|| স্মৃতি কথন : মতি || ( শেষ পর্ব )

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সকলে ভালো আছেন। আমি গতকাল 'স্মৃতি কথন : মতি'-র প্রথম পর্বটি লিখেছিলাম। আজ দ্বিতীয় পর্বটি লিখলাম এবং একই সাথে এটা সমাপ্তি পর্বও। আশা করি এই পর্বটিও আপনাদের ভালো লাগবে।

buffalo-1822579__480.jpg

Source

একটা দিনের কথা বলি। সেদিন আমার স্কুল ছুটি ছিল। টিউশনের স্যারও আগের দিন বলে দিয়েছিলেন যে শহরে বিশেষ কাজে যাওয়ার আছে, তাই তিনিও পড়াতে পারবেন না। এমন মোক্ষম সুযোগ কোথায় পাওয়া যায়!
আমি মতিকে গিয়ে বললাম, " চল মতি আজ আমিও যাবো তোর সাথে!"
মহিষের পিঠে চড়ে মাঠে যাওয়ার আগ্রহ মতি পূর্বেও আমার মুখে শুনেছে। কিন্তু বাড়িতে কড়াকড়ির কারণে যাত্রার সুভারাম্ভ কোনোদিনই হয়নি। বাড়ি থেকে সমস্ত হিসেব ঠিক রেখেই যে আমি আসতে সক্ষম হয়েছি, তা মতি বুঝতে পারে। সে আনন্দের সাথে বলে, " দাড়া রুটি কটা বেঁধে নি আর আমের আচার নেবো! তুই এক কাজ কর, এই ডিব্বাটাই জল ভরে নে!"
আমরা রুটি আচার গামছায় বেঁধে নিয়ে আর জলের ডিব্বা হাতে করে বেরিয়ে পড়লাম। আমি তক্ষুনি মহিষের পিঠে চড়তে পারলাম না। পাশেই বাড়ি আমার এখানেই যদি বাড়ির কেউ দেখে ফেলে কান ধরে হিড়হিড় করে আবার ফেরত নিয়ে চলে যাবে।
আমি মতিকে বললাম, " তুই এগিয়ে যা মতি, আমি বাগানে গিয়ে উঠব, কেউ দেখতে পাবেনা।"
মতি বেরিয়ে গেলো। আমি বাগানে গিয়ে বহু কষ্টে মোষের পিঠে উঠলাম। প্রথমবার মোষের পিঠে উঠেছি। বেশ ভয় লাগছে। যদিও মসৃণ পথে তেমন কিছু মনে হলনা।
ধীরে ধীরে আমরা পৌঁছে গেলাম বড় মাঠে।
মোষের পিঠে চড়ে দেখছি বিরাট অন্তহীন সবুজ মাঠ। দূরে দূরে কোথাও চাষীরা কাজ করছে দু'একজন। দূরে দেখা যায় আরো গরু মোষ চরছে। পাখিরা সার বেঁধে ছুটে যাচ্ছে কোন দেশে। গাছের ডালে দেখি দুটি সাত ভাইয়া পাখি মৃদুমন্দ ঝগড়া করছে। নীল আকাশের নিচে এই নির্জন সবুজ মাঠ আমার ভালো লাগল।

দুটো মোষের মধ্যে যেটা ভালো তারই পিঠে চড়ার পরামর্শ দিয়েছিল মতি। ভালো মোষ টা র পিঠে চড়ে দিব্যি গাছ পাখি মাঠ ধান সব কিছু দেখছিলাম আর পাশে শয়তান মোষ টা র পিঠে নির্দ্বিধায় বসে থাকা মতির সাথে গল্প করছিলাম। তখনই মতি বললো, " নদীর পাড়ের দিকটায় চল, সেখানে খুব ঘাস! ওর পিঠে একটু মার, যেতে শুরু করবে!"
কথা মত পিঠে একটা বাড়ি দিতেই মোষ দিল ছুট। কিন্তু যে ছুট টা দিল তা আমি আশা করিনি এমনকি মতিও আশা করেনি। আমি তো যান বাঁচিয়ে চেপে ধরে আছি, আজ কপালে ভালো কিছু নেই। মতি বললো, " ছুটতে দে। তুই চেপে ধরে থাক। কিছু হবে না।"
কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না, একটা উঁচু আলের উপর ওঠার সময় আইসা লাফ দিল যে আমি ছিটকে গিয়ে পড়লাম ধান ক্ষেতে। মতির হিসেব না মেলায় একটু অবাক হলো সে।
তবে সে যাত্রায় আমি বেঁচে গেছিলাম। ক্ষয়ক্ষতি কিছু হয়নি। প্রায় পেকে ওঠা ধানের মাটি নরম ছিল।

এভাবেই দিনটি কেটেছিল ভালো। গোটা দিন আমরা আনন্দে মেতে ছিলাম। মতির খুব ভালো লেগেছিলো সেদিন। সাধারণত তাকে এভাবেই একাই কাটাতে হয় দিন। আমি ভাবলাম মতি এভাবেই নির্জন জায়গায় পাখি দেখে, গাছ দেখে, দূরের চাষীদের দেখে, আকাশ দেখে কাটিয়ে দেয়। আজ আমার সঙ্গ পেয়ে সে সত্যই আনন্দে মেতে উঠেছে।
তারপর বাড়ি ফিরতে হল। যখন সন্ধ্যে হল, অস্ত যাওয়া সূর্যের লাল আভায় গোটা আকাশ ভরে আছে। নদী মাঠের ওপর সূর্যের শেষ আভা লেগে আছে আমরা তখন দুজনে পাশাপাশি দুটো মোষের ওপর চড়ে বাড়ি ফিরছি।

আজ এই অব্দি রইল। আগামীকাল আবার নতুন একটি কথা নতুন কিছু লেখা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষণ আপনারা ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

@tarique52

Sort:  
 2 years ago 

ভাইয়া আপনার গল্প টা খুব সুন্দর হয়েছে। আমার বেশ হাসি ও পেয়েছে যখন মহিষের পিঠ থেকে পাকা ধানের উপর পড়ে গেলেন তা পড়ে। আর সারাদিন মতির সাথে সময় কাটিয়েছেন আর মতিকে সময় দিয়েছে বেশ ভাল লেগেছে পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

দিদি কিছু হয়নি ঠিকই কিন্তু পড়ে গিয়ে ভয়টা পেয়েছিলাম খুব।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 65792.18
ETH 2695.80
USDT 1.00
SBD 2.90