উপহারের মূল্যায়ন ভালোবাসা দিয়ে করা উচিৎ মূল্য দিয়ে নয়

Hello,
Everyone,
আশাকরি সকলে ভালো আছেন।
আর প্রত্যেকের আজকের দিনটা নিশ্চয়ই ভালো কেটেছে।
আচ্ছা, আপনারা যখন কাউকে দেওয়ার জন্য কোনো উপহার কিনতে যান, তখন ঠিক কি কি বিষয় মনে রেখে আপনারা উপহার কেনেন?
নিশ্চয়ই ভাবছেন হঠাৎ এই ধরনের একটি প্রশ্ন আমি কেন করছি?
চলুন একটি ঘটনা আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করি। আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানেন, আমাদের ধর্মে অর্থাৎ হিন্দু ধর্মে বিবাহের অনেক রীতি থাকে।
তারমধ্যে একটি থাকে প্রনামীর উপহার দেওয়া। যেটা ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ির সকল সম্মানীয় ব্যক্তিদের দেওয়া হয়, তেমনি ভাবে মেয়ের বাড়ি থেকেও ছেলের বাড়ির সম্মানীয়দের দেওয়া হয়।
আজকে আমি আমার পরিচিত যে মেয়েটির কথা বলছি তাদের বাড়ির আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো ছিলো না। কিন্তু সৌভাগ্য বশত তার শশুর বাড়ি বেশ স্বচ্ছল পরিবার।
যখন বিয়ের কথাবার্তা হলো, দুপক্ষ মিলে ঠিক করলো, শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের ছাড়া বাকি আত্মীয়দের প্রনামীর উপহার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই।
সেই মতো মেয়ের বাড়ি থেকে তাদের সাধ্যমতো ছেলে বাড়ির সকলের জন্য উপহার কিনলো। আর বৌভাতের অনুষ্ঠানের শেষে মেয়েটি নিয়মানুসারে প্রনাম করে সকলকে প্রনামীর উপহার দিলো।
বৌভাতের পরদিন সকালে মেয়েটির ঘুম ভাঙলো কথা কাটাকাটির শব্দে। ঘুম থেকে উঠে মেয়েটি বুঝতে পারলো নীচের তলায় বাড়ির সকলে মিলে কোনো একটি বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি করছে।
নতুন বাড়ি, নতুন পরিবেশ, নতুন পরিস্থিতি মেয়েটি কোনো কিছু বুঝতে না পেরে ভয়ে, একদম চুপচাপ উপরে নিজের ঘরে বসে রইলো।
একটু বাদে ছেলেটির মাসি এসে নতুন বৌকে নীচে নিয়ে গেলো। মেয়েটি নীচে গিয়ে খেয়াল করলো সকলেই কেমন অদ্ভুত আচরন করছে।
বড্ড অস্বস্থি লাগছিলো মেয়েটির তখন ঐ পরিবেশটা। কিছুক্ষণ বাদে মেয়েটি খেয়াল করল, তার একমাত্র ননদ অর্থাৎ ছেলেটি বড়ো দিদিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রথমে মেয়েটি ভেবেছিলো, ননদ হয়তো অন্য ঘরে আছে কিন্তু পড়ে বুঝতে পারলো নীচে যার চিৎকার শুনে আজ ওর ঘুম ভেঙে ছিলো সেটা অন্য কেউ নয় ওর ননদ।
পাশের ঘরে উঁকি দিতেই মেয়েটি দেখলো, তার বাপের বাড়ি থেকে আসা উপহার গুলো ছড়িয়ে পড়ে আছে খাটের উপর। এবার মেয়েটি কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো তর্কাতর্কির মূল কারন কি।
যাইহোক, মূল কথা হলো, অনেক বেশি দামী শাড়ি উপহার হিসাবে না দেওয়াতে সকলে মিলে অনেক সমালোচনা করছিল। সেখানে হাসাহাসি হচ্ছিলো বলে মেয়েটির হাসব্যান্ড নীচে এসে সকলকে চুপ করতে বলেছিলো।
ব্যাস, ভাইয়ের চুপ করতে বলায় ভাই আর দিদির মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়, তারপর মেয়েটির ননদ বাড়ি থেকে চলে যায়। আর বেশিরভাগ শশুর বাড়ির মতো এক্ষেত্রেও সব দোষ বাড়ির নতুন বৌটির উপর এসে পড়লো।
পরবর্তীতে মেয়েটিকে বহু বার বলা হয়েছে ননদের প্রনামীর শাড়ি টি নিজে গিয়ে যেন ননদ কে দিয়ে আসে এবং ক্ষমা চেয়ে নেয়।

কিন্তু এই পুরো ঘটনার সবথেকে ভালো লাগার জায়গা হলো,মেয়েটি ননদের বাড়িতে পরে বেড়াতে গেছে ঠিকই, কিন্তু ও ননদের কাছে ক্ষমা চায়নি, আর কোনোদিন ননদ কে ঐ প্রনামীর শাড়ি নেওয়ার কথাও বলেনি।
আর মজার বিষয় হলো যখন পরবর্তীতে মেয়েটি ঐ শাড়িটাই পড়েছে, তখন ওর ননদ ওকে জিজ্ঞাসা করেছে, -"শাড়িটা বেশ সুন্দর হয়েছে কোথা থেকে কিনেছ?"
এই হলো আমাদের সমাজের পরিস্থিতি। যেখানে ভালোবাসা বা সম্মানের সহিত দেওয়া উপহারও দাম দিয়ে বিচার করা হয়।
আমরা ভুলে যাই সব মানুষ চেষ্টা করে আপনজনদের সবথেকে ভালো জিনিস দিতে, কিন্তু অবশ্যই নিজের সাধ্যের মধ্যে। অথচ তার প্রতিদানে এই ধরনের ব্যবহার ভালো মানসিকতাকে নষ্ট করে দেয়।
আমি যখন কারোর জন্য উপহার কিনি আমি কিন্তু আমার পছন্দের থেকেও ঐ মানুষটার পছন্দের কথা মাথায় রাখি। কিন্তু হ্যাঁ কিছু কিছু সময় আমি সেটাই কিনি যেটা আমার পছন্দ অনুযায়ী আমি তাকে দিতে চাই।
আর ভালো তখন লাগে যখন অপরদিকের মানুষটি দুটি ক্ষেত্রেই সমানভাবে উপহার গ্রহণ করে। একই ভাবে আমার ভালো লাগে যখন কেউ আমার পছন্দের উপহার দেয়। আবার কখনো কখনো যদি তাদের পছন্দ অনুসারেও দেয় আমি সেটাও ভালোবেসে গ্ৰহন করি।
আমার কাছে উপহারের মূল্যের থেকেও, তা উপহার গ্ৰহনকারীকে কতটা আনন্দ দিলো সেই অনুভূতিটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এই উপহার দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের নিজস্ব মতামত কি অবশ্যই জানাবেন। ভালো থাকবেন সকলে। শুভ রাত্রি।