চিংড়ির সাথে কলমি শাকের মজাদার ভাজি রেসিপি

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
হ্যালো বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।

আজকে আপনাদের সাথে একটা রেসিপি শেয়ার করে নেবো। আজকে আমি একটি ভাজি রেসিপি তৈরি করেছি। এই ভাজি রেসিপিটা হলো কলমি শাকের। কলমি শাক খেতে খুবই মজার। কলমি শাকের অনেক উপকারিতাও আছে। আর এই শাক বিভিন্ন জলাশয়ের ধারে বা মাটি ভেজাযুক্ত স্থানে সবসময় জন্মে থাকে, ফলে এই কলমি শাক পেতে কারো তেমন অসুবিধা হয় না। এই শাকগুলো বর্ষাকালে খাল, বিলের জলাশয়ে প্রচুর পাওয়া যায় কারণ তখন এদের গ্রোথ আরো বেশি হয়ে থাকে। আগে যখন ছোটবেলায় গ্রামের দিকে থাকতাম তখন বিলে জলের মধ্যে গিয়ে এই কলমি শাক তুলে আনতাম কয়েকজন বন্ধুরা মিলে। আগে এই শাক অঢেল টাটকা তুলে তুলে খেয়েছি আর এখন বাজার থেকে প্রায় শুকনোই কিনে খাওয়া হচ্ছে ফলে উপকারিতা যা পাওয়া দরকার ততটা পাওয়া যায় না। এখন এই শাকগুলো অনেক জায়গায় চাষও করে থাকে, আর এই শাকের লাভও আছে কারণ বাজারে চাহিদাও অনেক এই শাকের। কলমি শাকের পাতাগুলোকে কিছু কিছু উপকারিতার ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন এই পাতার রস কিছু কিছু ছোট সমস্যার ক্ষেত্রে অনেক উপশমদায়ক কাজ হয়ে থাকে। কোনো পোকামাকড়ে কামড়ালে সেখানে এই পাতার রস বের করে লাগালে জ্বালাটা কমে যায়, এগুলো হলো প্রাথমিক সহজ একটা ঘরোয়া চিকিৎসার উপায় আর কি। যাইহোক এই কলমি শাক শুধু ভাজা বা চিংড়ি দিয়ে ভাজা করলে অনেক ভালো লাগে। তবে আমার হাতের কাছে চিংড়ি থাকলে আমি এটা বাদে রান্না করতে পারিনা, কারণ চিংড়ি না দিলে এইসব ভাজা আমার তেমন খেয়ে পোষাতে চায় না মনের দিক থেকে। যাইহোক এখন এই ভাজি রেসিপিটার মূল উপকরণের দিকে চলে যাবো।


☬প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ:☬

❣উপকরণ
পরিমাণ❣
চিংড়ি
২০০ গ্রাম
কলমি শাক
২ তাড়ি
পেঁয়াজ
৪ টি
কাঁচা লঙ্কা
১৩ টি
পাঁচফোড়ন
পরিমাণমতো
সরিষার তেল
৪ চামচ
লবন
৩.৫ চামচ
হলুদ
৩ চামচ


চিংড়ি, কলমি শাক, পেঁয়াজ


কাঁচা লঙ্কা, সরিষার তেল, লবন, হলুদ


✦এখন ভাজি রেসিপিটা যেভাবে তৈরি করলাম---


❆প্রস্তুত প্রণালী:❆


❖চিংড়িগুলোকে প্রথমে ভালোভাবে কেটে বাদ দেওয়ার মতো অংশগুলো বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম এবং পরে জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিয়েছিলাম। এরপর কলমি শাকগুলো একটু বেছে নিয়ে কেটে নিয়েছিলাম পাতাসহ ডাঁটা এবং পরে জল দিয়ে কয়েকবার ভালোভাবে ধুয়ে নিয়েছিলাম।

