একটি ইভেন্ট কে যেভাবে ম্যানেজ করলাম
সোর্স
পোষ্ট টি আরো ২-১ দিন আগেই করতাম কিন্তু এত ব্যস্ত ছিলাম যে করা হয়ে ওঠে নি।বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা,লেভেল ৫ এর ভাইভা প্রচুর ব্যস্ত ছিলাম।কিন্তু আমার পাশের বাড়ির বড় ভাই আমার থেকেও বেশি ব্যস্ত।মাঝে মাঝে তার ব্যস্ততা দেখে আমারই মায়া হয়।
তো যাই হোক ভাইয়ের ছেলের জন্মদিন ছিল ২৬তারিখ।ভাইয়ের খুব ইচ্ছা এবার সে ছেলের জন্মদিনটা ধুমধাম করে পালন করবে প্রতিবেশি এবং বাড়ির লোকজন কে নিয়ে।কিন্তু ভাইয়ের অফিসের বস প্রকৃতই বস।তার নাকি এখন কাউকে ছুটি দেওয়ার জো একদম নেই।এদিকে একটু বড়সড় অনুষ্ঠান করতে গেলে সব কাজ অনুষ্ঠানের দিনের জন্য ফেলে রাখলে হয় না।আগে থেকেও প্রস্তুতির কিছু ব্যাপার থাকে।
যাই হোক মনে মনে ভাবলাম এই বিপদে ভাইয়ে পাশে দাঁড়ানো দরকার।ভাইকে বললাম আমাকে কিছু কাজ দাও।ভাই বলল তোর না ভার্সিটির পরীক্ষা।তোর কিছু করা লাগবে না।আমি বললাম পরীক্ষা শনিবারে আমি শুক্রবারে সব করে দিয়ে চলে যাব।তখন ভাই বলল তুই শুধু তাইলে ডেকোরেটর আর সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা কর আমি বাকি বাজার অনুষ্ঠানের দিন করে ফেলব।ভাই বলল শুধু আনলে হবে না,দিয়েও আসতে হবে তোকেই।আমি বললাম সমস্যা নেই শনিবার পরীক্ষা দিয়ে এসে জিনিস গুলো ফেরৎ দিয়ে আসব।
এরপর ভাইয়ের থেকে কি কি লাগবে তার লিস্ট নিয়ে ফেললাম।এরপর ২৫তারিখ টিউশন সেরে এসে বের হলাম।এবং ডেকোরেটরে গিয়ে বুঝলাম যে আসলে কত কঠিন কাজ হাতে নিয়েছি।আপনাদের মনে হতে পারে ডেকোরেটর থেকে জিনিস ভ্যানে করে নিয়ে আসব ব্যাস মিটে গেল।কিন্তু বিষয় টা অত সহজ না।
ভাই থাকে ছয় তলায়।অনুষ্ঠান হবে ছাদে।আর বিল্ডিং এ লিফট নেই।এবার আমার অবস্থা টা কল্পনা করতে পারছেন?এখন আমার হাতে অপশন ২টা একা গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে ছাদে ৪০টি চেয়ার,২টি টেবিল,২টি সাউন্ড সিস্টেম সেই ছাদে তোলা অথবা ভ্যানওয়ালা কে রাজি করানো এবং তার সাথে কাজ ভাগ করে নেওয়া।যাই হোক যেহেতু আমার একার পক্ষে এত কিছু তোলা সম্ভব না তাই দ্বিতীয় অপশন টাই বেছে নিলাম।কিন্তু সেদিন আমি বুঝেছি আসলেই আমাদের দেশের মানুষের আর টাকার অভাব নাই।৩০০টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি হয়েছি তাও কেউ রাজি নয়।উল্লেখ্য ভাইয়ের বিল্ডিং ডেকোরেটর এর দোকান থেকে ৫মিনিট এর রাস্তা।
আমি তো পরে গেলাম মহাবিপদে।ভাই কে বড়মুখ করে কথা দিয়েছি কাজ টি করে দেব।অথচ এখন দেখছি নিয়ে যাওয়াই সম্ভব হচ্ছে না।এরপর আমার হঠাৎ মনির ভাইয়ের কথা মনে হল।ভাই আমাদের ট্রান্সপোর্ট এর মাল ডেলিভারি দিতেন।প্রচন্ড পরিশ্রমী মানুষ।যত বড় কাজই হোক না কেন উনি ভয় পান না।মাঝখানে কিছুদিন ব্যবসা দেখতে হয়েছিল তখন উনার সাথে পরিচয় হয়,আর আমি বরাবরই পরিশ্রমী মানুষ পছন্দ করি তাই উনার সাথে বেশ খাতিরও হয়ে যায়।যেহেতু এখন ব্যবসার বাইরে তাই ভাইয়ের কথা প্রথমে মনে পড়ে নি।যাই হোক ভাই কে ফোন দিয়ে সব খুলে বললা।ভাই দ্বিতীয় কথা না বলেই রাজি।
