বইয়ের ভেতরে বই

ঐতো তখন বয়স হবে আর কত, বারো কি তেরো । জীবনের পরিবর্তন গুলো মনে হয় ঠিক সেই সময়েই শুধু হয় । এ পরিবর্তনটা ঠিক আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি হয়তো আপনারা তা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছেন ! আসলে তেমন কিছু বুঝাতে চাচ্ছি না তবে শারীরিক ও মানসিকভাবে কিছুটা পরিবর্তন হয় শুধু এতোটুকু আন্দাজ করে নিয়েন ।

---

যাইহোক আপনার শৈশব জীবনের গতিধারা কেমন ছিল তা আমার জানা নেই, তবে আমি মানুষটা শৈশব থেকেই একটু ভিন্ন ছিলাম । কেমন ভিন্ন এইটা আসলে কি করেই বোঝাই বলেন, সবাই ক্লাসের সামনে ছিটে বসার জন্য আহামরি করতো আর আমি কিনা পিছনে বসতে পারলেই শান্তি পাইতাম ।

---

জীবনটা যে রঙিন, সময় তখন সেটা আমাকে খুব ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়ে ছিল । আস্তে আস্তে বয়স বাড়ছে আর আমার পিছনে বসার প্রতি আগ্রহ দিন দিন আরও বেড়েই যাচ্ছে । এটা আমার দিনকে দিন আসক্তিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিল । এমনও সময় গিয়েছে যে পুরো ক্লাস রুম ফাঁকা, তাও আমি পিছনে গিয়ে বসছি এবং ভাবছি ওরা কখন আসবে ।

---

এই ওরাই আমার জীবনটাকে রঙিন করে দিয়েছে, এই ওরা না থাকলে মনে হয় আমার জীবনের শৈশবটাই বৃথা যেত, এই ওরা ছিল বলেই আজ শৈশবের স্মৃতিচারণটা করতে পারছি আপনাদের সঙ্গে । এই ওরাটা আর অন্য কেউ না, এই ওরাটা হচ্ছে আমার বন্ধু । খুব কাছের বন্ধু গুলো । যাদের অবস্থান আমার বাড়ির আশেপাশেই ছিল ।

---

সেই রোজ স্কুলে যাওয়া থেকে শুরু করে, স্কুলে গিয়ে সেই রোদের মধ্যে লম্বা লাইনে পিটি-প্যারেড,তারপর ক্লাসের পিছনে বসে ঝিমানো এবং লুকিয়ে লুকিয়ে ম্যাডামকে দেখা এবং বইয়ের ভিতরে বই রেখে থিসিস সেতো মনেহয় আমার পুরো শৈশব জুড়েই ছিল ।

---

দিনকে দিন সময়ের সঙ্গে সব কিছুর পরিবর্তন হয়েছে সেই স্কুল থেকে কলেজ,কলেজ থেকে ভার্সিটি অবশেষে কর্মজীবন । সময়ের সাথে সবার জীবনে একটা ভিন্ন গন্তব্য তৈরি হয়েছে ,ব্যস্ততা নামক নিষ্ঠুর শব্দটা শৈশব কাঁপানো বন্ধু গুলোর মাঝে আজ লম্বা দূরত্ব তৈরি করে দিয়েছে । জানিনা কোথায় থেকে কি হয়ে গেল, সবাই আজ ব্যস্ত,কারো সাথে কারো দেখা নাই, নেই কোন যোগাযোগ,টুকটাক সোস্যাল মিডিয়ায় একটু কথোপকথন, তাও যেন অজুহাতের শেষ নেই । শৈশব গুলো এখন শুধুই স্মৃতি । ভালো থাকুক আমার শৈশব ও বেঁচে থাকুক আমার শৈশব রঙিন করা বন্ধু গুলো ।