মেহেরপুর মৎস্য আড়তে মাছ বিক্রয়ের অনুভূতি

in আমার বাংলা ব্লগlast year
আসসালামু আলাইকুম

IMG_20230806_090304_813.jpg





হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজকে আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি মেহেরপুর মৎস্য আড়োতে মাছ বিক্রয়ের সুন্দর অনুভূতি নিয়ে। বৃষ্টি ভেজা একটি দিনে নিজের জেলার বিশাল বড় এক বৎসর আড়তে মাছ বিক্রয় করার জন্য অবস্থান করেছিলাম। সেই সুন্দর অনুভূতিটা আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে যাচ্ছি এই পোস্টে। তাই চলুন আর দেরি না করে এখনই বিস্তারিত আলোচনা শুরু করি। আপনারা আশা করি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।


ফটোগ্রাফি সমূহ:



দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিয়ে মাছের গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হলাম মেহেরপুর মৎস্য আরোতে। দিনটা ছিল বেশ বৃষ্টি ভেজা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। আড়তে পৌঁছানোর পূর্বেই দেখলাম আমাদের মত অনেক মানুষ মাছ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। মেহেরপুর মৎস্য আড়তে ওই মুহূর্তে চলছিল হরদম মাছের বেচাকেনা। আড়তে রাস্তায় প্রবেশ করার মুহূর্তে দেখলাম রাস্তার দুই পাশ দিয়ে অসংখ্য মাছ ক্রেতারা মাছ কিনে তাদের বিভিন্ন যানবাহনগুলো সারিবদ্ধ ভাবে রেখে দিয়েছে রাস্তার পাশে। আমার দেখা অন্যান্য মৎস্য আরব গুলোর চেয়েও মেহেরপুরের আরব দেশ জমজমাট। এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ বিক্রেতারা বিক্রয় করতে আসে পাশাপাশি যে সমস্ত বাজারে বিক্রয় করে মাছ বিক্রেতা তারা কিনতে আসে। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ আড়ত থেকে মাছ কিনে নিয়ে যায়। বৃষ্টি ভেজা এই মুহূর্তে ফটোগ্রাফি করতে এমন দৃশ্য আমারও বেশ ভালো লাগছিল।

IMG_20230806_083739_2.jpg

IMG_20230806_083741_4.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location



সকালের মুহূর্তে আড়তের এই সুন্দর দৃশ্য আমার বেশ ভালো লাগছিল। তবে মনের ভিতরে একটা টেনশন কাজ করছিল শুনছিলাম যে বাজারে অনেক মাছ ঢুকেছে তাই মাছের বাজার বেশ নরমাল। তবে আমি যে আড়তে আড়ত দারদের কাছে মাছ দেবো তাদের কাছে জানতে চাইছিলাম ভাই মাছের বাজারের অবস্থা কেমন এখন। তারা বলল ভাই মাছের বাজারের অবস্থা তেমন একটা ভালো নয় যদি পারেন গোকুল খালিতে নিয়ে যান। আজ মেহেরপুর আড়তে অনেক মাছ এসেছে, এত মাছ আসবে কারোর ধারনা ছিল না। এমন কথা শুনে বেশ হতাশাগ্রস্ত হলাম ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করবো। এদিকে মাছ মরে যাওয়ার ভয়ে বাড়িতে ফোন দিলাম যেহেতু দীর্ঘ পথ এসেছি। এখান থেকে অন্য আড়তে মাছ নিতে হলে অনেক মাছ নষ্ট হয়ে যাবে এতে মাছের বাজার আরো কম হয়ে যাবে। বাড়ি থেকে বড় ভাই বলল যে দামি হোক বিক্রয় করে ফেল, আর হয়রানি হওয়ার দরকার নেই কারণ গাংনী বাজার থেকেও ঘুরেছি।

IMG_20230806_085726_948.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location