এরপর শুরু হল আমাদের মহা যুদ্ধ।মনির ভাই আমাকে বলল ভাই আপনি বসেন আমি করতেছি।কিন্তু আমি একবাক্যে না বলে দেই।কারন যতই টাকা দেই এই এত জিনিস ছয় তলায় তাকে একা একা তুলতে দেওয়া কোন কাজের কথা নয়।সেও তো মানুষ।এরপর দুইভাই লেগে পড়লাম প্রথমে ১০টি ১০টি করে চেয়ার তুললাম।টেবিল নেওয়ার সময় বুদ্ধি করে গোল টেবিল নিয়েছিলাম।তাই খুব সহজেই ছোট বেলায় যেভাবে টায়ার দিয়ে খেলতাম ওভাবে ঠেলে ঠেলে উপরে তুললাম।কিন্তু এরপরই শরীর এত ক্লান্ত হয়ে গেল যে আর ওঠা নামার ক্ষমতা নেই।তখন ভাবি বলল একটু বিশ্রাম নাও।তখন আমি আর মনির ভাই ফ্যানের নিচে বসলাম,ভাবি আমাদের জন্য তালের বড়া নিয়ে আসলেন।খাওয়াদাওয়া করে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বাকি কাজ গুলো করে ফেললাম।
সবার শেষে সাউন্ড সিস্টেম তুলতে গিয়ে সে কতবার থেমেছি তার হিসাব নেই।গেঞ্জি ভিজে জল গড়িয়ে পড়তেছে।অনেক কষ্ট করে সেটাকেও তুলে ফেললাম।এরপর ছাদে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নেমে আসলাম।তারপর মনির ভাইকে নিয়ে গেলাম চা খেতে।তারপর ভাইকে পারিশ্রমিক দিয়ে বিদায় দিলাম।
অনুষ্ঠানের দিন আমি থাকতে পারি নাই।কারন অনুষ্ঠান রাতে,আর পরদিন ৮টা থেকে পরীক্ষা থাকায় আমাকে আগেই বগুড়া যেতে হয়েছে।এরপর পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এসে ভাবলাম একটু ঘুমাব।কিন্তু জিনিসগুলো আবার ফেরত দিয়ে আসতে হবে সে চিন্তায় ঘুম হল না।এবার মজার বিষয়, মনির ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলতেছে,"ভাই জিনিস গুলো ফেরত দিতে হবে না? আমি গিয়ে কি আস্তে আস্তে আস্তে নামাতে থাকব।"আমি বললাম আপনি একা করতে গেলে সমস্যা হবে একটু পর আসেন আমিও যাচ্ছি।একটু পর গিয়ে সেই আগের মত করে সব নামিয়ে এনে পৌছে দিলাম জায়গা মত।
এখন মজার বিষয় টা বলি,এই যে আমাদের এত পরিশ্রম এগুলো কিন্তু কোন কাজেই লাগে নাই।২৬তারিখ বিকাল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি ফলে অনুষ্ঠান ঘরের ভেতর করতে হয়েছে।তাই চেয়ার টেবিল কোন কাজেই লাগে নি।শুধু সাউন্ড সিস্টেম টা কাজে লেগেছে।এটা শোনার পর আমার মনের অবস্থা টা ভাবুন একবার।
যাই হোক যেহেতু আমি অনুষ্ঠানে থাকতে পারি নি তাই ভাই আমাকে আলাদা ভাবে একটি ট্রিট দিতে চেয়েছেন।এবং অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।আর আমি ধন্যবাদ জানাই মনির ভাই কে।উনি না থাকলে আমি কথা টা রক্ষা করতে পারতাম কিনা জানিনা।সৃষ্টিকর্তা সঠিক সময়ে উনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল।আর উনার প্রতি শ্রদ্ধাও অনেক বেড়ে গেল।
খুব সুন্দর ভাবে ম্যানেজমেন্ট করলেন। আপনার ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতা একটা আছে সেটা আপনার লেখা ও ঐচ্ছিক শক্তি দেখে বোঝা যায়। আর অবশ্যই বলা দরকার বর্ণনাটা খুব ভালো হয়েছে।
অনেক ধন্যবাদ ভাই প্রশংসার জন্য।
ওয়াও ভাইয়া অনেক দক্ষতার সাথে এবং অনেক ধৈর্য সহকারে আপনি ম্যানেজমেন্ট করেছেন। আপনার ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতা দেখে আমার অনেক ভালো লাগলো। আসলেই সব কাজ যদি ধৈর্য সহকারে বা আত্ত বিশ্বাস নিয়ে করা যায় তাহলে সেটা অনেক ভালো হয় যেটা আপনার হয়েছে ।ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আসলে একটি অনুষ্ঠান ম্যানেজ করাটা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার । আপনি খুব সুন্দর ভাবে দক্ষতা সহকারে পুরো অনুষ্ঠান হ্যান্ডেল করেছেন জেনে খুব ভালো লাগলো। সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই