"প্রকৃতির মাঝেই আমার শিশুর বেড়ে ওঠা "।

শিশুর আচরণ,সেতো শিশুসুলভই হবে।শিশুসুলভ আচরণ বলতে আমরা সাধারণত অকপট, সাদাসিধে, সরলতা,অকৃত্রিম ইত্যাদি বুঝে থাকি।অতএব,শিশুর আচরণের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলো অবশ্যই থাকবে।শিশুর আচরণ ও কার্যকলাপ নিয়ে আমরা বিভিন্ন গবেষকদের মতবাদ পড়েছি।যেমন মনোবিজ্ঞানী হাওয়ার্ড গার্ডনার,জ্যাঁ পিঁয়াজে,আলফ্রেড বিনে প্রমুখ। শিশুর আচরণ নিয়ে বিখ্যাত এই মনোবিজ্ঞানীদের মতবাদ অনুসরণ করলে একজন শিশুকে খুব সহজেই চেনা যায়,বুঝা যায়,জানা যায়।আর আমাদের সেগুলো অনুসরণ করা উচিত বলেও আমি মনে করি।
আমরা শিশুকে খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো-শিশুরা প্রচুর প্রশ্ন করে থাকে।কারণ হিসেবে বলা যায়,শিশুর শব্দভান্ডারে শব্দের সংখ্যা কম থাকে,শিশুর কৌতূহলী মন আর জানার আগ্রহ।শিশুর প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ করার ক্ষমতা কম থাকে,তাই সে অত্যাধিক নালিশ করে।শিশুর মন কোমল,তাই অল্প আঘাতে কেঁদে ফেলে।আমি শিশুর কর্মদক্ষতাকে একটি পিঁপড়ের সাথে তুলনা করতে চাই।একটি পিঁপড়ে যেমন কখনো ক্লান্ত হয়ন না,চলতেই থাকে,তেমনি একটি শিশুও ক্লান্তহীন ভাবে সব সময় কিছু না কিছু করতেই থাকে।
বয়সের সাথে সাথে শিশুরা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখে চলেছে।এখন প্রশ্ন হলো-শিশু যে আচরন শিখছে,সে আচরণ কি সম্পূর্ণ অকৃত্রিম! শিশুরা যাদের কাছ থেকে আচরণ শিখছে,সে আচরণ কি শিশুসুলভ!শিশু নিজে নিজে শেখে নাকি শেখানো হয়? এই সবগুলো প্রশ্নোত্তর আমাদের সকলের জানা।শিশুর প্রথম শেখার স্তর হল পরিবার।তারপর ধারাবাহিকতায় পরিবেশ,সমাজ,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।আমি মনে করি,এই সব স্তরগুলো থেকে শিশু যে আচরণ শেখে,তা তাকে শেখানো হয়।প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে শিশুকে কৃত্রিম বা অকৃত্রিম ব্যবহার শেখানো হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো-শিশু তাহলে অকৃত্রিম আচরণ কোথা থেকে শিখবে?আমরা একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবো,শিশুরা প্রকৃতি খুব ভালবাসে।প্রকৃতি, শিশুকে সবথেকে বেশি আকর্ষণ করে।আর প্রকৃতি, শিশুকে যা শেখায় বা প্রকৃতি থেকে শিশু যা শেখে,সেটাই হলো শিশুর অকৃত্রিম আচরণ।যেমন ধরেন,শিশুরা বিভিন্ন রঙ পছন্দ করে,ছন্দ পছন্দ করে,খোলা মাঠে দৌড়ানো,বাতাসের মত দূরন্তপানা,জলমাটি,প্রকৃতির সবকিছুই যেন শিশুর নিজস্ব।
এখন বর্তমান শিশুর আচরণ লক্ষ্য করি,সে আচরণ ঠিক কেমন!প্রকৃতি থেকে শেখা অকৃত্রিম আচরণ আর আমাদের শেখানো কৃত্রিম আচরণে,শিশুর মধ্যে এক মিশ্র আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।যার ফলে শিশুরা নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। শেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে,বকা শুনছে,শিশুর সাথে অভিভাবক বা অন্যান্যদের মনের দূরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে, শিশুরা জেদি হয়ে উঠছে,এমনকি বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজও করে ফেলছে।আর এইভাবেই ঝরে পড়ছে আমাদের শিশুরা।বুঝতেই পারছে না,কখন তার সুন্দর ভবিষ্যতটা নষ্ট হয়ে গেল!তাই" শিশুর জীবন হোক সুন্দর"-এই প্রত্যয়ে আমার নতুন পথ চলা।সকলের প্রতি আমার অনুরোধ, শিশুকে বদ্ধ করে না রেখে প্রকৃতির মাঝে ছেড়ে দিন।শুধু কোনটা ভুল,কোনটা ঠিক, এটুকুই শেখান শিশুর মনের মত করে,তাহলে সেটাই হবে শিশুসুলভ আচরণ।