গল্প "জীবনের হিসাব" পর্ব -২

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামুআলাইকুম সবাইকে।



আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।


আজকে আবার হাজির হয়ে গেলাম "জীবনের হিসাব" গল্পটির দ্বিতীয় এবং শেষ পর্ব নিয়ে। মানুষের জীবনে কখন বিপদ আসে তা বলা যায় না। ছোটখাটো বিপদ থেকে যে কতটা ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে তা আজকের গল্পটি পড়লেই বুঝতে পারবেন। আশা করি আজকের পর্বটিও আপনাদের ভালো লাগবে।


leaves-1076307_1280.jpg

Link


জীবনের হিসাব


সুজনের পরিবারে যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। সামান্য পেট ব্যথা থেকে যে ভিতরে ভিতরে ক্যান্সারের মত এত বড় সমস্যা হয়েছে তারা কখনো বুঝতেই পারেনি। এত গুরুতর পর্যায়ে চলে গিয়েছে তা কল্পনাতেও ছিল না তাদের।

তারা চাচ্ছিলো যে ঢাকায় ট্রিটমেন্ট না করে ইন্ডিয়া গিয়ে ট্রিটমেন্ট করাবে। ঢাকার থেকে ইন্ডিয়ার ট্রিটমেন্ট অনেক ভালো হয়। ইন্ডিয়ায় হুট করে চাইলে তো আর যাওয়া যায় না। পাসপোর্ট ভিসার ঝামেলা থাকে। যদিও তাদের পাসপোর্ট করা ছিল। তাই তারা ভিসার প্রসেসিং করছিলো। যাতে দ্রুত ইন্ডিয়া গিয়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করতে পারে। তারা বাংলাদেশের ট্রিটমেন্টে কোন ভরসা করতে পারছিলেন না জন্য ইন্ডিয়া যাওয়ার জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছিলো।

এভাবে আরও কিছুদিন চলে গেলো। সুজন এরই মাঝে নিয়মিত অফিস করে যাচ্ছে। কারণ তার কাছে শরীর ততটা খারাপ না। মোটামুটি ভালোই ছিল। তারপরও শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে কিছুটা চিন্তা তো কাজ করেই। একদিন সকালে সুমন অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছে। লিফট দিয়ে বাসার নিচে পর্যন্ত গিয়েছে। আর হঠাৎ করে তার শরীর খুব খারাপ হয়ে গেলো। রিনারা সবাই দৌড়ে এলো হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সুজন মারা গেলো।

ছোট ছোট দুটি বাচ্চা রেখে সুনের এত অল্প বয়সে মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছিল না। তার মা যেন পাগল প্রায় অবস্থা। হাজবেন্ড মারা গিয়েছে। একমাত্র ছেলে সেও এত অল্প বয়সে মারা গেলো। তাছাড়া রিনা কিছুই বুঝতে পারছে না কি করবে। কি থেকে কি হয়ে গেলো। কারণ তারা ট্রিটমেন্ট শুরু করার আগেই এত বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। তারা আফসোস করছিল যদি ভিসার প্রসেসিং চলতে চলতে এখানে ট্রিটমেন্টটি শুরু করে দিত তাহলে হয়তো এত বড় ক্ষতি হতো না তাদের। কিন্তু ভাগ্যের লিখা কি আর পাল্টানো যায়।

রিনা এখন দুই ছেলেকে নিয়ে একাই আছে। বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায় না যে রিনার ভেতরে কত কষ্ট। সে অনেকটা হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে। তাছাড়া নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য একটি বুটিসের দোকান দিয়েছে। যেহেতু সে বোনের বিল্ডিং এ থাকতো তাই সে আর তার বোন মিলে একটি শোরুম দিয়েছে। বেশ ভালই চলছে রিনার শোরুম।

পরিবার থেকে তাকে আবার বিয়ে দেওয়ার জন্য বলছে। কিন্তু সে ছেলে দুটির দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করতে রাজি না। কিন্তু এত অল্প বয়সে হাজবেন্ড মারা গিয়েছে। তার সামনে পুরো জীবন পড়ে আছে। এভাবে কি একা সারাটা জীবন পার করা যায়। তার পরিবারের লোকজন চিন্তা করছে। কিন্তু রিনার কথা সে আর বিয়ে করবে না। এই সন্তানদেরকে মানুষ করবে। হয়তো বিয়ে করলে সে হাসবেন্ড পাবে কিন্তু সন্তানেরা কি আর বাবা পাবে। সে চিন্তা থেকে সে নিজেই এখন স্বাবলম্বী হয়ে সন্তানদের দেখাশোনা করছে।

জানিনা রিনা কতদিন তার এই সিদ্ধান্তে থাকতে পারবে। একবার ভাবি যে রিনার বিয়ে করা উচিত। আবার ভাবি তাহলে বাচ্চাগুলো এতিম হয়ে যাবে। আসলে মানুষের জীবনের কোন ভরসা নেই। বিপদ আসতেও সময় লাগে না। হুট করে এরকম বিপদে পড়লে কিছুই করার থাকে না। আল্লাহ সবাইকে সুস্থ রাখুন।


