবে সেই বিষয়ে কথা বলার জন্য আরও একবার ডাক্তারের কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। ভালো থাকবেন সকলে। শুভ রাত্রি।
কিছু কিছু সময় হসপিটালের ওয়ার্ড এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে করা নিয়ম থাকে যেটা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে কারণ হসপিটালে অতিরিক্ত মানুষ থাকা মোটেও ঠিক না এতে করে দেখা যায় যারা সুস্থ মানুষ তারাও অসুস্থ হয়ে যায় আপনার শ্বশুর মশাই কে সঠিক ভাবে হসপিটালে রেখে আপনারা আবার আপনার মামা শশুর বাড়িতে গিয়েছেন যেটা জানতে পেরে ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনার শ্বশুর মশাইয়ের সাথে কাটানো হসপিটাল এর দ্বিতীয় দিন আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন।