ব্লাড কিলার — পর্ব ৫ : জিজ্ঞাসাবাদ

in আমার বাংলা ব্লগ11 days ago

পর্ব ৫ : জিজ্ঞাসাবাদ


1000120221.jpg

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত সাড়ে দশটা পেরিয়ে গেছে । থানার আলো ম্লান হয়ে আসছে । জিজ্ঞাসা কক্ষের বাতাস ভারী — ঘামে, উত্তেজনায়, আর ভয়ের ঘ্রাণে । ঘরের মাঝখানে বসে আছে রনি, মুখে ভয়ের ছাপ, চোখে লালচে ক্লান্তি । সামনে বসে আবিদ, হাতে নোটবুক আর কলম । পাশে দাঁড়িয়ে আছে বখতিয়ার — স্থির, কিন্তু ভিতরে তীব্র রাগে ফুঁসছে ।

বখতিয়ার টেবিলের উপর হাত রেখে নিচু গলায় বলে,
“বল রনি, মোহাম্মদপুরে কী করতে গিয়েছিলি?”

রনি মাথা নিচু করে বলে,
“ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছিলাম স্যার।”

বখতিয়ার ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করে,
“আমরা কি সেই ‘ব্যক্তিগত কাজটা’ জানতে পারি?”

রনি একটু তাকিয়ে বলে,
“আমার কাজ সম্পর্কে আপনাদের বলার দরকারটা দেখি না।”

এই উত্তর শুনেই বখতিয়ার রেগে ওঠে । চেয়ারের পেছন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলের উপর হাত ঠুকে বলে,
“আমাদের সাথে খেলা করছিস? মনে করছিস আমরা তোর বন্ধু?”

বখতিয়ারের কণ্ঠ যেন থানার দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয় । মুহূর্তের মধ্যে সে রনির কলার ধরে টেনে আনে আর এক ঘুষি মারে । রনি হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়, চেয়ার উল্টে পড়ে মেঝেতে ।

আবিদ দ্রুত এগিয়ে এসে বলে,
“স্যার, শান্ত হন! আমি সামলাচ্ছি।”

বখতিয়ার থেমে যায়, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে ওঠে । “এই লোকটা কিছু জানে,” শুধু এটুকু বলে দরজা ঠেলে বাইরে চলে যায় । দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দটা যেন পুরো ঘরটাকে গিলে ফেলে ।

রনি ঘেমে উঠেছে । আবিদ চেয়ারটা তুলে তাকে বসতে দেয় । নরম গলায় বলে,
“দেখো রনি, তুমি এখন সত্যি না বললে স্যার আবার ফিরে আসবে । আর তখন আমার পক্ষে তোমাকে বাঁচানো কঠিন হবে ।”

রনি গিলতে গিলতে বলে,
“স্যার, আমি… আমি সব বলবো।”

আবিদ সামনে ঝুঁকে বলে,
“তাহলে শুরু করো। হঠাৎ মোহাম্মদপুর কেন গেলে?”

রনি ধীরে বলে,
“আসলে আমি একজনকে সস্তায় জমি কিনে দেবো বলে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলাম । পরে সে জানতে পারে আমি তাকে ঠকিয়েছি… তখন পালানো ছাড়া উপায় ছিল না।”

আবিদ কলম চালাতে চালাতে বলে,
“তোমার নামে তো অনেক কেস আছে, তাই না?”

“হ্যাঁ স্যার,” রনি হালকা মাথা নেড়ে বলে, “আমি একা কাজ করি, আমার কোনো গ্যাং নেই । সবাই আমাকে দূরে রাখে।”

আবিদ একটু থেমে জিজ্ঞেস করে,
“তুমি তো কনকের বন্ধু ছিলে । কনকের মৃত্যুর খবর জানো?”

রনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“জানি স্যার… কিন্তু আমি যেতে পারিনি । তখন আমি মোহাম্মদপুরে ছিলাম।”

“কনকের কোনো শত্রু ছিল?”

রনি কিছুক্ষণ চুপ থাকে, তারপর বলে,
“না স্যার, ওর শত্রু ছিল না । ও ছিলো একটু চাটু প্রকৃতির মানুষ, ও মোটামুটি সব জায়গায় সব লোকের সাথের ভালো সম্পর্ক রাখতো যেমন রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, সামাজিক, পুলিশ ইত্যাদি । আর ও চতুরতার সাথে বাটপারি করত, এমনভাবে চালাকি করত যেন দোষটা সবসময় অন্যের উপর পড়ে । তার উপর তার স্ত্রীও ছিল বড়লোক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে । তবে…”

আবিদ ভুরু কুঁচকে বলে,
“তবে কী?”

“কনক সবসময় নিজের বান্ধবীদের মধ্যে কোনো না কোনো পরকীয়ায় জড়িয়ে থাকতো । এটা নিয়ে তার স্ত্রীর সাথে প্রায়ই ঝগড়া হতো । আফিয়া রাগে বলতো, ‘তোমাকে মেরে ফেলব একদিন।’

আবিদ সব লিখে নিচ্ছে । তার চোখে এখন কৌতূহল, মুখে চিন্তার রেখা । ঘরের বাইরে তখন টানা বৃষ্টি পড়ছে ।

আবিদ (চুপচাপ),
“তুমি কি আরও কিছু জানো? এমন কোনো তথ্য যা কনকের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনের দিকে নিয়ে যেতে পারে?”

রনি একবার তাকিয়ে বলে—
“আমি শুধু যা জানি তাই বলেছি স্যার।”

রনির কণ্ঠ কাঁপে, চোখে ভয়ের ছাপ । আবিদ শান্তভাবে বলে,
“ঠিক আছে রনি, আপাতত এতোটুকুই যথেষ্ট।”

বাইরে গিয়ে বখতিয়ারকে জানায় সব । বখতিয়ার চুপচাপ শোনে, তারপর নিচু গলায় বলে,
“আবিদ, লক্ষ্য করেছো? আমরা যেখানেই যাচ্ছি, পরকীয়ার বিষয়টা ফিরে ফিরে আসছে।”

আবিদ মাথা নাড়ে, “ঠিক বলছেন স্যার । আফিয়াকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে । এবার কঠিনভাবে।”

বখতিয়ার চোখ সরু করে বলে,
“হ্যাঁ, কিন্তু এবার প্রমাণ ছাড়া হবে না । আমাদের এমন কিছু বের করতে হবে, যা তাকে কোণঠাসা করে ফেলবে।”

আবিদ উঠে দাঁড়ায়, কণ্ঠ দৃঢ়,
“আমি কনকের সব সম্পর্কগুলো যাচাই করে দেখছি, কার সাথে সে জড়িত ছিল।”

বখতিয়ার জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে । থানার লাইটের নিচে রাতের অন্ধকার আরও গাঢ় হয়ে আসে । তার মনে হয় এই হত্যাকাণ্ডের জটটা খুলতে শুরু করেছে ।


চলবে...


ব্লাড কিলার — পর্ব ৪ : অন্ধকারে শিকার


লেখক পরিচিতি


Coin Marketplace

STEEM 0.09
TRX 0.32
JST 0.033
BTC 110516.68
ETH 3975.42
USDT 1.00
SBD 0.60