আশা করি গল্পটি থেকে আপনারা অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন। কারণ ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা নিয়ে অবহেলা করা উচিত না। দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। যাই হোক সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। পরবর্তীতে দেখা হবে আবার নতুন কিছু নিয়ে।


ধন্যবাদ

@tania

আমি তানিয়া তমা। আমি বাংলাদেশে থাকি। ঢাকায় বসবাস করি। আমি বিবাহিত। আমার দুটি ছেলে আছে। আমার শখ রান্না করা, শপিং করা, ঘুরে বেড়ানো। আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলাদেশকে ভালবাসি।

animasi-bergerak-terima-kasih-0078.gif

IMG_20220106_113311.png

7258xSVeJbKkzXhyseBP4PYz11eBDT8sW2oR1a4vfVFS6JTrGU8e1FPUaNdHG5vjXyg2xthV78bDEmEVvKCQpyzX1kq8gAVzGsPp9GqJVRWxb6T9y35PZmQehnLjELdKKmnhdxQjDuny4.png


VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR SET @rme as your proxy

witness_vote.png


Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 last year 

আপনার লেখা এই গল্পটা পড়ে আমার কাছে সত্যি খুবই খারাপ লেগেছে। তাদের উচিত ছিল ভিসার প্রসেসিং চলার সময় তার ট্রিটমেন্ট চালিয়ে রাখত, তাহলে সে আরো কিছুদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকত। ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে রেখে সেই মারা গিয়েছে। এখন তার স্ত্রী সন্তানদেরকে নিয়ে থাকছে এবং তাদেরকে মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টা করছে এটা দেখে ভালো লেগেছে। আমার তো মনে হয় সে বিয়ে না করে ভালোই করেছে। কারণ সে যদি বিয়ে করত তাহলে কোন সম্ভাবনা রয়েছে, তার সন্তানদেরকে ওই লোকটা আপন করে নিত।

 11 months ago 

আমারও একবার তাই মনে হয় যে আগে থেকে ট্রিটমেন্ট শুরু করার দরকার ছিল। আসলে হায়াৎ তো মানুষের নির্দিষ্ট থাকে। তাতে হয়তো কাজ হতো না। যাই হোক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 last year 

কিছু কিছু ঘটনা মানুষকে সারাজীবন কাঁদায়। আর এরকম ঘটনা গুলো মানুষের জীবনটাকে ও একেবারে নষ্ট করে দেয়। এরকম খারাপ দুর্ঘটনা কখনো ভুলা যায় না। আসলেই মানুষের জীবনের কোন ভরসা নেই। ট্রিটমেন্ট যদি প্রথম থেকেই শুরু করে দিত তাহলে হয়তো লোকটা বেঁচে থাকত। তারা ইন্ডিয়ায় যাওয়ার জন্য সবকিছু তৈরি করতে করতে লোকটা মারা গিয়েছে। এটা শুনে সত্যি খারাপ লেগেছে।

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া এরকম বিষয়গুলো আসলেই মেনে নেয়া যায় না। ধন্যবাদ গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

আপনার গল্পটা পড়ে অনেক খারাপ লাগল। সত্যি মানুষের জীবনের কোন ভরসা নেই। কার জীবনে কখন যে বিপদ আসবে বুঝা মুশকিল। সত্যিই তো রিনা ঠিক বলেছে সে বিয়ে করলে হাজবেন্ড পাবে, কিন্তু বাচ্চারা বাবা তো আর পাবে না।আর মা দ্বিতীয় বিয়ে করলে আসলে বাচ্চাদের জন্য অনেক খারাপ হয়। যাইহোক এই মৃত্যুর স্বাদ সব প্রাণীর গ্রহণ করতেই হবে, হয়তো আগে আর পরে। ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 11 months ago 

আমার গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

 last year 

এই গল্পের প্রথম পর্বটি পড়ে খুব ভালো লেগেছিল। এই পর্বটি পড়ে সত্যিই মর্মাহত হলাম। এতো কম বয়সে সুজন মারা গেল। ভিসা প্রসেসিং চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো। তবে জন্ম,মৃত্যু তো সৃষ্টিকর্তার হাতে। সুজনের আয়ু এতটুকুই ছিলো। তবে রিনা যদি বিয়ে করে তাহলে বাচ্চা দুটি একেবারেই এতিম হয়ে যাবে। তাই বিয়ে না করাই উত্তম হবে। যেহেতু শোরুম ভালো চলছে। যাইহোক এমন শিক্ষণীয় একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 11 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া ওনার আয়ু এ পর্যন্তই ছিল। তারপরও মাঝেমধ্যে মনে হয় যে ট্রিটমেন্ট শুরু করলে হয়তো কিছুদিন যেতে পারত। আর রিনার কথা কি বলবো এত অল্প বয়সে বিধবা হয়ে সারা জীবন পার করা আসলেই খুশি কষ্টকর। যাই হোক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 63931.86
ETH 2639.37
USDT 1.00
SBD 2.83