আড়তে দেখলাম বিভিন্ন প্রকার মাছ বিক্রয় চলছে। আমি তখন নির্দিষ্ট সে আড়তদার ভাইকে বললাম ভাই যে দামি হোক বিক্রয় করে দেওয়ার চেষ্টা করুন। অন্য জায়গায় আর নিয়ে যাচ্ছি না। কারণ এখান থেকে অন্য আড়ত বেশ দূরে, জানিনা সেই জায়গার অবস্থা কেমন সেখানে মাছের দাম কেমন। এরপর আমার গাড়িওয়ালা কে বললাম মাছ ঢেলে দিতে আমার মাছ বিক্রয় শুরু হলো যে তেলাপিয়া মাছ অন্যান্য বাজারে বিক্রয় করলাম কয়টা দিন আগে ১৮০/১৮৫ টাকা কেজি। কিন্তু মেহেরপুর আড়তে সে মাছ ১১২ টাকা কেজি বিক্রয় করতে হলো এর চেয়ে হতাশাগ্রস্থ দুঃখজনক বিষয় আর হয় না। যে তেলাপিয়া মাছ দুই থেকে তিনটায় এক কেজি হবে সেই মাছ ১১২ টাকা কেজি বিক্রয় করতে হচ্ছে এমন মুহূর্তে আর যারা মাছ কিনে খায় তারা বাজার থেকে কিনে খাচ্ছে দুইশ থেকে আড়াইশো টাকা কেজি।

IMG_20230806_090308_636.jpg

IMG_20230806_085835_570.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location



মাছ বিক্রয়ের মুহূর্তে আড়তদ্দার ভায়রা আমার হাতে একটি খাতা দিল যেন মাছের হিসাব ঠিক রাখি তারাও আলাদা একটি খাতায় হিসাব ঠিক রাখছে কে কত কেজি নিচ্ছে আর কি দামে বিক্রয় হচ্ছে। কারণ আড়তে মাছ বিক্রয় থেকে এভাবেই হয়ে থাকে কোন ব্যক্তি কি সাইজের মাছ কত কেজি নিচ্ছে এবং তার রেট কেমন। যাইহোক এরপর তেলাপিয়া মাছগুলো 145 টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রয় করতে পারলাম। যেহেতু আলগা-মন গাড়িতে মাছ নিয়ে যাওয়া হয় পাঁচ মনের বেশি মাছ ধরে না। পাঁচ মন মাছ বেশ কিছুটা সময় ধরে বিক্রয় করা হলো। আর অবস্থানকালীন মুহূর্তে দেখলাম বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য গাড়ি মাছ নিয়ে চলে আসছে বিক্রয়ের জন্য কিন্তু বাজারের এই অবস্থা দেখে তারাও হতাশ হচ্ছে। এর আগে জানতাম বর্ষার দিন মানুষ সহজে মাছ ধরতে পারে না তাই ঐদিন আড়তে মাছের দাম বেশি হয় কিন্তু যেদিন মাছ বিক্রয় করতে গেলাম তার উল্টোটা হলো আমাদের। বর্তমান বাজার মূল্য অনুসারে ন্যায্য দামটা তো দূরে থাক তার ধারে কাছেও পেলাম না।

IMG_20230806_093931_150.jpg

IMG_20230806_093909_867.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location



এদিকে এক গাড়ি মাছ বিক্রয় করলে ৩৩ থেকে ৩৫ হাজার টাকা হয়। কিন্তু ওইদিন এত কম টাকা হবে কখনোই ভাবেনি কত কষ্ট করে বৃষ্টির দিন মাছ ধরা হয়েছিল। এদিকে মাছধরা মুনিশ খরচ, জাল খরচ, গাড়ি খরচ, মাছ আবাদ করতে খাবারের পিছনে দাম লেগেছে সেই সমস্ত চিন্তা করে যেন বেশ কষ্ট লাগলো। কারণ ১০ হাজার টাকার মতো তারও বেশি লস হচ্ছে আজ। যাইহোক আড়তের চালানটা হাতে নিলাম এরপর আমি আমার হিসাব মতো মিলিয়ে দেখলাম সব ঠিকঠাক আছে কিনা। কিছুটা সময় ধরে হিসাব মিলিয়ে দেখলাম হ্যাঁ তাদের চালান ঠিক আছে এরপর তারা আমাকে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করলো।