❖পেঁয়াজ ৪ টির খোসা ছাড়িয়ে নেওয়ার পরে পেঁয়াজ কেটে নিয়েছিলাম। এরপর কাঁচা লঙ্কাগুলো সব কেটে নেওয়ার পরে জল দিয়ে ধুয়ে নিয়েছিলাম।

❖ধুয়ে রাখা চিংড়িগুলোতে ১ চামচ করে লবন আর হলুদ দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর হাত দিয়ে একটু নেড়ে সবগুলোর গায়ে ভালোভাবে মাখিয়ে নিয়েছিলাম।

❖একটি প্যানে হালকা তেল দেওয়ার পরে লবন, হলুদ মাখানো চিংড়িগুলোকে তেলে দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর ভালোভাবে ভেজে তুলে নিয়েছিলাম।

❖কড়াইতে আবারো পুনরায় তেল দেওয়ার পরে তাতে পরিমাণমতো পাঁচফোড়ন দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর তাতে কেটে রাখা পেঁয়াজগুলো জল দিয়ে ধুয়ে নিয়ে তেলে দিয়ে দিয়েছিলাম।

❖পেঁয়াজ ভালোভাবে ভাজা হয়ে গেলে তাতে আমি কেটে-ধুয়ে রাখা কলমি শাক দিয়ে দিয়েছিলাম।

❖কলমি শাক দেওয়ার পরে তাতে কেটে রাখা কাঁচা লঙ্কাগুলো সব দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর তাতে ভাজা চিংড়িগুলো সব দিয়ে দিয়েছিলাম।

❖চিংড়ি দেওয়ার পরে তাতে আড়াই চামচ লবন এবং দুই চামচ হলুদ গুঁড়ো দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর কলমি শাকের সাথে সব ভালোভাবে মিক্স করে নিয়েছিলাম।

❖মিক্স করার পরে কলমি শাকগুলো ভালোভাবে সিদ্ধ করার জন্য ঢেকে দিয়ে রেখেছিলাম কয়েক মিনিট। শাকগুলো সিদ্ধ হয়ে গেলে একটা কালার চেঞ্জ হয়ে এসেছিলো।

❖শাকগুলো সিদ্ধ হয়ে গেলে এবং হালকা একটু জল থাকতে থাকতে ঢাকনা তুলে নিয়েছিলাম নাহলে নিচের দিকে পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরপর একদম লো মিডিয়াম জ্বালে রেখে আস্তে আস্তে নেড়েচেড়ে জলগুলো মেরে হাফ ভাজার পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলাম।

❖হালকা জ্বালে কিছুক্ষন ধরে উল্টেপাল্টে দিতে দিতে সম্পূর্ণ ভাজা হয়ে গেছিলো। এরপর আমি পরিবেশনের জন্য একটি পাত্রে কিছু কলমি শাক তুলে নিয়েছিলাম।

রেসিপি বাই, @winkles

শুভেচ্ছান্তে, @winkles


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago 

আগে যখন ছোটবেলায় গ্রামের দিকে থাকতাম তখন বিলে জলের মধ্যে গিয়ে এই কলমি শাক তুলে আনতাম কয়েকজন বন্ধুরা মিলে।

আমাদের ছোটবেলাগুলো কতই না সুন্দর ছিল। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ সেই সাথে বাড়ির পাশে বয়ে চলা ছোট্ট বিল। সবকিছুই আজ অতীত হয়ে গেছে। আমি ছোটবেলায় বিলের পাড়ে গিয়ে কলমি শাকের ফুল গুলো তুলতাম। কখনো শাক তোলা হয়েছে কিনা মনে নেই। তবে ফুলগুলো তুলেছি অনেক। ফুল গুলো দেখতে অনেক সুন্দর লাগতো। তবে কলমি শাক খেতে আমি অনেক পছন্দ করি। চিংড়ি মাছ দিয়ে যেকোন রেসিপি তৈরি করলেই খেতে ভালো লাগে। কলমি শাক দিয়ে চিংড়ি মাছের রেসিপি দেখে খেতে ইচ্ছা করছে। আমি কলমি শাক দিয়ে চিংড়ি মাছ কখনো খাইনি। অবশ্যই বাসায় এই রেসিপি তৈরি করার চেষ্টা করব দাদা। আপনার রন্ধন প্রণালীর নিপুণতা আমাদের সকলের মাঝে তুলে ধরেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি দাদা।