IMG_20230806_093724_840.jpg

IMG_20230806_093727_401.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location



এরপর চালান মোতাবেক মাছের টাকা তারা আমার হাতে দিয়ে বলল ভাই টাকা গুনে দেখুন। আমি মাছের টাকা গুনে দেখলাম ঠিক আছে এরপর তারা বলল ভাই আপনারা যখন আমাদের আড়তে মাছ নিয়ে আসবেন তখন আশার পূর্বে আমাদের কাছে মোবাইল করবেন। বাজারের অবস্থা যদি খারাপ হয় তাহলে আপনাদের জানিয়ে দেব আর অন্যান্য আড়তে যোগাযোগ নিয়ে আপনাদের সেখানে যেতে বলব যেন ভাল দাম পান। সুন্দর ব্যবহার আর কথাবাত্রা আমার অনেক ভালো লাগলো। উনারা আরো বললেন মাছ চাষের বর্তমান যে খরচ সেটা আমরা জানি ভাই আমরা নিজেরা মাছ চাষ করি তাই চায়নায় এভাবে জাগায় বসে ১০-১২ হাজার টাকা লস হয়ে যাক কোন ব্যবসায়িকের।

IMG_20230806_093730_237.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location



***

এভাবে অনেক সুন্দর কথা বলা, চা বিস্কুট খাওয়া শেষ করে বিদায় নিয়ার মুহূর্তে তাদের সাথে ছবি ও সেলফি তুললাম। তাদের সাথে বেশ সুন্দর কথার মধ্য দিয়ে মনোভাব সৃষ্টি হলো। তাদের কথাবাত্রা ব্যবহার এবং সুন্দর পরামর্শ গুলো সত্যি বড় গ্রহণযোগ্য। এরপর ওখান থেকে উঠে চলে আসলাম। ***

IMG_20230806_094009524_BURST0006.jpg

IMG_20230806_093854483_BURST0001_COVER.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location



এরপর বাড়ি চলে আসার জন্য মৎস্য আড়তের মধ্য থেকে কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে বাজারের দিকে এগিয়ে আসলাম কারণ ইতোমধ্যে মৎস্য আড়তের দিকে যাওয়ার সেই রাস্তাটা এতটাই ব্লক হয়ে গেছে যেন গাড়িতে চড়ে আসার ঠিক হবে না। কারণ যে কোন গাড়ির উপরে থাকা জিনিস গায়ে বেধে যেতে পারে। আর এভাবেই মেহেরপুর আলোতে মাছ বিক্রয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হল।

IMG_20230806_094043_701.jpg

IMG_20230806_094252_020.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  
 last year 

এর আগেও এরকম একটি পোস্ট আমি বলেছিলাম আড়তে মাছ বিক্রি করার আমার খুব শখ। কিন্তু আড়তে মাছ বিক্রি করার শখ আমার এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। কপালে থাকলে হয়তো বা ইনশাল্লাহ হবে একদিন। খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া মাছ বিক্রি করা অনুভূতি মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে। মাছের কেমন কি দাম ভাইয়া রিপ্লে তো একটু জানাবেন।

 last year 

মাছের বাজার সম্পর্কে বিস্তারিত পোষ্টের মধ্যে বলেছি তো

 last year 

ওহ আচ্ছা। সব মাছের কথা বলেন নাই।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

আসলে নিজে উৎপাদন করা কোন কিছু বিক্রি করলে তার অনুভূতি সত্যি খুব অন্যরকম হয়ে থাকে। আপনি মাছ বিক্রি করেছেন জেনে খুব ভালো লাগলো । আসলে আমার মাছ চাষ করা খুব শখের । তবে ব্যস্ত থাকার মাছ চাষ করা হয় না। মাছ বিক্রি করার অনুভূতি আমাদের মাঝে সুন্দর করে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ভাই।

 last year 

চেষ্টা করবেন মাছ চাষ করার, অবশ্যই এটা খুব ভালোলাগা একটা কাজ।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65669.27
ETH 2668.58
USDT 1.00
SBD 2.87