 2 years ago 

কোনো পোকামাকড়ে কামড়ালে সেখানে এই পাতার রস বের করে লাগালে জ্বালাটা কমে যায়,

হ্যাঁ এটি আমিও শুনেছি ,কলমি শাকের আঠায় কাজ হয়।আজ আমার প্রিয় একটি রেসিপি তৈরি করেছেন দাদা।আমার তো চিংড়ি মাছ দিয়ে কলমি শাক ভাজি হলে অন্য কিছু লাগে না।কলমি শাকে প্রচুর পরিমানে আয়রন রয়েছে যেটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য ও ভীষণ উপকারী।সত্যিই ছোটবেলায় মামাবাড়ি গিয়ে কলমি শাক নিয়ে আসতাম,আমাদের গ্রামে তেমন পাওয়া যেত না।আমার মামাদের বড়ো পুকুর থেকে গ্রামের সবাই কলমি শাক,হেলেঞ্চা শাক নিয়ে যেত ।আমরাও যখন মামাবাড়ি যেতাম নিয়ে আসতাম,তাছাড়া তাদের বিলের মধ্যে ক্যানেলে প্রচুর কলমি শাক ও শাপলা জন্মাতো।কিন্তু এখন আমাদের এখানে তেমন দেখায় যায় না কলমি শাক।আপনার রেসিপিটা সুন্দর ও লোভনীয় হয়েছে,ধন্যবাদ দাদা।ভালো থাকবেন।।

 2 years ago 

চিংড়ি মাছ দিয়ে কলমী শাক ভাজি বরাবরই আমার খুব ফেভারিট 😋😋 বিশেষ করে এ ধরনের রেসিপি ভাতজাউল অথবা সকালের নাস্তায় রুটি দিয়ে খেতে বেশি মজা লাগে।। আপনার প্রস্তুত করা দেখে খুব করে লোভ হচ্ছে খেতে নিশ্চয়ই খুব মজা হবে।।।

 2 years ago 

ওয়াও ভাইয়া চিংড়ির সাথে কলমি শাকের মজাদার ভাজি রেসিপি দেখে জিভে জল চলে এলো। আসলে ভাইয়া চিংড়ি দিয়ে যেকোন তরকারি রান্না করলে অনেক মজা লাগে। আপনি ঠিক বলেছেন গ্রামে এই শাক অঢেল টাটকা তুলে তুলে খেয়েছিন আর এখন বাজার থেকে প্রায় শুকনোই কিনে খাওয়া হচ্ছে।আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 
আপনার কাছ থেকে দাদা আরেকটি সুস্বাদু রেসিপি দেখতে পেলাম।চিংড়ির সাথে কলমি শাকের ভাজি।কলমি শাক যদিও বর্ষাকালে বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে চাষের কারনে সবসময়ই পাওয়া যায়। কিন্তু দাদা এটা ঠিকই বলেছেন টাটকা শাকের যে উপকারিতা, শুকনোটাতে একটু উপকারিতা কম এবং কলমি শাক কিছু রোগের উপসর্গ হিসেবে কাজ করে।তাছাড়া চিংড়ি মাছের স্বাদের কথা কমবেশি সবারই জানা।রেসিপির কালারটা দেখতে ও সুন্দর লাগছে। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা চিংড়ির সাথে কলমি শাকের ভাজি রেসিপি তৈরি করে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
 2 years ago 

বিলের জলে থেকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে আসলে সেই শাকের স্বাদের সঙ্গে অন্য শাকের স্বাদের কি তুলনা হয় ? একে তো টাটকা শাক খাওয়া হয় তার উপরে নিজের হাতে তোলা। শহরের থাকলে তো বাজারে যা পাওয়া যাবে তাই কিনে নিয়ে আসতে হয়। এতে পুষ্টিগুণ কতটুকু পাওয়া যায় তাই চিন্তার বিষয়। কিন্তু উপায় তো নেই। দাদা আমিও আপনার মত ছোট চিংড়ি বাসায় থাকলে কোন শাক বা ভাজি এই ছোট চিংড়ি ছাড়া করি না । কারণ এগুলো দিলে সেই রেসিপি স্বাদ আরো অনেক বেড়ে যায়। আপনার কলমি শাকের রেসিপিটি আসলেই অনেক সুস্বাদু মনে হয়েছে মনে হচ্ছে। আমি খুব একটা খাই না কিন্তু আপনার এই শাকের রেসিপি দেখেই খেতে ইচ্ছা করছে।

 2 years ago 

কলমি শাক ভাজি খেতে আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। সাথে চিংড়ি মাছ হলে তো কথাই নেই। চিংড়ি মাছের ও যে কোন রেসিপি খেতে আমার খুবই ভালো লাগে। রেসিপিটি দেখে লোভনীয় লাগছে। কলমি শাক আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আর কলমি শাকের রস কোন কাঁটা ছেড়ার মধ্যে দিলে যে জ্বালাটা একটু কমে তা আপনার পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম দাদা ।এটা আমার জানা ছিল না।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সুস্বাদু একটি রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

চিংড়ি মাছের সাথে কলমি শাকের দারুন একটা রেসিপি আজকে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দাদা। এই ধরনের কলমি শাকগুলো জলাশয়ের আশেপাশেই পাওয়া যায় তাই এগুলো সংগ্রহ করতে খুব একটা কষ্ট করার প্রয়োজন হয় না বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলগুলোতে। প্রত্যেকটি ধাপে ধাপে আপনি আমাদেরকে দেখিয়েছেন কিভাবে এমন চমৎকার একটা কলমি শাকের রেসিপি তৈরি করতে হয়।

 2 years ago 

আপনার চিংড়ি মাছ দিয়ে কলমি শাক ভাজি রেসিপিটি দেখে জিভে জল চলে আসলো। কিন্তু এরকম রেসিপি আগে কখনো খাওয়া হয়নি। ঠিকই বলেছেন কলমি শাক আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য অনেক লোভনীয় একটি রেসিপি।

 2 years ago 

দাদা বর্ষার মৌসুমী কলমি শাক একটু বেশি পাওয়া গেলেও এই স্বাদ কিন্তু সারা বছরব্যাপী পাওয়া যায়। তবে গ্রামাঞ্চলে একটু বেশিই কারণ জলাশয় এগুলো আপনা আপনি উৎপাদন হয়ে যায়।আমি ছাদে টবে কলমি শাকের একটি ডাল রোপন করে দিয়েছি সেখানেও লতা বেয়ে বেয়ে অনেকগুলো পাতা বের হয়েছে। কয়েকদিন পর পরই আমি কিছু তুলে এনে ভাজি করি। তবে চিংড়ি দিয়ে খাওয়ার অভিজ্ঞতা এখনো হয়নি কারণ এর আগে আমি কখনো এরকম খেয়ে দেখেনি। তথাপি কলমি শাকের পাতা যে পোকামাকড় কামড় দিলে ঔষধি গুনের অবদান রাখে তা এই প্রথম জানতে পারলাম। আপনি দাদা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ আপনার কাছে এসব শিখব এটাই স্বাভাবিক।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 65792.18
ETH 2695.80
USDT 1.00
SBD 2.90